চীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চার গুণ সয়াবিন কেনার আহ্বান ট্রাম্পের
Published: 11th, August 2025 GMT
চীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর আহ্বান, চীন যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা চার গুণ বৃদ্ধি করে।
দেশ দুটির মধ্যকার শুল্কযুদ্ধের বিরতি শেষ হওয়ার আগে এই আহ্বান জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এই আহ্বানে শিকাগোর বাজারে সয়াবিনের দাম বেড়েছে, যদিও বিশ্লেষকেরা এই আহ্বানের বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান।
গতকাল রোববার গভীর রাতে ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, চীন সয়াবিনের ঘাটতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁর আশা, এ বাস্তবতায় চীন দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা চার গুণ করবে। চীন সেটা করতে চাইলে দ্রুততার সঙ্গে সেবা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প। এই কথা বলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে আগাম ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের পোস্টের পর আজ সোমবার শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া সয়াবিনের দাম বুসেলপ্রতি ১০ দশমিক ১১ ডলার বা ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে সেই সয়াবিনের দাম স্থির ছিল।
বিশ্ববাজার থেকে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন কেনে চীন। গত বছর চীন প্রায় ১০৫ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন আমদানি করেছে। এর প্রায় এক–চতুর্থাংশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, বাকিটা প্রধানত ব্রাজিল থেকে। চীনের সয়াবিন কেনা চার গুণ বাড়লে তার বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করতে হবে।
বেইজিংভিত্তিক এজিরাডার কনসাল্টিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা জনি শিয়াং বলেন, চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এত বেশি সয়াবিন কিনবে, এমন সম্ভাবনা খুবই কম।
বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে শুল্কযুদ্ধ বিরতির সময়সীমা শেষ হচ্ছে ১২ আগস্ট। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের ইঙ্গিত, এই সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা বৃদ্ধি করা এই সময়সীমা বৃদ্ধির শর্ত কি না, তা পরিষ্কার নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য হলো, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য–ঘাটতি হ্রাস।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের সয়াবিন আমদানি বাড়তে পারে, এই সম্ভাবনায় চীনের সয়ামিল ফিউচারের (আগাম লেনদেন) দাম শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ কমে প্রতি মেট্রিক টন ৩ হাজার ৬৮ ইউয়ানে নেমেছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে এখনো সাড়া দেয়নি।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে স্বাক্ষরিত প্রথম পর্যায়ের বাণিজ্যচুক্তিতে চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিপণ্য, বিশেষ করে সয়াবিন কেনা বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছিল। তবে বেইজিং সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেনি।
শুধু তা–ই নয়, চলতি বছর ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যেও গত বছর চতুর্থ ত্রৈমাসিকে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত সয়াবিন কেনেনি চীন। সামনেই যুক্তরাষ্ট্রে ফসল তোলার মৌসুম। ফলে তাদের উদ্বেগ বাড়ছে।
এদিকে বেইজিংয়ের কথাবার্তায় যথেষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তারা এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন না–ও কিনতে পারে। আর্জেন্টিনা থেকে সয়ামিলের পরীক্ষামূলক চালান কিনেছে দেশটি। সে কারণে এমনটা ধারণা করা হচ্ছে। ট্রিভিয়াম চায়নার কৃষি বিশ্লেষক ইভেন রজার্স পে এ কথা বলেন।
রয়টার্সের আগের এক সংবাদে বলা হয়েছে, চীনের পশুখাদ্য প্রস্তুতকারকেরা আর্জেন্টিনার তিন কার্গো সয়ামিল চালান কিনেছে। মূলত দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সস্তা দামে সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই ক্রয়। সেই সঙ্গে বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে সয়াবিনের সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন শিল্প বিকল্প ক্রেতা খুঁজছে, কিন্তু সে ক্ষেত্রেও কোনো দেশ চীনের সমকক্ষ নয়। গত বছর চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২ দশমিক ১৩ মিলিয়ন বা ২ কোটি ২১ লাখ টন ও ব্রাজিল থেকে ৭৪ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন বা ৭ কোটি ৪৬ কোটি টন সয়াবিন আমদানি করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন য ক তর ষ ট র থ ক আহ ব ন আমদ ন দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের
থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।
থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।
সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এফএওর সূচক কমেছেপ্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।
চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের
অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।