আপগ্রেড হচ্ছে সার্ভিল্যান্স সিস্টেম, সক্ষমতা বাড়ছে বিএসইসির
Published: 13th, August 2025 GMT
পুঁজিবাজারে অনিয়ম ও কারসাজি রোধ করতে এবার নিজস্ব অর্থায়নে নজরদারি বা সার্ভিল্যান্স সক্ষমতা বাড়াচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সার্ভিল্যান্স সফটওয়্যার বা সিস্টেমের হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যার হালনাগাদকরণের (আপগ্রেড) মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে আগামীতে নজরদারিতে দুই-তিন গুণ সক্ষমতা বাড়বে বলে মনে করে কমিশন।
বিএসইসি ২০১২ সালেরে শেষে দিকে সুইডেনের কোম্পানিস ট্র্যাপেটসের কাছ থেকে “ইনস্ট্যান্ট ওয়াচ মার্কেট” সার্ভিলেন্স সফটওয়্যার গ্রহণ করে। এটি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায়, সরকারের পুঁজিবাজার গভর্ন্যান্স উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা করা হয়। তবে সার্ভিলেন্স সফটওয়্যারটি স্থাপন করার পর থেকেই এখন পর্যন্ত এর কোনো হালনাগাদকরণ করা হয়নি। ফলে প্রযুক্তিগতভাবে এটি পুরোনো ও দুর্বল হয়ে পড়েছে।
তাই ডাটা সেন্টার তৈরির মাধ্যমে এরইমধ্যে হার্ডওয়ারের সক্ষমতা বাড়িয়েছে বিএসইসি। এতে বড় ধরনের লেনদেন বা তথ্য দীর্ঘদিন সংগ্রহের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সফটওয়ার উন্নত করার মাধ্যমে নজরদারির গতি বাড়বে। এর ফলে কারসাজি শনাক্তকরার পরিমাণও বাড়বে বলে মনে করে কমিশন।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন পুঁজিবাজারের সার্ভিল্যান্স সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে কারসাজিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নামে-বেনামে বিও হিসাব খুলে, কয়েকজন মিলে লেনদেন করে শেয়ারের দাম কমানো ও বাড়ানো। বিগত সময় এসব কারসজি বেশিরভাগ নজরে আসলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আবার বেনামে হওয়ায় অনেক কারসাজির সঠিক তথ্য বের করা যায়নি। তবে এবার সেই নজরদারি বাড়াতে সার্ভিল্যান্স সক্ষমতা বাড়াচ্ছে বিএসইসি।
গত ১৫ বছরে শেয়ারের সিরিয়াল ট্রেডিংসহ নানান ধরনের কারসাজি ছিল সহজ ও সাধারণ বিষয়। সে সময় ব্রোকারেজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও ব্যাংকসহ খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার লোকজনের বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগ ওঠে। তৎকালীন নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঢিলেঢালা নজরদারি ও দায়সারা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে অনেক বিনিয়োগকারীকে তাদের কষ্টের টাকা পুঁজিবাজারে হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন অনেকে।
গত বছরের ২৯ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। ওই বছরের ১ ডিসেম্বর শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়, “ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতারণা, কারসাজিসহ প্লেসমেন্ট শেয়ার এবং আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। পুঁজিবাজারে প্রভাবশালী উদ্যোক্তা গোষ্ঠী, ইস্যু ম্যানেজার, নিরীক্ষক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কারসাজির একটি বড় নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। বাজারের মধ্যস্থতাকারী দেউলিয়া হয়েছে, তাদের ইক্যুইটি ৩০ হাজার কোটি টাকা নেতিবাচক হয়েছে। যারা ব্যাংক খাতের অপরাধী, তারাও পুঁজিবাজারে আস্থা নষ্ট করার পেছনেও ছিল। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন একটি স্বার্থান্বেষী মহলের হস্তক্ষেপের কারণে নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তদন্তে কয়েকশ কোটি টাকা মুনাফার তথ্য থাকলেও জরিমান করা হয়েছে মাত্র কয়েক কোটি টাকা।”
শেয়ার কারসাজির বিষয়ে শ্বেতপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, “বেশ কিছু প্রভাবশালী বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠান সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে নিজেদের মধ্যে একের পর এক লেনদেন করে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়ায়। তারা ‘টার্গেটেড’ কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন করে, যেখানে কিছু বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এমন বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনেন। এভাবেই ওই কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের সক্রিয় চেহারা দেখানো হয়। বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় এমনভাবে কারসাজি করা হয়, যাতে কোম্পানির মূল্যায়ন বোঝা না যায়।”
সার্ভিল্যান্স সফটওয়্যার উন্নত করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “বিএসইসির নিজস্ব অর্থায়নে সার্ভিল্যান্স সফটওয়্যার হালনাগাদকরণের কাজ চলছে। হালনাগাদ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে আগের থেকে বেশি সক্ষমতা ও নজরদারি বাড়বে। বিভিন্ন ধরনের সতর্কীকরণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে ২৭ ধরনের সতর্কবার্তা পাওয়া যায়। আগামীতে সেটা বেড়ে ৬৩ ধরনের সতর্কবার্তা দেবে। বর্তমানে ব্যবস্থাপনা বা নীতি নির্ধারণ পর্যায়ে ড্যাশবোর্ড না থাকালেও আগামীতে তা যুক্ত করা হচ্ছে। ওই সব তথ্য সার্ভিল্যান্স সফটওয্যারে জমা থাকবে। ফলে সময়ে সময়ে সেগুলো দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে বিএসইসি।”
তিনি আরো বলেন, “আগে স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের ওপর ১৪ ধরনের প্রতিবেদন পাওয়া যেত। তবে সফটওয়ার উন্নত করার ফলে সেটা আগামীতে ২৮ ধরনের প্রতিবেদন দিবে। বর্তমানে শুধু বিও হিসাব দিয়ে খোঁজ করার সুযোগ রয়েছে, যা আগামীতে একাধিক বিও, নাম, ভোটার আইডি, বাবা-মা এর নামসহ আরো বেশিকিছু বিষয়েও কারসাজির তথ্য বের করা যাবে। স্বতন্ত্র ব্যবহারকারী আইডি দেওয়া হবে, যাতে একজন ব্যবহারকারী কী কী কাজ করেছে সে বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। এতে তথ্য চুরি বা পাচারের যে অভিযোগ রয়েছে তা আর হবে না। কারণ যেকোনো সময় জানা যাবে যে, তথ্য চুরি কে করেছে। আর সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে বাজার যত বড় হোক না কেন আগামীতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।”
এদিকে, বিএসইসির নজরদারির সক্ষমতা বৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইর) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, “আগামীতে প্রয়োজনে ডিএসইও তার সক্ষমতা বাড়াবে। তবে শুধু সক্ষমতা বাড়ালেই হবে না। যারা এই জায়গায় থাকবে তাদেরকেও বাজারের জন্য কাজ করতে হবে। কারণ এর আগে দেখা গেছে বর্তমান যেই সার্ভিল্যান্স ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে অনেক কারসাজি ধরা পড়লেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারী।”
বিএসইসির মার্কেট সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স বিভাগ পুঁজিবাজারে লেনদেন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে, যাতে বেআইনি শর্ট সেলিং, ইনসাইডার ট্রেডিং, বাজার কারসাজি এবং অন্যান্য বাজার অপব্যবহারসহ যেকোনো ধরনের বাজার অসদাচরণ প্রতিরোধ ও সীমিত করা যায়। এই কাজের জন্য তারা ইনস্ট্যান্ট ওয়াচ মার্কেট সার্ভিলেন্স সিস্টেম থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন সতর্কবার্তা (অ্যালার্ট) পরিচালনা করে। বিএসইসির সার্ভিল্যান্স সফটওয়্যার একটি স্বয়ংক্রিয় বাজার পর্যবেক্ষণ প্ল্যাটফর্ম, যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) লেনদেন, অর্ডার, এবং সংবাদগত তথ্য পর্যবেক্ষণ করে সন্দেহভাজন কার্যক্রম শনাক্ত করতে পারে। অ্যালার্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে এটি ইনসাইডার ট্রেডিং, বাজারে প্রভাব বিস্তার, অস্বাভাবিক কার্যক্রম শনাক্ত করে এবং তথ্য লিপিবদ্ধ করে।
ঢাকা/এনটি/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স র ভ ল য ন স সফটওয ন ত রক স স থ শ ব তপত র ব এসইস র ল নদ ন ক ক রস জ র ব যবস থ নজরদ র আগ ম ত সতর ক ক ষমত ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
এসেনসিয়াল ড্রাগসকে আনতে সক্রিয় ডিএসই, মন্ত্রণালয়ে চিঠি
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনা অনুযায়ী, সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগ (এসওই) বা সরকারি সংস্থা ও কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পিএলসি। এ লক্ষ্যে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা বা চিঠি পাঠিয়ে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানোর কাজ চলছে। ডিএসই আশা করছে, শিগগিরই লাভজনক রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হবে।
এরই ধরাবাহিকতায় সরকারি মালিকানাধীন ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডকে (ইডিসিএল) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ডিএসই। পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দক্ষতা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে সরকারের চলমান প্রচেষ্টা বাস্তবায়নে এ উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি এসেনসিয়াল ড্রাগকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে সহায়তা চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম।
আরো পড়ুন:
কারণ ছাড়াই বাড়ছে রহিমা ফুডের শেয়ারদর
পিপলস লিজিংয়ের অর্ধবার্ষিকে লোকসান বেড়েছে ১৫.৩৩ শতাংশ
ওই চিঠির অনুলিপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সাইদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মকসুদ, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম ও এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আ. সামাদ মৃধা বরাবর পাঠানো হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে নিয়ন্ত্রক বিএসইসি নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে ডিএসই। মূলত সরকারি কোম্পানিগুলোর অনাগ্রহের কারণেই দীর্ঘদিন ধরে দফা দফায় চেষ্টা করেও তাদের পুঁজিবাজারে আনা সম্ভব হয়নি। অবশেষে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি গতিশীল করতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে চলতি বছরের ১১ মে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ডিএসইর চিঠি
ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম লিখেছেন, দেশের পুঁজিবাজার টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বিষয়টি খুবই প্রয়োজনীয়। এই প্রেক্ষাপটে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানির সম্ভাব্য ইক্যুইটি তালিকাভুক্তি করতে আগ্রহী।
ওষুধ খাতে কোম্পানিটির কৌশলগত ভূমিকা এবং গত দুই দশক ধরে প্রশংসনীয় ব্যবসা বৃদ্ধির রেকর্ডের পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটি বিদ্যমান নিয়ন্ত্রক কাঠামোর অধীনে তালিকাভুক্তির জন্য উপযুক্ত অবস্থানে রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, বর্তমান বিধিমালার আওতায় কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এই ধরনের কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া সময়োপযোগী এবং বিভিন্ন দিক থেকে কার্যকর হবে। এই কোম্পানিটির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। যেমন- কর্পোরেট সুশাসন বৃদ্ধি, বৃহত্তর কর্মক্ষম শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর অংশগ্রহণ সক্ষম করে জনসাধারণের মালিকানা সম্প্রসারণ বৃদ্ধি করবে বলে চিঠিতে জানানো হয়।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, এসেনশিয়াল ড্রাগস একটি উচ্চ-কার্যক্ষমতা সম্পন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির তালিকাভুক্তি পুঁজিবাজারের মানদণ্ড বৃদ্ধি এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। ফলে আরও সরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে এবং দেশের পুঁজিবাজারকে আরো শক্তিশালী করবে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধি ও বৈচিত্র্যকরণে অবদান রাখবে। এটি সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার ও স্বচ্ছতা এবং বেসরকারি খাতের উন্নয়নে নেয়া বৃহত্তর উদ্যোগকে শক্তিশালী ও বেগবান করবে।
এসেনশিয়াল ড্রাগসকে সহজ ও কার্যকরভাবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি করতে ডিএসই সম্পূর্ণ সহযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে। ডিএসই মনে করে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এই সময়োপযোগী উদ্যোগ বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে, যা এসেনশিয়াল ড্রাগসের অংশীজন এবং জাতীয় অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনবে। তাই এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সুবিধাজনক সময়ে আলোচনায় বসতে আগ্রহী ডিএসই। এ বিষয়ে যে কোনো সহযোগিতা ও ব্যাখ্যার জন্য ডিএসই সদা প্রস্তুত রয়েছে বলে চিঠিতে জানানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা ও এসএমএস দেওয়া হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘`পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তবে ডিএসই এ বিষয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে আলোচনায় বসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’’
রাষ্ট্রীয় কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে বিএসইসি ও ডিএসইর উদ্যোগ
গত ৭ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। বিশেষ করে দেশের যেসব বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা রয়েছে, সেগুলোকে সরাসরি তালিকাভুক্তির (ডাইরেক্ট লিস্টিং) মাধ্যমে দ্রুত পুঁজিবাজারে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে শিল্প উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।
পরবর্তীতে গত ২১ জুলাই রেল ভবনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে বৈঠক করেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। উভয় পক্ষের এ বৈঠকে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের লাভজনক ও ভালো কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির পথকে সুগম করতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।
এরই ধরাবাহিকতায় গত ২৪ জুলাই লাভজনক সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ডিএসই।
এরপর গত ২৯ জুলাই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত বিএসইসি সঙ্গে পুঁজিবাজারের অংশীজনদের তৃতীয় মাসিক সমন্বয় সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। সে সময় তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য আমরা কাজ করছি। কিছু সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির তালিকা করে তাদের সঙ্গে বসছি। সরকার এ বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
পরবর্তীতে গত ৩১ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুসরণে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বৈঠকে সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। একই সঙ্গে দেশের যেসব বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা রয়েছে, সেগুলোকে সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে দ্রুত পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার বিষয়েও আলোচনা হয়।
বিএসইসির দেওয়া তথ্য মতে, ইতোমধ্যে লাভজনক ১৫টি কোম্পানির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ওই কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো হলো- ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), সাইনোভিয়া (সাবেক স্যানোফি) বাংলাদেশ লিমিটেড, নোভার্টিস (বাংলাদেশ) লিমিটেড, সিনজেন্টা (বাংলাদেশ) লিমিটেড, নেসলে বাংলাদেশ পিএলসি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেড, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস্ কোম্পানি লিমিটেড, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন লিমিটেড ও জীবন বীমা কর্পোরেশন লিমিটেড ইত্যাদি।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে মাত্র ২০টি সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এগুলোর বাজার মূলধন ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি কোম্পানিগুলো হলো- এটলাস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিডি সার্ভিস), বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানি (বিএসসিসিএল), বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ইস্টার্ন কেবলস, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইবিসি), যমুনা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ন্যাশনাল টিউবস, পদ্মা অয়েল, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, রূপালী ব্যাংক, শ্যামপুর সুগার মিলস, তিতাস গ্যাস, উসমানিয়া গ্লাস সিট ফ্যাক্টরি, লিন্ডে বাংলাদেশ ও জিলবাংলা সুগার মিলস।
ঢাকা/এনটি/বকুল