ফ্রান্সে পত্রিকার ‘সর্বশেষ’ হকার আলী আকবরকে জাতীয় সম্মাননা দিচ্ছেন মাখোঁ
Published: 10th, August 2025 GMT
নাম আলী আকবর। থাকেন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। শহরটির পুরোনো অধিবাসীদের কাছে তিনি খুব পরিচিত মুখ। আকবর প্রতিদিনের পত্রিকা বগলদাবা করে বেরিয়ে পড়েন। মুখে বলতে থাকেন দৈনিক পত্রিকার তরতাজা শিরোনামগুলো। এভাবেই পত্রিকা পৌঁছে দেন পাঠকের হাতে। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এ কাজ করছেন তিনি।
এটুকু পড়েই বোঝা যাচ্ছে আলী আকবর একজন সংবাদপত্রের হকার। পাঠকের হাতে ছাপা পত্রিকা পৌঁছে দেওয়া তাঁর কাজ। তবে আকবরের আলাদা বিশেষত্ব আছে। হারিয়ে যেতে বসা পেশা পত্রিকার হকারি প্যারিসে এখন একমাত্র তিনিই ধরে রেখেছেন। অর্থাৎ প্যারিস তথা পুরো ফ্রান্সে পত্রিকার সর্বশেষ হকার তিনি। সম্ভবত ইউরোপেও।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ দেশটির অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় সম্মাননা ‘অর্ডার অব মেরিট’–এর জন্য আলী আকবরকে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন দিয়েছেন। এটা সে দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননারও একটি। আগামী মাসে আলী আকবরকে এ সম্মাননা দেওয়া হবে। ফরাসি সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি এ সম্মাননা পাচ্ছেন।
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্ম আলী আকবরের। ষাটের দশকের শেষ ভাগে ইউরোপে পাড়ি জমান। শুরুতে যান নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে। সেখানে তিনি একটি ক্রুজ জাহাজে কাজ পান। পরে ১৯৭২ সালে ফ্রান্সে আসেন। বছরখানেক পর থিতু হন প্যারিসে। পত্রিকার হকারির কাজ নেন।মজার বিষয় হলো, প্রেসিডেন্ট মাখোঁ নিজেও ছাত্রজীবনে আলী আকবরের কাছ থেকে পত্রিকা কিনতেন।
স্মৃতি হাতড়ে আলী আকবর বলেন, ‘১৯৭৩ সালের দিকে আমি যখন প্যারিসে পত্রিকার হকারি শুরু করি, তখন ৩৫ থেকে ৪০ জন এ কাজ করতেন। এখন আর কেউ নেই। আমি একাই রয়ে গেছি।’
দিন বদলের স্রোতে ছাপা পত্রিকা ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। মানুষ ডিজিটাল মাধ্যমে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। সময়ের এই বাঁকবদলে পত্রিকার হকাররাও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছেন, পেশা বদলে ফেলছেন।
আলী আকবর বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ। এখন সবকিছু ডিজিটাল মাধ্যমে চলে। মানুষ শুধু নিজের টেলিফোন (মুঠোফোন) দেখতে চায়।’
১৯৭৩ সালের দিকে আমি যখন প্যারিসে পত্রিকার হকারি শুরু করি, তখন ৩৫ থেকে ৪০ জন এ কাজ করতেন। এখন আর কেউ নেই। আমি একাই রয়ে গেছি।আলী আকবর, প্যারিসে পত্রিকার হকারকেতাদুরস্ত ফ্যাশনশিল্পের জন্য পরিচিত প্যারিসের সেইন্ট জার্মেই এলাকার ক্যাফেগুলো ঘুরে আলী আকবর এখন বিখ্যাত ফরাসি পত্রিকা লা মঁদের মাত্র ৩০ কপি বিক্রি করতে পারেন। তিনি জানান, পত্রিকা বিক্রির টাকার অর্ধেক তিনি পান। তবে অবিক্রীত পত্রিকাগুলো ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই।
অথচ একসময় দৃশপট ছিল পুরো উল্টো। আলী আকবর জানান, ইন্টারনেট জমানার আগে পত্রিকার সন্ধ্যাকালীন মুদ্রণের পর প্রথম ঘণ্টায় প্রায় ৮০ কপি বিক্রি হয়ে যেত। তিনি বলেন, ‘সেসব দিনে পাঠকেরা দৈনিক পত্রিকা কেনার জন্য আমার চারপাশে ভিড় করতেন। আর এখন এক কপি পত্রিকা বিক্রি করতে আমাকেই পাঠকের পিছে পিছে ছুটতে হয়।’
পথে ঘুরে ঘুরে পাঠকের হাতে দৈনিক পত্রিকা পৌঁছে দেন আলী আকবর.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চালকের ‘ঘুমে’ নিহত ৭, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়নি
মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় লক্ষ্মীপুরের একই পরিবারের সাত জন প্রাণ হারানোর পর মাইক্রোবাসের চালক আকবর হোসেন (২৪) এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (৬ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজারে মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে তিন শিশু সাত জন নিহত হয়। দুর্ঘটনা কবলিতদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার উত্তর চৌপল্লী গ্রামে।
দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাসের আহত যাত্রীদের বরাত দিয়ে তাদের স্বজন আব্দুর রহিম বলেন, ‘‘চালকের ঘুমের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার কারণে আমার পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। এখনো পর্যন্ত পুলিশ চালককে ধরতে পারেনি। আমরা মামলা করব এবং তাকে ছাড়ব না।’’
আরো পড়ুন:
সুনামগঞ্জে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার
মেরামতের দুই মাসেই ফের বেহাল মানিকপুর সড়ক
চালক আকবর হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের হাসানপুর গ্রামের মৃত ফয়েজ আহমেদের ছেলে। দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
প্রবাসী বাহার, তার বাবা আব্দুর রহিম ও শ্বশুর ইস্কান্দার মির্জা জানান, আড়াই বছর পর ওমান থেকে বাড়ি ফিরছিলেন বাহার উদ্দিন। তাকে আনতে গিয়ে পরিবারের ১১ সদস্যের সবাই রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৩০ মিটার গভীর খালে পড়ে যায়।
দুর্ঘটনায় বাহারের মা, দুই পুত্রবধূ, তিন নাতনি ও শাশুড়ি মারা যায়। প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন বাহার, তার বাবা, শ্বশুরসহ চারজন। পরিবার সদস্যরা জানান, বাহারের দুই ভাই রুবেল ও রনি বিদেশ থেকে ফিরলে চালকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
এই দুর্ঘটনায় লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার উত্তর চৌপল্লী গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়দের দাবি, অবহেলাজনিত এই মৃত্যুর দায় থেকে চালককে কোনোভাবেই ছাড়া দেয়া যাবে না।
চালককে আটকে পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন। তিনি জানান, চালক আকবর ঘটনার পর থেকে পালিয়ে রয়েছেন। তাকে আটকের জন্য চেষ্টা চলছে। তিনি আরো জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে। পরিবার মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।
ঢাকা/জাহাঙ্গীর/বকুল