মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সজল হত্যা মামলায় মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের জামিন নামঞ্জুর করে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জের এক নম্বর আমলি আদালতের বিচারক আশিকুর রহমান এই আদেশ দেন। এর আগে সদর থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।

এদিকে মব এড়াতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের কঠোর নিরাপত্তায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় ফয়সাল বিপ্লবকে। আদালতে হাজির করা হয় সকাল ৯টা ৫ মিনিটে। এরপর আসামির জামিন এবং রিমান্ড নামঞ্জুরের আবেদন নিয়ে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট শাহিন মো.

আমানুল্লাহ ও অ্যাডভোকেট হাসান মৃধা।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মুন্সীগঞ্জ কোর্ট ইন্সপেক্টর ছাড়াও পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম ও এপিপি নুর হোসেন রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। প্রায় ২০ মিনিট রিমান্ড শুনানিতে দুই পক্ষের আইনজীবীরা পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।

এ সময় আদালতে পিনপতন নীরবতা লক্ষ্য করা গেছে। রিমান্ড শুনানি শেষে মুন্সীগঞ্জ এক নম্বর আমলি আদালতের বিচারক আশিকুর রহমান আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশ দেন।

আদেশ ঘোষণার পর কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে সাবেক এমপি ফয়সাল বিপ্লবকে সরাসরি জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

অন্যদিকে আসামিকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পরপরই আদালত প্রাঙ্গণে ফয়সাল বিপ্লবের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেন অনেকেই। বিক্ষোভকারীরা বলেন, সাধারণত সকাল ১০টার আগে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয় না। তাই এতো আগে তাকে আনা হবে, এটি তারা জানতেন না।

বিক্ষোভে থেকে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি ফয়সাল বিপ্লবের বিরুদ্ধে 'আমার ভাই মরল কেন, খুনি বিপ্লব জবাব দে, খুনি বিপ্লবের ফাঁসি চাই, দিতে হবে দিতে হবে' এমন স্লোগানে আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। 

সদর থানার ওসি সাইফুল আলম জানান, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রিয়াজুল ফরাজী (২৮), ডিপজল (১৯) ও মো. সজল নিহত ও গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক মানুষ আহত হন। ওই ঘটনায় 
সদর থানায় ৩টি হত্যা ও ৪টি হত্যাচেষ্টা মামলাসহ ৭টি মামলা রুজু করা হয়। প্রতিটিতে মামলায় সাবেক এমপি মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবকে আসামি করা হয়েছে।

সদর থানা পুলিশ জানায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান সাবেক এমপি ফয়সাল বিপ্লবসহ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকা মামলার আসামি ও সাবেক এমপি বিপ্লবকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২২ জুন রাজধানী ঢাকার মনিপুরীপাড়ার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপর তাকে পল্টন থানায় দায়ের করা বিএনপির মহাসমাবেশে যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করে ডিবি পুলিশ। এক সপ্তাহ পর মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় দায়ের করা মামলায় বিপ্লবকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব ক এমপ ব প লবক সদর থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম

গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।

এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।

আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’

দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’

ব্যবসার শুরু

রহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।

রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।

হকার থেকে এজেন্ট

কয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।

আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’

পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে
  • ‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
  • বিচারকের ছেলে হত্যা মামলার আসামি লিমন পাঁচ দিনের রিমান্ডে
  • বিচারকের ছেলে হত্যা: লিমন ৫ দিনের রিমান্ডে
  • ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’
  • ৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম