দলের এক সময়ের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদদের বহিস্কৃত নেতা উল্লেখ করে শনিবার তাদের ডাকা জাতীয় পার্টির জাতীয় কাউন্সিল অবৈধ ও এখতিয়ার বহির্ভূত বলে দাবি করেছেন জিএম কাদের অংশের মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। জাতীয় পার্টির নামে কাউন্সিল আয়োজনের মতো অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে বহিস্কৃতনেতাদের বিরত থাকার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শামীম পাটোয়ারী এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “আদালতে এসব বহিস্কৃত নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের পদে জিএম কাদেরের থাকা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা এবং বহিস্কৃতদের ফিরিয়ে নেওয়াসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে আদেশ প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু আদালত জিএম কাদের চেয়ারম্যান পদে থাকতে পারবেন না এমন কোনো আদেশ দেননি। বহিস্কৃতদের  ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়েও কোনো আদেশ দেননি। শুধুমাত্র চেয়ারম্যান দলের কার্যক্রম চালাতে পারবেন না বলে একটা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন। ফলে জিএম কাদের এখনও জাতীয় পার্টির বৈধ চেয়ারম্যান রয়েছেন। যেহেতু তিনি বৈধ চেয়ারম্যান, তার অনুমতি ছাড়া জাতীয় পার্টির কাউন্সিল ডাকার সুযোগ নাই। তারা দলে বহিস্কৃত, জাতীয় পার্টির কেউ নই।”

আরো পড়ুন:

জিএম কাদের বাদ, জাপার কাউন্সিল শনিবার

পু‌লি‌শের বাধা উপেক্ষা ক‌রে জাপার বি‌ক্ষোভ সমাবেশ

“তাছাড়া বহিস্কৃত কোনো নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেজে কাউন্সিল ডাকা সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ।”

শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন,“গঠনতন্ত্রের ২০/২(খ) ধারাতে বলা হয়েছে চেয়ারম্যানের দীর্ঘ সময়ের অনুপস্থিতে সিনিয়র কো চেয়ারম্যান, কো চেয়ারম্যান অথবা প্রেসিডিয়ামের কো সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করতে পারবেন। অর্থাৎ চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে পারবেন। জিএম কাদের জাতীয় পার্টির বৈধ চেয়ারম্যান হিসেবে এখন দেশে রয়েছেন, সুস্থ আছেন এবং নিয়মিত অফিসে আসেন, তাছাড়া কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করেননি। চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে অন্য কোন পন্থায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ জাতীয় পার্টিতে নেই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তাদের কাজ করার প্রক্রিয়াটি শুরু থেকে বেআইনি এবং অবৈধ।”

তিনি বলেন, “বহিস্কৃতদের কাউন্সিলে জাতীয় পার্টির মূল ধারার কোন নেতাকর্মী যাবে না। আমি মনে করি, আমরা দীর্ঘদিন একসাথে রাজনীতি করেছি, তাই শিষ্টাচারের কারণে তারা কাউন্সিল থেকে বিরত থাকবেন। তাদের এই কাউন্সিল রাজনীতিতে কোন সুবাতাস আনবে না। কারণ, তাদের এই কাউন্সিল আহ্বান সম্পূর্ণ অবৈধ। যারা জাতীয় পার্টি ভেঙেছে তারা কেউই রাজনীতিতে সফল হতে পারেনি। এরশাদের জাতীয় পার্টি বা জিএম কাদের এর জাতীয় পার্টি হচ্ছে মূল ধারার জাতীয় পার্টি। মূল ধারার জাতীয় পার্টি টিকে ছিল টিকে থাকবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে পাটোয়ারী বলেন, “গত ২৮ জুন জাতীয় পার্টির জাতীয় কাউন্সিল হবার কথা ছিল। হল বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে কাউন্সিলটি স্থগিত করা হয়। ওই সময়ে হল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাজেট সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। তাই, তারা আমাদের হল ভাড়ার অগ্রিম টাকা গ্রহণ করেননি।পরবর্তীতে আমরা ২৭ তারিখেও হল চেয়েছিলাম। কিন্তু, হল কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে হল বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করেন। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কিছু সিনিয়র নেতা এই বিষয়টিকে মিথ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই ঘটনায় আমাদের কিছু সিনিয়র নেতারা ২৮ জুনই কাউন্সিল করার জন্য রেষারেষি শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে ২৫ জুন জাতীয় পার্টির ৭৮টি ইউনিট কমিটির নেতারা সভা করে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এর উপরে পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করে। একই সাথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হলে পরবর্তীতে ২৮ জুন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সিনিয়র নেতাদের দল থেকে বহিস্কার করার সিদ্ধান্ত হয় প্রেসিডিয়াম সদস্যদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ৩০ ধারা অনুযায়ী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের অনেককেই বহিস্কার করেন। এর প্রেক্ষিতে বহিস্কৃতরা একটি দেওয়ানী মোকদ্দমা করেন। দীর্ঘ শুনানির পরে আদালত আদেশ দেন, আবেদনটি পরিবর্তিত আকারে মঞ্জুর করা হলো।”

“আদালতের নির্দেশনাটি হলো জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও দপ্তর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার পরবর্তী ধার্য্য তারিখ পর্যন্ত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই আদেশে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানকে বাতিল করা হয়নি, চেয়ারম্যান পদ অবৈধ ঘোষণা করা হয়নি এবং বর্তমান চেয়ারম্যানকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়নি। মানে হচ্ছে যারা প্রাথমিক সদস্য পদসহ বহিস্কৃত হয়েছে, তারা অদ্যবধি পর্যন্ত বহিস্কৃত আছে।যারা বহিস্কৃত হয়েছেন তাদের পক্ষে জাতীয় পার্টির কোন সভায় অংশ নেওয়া অবৈধ। তারা কোন সভা ডাকতে পারেন না এবং প্রেসিডিয়াম সভা করতে পারেন না।বহিস্কৃতদের কাউন্সিল ডাকার অধিকার নেই। অনেকেই জাতীয় পার্টির পদ পদবী ব্যবহার করে সভা করছেন, কেউ মহাসচিব দাবি করছেন। প্রকৃতপক্ষে আদালতের আদাশে মহাসচিব শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি এবং আদেশেও মহাসচিবের বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। তাহলে আরেকজন কি করে মহাসচিব দাবি করেন? আমরা লক্ষ্য করছি আদালতের রায়ের অপব্যাখ্যা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ জানাচ্ছি।”

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, অ্যাডভোকেট মো.

রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর শিকদার লোটন, ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস, অধ্যাপক মহসিনুল ইসলাম হাবুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার মইনুর রাব্বি চৌধুরী রুম্মন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হেনা খান পন্নী, প্রফেসর ডক্টর গোলাম মোস্তফা, মো. খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান আমির উদ্দিন ডালু, মো. হেলাল উদ্দিন, এম এ সোবাহান আখতার হোসেন দেওয়ান, চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী, যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক সমরেশ মণ্ডল মানিক প্রমুখ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ক উন স ল জ এম ক দ র প রব ন সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লার সেই বিএনপিকর্মী ইব্রাহিম মারা গেছেন

ফতুল্লার বিএনপি কর্মী ইব্রাহিম (৫২) মারা গেছেন। সে ফতুল্লা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ছিলেন। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে তিনি ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীনবস্থায় মারা যান।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে হাজিগঞ্জ জামে মসজিদে নিহতের নামাজের জানাজা শেষে পাঠানটুলি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

নিহত ইব্রাহিম ফতুল্লা থানার ফতুল্লা ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ড হাজীগঞ্জের আব্দুল জলিলের পুত্র। তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক।

জানা যায়,২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে বিএনপির ডাকা মহা সমাবেশে ফতুল্লা ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি ও যুবদলের ব্যানারে সে অংশগ্রহণ করে।

সমাবেশের শেষের দিকে মুল মঞ্চের পেছনের দিকে পুলিশের সাথে বিএনপির নেতা,কর্মীও সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ হয়। সে সময় পুলিশ বিএনপি নেতা- কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের কে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

ইব্রাহিম পুলিশের হামলায় মারাত্নক আহত হয়ে রাস্তায় পরে থাকে। সে সময় সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। ঘটনার চারদিন পর তার সহোযোগিরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে খুঁজে পায়। দীর্ঘদিন সহোযোগিরা নিজেদের অর্থায়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর আল বারাকা নামের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা করায়। 

পরবর্তীতে ইব্রাহিমকে নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন হলে বিএনপি নেতা ও শিল্পপতি আবু জাফর আহমেদ  বাবুল তার চিকিৎসার দ্ধায়িত্ব নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পিজি হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানেই রোববার রাতে তিনি মারা যান।

ফতুল্লা ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ পারভেজ মিয়া জানান,নিহত ইব্রাহিম ২০২৩ সালে ২৮ অক্টোবর  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ঘোষিত পল্টন পার্টি অফিসের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপি ও  ইউনিয়ন যুবদলের সাথে ঢাকায় গিয়েছিলেন । 

সমাবেশ চলাকালে ফতুল্লা ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রুহুল আমিন টিপু  ও নিহত ইব্রাহিম এবং তিনি সহ আরো নেতা-কর্মীরা পল্টন পার্টি অফিস সংলগ্ন  চায়না টাওয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।  হঠাৎ পুলিশ তাদের উপর চড়াও হয়। এতে করে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে  পরে।

অতর্কিত হামলায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার  পর  প্রায় চার দিন পর  পত্রিকার নিউজে দেখতে পায় ইব্রাহিম নামে একজন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

সেই সংবাদের পর  তার পরিবারের লোকজন  এবং ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রওশন আলী ঢাকা মেডিকেলে খোঁজ নেওয়ার পরে তারা নিশ্চিত হন যে ঢাকা মেডিকেল কলেজে থাকা চিকিৎসারতি হচ্ছে তাদের নিখোঁজ  ইব্রাহিম।

ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসা শেষ করে তাকে বাসায় আনা হয়। বাসায় আনার পরে উনি আবার অসুস্থ হয়ে পরে। ফলে ৮ নং ওয়ার্ডের সকল নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় পুনরায় তাকে মদনপুর আল বারাকা হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় তিন মাস চিকিৎসা  শেষে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে তিনি আবারও অসুস্থ হয়ে পরেন। 

এমতাবস্থায় নাসিক ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক রিপন তাকে দেখতে আসলে স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশ পায়। প্রকাশিত সংবাদের পর বিএনপি নেতা শিল্পপতি  প্রাইম বাবুল ভাই তার চিকিৎসার দ্ধায়িত্ব নেন। 

বাবুল ভাই নিজে এসে তার দাত্ব নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পিজি হাসপাতালে ভর্তি করান। দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমান ১১ টা ৪০ মিনিটের সময় তিনি ইন্তেকাল করেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফতুল্লার সেই বিএনপিকর্মী ইব্রাহিম মারা গেছেন
  • সোভিয়েত–পরবর্তী দুনিয়ায় জেমস বন্ডের অভিযোজন