জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু আজ
Published: 1st, July 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু হচ্ছে আজ ১ জুলাই। আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়ে এ অনুষ্ঠান হবে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘জুলাই স্মৃতি উদ্যাপন অনুষ্ঠানমালা’।
ঘোষিত অনুষ্ঠানমালা অনুযায়ী আজ মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে শহীদের স্মরণে দোয়া ও প্রার্থনা করা হবে। আজ জুলাই ক্যালেন্ডার দেওয়া হবে এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডের খুনিদের বিচারের দাবিতে গণ-স্বাক্ষর কর্মসূচির সূচনা করা হবে। এটি চলবে আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত। এদিন জুলাই শহীদ স্মরণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবৃত্তি চালু করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জুলাই ক্যালেন্ডারের উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এরপর কয়েক দিন বিরতি দিয়ে দিয়ে এ অনুষ্ঠানগুলো হবে। যেমন ১ জুলাইয়ের পর ৫ জুলাই, এরপর ৭ জুলাই ও ১৪ জুলাই অনুষ্ঠানমালা আছে। শেষ দিন, অর্থাৎ ৫ আগস্ট (অনুষ্ঠানমালায় ৩৬ জুলাই) ৩৬ জুলাইয়ের ভিডিও শেয়ারিং, ৩৬ জেলার কেন্দ্রে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদ পরিবারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখে বিজয় মিছিল, এয়ার শো, গানের অনুষ্ঠান, ‘৩৬ ডেইস অব জুলাই’সহ জুলাইয়ের অন্যান্য ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, ড্রোন শোর আয়োজন করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জুলাই মাসজুড়ে আন্দোলন হয়। ছাত্র-জনতার এ অভ্যুত্থানকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বা জুলাই বিপ্লব বলা হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ডাইনোসরের আগে পৃথিবীতে কাদের রাজত্ব ছিল, কী খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা
টাইরানোসরাস রেক্স নামের ডাইনোসর যুগেরও অনেক আগে পৃথিবীতে ছিল একদল হিংস্র মাংসাশী প্রাণীর রাজত্ব। এরা এতটাই অদ্ভুত ও ভীতিকর ছিল, যা হলিউড চলচ্চিত্রের কল্পকাহিনিকেও হার মানায়।
ধরা যাক, দুটি প্রাণী একে অপরকে ঘিরে ঘুরছিল। এ দুই প্রতিপক্ষ একে অপরের রোমহীন শরীর কতটা শক্তপোক্ত, তা পর্যবেক্ষণ করছিল। তাদের দাঁত ও থাবা ছিল অত্যন্ত ধারালো। আর চামড়া ছিল গন্ডারের মতো পুরু। একে অপরকে দেখতে দেখতে দুই প্রাণীই তাদের চোয়াল প্রায় ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত খুলে ফেলল। এরপর শুরু হলো লড়াই। একটি প্রাণীর ডান পাশে থাকা অপর প্রাণীটি ওপর থেকে প্রতিপক্ষকে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল। মুহূর্তেই সব শেষ। আক্রমণকারী প্রাণীটি তার ৫ ইঞ্চি (১২.৭ সেন্টিমিটার) লম্বা দাঁত প্রতিপক্ষের চওড়া নাকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল, ঠিক যেন গরম সুচ মোমের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। আর এভাবে আক্রমণকারী প্রাণীটি জয়ী হলো।
ধারণা করা হয়, প্রায় ২৫ কোটি বছর আগে পুরোপুরিভাবে না হলেও কাছাকাছি এমন কিছু একটা পৃথিবীতে ঘটেছে।
২৫ কোটি বছর পর ২০২১ সালের মার্চের এক রোদেলা দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে ইজিকো ন্যাচারাল হিস্ট্রি জাদুঘরের দপ্তরে বসে কাজ করছিলেন জুলিয়েন বেনোয়া। তিনি জোহানেসবার্গের উইটওয়াটেরসরান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনবিষয়ক অধ্যাপক। জীবাশ্ম সংগ্রহগুলো দেখার জন্য তাঁকে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে তাঁর হাতে একটি পুরোনো বাক্স তুলে দেওয়া হয়। তাঁকে বলা হয়, এটা খুলে দেখতে। সেটি ছিল খুবই পুরোনো ও সাদামাটা কার্ডবোর্ডের বাক্স।
জুলিয়েন বেনোয়া বলেন, ‘এই বাক্স অন্তত ৩০ বছর ধরে খোলা হয়নি।’
বাক্সের ভেতরে অনেকগুলো হাড় এলোমেলোভাবে রাখা ছিল। এর মধ্যে ছিল অসংখ্য খুলি, যেগুলোর অনেকগুলোই ভুলভাবে শনাক্ত করা ছিল। তিনি সেগুলো গোছাতে গোছাতে ও সঠিকভাবে শনাক্ত করতে গিয়ে একটা ছোট চকচকে জিনিস দেখতে পান।
বেনোয়া বলেন, ‘ওই মুহূর্ত ছিল রোমাঞ্চকর। আমি সঙ্গে সঙ্গে বুঝে ফেলি, আমি কী দেখছি।’ মুখে হাসি নিয়ে তিনি পাশের সহকর্মীর কাছে যান এবং মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করার অনুরোধ করেন।
যে খুলিটি পাওয়া গেছে, সেটি ছিল এক অজানা প্রজাতির গোরগোনোপসিয়ান প্রাণীর। এই গোরগোনোপসিয়ানরা ছিল তীক্ষ্ণ শিকারি, যারা ২৫ থেকে ২৬ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে বিচরণ করত। তারা বড় শিকারকে তাড়া করত এবং শিকারের মাংস ছিঁড়ে একবারে গিলে ফেলত।চকচকে জিনিসটা ছিল একটি দাঁত। দাঁতটি ছিল সুচালো ও খানিকটা গোল এবং সেটা আরেকটি প্রাণীর খুলির ভেতরে আটকে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এই প্রাণীটিও একই প্রজাতির সদস্য।
বেনোয়ার ধারণা, নেকড়ে আকারের ওই দুই প্রাণীর মধ্যে আধিপত্য নিয়ে লড়াই চলছিল। সেই লড়াইয়ের সময় একটির ছোট একটি দাঁত ভেঙে প্রতিপক্ষের খুলির মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল।
তবে এই দাঁত কোনো ডাইনোসরের ছিল না। এটি প্রাচীন পৃথিবীর এক নিদর্শন, যা টি–রেক্স, স্পিনোসরাস বা ভেলোসির্যাপটরের যুগ শুরুর অনেক আগেই স্মৃতি হয়ে গেছে।
যে খুলিটি পাওয়া গেছে, সেটি ছিল এক অজানা প্রজাতির গোরগোনোপসিয়ান প্রাণীর। এই গোরগোনোপসিয়ানরা ছিল তীক্ষ্ণ শিকারি, যারা ২৫ থেকে ২৬ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে বিচরণ করত। তারা বড় শিকারকে তাড়া করত এবং শিকারের মাংস ছিঁড়ে একবারে গিলে ফেলত।
এটি ছিল পার্মিয়ান যুগ, যা ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের এক স্বল্প পরিচিত যুগ। পৃথিবীতে তখন বিশাল আকারের ভয়ংকর সব প্রাণী রাজত্ব করত। এরা কখনো কখনো হাঙরও খেয়ে ফেলত। কখনো কখনো এমনও হয়েছে যে ভূমিতে শিকারের চেয়ে শিকারি প্রাণী বেশি ছিল।
‘জুরাসিক পার্ক’ সিনেমার নতুন পর্ব মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিবিসির সাংবাদিক জারিয়া গোরভেট পার্মিয়ান যুগের অদ্ভুত শিকারি প্রাণীদের দিকে নজর দেন। তিনি জানতে পারেন, এই প্রাচীন প্রাণীরা এতটাই বিচিত্র ও অস্বাভাবিক ছিল যে হলিউডের কল্পনাকেও যেন হার মানায়। যদিও এ নিয়ে নানা মত আছে।
পার্মিয়ানের শুরুতেই ছিল বরফযুগ, যা মহাদেশের দক্ষিণার্ধকে বরফে ঢেকে দিয়েছিল। সেখানে এত বেশি পানি বরফে আটকে পড়েছিল যে বিশ্বের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১২০ মিটার (৩৯৪ ফুট) পর্যন্ত কমে গিয়েছিল।অদ্ভুত পৃথিবী
পার্মিয়ান যুগ শুরু হয়েছিল প্রায় ২৯ কোটি ৯০ লাখ থেকে ২৫ কোটি ১০ লাখ বছর আগে। তখন পৃথিবীর সব স্থলভাগ একসঙ্গে মিলে প্যাঞ্জিয়া নামের একটি বিশাল মহাদেশ ছিল। এর আকৃতি ছিল অনেকটা খরগোশের মতো। এই মহাদেশ ঘিরে ছিল একটি বিশাল আন্তর্জাতিক সমুদ্র, যার নাম ছিল প্যানথালাসা।
এটি ছিল চরম পরিবেশের যুগ। পার্মিয়ানের শুরুতেই ছিল বরফযুগ, যা মহাদেশের দক্ষিণার্ধকে বরফে ঢেকে দিয়েছিল। সেখানে এত বেশি পানি বরফে আটকে পড়েছিল যে বিশ্বের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১২০ মিটার (৩৯৪ ফুট) পর্যন্ত কমে গিয়েছিল।
দক্ষিণ গোলার্ধ বরফে ঢাকা পড়ে যায়। এত পানি বরফে আটকে গিয়েছিল যে বিশ্বের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১২০ মিটার পর্যন্ত কমে গিয়েছিল।
বরফযুগ শেষ হলে প্যাঞ্জিয়া ধীরে ধীরে উষ্ণ হতে শুরু করে এবং মাটি শুকিয়ে যেতে থাকে। এত বিশাল একটানা জমির ভেতরের অংশে সাগরের ঠান্ডা বা আর্দ্র প্রভাব পৌঁছাত না, ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা অনুর্বর ও শুষ্ক ভূমিতে পরিণত হয়।
পার্মিয়ান যুগের মাঝামাঝি সময়ে প্যাঞ্জিয়ার কেন্দ্রীয় অঞ্চলটি মূলত মরুভূমি ছিল। এর মাঝে মাঝে কিছু কোনিফার গাছ ছিল। আর কোথাও কোথাও হঠাৎ বন্যা দেখা দিত। কিছু এলাকা এতটাই গরম ছিল যে সেখানে থাকা কঠিন হয়ে পড়ত। তাপমাত্রা কখনো কখনো ৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাত। এমন তাপমাত্রায় ধীরগতিতে টার্কি রোস্ট করাও সম্ভব।
যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল উইগনাল বলেন, ‘যদিও আবহাওয়া অনেকটা শুষ্ক ছিল, তবু মহাদেশের চারপাশে, বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে প্রচুর গাছপালা ছিল।’
এরপর পার্মিয়ান যুগের শেষ দিকে এসে হঠাৎ পুরো পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায়, যা বর্তমান বিশ্বে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়তে থাকলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সবচেয়ে বাজে যে পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার তুলনায় দ্বিগুণ।
এই উষ্ণতা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণবিলুপ্তির পরিস্থিতি তৈরি করেছিল এবং সেটিই ছিল সেই পরিবেশ, যেখানে পরে ডাইনোসররা টিকে থাকার সুযোগ পায়।
এ ঘটনাই পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণবিলুপ্তির পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। আর এরপর যে পরিবেশ গড়ে উঠেছিল, সেখানে ডাইনোসরদের রাজত্ব শুরু হয়েছিল।
আমরা এখন ডাইনোসরের যুগ থেকে যত বছর দূরে আছি, পার্মিয়ান যুগের সঙ্গে ডাইনোসরের যুগের দূরত্বটাও ততটুকু।