বাংলাদেশের আর্থিক খাতে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের ধারা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে, যা দেশের ডিজিটাল এবং ক্যাশলেস আর্থিক ব্যবস্থার দিকে অগ্রগতির ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ডেবিট, ক্রেডিট এবং প্রিপেইড কার্ড ইস্যু করার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ডেবিট, ক্রেডিট এবং প্রিপেইড কার্ড ইস্যু ১৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কার্ডের মাধ্যমে মোট লেনদেনের পরিমাণ ২২৮ শতাংশ বেড়েছে।

আরো পড়ুন:

এনসিসি ব্যাংকের ব্যাংকিং কার্যক্রম ৫ দিন বন্ধ

উচ্চ ঝুঁকিতে ৩২ বিমা কোম্পানি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান

কার্ড ইস্যু ও লেনদেনের বিস্তারিত চিত্র
২০২০ সালের মে মাসে দেশে ইস্যুকৃত ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ছিল এক কোটি ৯৪ লাখ, যা ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার কোটি ১৫ লাখ ১০ হাজারে, অর্থাৎ ১১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, একই সময়ে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ লাখ থেকে ২৫ লাখে পৌঁছেছে। অন্যদিকে প্রিপেইড কার্ডের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব এক হাজার ২৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পাঁচ লাখ ৫০ হাজার থেকে বেড়ে ৭৬ লাখ হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে, যা কার্ডভিত্তিক লেনদেনের দ্রুত সম্প্রসারণ দ্বারা চালিত।”

তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগ ক্যাশলেস ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রচারে সফল হয়েছে এবং কার্ড ব্যবহারের ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের আরো ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ইতিবাচক প্রবণতা নির্দেশ করে।”

ইলেকট্রনিক পেমেন্ট পদ্ধতি দ্রুততর করতে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিক লক্ষ্যভিত্তিক নীতি পদক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রক সংস্কার কার্যকর করেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “ডিজিটাইজেশনের ওপর কৌশলগত গুরুত্ব রাখায় কার্ডভিত্তিক লেনদেনে তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি হয়েছে। ব্যবসায়ী এবং ভোক্তারা ক্রমেই ডিজিটাল আর্থিক সেবার দিকে ঝুঁকছেন। দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে লেনদেনের ক্ষেত্রে ভিসা ক্রেডিট কার্ড সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।”

তিনি আশা প্রকাশ করেন, “বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকলে, মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে কার্ড ব্যবহারের পরিমাণও আরো বৃদ্ধি পাবে।”

ক্রেডিট ও ক্রস-বর্ডার লেনদেনের প্রবণতা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী ছিল, তবে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ঈদ উৎসবের প্রভাবে মার্চের তুলনায় তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

অন্যদিকে, ক্রস-বর্ডার লেনদেনে কিছুটা ওঠানামা দেখা গেলেও ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে আগের মাসের তুলনায় ২৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেড়েছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের ব্যয় ২০২৪ সালের জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে তীব্রভাবে কমে গিয়েছিল, যা নভেম্বর ২০২৪ থেকে আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে এবং ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। তবে মার্চ ২০২৫-এ সামান্য হ্রাস পায় এবং এপ্রিল ২০২৫-এ আবার বেড়েছে।

২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে দেশে ক্রেডিট কার্ডের খাতভিত্তিক লেনদেনের বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় অর্ধেক (৫০ শতাংশ) ক্রেডিট কার্ড লেনদেন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে হয়েছে।

ডেবিট ও প্রিপেইড কার্ডের ব্যবহার
একই সময়ে দেশের বাইরে ডেবিট এবং প্রিপেইড কার্ডের লেনদেনে আলাদা ব্যয়ের ধারা লক্ষ্য করা গেছে। এপ্রিল ২০২৫-এ ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে মোট তিন হাজার ১০৮ মিলিয়ন টাকার চার লাখ ৪৯ হাজার ৬২২টি লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ অংশ ছিল নগদ উত্তোলন (২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ), খুচরা আউটলেট সেবা (২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ) এবং ডিপার্টমেন্ট স্টোর (১৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ)। এই তিনটি খাতেই বিদেশে ডেবিট কার্ডের মোট খরচের প্রায় ৫৯ শতাংশ হয়েছে।

অন্যদিকে, একই সময়ে প্রিপেইড কার্ডের মাধ্যমে এক লাখ ১৮ হাজার ১২৮টি লেনদেনে ৮৪৫ মিলিয়ন টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি সেবায় ব্যয় ছিল সর্বাধিক (২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ), এরপর নগদ উত্তোলন (১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ) এবং ব্যবসায়িক সেবা (১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ)। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোর অংশীদারত্ব উল্লেখযোগ্য ছিল (১৫ দশমিক ৭ শতাংশ)।

বাংলাদেশি নাগরিকরা মূলত যুক্তরাষ্ট্রে (১৪ শতাংশ) ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেছেন, অন্যদিকে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরাই সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছেন (৪২ শতাংশ)। একই সময়ে বাংলাদেশি নাগরিকরা ডেবিট কার্ড সবচেয়ে বেশি চীনে (২১ শতাংশ) এবং প্রিপেইড কার্ড সবচেয়ে বেশি যুক্তরাজ্যে (২২ শতাংশ) ব্যবহার করেছেন।

সূত্র: বাসস

ঢাকা/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক র ড ব যবহ র ল নদ ন র প ত ক ল নদ ন একই সময র পর ম ণ দ শ র আর আর থ ক উল ল খ সবচ য দশম ক ব যবস চ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

কমেছে পাসের হার, অর্ধেকেরও কমে নেমেছে জিপিএ-৫

চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার কমেছে পাসের হার। এছাড়া, গতবারের চেয়ে অর্ধেকেরও কম শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট, সংশ্লিষ্ট সব পরীক্ষা কেন্দ্র বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এসএমএসের মাধ্যমে ফল প্রকাশ করা হয়।

ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের ৯টি সাধারণ ও কারিগরি এবং মাদ্রাসা বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সেই হিসাবে এবার পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

এবার সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন। ২০২৪ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। সে হিসাবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন।
 
এবার ঢাকা বোর্ডে ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৫০ দশমিক ২০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৬২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৫৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। 

গত বছর ঢাকা বোর্ডে ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ, মাদরাসা বোর্ডে ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে ৮৮ দশমিক ০৯ শতাংশ শিক্ষর্থী পাস করেছিলেন। 

এবার ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৬ হাজার ৬৩ জান। এছাড়া, রাজশাহী বোর্ডে ১০ হাজার ১৩৭ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ৬ হাজার ২৬০ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৬ হাজার ৯৭ জন, যশোর বোর্ডে ৫ হাজার ৯৯৫ জন, মাদ্রাসা বোর্ডে ৪ হাজার ২৬৮ জনম, কুমিল্লা ২ হাজার ৭০৭ জন, ময়মনসিংহ বোর্ডে ২ হাজার ৬৮৪ জন, বরিশাল বোর্ডে ১ হাজার ৬৭৪ জন, কারিগরি বোর্ডে ১ হাজার ৬১০ জন ও সিলেট বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৬০২ জন।

গত বছর ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৪৮ হাজার ৫৪৮ জন, রাজশাহী বোর্ডে ২৪ হাজার ৯০২ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ৭ হাজার ৯২২ জন, যশোর বোর্ডে ৯ হাজার ৭৪৯ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১০ হাজার ২৬৯ জন, বরিশাল বোর্ডে ৪ হাজার ১৬৭ জন, সিলেট বোর্ডে ৬ হাজার ৬৯৮ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ১৪ হাজার ২৯৫ জন, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৪ হাজার ৮২৬ জন, মাদরাসা বোর্ডে ৯ হাজার ৬১৩ জন এবং কারিগরি বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৪ হাজার ৯২২ জন। 

এইচএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ২৬ জুনে। গত ১৯ অগাস্ট এইচএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়। ২১ থেকে ৩১ অগাস্টের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।

দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী  ছিলেন ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন। এর মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন পুরুষ ও ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন নারী শিক্ষার্থী। গত বছর ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। 

সারা দেশে ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী এবারের পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রের বাজার চলছে ধনীদের ব্যয়ে, অন্যদের খরচ বাড়ছে মূল্যবৃদ্ধির কারণে
  • উন্নত খাদ্য ও টেকসই কৃষিতে স্বাস্থ্যসমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ
  • স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন পুনর্নিয়োগ, পদ ১২৭
  • এইচএসসিতে গত বছরের চেয়ে পাসের হার কমেছে ১৯ শতাংশ
  • কমেছে পাসের হার, অর্ধেকেরও কমে নেমেছে জিপিএ-৫
  • দুই বছরে উধাও ১৬ হাজার কোটি, আইপিএলের বাজারমূল্য কমছে কেন
  • জন্মবিরতিকরণ বড়ির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
  • ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স
  • শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিল পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স
  • ইতিহাসের অভিনব পাঠ