মব ভায়োলেন্স, প্রতিহিংসা ও হিংস্রতা সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে
Published: 12th, July 2025 GMT
মব ভায়োলেন্সসহ মানুষে মানুষে ঘৃণা, বিদ্বেষ, প্রতিহিংসা ও হিংস্রতা সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
তিনি বলেন, “দেশের এমন ভয়ার্ত পরিস্থিতির জন্য ১৯৭১ এর দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে জীবন দেয়নি এদেশের সূর্যসন্তানরা। মানুষে মানুষে ঘৃণা, বিদ্বেষ, প্রতিহিংসা ও হিংস্রতা সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।”
পুরান ঢাকায় সোহাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় শনিবার (১২ জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
‘মব ভায়োলেন্সের নামে মানুষ হত্যা ও দেশব্যাপী চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে’ জানিয়ে এসব ঘটনায় তিনি গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সোহাগ হত্যায় গভীর শোক প্রকাশ করে গোলাম মোহাম্মদ কাদের নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।একইসাথে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদের তথ্য তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, “২৪ সালের আগষ্ট থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত ১০ মাসে মব ভায়োলেন্সে সারা দেশে হত্যা করা হয়েছে ১৭৪ জনকে। ঢাকা বিভাগে ৮০, খুলনা বিভাগে ১৪, রাজশাহী বিভাগে ১৬, রংপুর বিভাগে ৭, সিলেট বিভাগে ৫, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৯, বরিশাল বিভাগে ১৭ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জন নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন। মব ভায়োলেন্সে হত্যার তথ্যে ও সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের সম্প্রীতির ঐতিহ্য ধংস হয়ে যাচ্ছে।”
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান সরকারের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনের কড়া হুঁশিয়ারিতেও কমছে না ভয়ার্ত ও ঘৃণ্য মব ভায়োলেন্স। সারা দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।”
মব ভায়োলেন্স সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসীদের আইনের আওয়তায় এনে দেশে নিরাপদ পরিস্থিতি সৃষ্টিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মব ভ য় ল ন স পর স থ ত
এছাড়াও পড়ুন:
আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে দৃঢ় পদক্ষেপ চাই
রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যাওয়া এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর খুলনায় প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড সামগ্রিকভাবে একটি বার্তাই দেয়—দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে গভীর শঙ্কার জন্ম দিতে বাধ্য।
মানবাধিকার সংস্থা এনএসএফের প্রতিবেদনের বরাতে প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, নভেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা অক্টোবরের ৪৯ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২-এ। আহত ব্যক্তির সংখ্যা একলাফে ৫৪৭ থেকে ৭২৪ এবং নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ২ থেকে ৯—এই ঊর্ধ্বগতি শুধু পরিসংখ্যান নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতার প্রতিফলন। রাজনৈতিক সহিংসতা যখন মাসে মাসে বাড়ে, তখন তা নির্দেশ করে যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা মিলেমিশে সমাজে একধরনের সহিংসতার পরিবেশ তৈরি করেছে।
গণপিটুনির পুনরুত্থান ভয়াবহ সংকটের ইঙ্গিত দেয়। আইনকে পাশ কাটিয়ে সংঘবদ্ধ জনতা বিচার করছে—এমন প্রবণতা যেকোনো সভ্য সমাজের জন্য লজ্জাকর। নভেম্বর মাসে ৪৩টি ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু; অক্টোবরে নিহত হয়েছেন ১২ জন—এ সংখ্যাগুলো শুধু হত্যার পরিসংখ্যান নয়; এ সংখ্যা আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা হারানোর ইঙ্গিত। চুরি, ছিনতাই বা ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগেই হোক, আইনের শাসন ভেঙে পড়লে সাধারণ মানুষ নিজেরাই আইন হাতে তুলে নেয়। অথচ অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা, গণপিটুনি ঠেকাতে তৎপরতা দেখানো—এসব দায়িত্ব সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
নভেম্বরে কারা হেফাজতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব মৃত্যুর ক্ষেত্রে অসুস্থতার কথা বলা হলেও সেটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারাগারের অভ্যন্তরে প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলা কি এই মৃত্যুর কারণ? বারবার তদন্তের দাবি উঠলেও দায় নির্ধারণ বা কাঠামোগত সংস্কারের কোনো অগ্রগতি নেই।
সীমান্ত পরিস্থিতিও সমানভাবে নাজুক। ভারতীয় কোস্টগার্ড কর্তৃক ১০৮ জেলে আটক, আরাকান আর্মির হাতে ৪৭ জেলে, বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশির মৃত্যু—এসব মিলিয়ে সীমান্তবাসী আজ অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে। প্রতিবাদ বা কূটনৈতিক অনুরোধে তেমন ফল না হওয়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সীমাবদ্ধতাকেই সামনে নিয়ে এসেছে।
নভেম্বর মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যেভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেগুলো নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের উদ্বেগ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত রোববার খুলনায় দিনদুপুরে আদালত চত্বরে হাজিরা শেষে বের হওয়ার সময় দুজনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আদালত প্রাঙ্গণ, যেখানে মানুষের নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি থাকার কথা, সেখানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা যেভাবে প্রবেশ করেছে ও হত্যা করে বেরিয়ে গেছে, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা ও গোয়েন্দা নজরদারির ব্যর্থতা তুলে ধরেছে। খুলনায় ১৫ মাসে ৪৬টি হত্যাকাণ্ড এ শহরকে ধীরে ধীরে সহিংসতার কেন্দ্রে পরিণত করছে।
রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেওয়া পদক্ষেপ এখনো জোরালো ও দৃশ্যমান নয়। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে সমন্বিত অভিযান—এখনই এসব পদক্ষেপ নিতে হবে।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ রকম অবনতি চলতে থাকলে নির্বাচনী পরিবেশে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়টিকে সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।