হাল আমলের বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কে ভাটা পড়া বা বৈরিতা নিয়ে কিছু বলতে গেলে আমাকে বহু আগের অর্থাৎ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপর দুটি ঘটনার কথা মনে হয়। এ ঘটনাগুলো তখন হওয়া স্বাভাবিক ছিল না বলে আমার মনে হয়েছিল, কিন্তু হয়েছিল আমার প্রত্যক্ষে। আমার প্রত্যক্ষ প্রথম ঘটনা ১৯৭১ ডিসেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকায় আর দ্বিতীয়টি ১৯৭৪ সালের মাঝেমাঝি পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে।

১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবসের পর ঢাকা হয়ে গিয়েছিল একটি আনন্দের শহর; কিন্তু সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল। রাস্তায় রাস্তায় মিছিল, প্রায়ই সব তরুণের কারও হাতে রাইফেল (কেউ মুক্তিযোদ্ধা, আবার কেউ ষোড়শ বাহিনী), কিন্তু সবার হাতে বাংলাদেশের পতাকা (মানচিত্রসহ)। প্রথম দু-এক দিন ভারতীয় সেনাদের দেখা যেত সামরিক যানসহ, পুলিশ ছিল সামান্য। কিন্তু রাস্তায় ছিল অনেক বিদেশি সাংবাদিক, বিশেষ করে ভারতীয়। এই ভারতীয় সাংবাদিকদের মধ্যে একজনের আমার সঙ্গে পরিচয় হয়। আমি ধানমন্ডির যে বাড়িতে থাকতাম তার পাশের বাড়িতে। তিনি অত্যন্ত আগ্রহে আমাদের কাছ থেকে ১৯৭১-এর বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে জানতে চাইতেন। এই সাংবাদিক একবার আমাদের বললেন যে তাঁকে ভারতীয় সেনাকর্তারা ঢাকা সেনানিবাসে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে কয়েকজন বন্দী পাকিস্তানি সেনা অফিসারের সঙ্গে সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য।

তিনি ফিরে এসে আমাদের বলবেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। তিনি উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বর্ণনা করলেন ঢাকা সেনানিবাসে যাওয়া আর বন্দী পাকসেনাদের সঙ্গে দেখা করার ঘটনা। তিনি তাঁদের কী প্রশ্ন করেছিলেন বা কী উত্তর পেলেন, সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু বললেন না। কিন্তু শেষের দিকে তিনি আমাদের বললেন, ‘জানেন, একজন উচ্চ পদের অফিসার আমাকে একটি অদ্ভুত কথা বললেন আমি উঠে আসার সময়? তিনি আমাকে বলল, তুমি ভারতীয়। বাঙালিদের তুমি চেনো না। আজ বাঙালিরা আমাদের যেভাবে তাড়িয়ে দিচ্ছে কিছুদিন পর তোমাদেরও তাড়াবে তারা। আচ্ছা এ কথা কেন বলল, বলতে পারেন?’ সাংবাদিক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন। আমি শুধু বললাম, ‘এটা বোধ হয় তাঁর ক্ষোভের কথা।’

দ্বিতীয় ঘটনাটি ১৯৭৪ জুলাইয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে। সেখানে আমি গিয়েছিলাম বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে সড়কপথে ঠাকুরগাঁও মহকুমার বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে। পাকিস্তান আমলে এ সড়কপথ বন্ধ ছিল। এই প্রতিনিধিদল গিয়েছিল ইন্ডিয়ান অয়েল কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করতে—জলপাইগুড়ি থেকে জ্বালানি তেল সড়কযোগে দিনাজপুর-রংপুরে কীভাবে আনা যায়। আমাদের আলোচনা চার দিন স্থায়ী হয়। আলোচনা হতো তেল কোম্পানির সম্মেলনকক্ষে। আমরা প্রতিদিন রেস্টহাউস থেকে সম্মেলনকক্ষে যেতাম আমাদের নিজস্ব সরকারি গাড়ি নিয়ে। আমার ছিল একটি ল্যান্ড রোভার। অন্যদের কাছে ছিল টয়োটা গাড়ি। আমাদের গাড়িগুলো পার্ক করা থাকত সম্মেলনকক্ষের গাড়ি পার্কে। আমাদের সঙ্গে তেল কোম্পানির যাঁরা আলোচনা করতেন, তাঁদের ছিল সব ভারতীয় গাড়ি। যেমন হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড বা অ্যাম্বাসেডর।

একদিন আমার চালক আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘স্যার, আমাদের দেশকে কি ভারত নিয়ে নিতে পারে?’ হঠাৎ তার মনে এ কথা জানতে চাইলে সে জানাল যে পার্কিংয়ের জায়গায় সে স্থানীয় ড্রাইভারদের বলাবলি শুনছিল আগের দিন। ড্রাইভাররা একজন আরেকজনের কাছে জানতে চাচ্ছিল বিদেশি গাড়িগুলো কোথা থেকে এসেছে। দ্বিতীয়জন বাংলাদেশ বললে প্রথমজন আবার জিজ্ঞেস করে সে আবার কোথায়? তখন এক তৃতীয় ড্রাইভার বলে ওঠে, আরে বেটা এটা একটা নতুন দেশ হয়েছে, আগে অন্য দেশ ছিল। তবে চিন্তা করিস না, কিছুদিন পর ওটা আমাদের হবে সিকিমের মতো। এটা বলার পর আমার ড্রাইভার বেশ ভয়ের সুরে জিজ্ঞেস করল, ‘স্যার, এটা হতে পারে?’ আমি জোরে হেসে কথাটা উড়িয়ে দিয়ে বললাম, ওটা ওই হিন্দুস্তানি ড্রাইভারদের রসালাপ। কিন্তু আমার মনে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলতে গেলে এই সংলাপটি মনে পড়ে।

১৯৭৫–এর শেষের তিন–চার মাস শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, ভারতের জন্যও আশঙ্কাজনক ছিল, কারণ শেখ মুজিবের উত্তরসূরি খন্দকার মোশতাক কোনো বিদেশনীতি কেন দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রেও কোনো দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি। যদিও ভারত নীরবে এ সময় বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল, কিন্তু সে সময় ভারতের বাংলাদেশের ওপর হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা অনেকেই উড়িয়ে দেননি। কিন্তু ভারত কোনো হস্তক্ষেপ করেনি তখন, অন্তত দৃশ্যমানভাবে।

এই দুটি বর্ণনা যদিও দুই বছরের ব্যবধানে তবু ঘটনাগুলো ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর ভারতের চিন্তার প্রতিফলন ঘটায়। স্বাধীনতাযুদ্ধ থেকে শুরু করে স্বাধীনতা–পরবর্তীকালে ভারতের প্রয়াস ছিল বাংলাদেশে এমন একটি সরকার থাকবে—এক.

যে ভারতের পরম মিত্র হিসেবে থাকবে; দুই. বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থী তথা ধর্মীয় দলগুলোকে দমন করতে পারবে এবং তৃতীয় দেশের মধ্যে অবাধ বাণিজ্যের পরিবেশ সৃষ্টি করবে। ভারতের প্রথম লক্ষ্যের প্রধান স্তম্ভ ছিল ১৯৭২ সালের ভারত–বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি। ২৫ বছর মেয়াদি এ চুক্তি সম্পাদিত হয় ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে সফররত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আর শেখ মুজিবের স্বাক্ষরে। কিন্তু এ চুক্তি বাংলাদেশের অনেকে বিশেষ করে বামপন্থী দলের অপছন্দ ছিল।

ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ আলোড়ন না তুললেও এর বিরুদ্ধে জাসদ এবং বাম রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়ই কথা বলত। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এ বিরোধিতা সফল হয়নি, কারণ ১৯৭২-৭৪ সালে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে বিপুল আধিপত্যে ছিল। কিন্তু এ সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনমনে ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বেড়েই চলে। বিশেষ করে ভারতে ত্রাণসামগ্রী চোরাচালান, ভারতের থেকে মানহীন পণ্যদ্রব্য আমদানি এবং ব্যাপকভাবে ধান এবং পাট সীমান্ত দিয়ে পার হওয়ার অভিযোগে। এই সব মিলে এমন একটি পরিস্থিতি হতে থাকে যে স্বাধীনতার চার বছর শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব বেশ চাঙা হয়ে ওঠে। এর ফল হিসেবে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে কতিপয় সেনাসদস্য হত্যা করে একটি অভ্যুত্থান ঘটায় এবং তার সরকারকে ভারতের তাঁবেদার হিসেবে আখ্যায়িত করে, এর প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামেনি।

১৯৭৫ সালের আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনার পর সরকার পরিবর্তনের পর আশঙ্কা করা হয়েছিল যে ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কে শুধু ফাটল না, ভারত হয়তো বাংলাদেশে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে আবার একটি তাঁবেদার সরকার স্থাপনের প্রচেষ্টা করতে পারে। কিন্তু ভারতের তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে ভারত–বাংলাদেশের পরিস্থিতি বেশ কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করে এবং দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক রক্ষা করে।

মোটামুটি স্বাভাবিক সম্পর্ক পরবর্তী দুই দশক চলতে থাকে দুদেশের মধ্যে। যদিও এ সময় দুজন সামরিক অধিনায়ক বাংলাদেশের সর্বময় কর্তা ছিলেন, কিছুটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ১৯৯১ সালে এরশাদ সরকার পতনের পর আবার পূর্ণ গণতন্ত্র ফিরে এলে জিয়াউর রহমান গঠিত জাতীয়তাবাদী দল যখন এক কালের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতে ইসলামী দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সরকার গঠন করে, ভারত তাতে বেশ উদ্বিগ্ন হয়। কারণ, এর আগের দুটি সরকার সামরিক ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হলেও তাদের সঙ্গে ভারত এক সমঝোতার মধ্যে ছিল (বাংলাদেশ–ভারত কোনো পরস্পরবিরোধী কাজ করবে না)।

ভারতের বাংলাদেশের প্রতি আকর্ষণ এবং সম্পর্কের উন্নতিতে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে পরবর্তী নির্বাচনে যখন জাতীয়তাবাদী দল এবং জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত সরকারকে সরিয়ে আওয়ামী লীগ জয়ী হয় এবং সরকার গঠন করে প্রথমবারের মতো ১৯৭৫–এর অভ্যুত্থানের পর। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই সরকারের অদূরদর্শিতা এবং কিছু হঠকারী কার্যক্রমের জন্য পরবর্তী নির্বাচনে এ দলকে পরাভূত করে আবার জাতীয়তাবাদী দল সরকার গঠন করলে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক তথৈবচ হয়ে পড়ে। বলা হয়ে থাকে, ২০০৬ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ভয়ংকর অবস্থা দুই দলের বিরাজমান পরিস্থিতি দেশে সামরিক হস্তক্ষেপের কারণ ছিল। পরবর্তী দুই বছর (২০২৬-২০০৮) দেশে যে সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার স্থাপিত হয়, তার পেছনে যে কয়েকটি আন্তর্জাতিক শক্তি কাজ করেছিল, তাদের মধ্যে ভারত ছিল অন্যতম।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার ক্ষমতায় আসার পর ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নত হতে থাকে। শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে একটার পর আরেকটা চুক্তি করেন, যার ফলে ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ছিটমহল হস্তান্তর, ট্রানজিট চুক্তি, বিদ্যুৎ আমদানি এবং বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের উত্তর–পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে রেলসংযোগের প্রাথমিক চুক্তি। এর প্রায় সব কটি ভারতকে সুবিধা দেওয়া বলে অভিযোগ করা হয় বাংলাদেশের অনেক মহলে। আরও বলা হয়, ভারত বিশেষ করে মোদি সরকার আগ্রহী থাকে, যাতে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকেন।

কারণ, তার পরিবর্তে অন্য কোনো দল ক্ষমতায় এলে এ সুবিধাগুলো থেকে ভারত বঞ্চিত হবে। তাই বলা হয়, বাংলাদেশের পরবর্তী তিনটি নির্বাচনে (২০১৪,২০১৮, ২০২৪) ভারতের পরোক্ষ সমর্থনে শেখ হাসিনা নির্বাচনে কারচুপি করে ক্ষমতায় থাকেন। এগুলো শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করলেও দেশের সাধারণ মানুষকে শুধু তার বিরুদ্ধেই নয়, ভারতের বিরুদ্ধেও যেতে বাধ্য করে। এর চরম ফল আমরা দেখতে পাই গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে, যার ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় এবং শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। এর পরপর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে এত অবনতি ঘটে, যা আগে বাংলাদেশের ভারতবিদ্বেষ এই পর্যায়ে ছিল না। একইভাবে ভারতেও শুধু সরকারি আচরণে নয়, সংবাদমাধ্যমগুলোও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচার তুঙ্গে ওঠে।

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ জ ঞ স কর র জন ত ক ব শ ষ কর পর স থ ত ক ষমত য় পরবর ত ন র পর র জন য আম দ র সরক র বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

চবিতে শিবিরকে নিয়ে ছাত্রদলের মিথ্যাচারের অভিযোগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে শাখা ছাত্রদল নেতৃবৃন্দের মিথ্যাচার ও অপবাদের অভিযোগ তুলে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চবি শিবির।

বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে শাখা শিবিরের প্রচার সম্পাদক ইসহাক ভূঁঞা স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

এর আগে, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) চাকসু নির্বাচন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে শাখা ছাত্রদল। সেখানে লিখিত ও মৌখিকভাবে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ শাখা শিবিরের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ করেন।

আরো পড়ুন:

ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দেয়াল টপকাতেই হাতে ঢুকল রড

৬ ঘণ্টা পর রেলপথ ছাড়লেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) চাকসু নির্বাচন ও ক্যাম্পাস পরিস্থিতি বিষয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চবি ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে নানান অপবাদ এবং সুস্পষ্ট মিথ্যাচার করেছে। এসব ভিত্তিহীন অভিযোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে শাখা ছাত্রশিবির।

সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্র সংগঠনগুলোর আলোচনায় শিবির এমফিল-পিএইচডির পক্ষে ও বয়স ৩০ এর কথা বলাই প্রশাসন সেটা নির্ধারণ করেছে বলে জানায়।

এর জবাবে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ছাত্রশিবির এমফিল, পিএইচডির পক্ষে ছিল মর্মে ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়ের দেওয়া উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, এমফিল-পিএইচডিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবেই পরিগণিত হয়। এজন্য সে সভায় উপস্থিত ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দ এই বিষয়ে নীরব থেকে অন্যদের মতামতকে সম্মান জানিয়েছে।

এমফিল ও পিএইচডিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এবং বয়সসীমা নির্ধারণের বিষয়ে পরবর্তীতে গৃহীত সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একান্ত নিজস্ব। এতে ছাত্রশিবিরের কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই।

সংবাদ সম্মেলনে হলে আসন বরাদ্দ এবং ডাইনিং পরিচালনা নিয়ে শাখা ছাত্রদল সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিনের বক্তব্যের জবাবে বলা হয়েছে, চবির হল ও ডাইনিং পরিচালনা প্রশাসনের নির্ধারিত নিয়ম ও নীতিমালার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী তারা মেধার ভিত্তিতেই সবগুলো হলে আসন বরাদ্দ দিয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে ডাইনিং পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ছাত্রশিবির কোনোভাবেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার হরণ বা মতপ্রকাশে বাধা প্রদান করে না। বরং শিবির সর্বদা শিক্ষার্থীদের জন্য স্বচ্ছ ও ন্যায়সংগত ব্যবস্থাপনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আমরা চবি ছাত্রদল সভাপতির এমন মিথ্যাচার ও অপবাদের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

কমিটি নিয়ে চবি ছাত্রদল সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমানের বক্তব্যের উত্তরে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অজ্ঞতাবশত অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ভুল তথ্য ছড়িয়েছেন। চবি ছাত্রশিবির প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও প্রত্যেকটি হল ও অনুষদে বছরের শুরুতেই কমিটি নবায়ন করেছে এবং সেটা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে ঘোষণা করা হয়েছে। 

কমিটি ঘোষণার পর থেকে বিগত ৭ মাস যাবত প্রকাশ্যেই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন, কল্যাণমূলক কার্যক্রম এবং নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। অপরদিকে, শাখা ছাত্রদল হল কমিটি দূরে থাক, ২০২৩ সালে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি দিলেও লোকবল সংকট বা গুপ্ত রাজনীতি করার উদ্দেশ্যে অথবা অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

গত ২১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ সন্ত্রাসী হানিফ ও ইকবাল কর্তৃক ককটেল বিস্ফোরণ এবং দোকান ভাঙচুরের পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে যেখানে সরাসরি আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা হয় এবং কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। উক্ত ঘটনাকে মব বলে সন্ত্রাসীদের পক্ষপাতীত্ব করা এবং হামলাকে সহজিকরণ করার হীন চেষ্টার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

গত ৬ আগস্ট জীববিজ্ঞান অনুষদের একটি কক্ষে কিছু শিক্ষার্থীর মাঝে কুরআন বিতরণ করে জীববিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রশিবির। যা সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে, শ্রেণী কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক সম্প্রীতি নষ্টের উদ্দেশ্যেই ছাত্রদের জন্য কল্যাণমূলক এই কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে জলঘোলা করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে চবি ছাত্রদলের দেওয়া লিখিত বক্তব্যের ৩ নং পয়েন্টে শাখা ছাত্রশিবিরের তৎকালীন অফিস সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন রনিকে নিয়ে মিথ্যা দোষারোপ করা হয়েছে। বর্ণিত ঘটনার প্রকৃত রূপ সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। ৫ আগস্টের পর চবির বন্ধ হল থেকে গার্ডদেরকে ধাক্কা দিয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী দাউদ সালমানকে সনদ এবং অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের হাতে ব্যাগভর্তি নেশাজাতীয় দ্রব্য এবং শটগানসহ হাতেনাতে আটক হয়।

পরবর্তীতে তাকে শটগানসহ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেনাবাহিনী উপস্থিত সাংবাদিক এবং বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতার উপস্থিতিতে গুলিসহ সন্ত্রাসী আটক হয়েছে মর্মে তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। উক্ত ঘটনাকে ভিন্নভাবে বর্ণনা দিয়ে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে শাখা ছাত্রশিবির।

বিবৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করে চবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, “চবি ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শাখা ছাত্রদল নেতৃবৃন্দের এমন মিথ্যাচার ও অপবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ৫ আগস্ট পরবর্তী এ দেশে আমরা এমন অপরাজনীতি আশা করিনি।”

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪৪তম বিসিএস : ফল নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা, অনিশ্চয়তায় ১,৩১৮ প্রার্থী
  • ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক: ফলপ্রসূ দাবি, অর্জন নিয়ে প্রশ্ন
  • আলাস্কা শীর্ষ বৈঠক ট্রাম্প-পুতিন ও ইউক্রেনের জন্য কী বার্তা আনল
  • সোনারগাঁয়ের আলোচিত চেয়ারম্যান লায়ন বাবুল গ্রেপ্তার
  • ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা চ্যালেঞ্জের
  • বাহাত্তরের ‘সরব কণ্ঠ’ বীর উত্তম জিয়াউদ্দিন, নীরবেই চলে গেলেন
  • চবিতে শিবিরকে নিয়ে ছাত্রদলের মিথ্যাচারের অভিযোগ
  • গণতন্ত্রে উত্তরণে আমরা কেন বারবার হোঁচট খাচ্ছি