বিড়াল প্রেমীদের জন্য আজ একটি বিশেষ দিন, কারণ আজ বিড়াল দিবস। বিড়াল একটি নরম প্রকৃতির বুদ্ধিমান প্রাণী। এর সংস্পর্শে যারা থাকেন তাদের হৃদয় কোমল হয়। এমনকি তাদের হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে।
সর্বপ্রথম ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার (IFAW) সংস্থার উদ্যোগে ২০০২ সাল থেকে ৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক বিড়াল দিবস পালিত হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
‘‘বিড়াল একটি অসাধারণ পোষা প্রাণী। এর স্বভাব শান্ত, বুদ্ধিমান এরা স্নেহশীল। বিড়াল অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় এটি অনেকটা স্বাধীনচেতা। এই প্রাণী নিজেই নিজের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার যত্ন নিতে পারে। সেজন্যই প্রতিদিন এর রক্ষণাবেক্ষণে খুব বেশি সময় বা কষ্ট দিতে হয় না।’’— ব্রিটিশ লেখক মারলন এমনটাই মনে করেন।
আরো পড়ুন:
ধীরে চলছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার, সুপারিশ বাস্তবায়নে নেই অগ্রগতি
যেসব রোগ থাকলে ‘গ্রিন টি’ পান করবেন না
এদিকে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিড়াল পোষার নানারকম উপকারিতা আছে। যারা বিড়াল পোষেন তাদের স্ট্রেস কম থাকে, মন আনন্দে থাকে।
বিড়াল পুষতে খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। ছোট্ট বাসা বা অ্যাপার্টমেন্টেও এটি অনায়াসে পালনযোগ্য। একদল গবেষক প্রায় চার হাজার পাঁচশো জন নারী ও পুরুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেন – ‘‘যারা বিড়াল পালন করেছেন তাদের তুলনায় যারা কখনও বিড়ালের সঙ্গে সময় কাটাননি, তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা ৪০ শতাংশ বেশি।’’
একাকীত্ব ঘোচাতে, হৃদরোগে ঝুঁকি কমাতে এবং হাসি-খুশি থাকতে আজই একটি বিড়াল পোষার কথা ভাবতে পারেন। তবে বিড়াল পালনে কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও আছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে যা যা করতে পারেন
নিয়মিত বিড়ালের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। বিড়ালের লিটার বক্স পরিষ্কার করার সময় গ্লাভস এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বিড়ালের সঙ্গে খেলার পর হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। অন্তঃসত্ত্বারা বিড়ালের সংস্পর্শে আসার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিড়ালকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং এর লোম পরিষ্কার রাখতে হবে।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমানের জীবন অতীতের আফসোসে বন্দী থাকার নয়
জীবনের পথচলায় আমরা প্রায়ই অতীতের ছায়ায় আটকে পড়ি। ভুল, ক্ষতি বা হারানো সুযোগের জন্য আফসোসে হৃদয় ভারী হয়ে ওঠে। বর্তমানে অসন্তোষ আর ভবিষ্যতের ভয় আমাদের শান্তি কেড়ে নেয়।
কিন্তু মুসলিমের জীবন এই আফসোসের শৃঙ্খলে বন্দী থাকার নয়। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় যে অতীতকে ছেড়ে দিয়ে বর্তমানকে আল্লাহর কদরে গ্রহণ করতে হবে এবং ভবিষ্যৎকে তাঁর রহমতের ওপর সমর্পণ করতে হবে।
কোনো বিপদ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া আসে না। যে আল্লাহর ওপর ইমান আনে, তিনি তার হৃদয়কে পথ দেখান। আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।সুরা তাগাবুন, আয়াত: ১১এ লেখায় আমরা দেখব কীভাবে ইমানের শক্তি আমাদের অতীতের বন্ধন থেকে মুক্ত করে, হৃদয়ে শান্তি নিয়ে আসে।
অতীতের আফসোস: মানসিক অশান্তির কারণজীবনের কোনো না কোনো মুহূর্তে আমরা অতীতের দিকে তাকাই। একটি ভুল সিদ্ধান্ত, হারানো সম্পর্ক বা উপেক্ষিত সুযোগ—এগুলো হৃদয়ে কাঁটার মতো বেঁধে। মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর আমরা সেই কষ্টের স্মৃতি চিবিয়ে চলি। ‘যদি তখন এটা করতাম!’ বা ‘যদি সেটা ছেড়ে দিতাম!’—এই কথাগুলো মনে ঘুরপাক খায়।
এক প্রাচীন কবি বলেছিলেন, “আমার জানা নেই ‘যদি’ কোথায়?—এই ‘যদি’ আমাদের অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়।” (আলী সাল্লাবি, ইমান বিল কাযা ওয়াল কদার, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃ. ২৯০, দার আল-মা’রিফা, বৈরুত, ২০১১)
মনোবিজ্ঞানী ও সমাজকর্মীরা বলেন, অতীতের আফসোস ভুলে বর্তমানে বাঁচতে হবে, কারণ অতীত ফিরে আসে না।
আরও পড়ুনমুসলিম বিশ্বে আধুনিকতার ধারণা এল যেভাবে২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫যুক্তরাষ্ট্রের একজন অধ্যাপক তাঁর ছাত্রদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে কাঠ কেটেছে?’ অনেকে হাত তুললেন। ‘আর কাঠের গুঁড়ো কেটেছে?’ কেউ হাত তুললেন না। তিনি বললেন, ‘কাঠের গুঁড়ো কাটা যায় না, কারণ তা ইতিমধ্যে অনেক বেশি কাটা। অতীতের আফসোসে ডুবে থাকা তেমনই অর্থহীন।’ (ডেল কার্নেগি, দুশ্চিন্তা ছেড়ে জীবন শুরু করুন, পৃ. ১৭৩)
এই আফসোস কেবল মুখে কুঞ্চনরেখা ফেলে বা পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি করে, কোনো উপকার করে না।
অতীতকে ক্ষমা, বর্তমানকে গ্রহণমুসলিমের জীবন অতীতের অনুশোচনায় বন্দী থাকার নয়। ইমানের শক্তি তাকে অতীতের কষ্ট থেকে মুক্ত করবে, বর্তমানকে আল্লাহর পক্ষ থেকে বলে গ্রহণ করতে শেখাবে।
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম এবং আল্লাহর কাছে প্রিয়তর। প্রতিটিতে কল্যাণ আছে। যা তোমার উপকারে আসে তার জন্য চেষ্টা করো, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো এবং অসহায় হয়ো না। যদি কোনো বিপদ আসে, তাহলে বলো, ‘নিয়তি আল্লাহর, তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন’। কারণ, ‘যদি’ শয়তানের কাজের দরজা খোলে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৬৪)
কোরআন বলে, ‘কোনো বিপদ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া আসে না। যে আল্লাহর ওপর ইমান আনে, তিনি তার হৃদয়কে পথ দেখান। আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।’ (সুরা তাগাবুন, আয়াত: ১১)
মুসলিমের স্লোগান হলো: ‘নিয়তি আল্লাহর, তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন’, আলহামদু লিল্লাহি ‘আলা কুল্লি হাল’ (সব অবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা)।
এক পারসি নেতা সাহাবিদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কারা?’ তাঁরা বললেন, ‘আমরা আল্লাহর নিয়তি। তিনি আমাদের দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা করেছেন, আর আমাদের তোমাদের দিয়ে।কেন অতীতের আফসোস অর্থহীনঅতীতের কষ্টে আটকে থাকা যেন ‘পিষে যাওয়া আটা পেষা’ বা ‘কাটা কাঠের গুঁড়ো কাটা।’ কবি বলেছেন, ‘যা চলে গেছে তা গেছে, আশা অদৃশ্য, তোমার কাছে আছে শুধু এই মুহূর্ত।’ (ইউসুফ আল–কারাজাভি, ইমান বিল কদার, পৃ. ১০১, দার আশ-শুরুক, কায়রো, ২০০০)
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, অতীতের দুশ্চিন্তা শুধু মুখে কুঞ্চনরেখা ফেলে বা পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি করে। কিন্তু ইমানের দৃষ্টিতে, অতীতের প্রতিটি ঘটনা আল্লাহর কদরে ঘটে—এটি তাঁর পরীক্ষা। যার ইমান শক্তিশালী, তার হৃদয় আল্লাহর হাতে নিরাপদ।
ইসলামের ইতিহাসে একটি ঘটনা আছে, কোনো একটি অঞ্চল বিজয়ের সময় এক পারসি নেতা সাহাবিদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কারা?’ তাঁরা বললেন, ‘আমরা আল্লাহর নিয়তি। তিনি আমাদের দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা করেছেন, আর আমাদের তোমাদের দিয়ে। তুমি যদি আকাশের মেঘেও থাকতে, আমরা তোমার কাছে উঠে যেতাম।’ (ইউসুফ আল–কারাজাভি, ইমান বিল কদার, পৃ. ১০১, দার আশ-শুরুক, কায়রো, ২০০০)
আরও পড়ুনমুসলিম বিশ্বে জ্ঞানচর্চার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার উপায়২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫বর্তমানে জীবনযাপন মহানবীর (সা.) শিক্ষামহানবী (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, উপকারী কাজের জন্য চেষ্টা করতে হবে, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে এবং অসহায় হওয়া যাবে না। তিনি বলেছেন, ‘শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম এবং আল্লাহর কাছে প্রিয়তর। যা তোমার উপকারে আসে তার জন্য চেষ্টা করো, আল্লাহর সাহায্য চাও এবং অসহায় হয়ো না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৬৪)
কোরআন আমাদের আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে শেখায়: ‘আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি।’ (সুরা ফাতিহা, আয়াত: ৫)
শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম এবং আল্লাহর কাছে প্রিয়তর। যা তোমার উপকারে আসে তার জন্য চেষ্টা করো, আল্লাহর সাহায্য চাও এবং অসহায় হয়ো না।’সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৬৪কবি বলেছেন, ‘যদি আল্লাহর সাহায্য না থাকে, তবে মানুষের সব চেষ্টা বৃথা’ (আলি সাল্লাবি, ইমান বিল কাযা ওয়াল কদার, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃ. ২৯১, দার আল-মা‘রিফা, বৈরুত, ২০১১)
অতীত থেকে মুক্তির পথঅতীতের আফসোস থেকে মুক্তির জন্য ইসলাম আমাদের কয়েকটি সহজ পথ দেখায়:
তকদিরে বিশ্বাস আনুন: সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটে। অতীতের কষ্টকে তাঁর পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করুন।
‘যদি’ এড়িয়ে চলুন: এই শব্দ শয়তানের ফাঁদ। পরিবর্তে বলুন, ‘নিয়তি আল্লাহর, তিনি যা ইচ্ছা তা–ই করেন’।
বর্তমানে কাজ করুন: উপকারী কাজে মনোনিবেশ করুন, আল্লাহর সাহায্য চান। অতীতকে ‘পিষে যাওয়া আটা’ হিসেবে ছেড়ে দিন।
দোয়া করুন: কোরআন তিলাওয়াত করুন, নামাজে আল্লাহর কাছে শান্তি প্রার্থনা করুন।
আসুন, আমরা তকদিরে সন্তুষ্ট হয়ে এবং বর্তমানে কাজ করে আল্লাহর কাছে শান্তি প্রার্থনা করি। আল্লাহ আমাদের হৃদয়ে শান্তি দিন, জীবনকে বরকতময় করুন।
আরও পড়ুনইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় মুসলিম নারীর করণীয়২৬ আগস্ট ২০২৫