সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে: ফরহাদ মজহার
Published: 12th, August 2025 GMT
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আপসহীনভাবে না দাঁড়ালে এই গণ–অভ্যুত্থান হতো না বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। অভ্যুত্থানের পর কেন নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে চান, তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘কারণ জিয়াউর রহমান নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য লড়াই করেছিলেন। তাঁর ঘোষণা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য তিনি যুদ্ধ করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি কি সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা বা জাতীয়তাবাদের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন? না, আমরা এসবের জন্য কেউ যুদ্ধ করিনি। আমাদের ওপর এটা চাপানো হয়েছে।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে গণশক্তি সভা আয়োজিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে বঞ্চনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘৮ আগস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধানে শপথ গ্রহণের সময় আমি তাৎক্ষণিক বলেছিলাম, এখানে সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব ঘটেছে। এ বিষয় বোঝার জন্য যে বুদ্ধিমত্তা ও দূরদৃষ্টি প্রয়োজন, তা না থাকলে সমাজ অশিক্ষিতই থেকে যায়। জনগণকে কী করে প্রতারণা করা হয়, কী ভাষায় প্রতারণা হয়, ওটাও তারা সহজে বুঝতে পারে না। আপনাদের বুঝতে বুঝতে এক বছর লেগে গেল। গণ–অভ্যুত্থানের পর আমরা জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তরুণেরা যারা বুলেটের মুখে দাঁড়িয়ে এই অভ্যুত্থান এনেছে, আমরা বলেছি, এটা আমাদের সবার অর্জন। আসুন, আমরা জাতীয় সরকার গঠন করি। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান ফেলে দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠন করি।’
বিএনপির উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘বাহাত্তর সালের সংবিধান যারা লিখেছে, তারা ছিলেন পাকিস্তানি। কারণ, পাকিস্তানের সংবিধান লেখার জন্য আমরা তাদের ১৯৭০ সালে নির্বাচিত করেছিলাম। বিএনপির কাছে আমার প্রশ্ন, আপনারা যে বাহাত্তর সালের সংবিধান ধরে রাখতে চান, আপনারা কি পাকিস্তানি? জিয়াউর রহমান তো এই সংবিধান ধরে রাখতে চান নাই। যত দূর জানি, বেগম খালেদা জিয়াও এই সংবিধান রাখতে চাননি। তিনি তো বলেছেন, এই সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিতে হবে।’
ফরহাদ মজহার আরও বলেন, ‘তাহলে আপনারা কেন গণ-অভ্যুত্থানের পরও এই সংবিধান এখনো চাপ দিয়ে ধরে রেখেছেন। গণ-অভ্যুত্থানের পর আপনারা বারবার বলেছেন, নির্বাচন লাগবে। আমরাও বলেছি, অবশ্যই নির্বাচন দরকার। নির্বাচন ছাড়া কোনো গণতন্ত্র হয় না। গণতন্ত্র মানে তো নির্বাচন নয়। আমরা আপনাদের বোঝাবার চেষ্টা করেছি, গণতন্ত্রের কথা অনুসারে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিন। আপনাদের জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে এত আপত্তি কেন?’
গণপরিষদ নির্বাচনকে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘গণপরিষদ আর সরকার নির্বাচন এক কথা নয়। গণপরিষদে বসে আমরা বাংলাদেশের জন্য কী ধরনের গঠনতন্ত্র, কী ধরনের রাষ্ট্র দরকার, সেটা নিয়ে তর্কবিতর্ক করতাম। উপদেষ্টা পরিষদে নতুন প্রতিনিধি নির্বাচন করে পাঠালাম। কারণ, আমরা যেন নতুন গঠনতন্ত্র পেতে পারি। আপনারা ওইটা করলেন না। আপনারা কী করলেন, ইউনূসের হাত ধরে কতগুলো কমিশন বানালেন। এই কমিশন বানিয়ে আপনারা আমাদের ধোঁকা দেওয়া শুরু করলেন। এই কমিশন বানিয়ে আপনারা অনেক সংস্কার করে ফেললেন। কমিশন গঠনের পুরো প্রক্রিয়া গণ–অভ্যুত্থানে জনগণ যে ইচ্ছা থেকে জীবন দিয়েছে, সেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে।’
জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ছাত্ররা আরও আগে থেকে বারবার ঘোষণা চেয়েছেন। তাঁদের মিথ্যা বুঝিয়ে ঘোষণা দিতে দেওয়া হলো না। কিন্তু এখন একটা ঘোষণাপত্র দিলেন, সবাই যেটার সমালোচনা করছে। আমি নিজেও এটা প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ, আইনগতভাবে ইউনূসের জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণার অধিকার নেই। তিনি শেখ হাসিনার সংবিধানের অধীন একজন উপদেষ্টামাত্র। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের নেতা নন। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের ফলমাত্র। ফলে গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়ার সামাজিক বা অন্য কোনো অধিকার তাঁর নেই।
সরকারের উদ্দেশে মজহার বলেন, ‘আপনারা সেনাবাহিনীকে দিয়ে নির্বাচন করাতে চাইছেন। কারণ, নির্বাচন করার ক্ষমতা আপনাদের নেই। কিন্তু সেনাবাহিনীর কাজ তো নির্বাচন পরিচালনা করা নয়। সেনাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্র আমরা নাগরিকেরা সহ্য করব না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই স ব ধ ন আপন দ র জনগণ র র জন য আম দ র সরক র আপন র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই: বাম গণতান্ত্রিক জোট
চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে না আসায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তারা বলেছে, জনগণের মতামত ছাড়া বন্দর পরিচালনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচিত বা অনির্বাচিত কোনো সরকারই নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। সরকার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে দেশের সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সারা দেশে আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে।
আজ সোমবার বিকেলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। জোটের অস্থায়ী কার্যালয় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ২৭ ও ২৮ জুন দেশপ্রেমিক জনগণের ব্যানারে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চে চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশবাসী অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছে। দেশের সচেতন মানুষ সরকারের যেকোনো গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এখনো পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। আমরা আশা করেছিলাম, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সরকার বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার বন্দর ইজারা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা থেকে সরে আসবে। কিন্তু সরকার জনগণের মতামত উপেক্ষা করে বন্দর বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। যা নৌপরিবহন উপদেষ্টার বক্তব্যে ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে।’
দেশের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। দেশের স্বার্থবিরোধী এ ধরনের সরকারের সিদ্ধান্ত জনগণ প্রত্যাখ্যান করে। ইতিমধ্যে নির্বাচনের সময় ঘোষিত হয়েছে। জনগণের মতামত ছাড়া বন্দর পরিচালনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নির্বাচিত বা অনির্বাচিত কোনো সরকারই নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না।’
জাতীয় স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিলের আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিল করার দাবি জানানো যাচ্ছে। একই সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের কাছে নতজানু সরকার ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণ–আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সব বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো যাচ্ছে।’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে সভায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শামীম ইমাম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ বক্তব্য দেন।