কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী-পাটুয়ারটেক এলাকায় সমুদ্রসৈকত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে আজ বুধবার সকাল সাতটার দিকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, নিহত ব্যক্তির আনুমানিক বয়স ৩০ বছর। তাঁর পরনে কোনো কাপড় ছিল না। মুখে তিনটি ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। সৈকতের বালিয়াড়িতে লাশটি পড়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সাগর থেকে লাশটি ভেসে এসেছে।
ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দুর্জয় সরকার আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। ওই ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তেরও চেষ্টা করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিরল গাছ কৃষ্ণবট
সারা পৃথিবীতে বটের কত যে ভাইবোন আছে, কে জানে! এ দেশেই আছে অন্তত ১৫ রকমের বট। এগুলোর একটি কৃষ্ণবট। এ গাছের অন্য নাম কৃষ্ণডুমুর। বট একান্তই বাংলার গাছ, সে অর্থে কৃষ্ণবটও এ অঞ্চলের গাছ।
বট ও কৃষ্ণবট—দুটিই মোরেসি গোত্রের গাছ, ডুমুরও এ গোত্রের। বটের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Ficus benghalensis এবং কৃষ্ণবটের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Ficus krishnae। তৎকালীন বোটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া, কলকাতার পরিচালক ডেভিড প্রেইন ১৮৯৬ সালে হাওড়ার আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেনের কাছে থাকা একজনের ব্যক্তিগত বাগানে এই প্রজাতির দেখা পান। সেই গাছের দুটি ডাল কেটে এনে তিনি বাগানে পুঁতে দেন, যা থেকে দুটি গাছের জন্ম হয়। পরবর্তী সময়ে ওই দুটি গাছ থেকে আবার ডাল কেটে কেটে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে ও ওয়ারীতে বলধা গার্ডেনে দুটি কৃষ্ণবটগাছ লাগানো হয়। গাছ দুটি বেশ বড়, তবে অন্য বটের মতো বিশাল নয়। কৃষ্ণবটের ঝুরি অন্য বটের মতো নামে না, পাতাগুলোও অন্য রকম, উচ্চতাও কম। কৃষ্ণবটের পাতা যেন ঝালমুড়ি খাওয়ার ঠোঙা, বোঁটার কাছে দুই পাশ থেকে পত্রফলক কেউ যেন টেনে আঠা দিয়ে জুড়ে পকেট তৈরি করে দিয়েছে। এই অদ্ভুত আকৃতিই কৃষ্ণবটকে অন্যান্য বটগাছ থেকে আলাদা করে দিয়েছে।
পাতার এই ঠোঙার মতো গড়ন অনেক লোককাহিনির জন্ম দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় কাহিনির একটি হলো, শ্রীকৃষ্ণ মাখন খেতে খুব পছন্দ করতেন। তাই তিনি প্রায়ই শিকেয় তুলে রাখা মাখনের ভাণ্ড থেকে মাখন চুরি করে খেতেন। একবার যখন মা যশোদা তাঁকে মাখন চুরি করার সময় ধরে ফেললেন, তখন তিনি এই বটের পাতাকে ঠোঙার মতো করে তার মধ্যে মাখন লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। তখন থেকেই এ গাছের পাতার এরূপ গড়ন। এ কাহিনি কৃষ্ণবটের নামকরণের পেছনেও ভূমিকা রাখতে পারে। এ থেকে হিন্দিতে এ গাছের নাম রাখা হয়েছে ‘মাখন কোটরি’। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও শ্রীলঙ্কায় এ গাছ আছে।
ঢাকা শহরে আর কোথাও কৃষ্ণবটগাছ চোখে পড়েনি। তবে ২০২৪ সালের জুনে অনুষ্ঠিত আগারগাঁওয়ে বৃক্ষমেলায় কয়েকটি নার্সারিতে বিদেশ থেকে আমদানি করা বেশ কিছু কৃষ্ণবটের চারা বিক্রি করতে দেখা গেছে। তাতে মনে হয়, এখন দেশের আরও অনেক জায়গায় এ গাছ ছড়িয়ে পড়েছে।
বলধা গার্ডেনের কৃষ্ণবটগাছের নামফলকে লেখা আছে, ‘পাতা মুড়ির ঠোঙার মতো ফোল্ডিং হয়ে থাকে। টুনটুনি পাখি অনায়াসে এই পাতায় বাসা করতে পারে। ধারণা করা হয়, বটের এই পাতায় কৃষ্ণ মাখন চুরি করে খেত বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে কৃষ্ণবট।’
বলধা গার্ডেনের নামফলকে কৃষ্ণবটের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম লেখা রয়েছে Ficus benghalensis var. krishnae; অর্থাৎ কৃষ্ণবটকে বটের একটি জাত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কলকাতার আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেনের তথ্যমতে, কৃষ্ণবটের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Ficus krishnae। কৃষ্ণবট পাতা দিয়েই যে বটগাছের থেকে আলাদা, শুধু তা–ই নয়,Ñ এ দুটি প্রজাতির ক্রোমোজোম, ডিএনএ গঠন ইত্যাদির বিচারেও পৃথক। তাই এটিকে আলাদা একটি প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করাই সংগত, জাত নয়।
কৃষ্ণবটগাছের পাতা বটের মতো সম্পূর্ণ ঝরে যায় না, আবার বটের মতো অনেক পাতা নিয়ে ডালপালা ছায়া তৈরি করে না, গাছ চিরসবুজ বৃহদাকারের বৃক্ষ, ৮ থেকে ২২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। ডালপালাগুলো এলোমেলেভাবে ছড়ায়, স্বল্প কিছু ঝুরি নামে বয়স্ক ডাল থেকে। পাতা দেখতে অনেকটা কাঁঠালপাতার মতো হলেও তার গোড়া কাপ বা ঠোঙার মতো। পাতা ৮ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার চওড়া। পাতার বোঁটা ভাঙলে সেখান থেকে সাদা দুধের মতো আঠালো কষ ঝরে। ফল খুব ছোট, আকার মাত্র ১ থেকে ৩ মিলিমিটার। ফল পাকলে লাল হয়ে যায়।
কৃষ্ণবটগাছের ঔষধি গুণ রয়েছে। এ গাছের শিকড়, ডালপালা, পাতা ও ফল থেকে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি করা হয়। বিশেষ করে আলসার বা ক্ষত, জ্বর, কুষ্ঠ, বমি, আমাশয়, সিফিলিস, যকৃতের প্রদাহ ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয় বলে বিভিন্ন গবেষণাপত্র থেকে জানা গেছে।
মৃত্যুঞ্জয় রায়: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক