দাম্পত্য জীবনের এক বছর পূর্ণ, স্বামীকে অর্ষার খোলা চিঠি
Published: 1st, July 2025 GMT
অভিনেতা মোস্তাফিজুর নূর ইমরানের সঙ্গে দীর্ঘ দিন প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন ছোট পর্দায় জনপ্রিয় অভিনেত্রী নাজিয়া হক অর্ষা। গত বছর এ জুটির প্রেম পরিণয় পায়। মঙ্গলবার (১ জুলাই) এই দম্পতির প্রথম বিবাহবার্ষিকী। বিশেষ এই দিনে স্বামীকে উদ্দেশ্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন অর্ষা।
স্বামীর সঙ্গে তোলা বেশ কিছু ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন অর্ষা। এ ছবির ক্যাপশনে অর্ষা লেখেন, “প্রিয় স্বামী, আমরা একসাথে আরো অনেক সুন্দর বছর কাটাতে পারি। আমাদের ভালোবাসা পাহাড়ের মতো লম্বা এবং জ্ঞানের মতো গভীর হোক। শুভ বিবাহবার্ষিকী।”
অর্ষার এই পোস্টের কমেন্টবক্স তার সহকর্মী শিল্পীদের ভালোবাসায় ভরে গেছে। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, তানিয়া বৃষ্টি, আইরিন সুলতানা, অভিনেতা রাশেদ মামুন অপু, শ্যামল মাওলা প্রমুখ।
আরো পড়ুন:
‘নাটকটি দেখে চোখের পানি ধরে রাখা সম্ভব না’
‘ভাইকে মেরে ফেলল, কিছুই করতে পারলাম না’
২০২৩ সালের ১৪ জানুয়ারি বিয়ের খবর প্রথম প্রকাশ্যে আনেন অর্ষা। সেদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছিলেন, “প্রকৃতি আর পরিবার নিয়ে এখন আমি থেকে আমরা। আনুষ্ঠানিকভাবেই আমরা বিবাহিত।”
২০০৯ সালে ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতা থেকে শোবিজে পা রাখেন নাজিয়া হক অর্ষা। এরপর এক যুগেরও বেশি সময় ধরে টেলিভিশন নাটক, চলচ্চিত্র ও ওয়েব সিরিজে অভিনয় করছেন। অর্ষা অভিনীত উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে— ওয়েব সিরিজ ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’। তার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘১৯৭১: সেইসব দিন’।
অন্যদিকে, মোস্তাফিজুর নূর ইমরান ২০১১ সালে ‘গেরিলা’ সিনেমার মাধ্যমে রূপালি পর্দায় পা রাখেন। এরপর ‘আলফা’, ‘গাড়িওয়ালা’, ও ‘সাহস’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন। ‘মহানগর’ ও ‘কাইজার’ ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের মাধ্যমে বিশেষভাবে আলোচনায় উঠে আসেন এই অভিনেতা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম
গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।
এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।
আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’
দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’
ব্যবসার শুরুরহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।
রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।
হকার থেকে এজেন্টকয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’
পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’