প্রেমের টানে সুদূর চীন থেকে গোপালগঞ্জে ছুটে এসেছেন এক চীনা যুবক। জেলা শহরের নীচুপাড়া এলাকার প্রেমিকা সীমার বাড়িতেই উঠেছেন ওই চীনা নাগরিক। ইতিমধ্যে বিয়েও সম্পন্ন হয়েছে। এতে সীমার পরিবারে চলছে আনন্দের বন্যা। চীন দেশের নতুন জামাইকে দেখতে ভিড় করছেন আশপাশের লোকজনও। সকলের কাছে এই নব দম্পতির জন্য দোয়া চেয়েছেন সীমার পরিবার।

গতকাল সোমবার (৩০ জুন) জেলা শহরের নীচুপাড়া এলাকার সীমার বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, গত ৬ মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে গোপালগঞ্জে মেয়ে সীমা আক্তারের (১৮) সাথে পরিচয় হয় চীনা নাগরিক লিউ সি‌লিয়ানের (৩৫)। এরপর বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। তাদের মধ্যে চলে ভিডিওকলে কথা বার্তা আর খোঁজখবর। দুই পরিবারের সাথেও ভিডিওকলের মাধ্যমে হয় পরিচয়। 

এরপই জেলা শহরের নীচুপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো.

আবুল হোসেন হাওলাদারের মেয়ে সীমার প্রেমের টানে গত শুক্রবার (২৭ জুন) চীন থেকে বাংলাদেশে আসেন লিউ সি‌লিয়ান। এরপর সোজা চলে আসেন গোপালগঞ্জে। ওঠেন একটি হোটেলে। পরে মেয়ের মাধ্যমে জানতে পেরে হোটেল থেকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন মো. আবুল হোসেন হাওলাদার। এরপর লিউ সি‌লিয়ানের মা-বাবা ও আত্মীয় স্বজনের সম্ম‌তিতে লিউ সি‌লিয়ান নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং ওই দিনই কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে সীমা ও লিউ সিলিয়ানের বিয়ে সম্পন্ন হয়। লিউ সি‌লিয়ান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় তার নতুন নাম রাখা হয়েছে মো. সাদেকুর রহমান সানি। 

এদিকে, সোমবার (৩০ জুন) পরিবারের সকল সদস্য ও আত্মীয় স্বজনদের উপস্থিতে পালন করা হয় নানা আনুষ্ঠিকতা। মেয়ের প্রেমের কথা জানার পর প্রেমিক লিউ সিলিয়ানকে মেনে নেন সীমার মা-বাবা। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে বিয়েতে সম্মতি দেন তারা। 

চীনা ওই যুবক ও জামাইকে দেখেতে সীমার বাড়িতে ভীড় করছেন আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীরা। বিয়ে হওয়ায় এই নবদম্পতিকে খুশি হয়ে দোয়া করছেন সবাই। যেন তাদের বিবাহ জীবন সুখের হয়।

সীমার বাবা মো. আবুল হোসেন হাওলাদার বলেন, “আমার মেয়ে চীনা নাগরিক লিউ সিলিয়ানের সাথে বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় বলে আমাদের জানান। আমি তাকে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে বললে লিউ সিলিয়ান বিয়ে করবে বলে আমাদের জানায়। পরে আমি আমার মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে বিয়েতে সম্মতি দেই। লিউ সিলিয়ান দেশে আসার পর তার মা-বাবা ও আত্মীয় স্বজনের সম্মতিতে এফিডেভিট করে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে রবিবার (২৯ জুন) ছেলে মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন হয়। সোমবার আমার পরিবারের সকল সদস্য ও আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াতের মাধ্যমে নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করি।”

সীমা আক্তার বলেন, “মাস ছয়েক আগে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। এরপর বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে প্রতিদিনই কথাবার্তা চলতো। একদিন হঠাৎ করে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সে। তখন আমি তাকে জানাই সে যদি বাংলাদেশে আসে তাহলে বিয়ে করব। সে আমাকে আশ্বস্ত করে বাংলাদেশে আসবে এবং বিয়ে করবে। সে চীন থেকে গত বৃহস্প‌তিবার রাতে এয়া‌রপোর্টে পৌঁছায়। তখন আমার মা-বাবাকে বিষয়টি জানাই। পরে দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। আমি ভালবাসার মানুষকে বিয়ে করতে পরে খুশি। ও খুবই ভাল মনের মানুষ। ও আমাকে অনেক ভালবাসে।

লিউ সিলিয়ান জানান, তিনি চায়নার এক‌টি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। বাংলাদেশে আসার জন্য দুই মাসের ছুটি চেয়েছিলেন। ছুটি না পেয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রেমিকার টানে বাংলাদেশে এসেছেন। এক মাসের মধ্যে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে বউকে সঙ্গে নিয়ে চীনে চলে যাবেন।

লিউ সিলিয়ান আরো জানান, নিজ ধর্ম ত্যাগ করে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে তার নাম মো. সাদেকুর রহমান সানি।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ অনেক ভাল। আমার স্ত্রীর পরিবারের মানুষ অনেক ভাল। আমি ওদের সবাইকে ভালবাসি। সারা জীবন সীমাকে ভালবেসে যাবো। আর ওকে সাথে নিয়ে চীনে চলে য‌াব। সবার কাছে দোয়া চাই।”

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র র স প লগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম

গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।

এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।

আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’

দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’

ব্যবসার শুরু

রহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।

রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।

হকার থেকে এজেন্ট

কয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।

আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’

পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে
  • ‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
  • বিচারকের ছেলে হত্যা মামলার আসামি লিমন পাঁচ দিনের রিমান্ডে
  • বিচারকের ছেলে হত্যা: লিমন ৫ দিনের রিমান্ডে
  • ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’
  • ৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম