নাম আলী আকবর। থাকেন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। শহরটির পুরোনো অধিবাসীদের কাছে তিনি খুব পরিচিত মুখ। আকবর প্রতিদিনের পত্রিকা বগলদাবা করে বেরিয়ে পড়েন। মুখে বলতে থাকেন দৈনিক পত্রিকার তরতাজা শিরোনামগুলো। এভাবেই পত্রিকা পৌঁছে দেন পাঠকের হাতে। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এ কাজ করছেন তিনি।

এটুকু পড়েই বোঝা যাচ্ছে আলী আকবর একজন সংবাদপত্রের হকার। পাঠকের হাতে ছাপা পত্রিকা পৌঁছে দেওয়া তাঁর কাজ। তবে আকবরের আলাদা বিশেষত্ব আছে। হারিয়ে যেতে বসা পেশা পত্রিকার হকারি প্যারিসে এখন একমাত্র তিনিই ধরে রেখেছেন। অর্থাৎ প্যারিস তথা পুরো ফ্রান্সে পত্রিকার সর্বশেষ হকার তিনি। সম্ভবত ইউরোপেও।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ দেশটির অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় সম্মাননা ‘অর্ডার অব মেরিট’–এর জন্য আলী আকবরকে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন দিয়েছেন। এটা সে দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননারও একটি। আগামী মাসে আলী আকবরকে এ সম্মাননা দেওয়া হবে। ফরাসি সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি এ সম্মাননা পাচ্ছেন।

পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্ম আলী আকবরের। ষাটের দশকের শেষ ভাগে ইউরোপে পাড়ি জমান। শুরুতে যান নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে। সেখানে তিনি একটি ক্রুজ জাহাজে কাজ পান। পরে ১৯৭২ সালে ফ্রান্সে আসেন। বছরখানেক পর থিতু হন প্যারিসে। পত্রিকার হকারির কাজ নেন।

মজার বিষয় হলো, প্রেসিডেন্ট মাখোঁ নিজেও ছাত্রজীবনে আলী আকবরের কাছ থেকে পত্রিকা কিনতেন।

স্মৃতি হাতড়ে আলী আকবর বলেন, ‘১৯৭৩ সালের দিকে আমি যখন প্যারিসে পত্রিকার হকারি শুরু করি, তখন ৩৫ থেকে ৪০ জন এ কাজ করতেন। এখন আর কেউ নেই। আমি একাই রয়ে গেছি।’

দিন বদলের স্রোতে ছাপা পত্রিকা ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। মানুষ ডিজিটাল মাধ্যমে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। সময়ের এই বাঁকবদলে পত্রিকার হকাররাও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছেন, পেশা বদলে ফেলছেন।

আলী আকবর বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ। এখন সবকিছু ডিজিটাল মাধ্যমে চলে। মানুষ শুধু নিজের টেলিফোন (মুঠোফোন) দেখতে চায়।’

১৯৭৩ সালের দিকে আমি যখন প্যারিসে পত্রিকার হকারি শুরু করি, তখন ৩৫ থেকে ৪০ জন এ কাজ করতেন। এখন আর কেউ নেই। আমি একাই রয়ে গেছি।আলী আকবর, প্যারিসে পত্রিকার হকার

কেতাদুরস্ত ফ্যাশনশিল্পের জন্য পরিচিত প্যারিসের সেইন্ট জার্মেই এলাকার ক্যাফেগুলো ঘুরে আলী আকবর এখন বিখ্যাত ফরাসি পত্রিকা লা মঁদের মাত্র ৩০ কপি বিক্রি করতে পারেন। তিনি জানান, পত্রিকা বিক্রির টাকার অর্ধেক তিনি পান। তবে অবিক্রীত পত্রিকাগুলো ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই।

অথচ একসময় দৃশপট ছিল পুরো উল্টো। আলী আকবর জানান, ইন্টারনেট জমানার আগে পত্রিকার সন্ধ্যাকালীন মুদ্রণের পর প্রথম ঘণ্টায় প্রায় ৮০ কপি বিক্রি হয়ে যেত। তিনি বলেন, ‘সেসব দিনে পাঠকেরা দৈনিক পত্রিকা কেনার জন্য আমার চারপাশে ভিড় করতেন। আর এখন এক কপি পত্রিকা বিক্রি করতে আমাকেই পাঠকের পিছে পিছে ছুটতে হয়।’

পথে ঘুরে ঘুরে পাঠকের হাতে দৈনিক পত্রিকা পৌঁছে দেন আলী আকবর.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এক ওভারে ৩১ রান, এমন কিছু আগে দেখেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা

রাইজিং স্টারস এশিয়া কাপে হংকংয়ের বিপক্ষে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা এখন হাবিবুর রহমানের। কাতারের দোহায় বাংলাদেশ ‘এ’ দলের ওপেনার আরেকটি রেকর্ডেও নাম লিখিয়েছেন। টি-টোয়েন্টিতে এক ওভারের বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সর্বোচ্চ রানের সেই রেকর্ডটায় অবশ্য আকবর আলীর অবদানই বেশি।

আজ বাংলাদেশ ‘এ’ দলের ইনিংসের শেষ ওভারে শেষ ৫ বলেই ছক্কা মেরেছেন আকবর। কিঞ্চিৎ শাহর করা ওভারের প্রথম বলে ১ রান নিয়ে আকবরকে স্ট্রাইক দেন হাবিবুর। সব মিলিয়ে ওঠে এক ওভারে ৩১ রান, স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নতুন রেকর্ড।

আগের রেকর্ডটা ছিল ৩০ রানের। দুবার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ওভারে ৩০ রান করেছেন।

প্রথম ঘটনাটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে রান তাড়ায় চতুর্থ ওভারে ৩০ রান তুলেছিলেন লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। ক্যারিবীয় পেসার ওশান টমাসের করা ওভারে লিটন ২১ রান ও সৌম্য ৬ রান নেন, ৩ রান আসে অতিরিক্ত থেকে। ওভারের প্রথম ছক্কা মারেন লিটন, দ্বিতীয় বলে কোনো রান হয়নি, তৃতীয় বলে চার মারা লিটন চতুর্থ বলে রান নেননি। নো বল হওয়া পঞ্চম বলে চার মারেন লিটন। পরের বলে ফ্রি হিটে আরেকটি ছক্কা লিটনের। টমাস পরের বলটা করলেন ওয়াইড। পরের বলটা আবার নো, এবার ১ রান লিটনের। ফ্রি হিট শেষ বলটায় ছক্কা মেরে দেন সৌম্য।

আরও পড়ুন১৪ বলে ফিফটি, ৩৫ বলে ১০০, বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড হাবিবুরের৫ ঘণ্টা আগেসর্বশেষ বিপিএলে শেষ ওভারে ৩০ রান তুলে রংপুরকে জেতানোর পর নুরুল হাসান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাওনা দিতে পারলে শিল্পটা আজ হারিয়ে যেত না: জয়া
  • এক ওভারে ৩১ রান, এমন কিছু আগে দেখেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা