ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এক ব্যক্তি সাধুর ছদ্মবেশে নিজের স্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। দিল্লি পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। গতকাল বুধবার মধ্যরাতে দক্ষিণ দিল্লির নেব সারাই এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ জানায়, নিহত ওই নারীর নাম কিরণ ঝা। তাঁর স্বামীর নাম প্রমোদ ঝা। গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে প্রমোদ বাড়িতে গিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালান। পরে সকালে প্রতিবেশীরা তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তখনই বিষয়টি সামনে আসে। ঠিক কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

পুলিশ আজ বৃহস্পতিবার ভোর চারটার দিকে কিরণ ঝায়ের ব্যাপারে খবর পায়। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, অভিযুক্ত প্রমোদ ঝা রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে কিরণের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি তখনই পালিয়ে যান।

প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ৫৫ বছর বয়সী প্রমোদ ঝা বিহারের মুঙ্গের জেলার বাসিন্দা। ১০ বছর আগে তিনি তাঁর স্ত্রী কিরণ ঝায়ের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যান। কিরণ দিল্লিতে হেলথকেয়ারে কাজ করতেন। ১ আগস্ট প্রমোদ আবার দিল্লিতে আসেন।

কিরণ তাঁর ছেলে দুর্গেশ ঝা, পুত্রবধূ কমল ঝা ও নাতনিকে নিয়ে থাকতেন। দুর্গেশ বিহারের দরভাঙ্গায় একটি মাইক্রোফিন্যান্স কোম্পানিতে কাজ করেন। এ ঘটনার সময় তিনি দিল্লিতে ছিলেন না।

ফরেনসিক টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়িটিও উদ্ধার করা হয়েছে।

অভিযুক্ত প্রমোদ ঝাকে ধরতে পুলিশ বিভিন্ন রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশ বলছে, হত্যার কারণ এখনো পরিষ্কার নয়, তবে তদন্ত চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’

‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’ অপারেশন টেবিলে শুয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এক চিকিৎসকের মুখে তারেক শাহরিয়ার তন্ময়কে শুনতে হয়েছিল এমন কটূক্তি।

তন্ময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল দিনে পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) শিক্ষার্থী। তার কাছে হাসপাতালের সেই অপমান আজো দগদগে ক্ষত।

গত বছর ১৬ জুলাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে তন্ময়ও অংশ নেন। রাজধানীর ভাটারা থানা ও নতুন বাজারের রাস্তায় দিনভর চলতে থাকে স্লোগান ও মিছিল। ১৭ জুলাই আন্দোলনে সাময়িক বিরতি এলেও পরদিন সকালেই ফের রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

ফ্যাসিবাদ পতনের বর্ষপূর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা আয়োজন

বাকৃবি ২ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ১৫৪ জনকে শাস্তি

তন্ময় বলেন, “বন্ধুর ফোনে খবর পেয়ে বের হওয়ার আগে বেলকনি থেকে দেখি আওয়ামী লীগের কিছু লোক বস্তা থেকে অস্ত্র-ছুরি বের করছে। তখনই ভয় পেয়ে আইডি কার্ড গলায় ঝুলাইনি।”

তিনি বলেন, “সেদিন নতুন বাজার থেকে শুরু হওয়া মিছিল বাঁশতলা পেরিয়ে উত্তর বাড্ডার দিকে এগোতে থাকলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। পুলিশও টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ঠিক তখনই পুলিশের শর্টগানের গুলি এসে লাগে আমার বাম চোখে।”

রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে প্রথমে এএমজেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। চিকিৎসকরা জানান, চোখ ফেরানো সম্ভব নয়।

তন্ময় বলেন, “অপারেশনের আগে এক চিকিৎসক এসে বলেছিলেন, ‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’ তখন আমি দুর্বল অবস্থায় অপারেশন টেবিলে শুয়ে কিছু বলতে পারিনি।”

অপারেশনের পরও তাকে অন্য রোগীর সঙ্গে একই বেডে রাখা হয়। বাইরে ছাত্রলীগের হামলার চেষ্টা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসে পাশে দাঁড়ান ও খরচ বহন করেন। খবর পেয়ে রংপুর থেকে ছুটে আসেন তার মা-বাবা। ছেলেকে দেখে ভেঙে পড়েন তারা।

পরে বিদেশে চিকিৎসার চেষ্টা হলেও ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহায়তা, শিক্ষক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তা পেয়েও উন্নত চিকিৎসা হয়নি। এখন বিদেশে গেলেও তেমন লাভ নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় চিকিৎসকরা।

স্বৈরাচার পতনের এক বছর পর দেশ নতুন আশা দেখলেও তন্ময়ের চোখে আলো ফেরেনি। তিনি বলেন, “১৮ জুলাই শুধু আমার চোখে গুলি লাগেনি, সেদিন আমার স্বপ্নেও গুলি লেগেছিল। আমি শুধু একটা চোখ হারাইনি, হারিয়েছি জীবনের ছন্দও।”

তন্ময়ের জীবনে যে অন্ধকারের দাগ লেগেছে, তা দেশের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে। স্বৈরাচার বিদায়ের ১ বছর পূর্ণ হলো আজ। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো পুরোপুরি সেরে ওঠার জন্য সময় প্রয়োজন।

তন্ময়ের মতো অসংখ্য তরুণের ত্যাগ ও বেদনায় আজকের মুক্তি সম্ভব হয়েছে, যা আমাদের সবার কাছে চিরস্মরণীয়।

ঢাকা/রাকিবুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিবনারায়ণ রায়ের রবীন্দ্রমূল্যায়ন
  • ইয়েলো টিশার্ট
  • ‘কিরে, কেমন লাগছে?’, রাজের প্রাক্তন স্ত্রীর পোস্ট ঘিরে তোলপাড়
  • ‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’