চীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর আহ্বান, চীন যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা চার গুণ বৃদ্ধি করে।

দেশ দুটির মধ্যকার শুল্কযুদ্ধের বিরতি শেষ হওয়ার আগে এই আহ্বান জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এই আহ্বানে শিকাগোর বাজারে সয়াবিনের দাম বেড়েছে, যদিও বিশ্লেষকেরা এই আহ্বানের বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান।

গতকাল রোববার গভীর রাতে ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, চীন সয়াবিনের ঘাটতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁর আশা, এ বাস্তবতায় চীন দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা চার গুণ করবে। চীন সেটা করতে চাইলে দ্রুততার সঙ্গে সেবা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প। এই কথা বলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে আগাম ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্পের পোস্টের পর আজ সোমবার শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া সয়াবিনের দাম বুসেলপ্রতি ১০ দশমিক ১১ ডলার বা ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে সেই সয়াবিনের দাম স্থির ছিল।

বিশ্ববাজার থেকে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন কেনে চীন। গত বছর চীন প্রায় ১০৫ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন আমদানি করেছে। এর প্রায় এক–চতুর্থাংশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, বাকিটা প্রধানত ব্রাজিল থেকে। চীনের সয়াবিন কেনা চার গুণ বাড়লে তার বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করতে হবে।

বেইজিংভিত্তিক এজিরাডার কনসাল্টিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা জনি শিয়াং বলেন, চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এত বেশি সয়াবিন কিনবে, এমন সম্ভাবনা খুবই কম।

বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে শুল্কযুদ্ধ বিরতির সময়সীমা শেষ হচ্ছে ১২ আগস্ট। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের ইঙ্গিত, এই সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা বৃদ্ধি করা এই সময়সীমা বৃদ্ধির শর্ত কি না, তা পরিষ্কার নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য হলো, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য–ঘাটতি হ্রাস।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের সয়াবিন আমদানি বাড়তে পারে, এই সম্ভাবনায় চীনের সয়ামিল ফিউচারের (আগাম লেনদেন) দাম শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ কমে প্রতি মেট্রিক টন ৩ হাজার ৬৮ ইউয়ানে নেমেছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে এখনো সাড়া দেয়নি।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে স্বাক্ষরিত প্রথম পর্যায়ের বাণিজ্যচুক্তিতে চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিপণ্য, বিশেষ করে সয়াবিন কেনা বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছিল। তবে বেইজিং সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেনি।

শুধু তা–ই নয়, চলতি বছর ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যেও গত বছর চতুর্থ ত্রৈমাসিকে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত সয়াবিন কেনেনি চীন। সামনেই যুক্তরাষ্ট্রে ফসল তোলার মৌসুম। ফলে তাদের উদ্বেগ বাড়ছে।

এদিকে বেইজিংয়ের কথাবার্তায় যথেষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তারা এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন না–ও কিনতে পারে। আর্জেন্টিনা থেকে সয়ামিলের পরীক্ষামূলক চালান কিনেছে দেশটি। সে কারণে এমনটা ধারণা করা হচ্ছে। ট্রিভিয়াম চায়নার কৃষি বিশ্লেষক ইভেন রজার্স পে এ কথা বলেন।

রয়টার্সের আগের এক সংবাদে বলা হয়েছে, চীনের পশুখাদ্য প্রস্তুতকারকেরা আর্জেন্টিনার তিন কার্গো সয়ামিল চালান কিনেছে। মূলত দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সস্তা দামে সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই ক্রয়। সেই সঙ্গে বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে সয়াবিনের সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন শিল্প বিকল্প ক্রেতা খুঁজছে, কিন্তু সে ক্ষেত্রেও কোনো দেশ চীনের সমকক্ষ নয়। গত বছর চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২ দশমিক ১৩ মিলিয়ন বা ২ কোটি ২১ লাখ টন ও ব্রাজিল থেকে ৭৪ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন বা ৭ কোটি ৪৬ কোটি টন সয়াবিন আমদানি করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন য ক তর ষ ট র থ ক আহ ব ন আমদ ন দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি

চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।

এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।

আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।

বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।

এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।

এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশে কফি–সংস্কৃতি প্রসারে ‘আমা কফি’
  • রাজশাহীতে আইনি ব্যবস্থা নিন
  • গোলাপের স্ত্রী গুলশান আরার বিরু‌দ্ধে মামলা কর‌বে দুদ‌ক
  • বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের ৩ প্যাকেজ ঘোষণা
  • চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি