চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হল সংস্কারের দাবিতে প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা
Published: 10th, August 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের ছাদ, শৌচাগার ও পানির লাইন সংস্কার এবং ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু দাবিতে প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে সকাল ১০টার দিকে প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা তালা খুলে দেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলের প্রতিটি তলায় দীর্ঘ সময় ধরে পানি জমে থাকে। এ ছাড়া শৌচাগারের ছাদ থেকে পানি পড়ে, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। পানিতে আয়রন বেশি থাকায় গোসলও করা যায় না। এর বাইরে হলের পর্যাপ্ত ইন্টারনেট সরবরাহ না থাকায় নানান ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ কারণে তাঁরা হলে তালা দিয়ে প্রতিবাদ করেছেন।
জানতে চাইলে রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অনেকবার হল সংস্কারের দাবিতে প্রভোস্টের (প্রাধ্যক্ষ) সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তিনি বিষয়গুলো সুরাহা করতে পারেননি। তাই বাধ্য হয়ে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেছি।’
জানতে চাইলে আলাওল হলের আবাসিক শিক্ষক মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, এই হলে অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে। তবে যে পরিমাণ বাজেট অনুমোদন পাওয়া যায়, সেটি পর্যাপ্ত নয়। এই হলের পুরো অবকাঠামো সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।
এদিকে সকাল ১০টার দিকে সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগসহ ৫ দাবি ঢাবির বিশ্ব ধর্ম বিভাগের
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষকের মতো ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আবু সায়েম স্বাক্ষরিত ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০২৫’ গেজেট সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য' শীর্ষক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত
ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের জবাব দিল প্রশাসন
বিভাগটির দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, অতিমাত্রায় দুনিয়ামুখী প্রবণতা থেকে পরিত্রাণ ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবন সাধনে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সর্বক্ষেত্রে ধর্ম ও নৈতিকতা বিষয় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে; পরস্পরকে জানা, বোঝা এবং নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে জানতে হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইসলামসহ সব ধর্মকে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষকের মতো ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে; পাঠ্যদানের ক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োগে কওমী ও আলিয়া মাদ্রাসার ডিগ্রধিারীদের পাশাপাশি বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে ডিগ্রীপ্রাপ্তদের প্রাধান্য দিতে হবে; পদ সৃষ্টিতে দেরি হলে আপাতত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত এবং হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান অধ্যুষিত অঞ্চলে মন্দির, চার্চ ও প্যাগোডাভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি সরকার দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০২৫’ গেজেট প্রকাশ করেছে। আমরা অতি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, বিগত সরকারের ধারাবাহিকতায় এ সরকারও ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে পাশ কাটিয়ে শৈশব থেকেই শিক্ষার্থীদেরকে নীতি-নৈতিকতাহীন ও ধর্মবিমুখ করার সুদীর্ঘ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছে। এটা বিগত এক যুগ ধরে চলে আসা ধর্ম বিবর্জিত শিক্ষাব্যবস্থার ধারাবাহিকতা মাত্র।
স্বাধীনতার পর থেকে সরকার শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে আটটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে, যার মধ্যে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণীত হয় ২০১০ সালে। এই শিক্ষানীতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত চরিত্র গঠনে সহায়তা করা। অথচ এই শিক্ষানীতির ওপর ভিত্তি করেই জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২-তে এসে কোন এক অদৃশ্য কারণে ধর্ম শিক্ষা হয়ে যায় সেকেলে এবং অপাংতেয়। প্রস্তাব অনুযায়ী ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান এবং ব্যবসা শাখায় বাতিল এবং মানবিক শাখায় ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রাখা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২০-এ ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়টিকে দশম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষা থেকে বাতিল করা হয়। অন্য সকল বিষয়ে বোর্ড পরীক্ষা থাকলেও ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়টি ক্লাস-পরীক্ষা, বোর্ড পরীক্ষা ও সামষ্টিক মূল্যায়ন থেকে বাদ দেওয়া হয়। ফলে সময়ের পরিক্রমায় শিক্ষার্থীদের কাছে বিষয়টি হয়ে যায় গুরুত্বহীন ও অবহেলার পাত্র। তেমনি বর্তমান সরকার কর্তৃক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ আগের সরকারের মতো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে সুকৌশলে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্বহীন করার মতো, প্রাথমিক স্তরে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন করার অংশ বা ধারাবাহিকতা বলে মনে করি আমরা। অথচ প্রাচীনকাল থেকে এদেশে ধর্ম ও ধর্মীয় শিক্ষা ছিলো শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনগনের রক্ষাকবচ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, এদেশে প্রাচীনকাল থেকে সমৃদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন ছিল, যার মূল ভিত্তি ছিলো ধর্ম। হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মকে কেন্দ্র করে প্রাচীন কাল থেকে ব্রিটিশ শাসনের পূর্ব পর্যন্ত চলমান শাসনব্যবস্থা এবং মানুষের রীতিনীতি, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ভাষা, শিক্ষা, সমাজ ব্যবস্থা তথা তাদের যাপিত জীবনের সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু ছিল ধর্ম।
এদেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক বিষয়াদী পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে বাংলার মানুষ, সমাজ ও শাসনব্যবস্থার সঙ্গে ধর্ম ও নৈতিকতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ব্রিটিশরা আসার আগ পর্যন্ত হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের সঙ্গে এদেশের মাটি ও মানুষ অঙ্গাআঙ্গিভাবে মিশে ছিল। এখান থেকে যারা মানুষকে আলাদা করতে গেছে, তারাই প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে।
তাই ঐতিহাসিক বিষয় পর্যালোচনাপূর্বক ধর্মীয় ও আধুনিক জ্ঞানের সমন্বয়সাধন করে প্রতিযোগিতার এই বিশ্বে বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানসাধনে এগিয়ে যেতে হবে সমগ্র জাতিকে। সে লক্ষ্যে সরকারের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ পুনর্বিবেচনা করা এবং প্রস্তাবিত বিষয়াদী বিবেচনাপূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে অনুরোধ করছি।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী