বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে অন্যান্য বিভাগের অযৌক্তিক অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৩ আগস্ট) বেলা ১১টায় বাণিজ্য অনুষদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে সমাবেশ করেন তারা।

এ সময় তাদের ‘বিভাগ যার, ক্যাডার তার’, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষা ক্যাডার, আমাদের অধিকার’, ‘জুলাইয়ের চেতনা, স্বজনপ্রীতি মানি না’, ‘পিএসসির প্রহসন, মানি না মানবো না’, ‘দফা এক দাবি এক, স্বতন্ত্র ক্যাডার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

আরো পড়ুন:

ময়মনসিংহ মেডিকেলের হোস্টেল থেকে ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার, চিরকুট জব্দ

উত্তরবঙ্গের রেলপথ আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো.

সাইফুল্লাহ বলেন, “সূচনালগ্ন থেকেই ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্বতন্ত্র শিক্ষা ক্যাডার চালু আছে। একজন ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীই ব্যবস্থাপনা বিষয়ের উপর পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান রাখেন। ব্যবস্থাপনা বিভাগের নিজস্ব একটা স্বকীয়তা আছে। পিএসসি ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা না করেই স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের দাবি, অতিদ্রুত প্রহসনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ব্যবস্থাপনা বিভাগকে স্বতন্ত্র শিক্ষা ক্যাডারে পুনর্বহাল করতে হবে।”

একই বিভাগের ২৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আফসানা শারমীন আঁখি বলেন, “অনেক শিক্ষার্থী ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হয় এটা জেনে যে, এই বিভাগে শিক্ষা ক্যাডার আছে। একজন শিক্ষার্থী ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করে সে শিক্ষা ক্যাডারে চাকরি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সেরাটা দিতে পারে, যা অন্য বিভাগ থেকে আসা কেউ পারবে না।”

তিনি বলেন, “পিএসসি একটি হাস্যকর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসন। আমরা এ প্রহসনের বিরুদ্ধে আজ আমাদের বিভাগের সব শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা মিলে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। আমরা চাই অতিদ্রুত পিএসসি তাদের এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।”

বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাহমিনা খানম বলেন, “৫৪ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য অনুষদের যাত্রা শুরু করেছিল দুইটি মৌলিক বিষয় ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান নিয়ে। সেই দুটি বিষয় ছাড়াও যুগের প্রয়োজনে আরো দুটি মৌলিক বিষয় এই অনুষদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আমরা জানি যুগের প্রয়োজনে নতুন বিষয় সংযুক্ত করতে হয়। তার মানে কি এই, ব্যবস্থাপনা তার সক্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছে? তার মানে কি এটাই যে ব্যবস্থাপনা মৌলিক বিষয় নয়?”

তিনি বলেন, “আমার প্রশ্ন তারা কোন স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে কথা বলেছে? তারা কার সঙ্গে কথা বলে এই বিষয়গুলো যুক্ত করেছে? তাদের এই হটকারি সিদ্ধান্তে কেনো দায়বদ্ধ থাকবে না? তারা কোন কাগজের ভিত্তিতে এটা করলেন তাদের জবাব দিতে হবে। তারা এখনো পর্যন্ত কোনো কাগজ দেখাতে পারেন নাই।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা পিএসসির কাছে জানতে চাই, তারা আমাদের দাবি মানবে কি মানবে না? যদি তারা দাবি না মানে, তাহলে যেখানে যেখানে আমাদের যাওয়া প্রয়োজন, যা যা করা প্রয়োজন, তাই তাই আমরা করবো। যারা আমাদের আজ রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছেন, তাদের কাছে সব জবাব চাইব। পিএসসি আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।”

একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী মইনুদ্দিন মাহমুদ বলেন, “পিএসসি এক সপ্তাহের ব্যবধানে নোটিশ পরিবর্তন করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটি আমাদের ভাবাতে বাধ্য করছে। এখানে কোনো দলের আধিপত্য কাজ করছে বলে মনে করি না। পিএসসিকে এই ঘটকারীমূলক সিদ্ধান্ত এখনই স্থগিত করতে হবে। প্রশাসন যদি এটাকে সুন্দরভাবে সমাধান করেন, তাহলে আমরা আমাদের ক্লাসে ফিরে যাব।”

তিনি বলেন, “আমরা কোনো অশ্লীলতামূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে আসিনি এখানে। তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে, না হলে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো। এটা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি নয়, এটা বাংলাদেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবি। ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই এই বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ বব দ য স বতন ত র প রহসন আম দ র প এসস

এছাড়াও পড়ুন:

বডিক্যাম কী, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় কতটা কাজে দেবে

আগামী ফেব্রুয়ারিতে হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশের জন্য কমপক্ষে ৪০ হাজার বডিওয়্যার ক্যামেরা (বডিক্যাম) সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। পুলিশ সদস্যদের শরীরে এই ক্যামেরা থাকবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল সোমবার কেরানীগঞ্জে সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোট কীভাবে হচ্ছে, সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে কি না—সেটি দেখার জন্য থাকবে বডিক্যাম। পুলিশের কাছে এখন ১০ হাজারের মতো বডিক্যাম আছে। এমনকি কারারক্ষীদের কাছেও আছে। বিজিবির (বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) কাছে আছে। আরও ৪০ হাজার বডিক্যাম সংগ্রহের চিন্তা আছে। দেখে নেওয়া যাক এই বডিক্যাম কী, কীভাবে কাজ করে, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় কতটা কার্যকর হবে।

বডিক্যাম কী

বডিক্যামকে ‘বডি ক্যামেরা’ বা ‘বডি-ওর্ন ক্যামেরা’ নামেও ডাকা হয়। অন্যান্য ক্যামেরার মতো এতে লেন্স, স্টোরেজ (ইন্টারনাল মেমোরি বা মাইক্রোএসডি), ব্যাটারি ও রেকর্ডিং কন্ট্রোল থাকে। তবে এই ক্যামেরার বিশেষত্ব, এটি একজন মানুষের শরীরে সংযুক্ত থাকে। আকারে ছোট। এই ক্যামেরা রাখার উদ্দেশ্য হলো—সামনের দৃশ্যের ভিডিও করা।

প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোট কীভাবে হচ্ছে, সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে কি না—সেটি দেখার জন্য থাকবে বডিক্যাম। পুলিশের কাছে এখন ১০ হাজারের মতো বডিক্যাম আছে। আরও ৪০ হাজার বডিক্যাম সংগ্রহের চিন্তা আছে।-মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

বডিক্যাম আলাদাভাবে চালানোর প্রয়োজন হয় না। সচল থাকলে তা লেন্সের আওতায় আসা সব দৃশ্য ভিডিও করে রাখে। ব্যবহারকারীর গতিবিধি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরার গতিবিধিও বদলে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বডিক্যাম অডিও রেকর্ড করে রাখে।

বাংলাদেশে কী বডিক্যাম নতুন, কেন ব্যবহার

বডিক্যাম ব্যবহার বাংলাদেশ পুলিশের জন্য নতুন নয়। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ প্রথমবারের মতো বডিক্যাম ব্যবহার শুরু করে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি তখন চালু করা হয়।

চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল মহানগর এবং মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকেও বডিক্যাম দেওয়া হয়। বগুড়া ও কক্সবাজারের ট্রাফিক পুলিশেও পরীক্ষামূলকভাবে এ ক্যামেরার ব্যবহার চালু রয়েছে।

দেশে ভোট কেন্দ্র আছে ৪৫ হাজার। ৪০ হাজার বডিক্যাম কেনা হলে, প্রতি কেন্দ্রে একজন পুলিশ সদস্যকে এ ক্যামেরা দেওয়া সম্ভব হবে। কাজেই এই ক্যামেরার মাধ্যমে খুব বেশি প্রভাব তৈরি করা যাবে বলে মনে হয় না।-আব্দুল আলীম, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য।

কেউ ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করছে, এমন ঘটনার ভিডিও করে ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। আইন লঙ্ঘনের সময়কার ভিডিও থাকায় আইন লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি অভিযোগ অস্বীকার করতে পারেন না। আবার অনেক সময় আইন লঙ্ঘন করার পরও অনেক মানুষ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। বডিক্যাম ব্যবহার করলে আইন লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি পুলিশের ওপর চড়াও হতে পারেন না।

পুলিশ কর্মকর্তারা যাতে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তে না পারেন, সেটা ঠেকানোও ছিল বডিক্যাম দেওয়ার উদ্দেশ্য। যদিও অভিযোগ আছে, ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা অনেক সময় এ ক্যামেরা বন্ধ রাখেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বডিক্যামের ব্যবহার বাস্তবে তেমন একটা নেই।

দেশে দেশে ব্যবহার

বিশ্বের অনেক দেশে অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে বডিক্যাম ব্যবহার করা হয়। যেমন, যুক্তরাজ্যের পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে এ ক্যামেরা ব্যবহার করছে। যুক্তরাজ্য মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, উচ্চগতির যানবাহন থামানো ও তল্লাশি, কোনো সম্পত্তি কিংবা ব্যক্তিকে তল্লাশি ও গ্রেপ্তার, তদন্ত কাজসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের সময় এ ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়।

বডিক্যাম ব্যবহার বাংলাদেশ পুলিশের জন্য নতুন নয়। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ প্রথমবারের মতো বডিক্যাম ব্যবহার শুরু করে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি তখন চালু করা হয়। এরপর চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বরিশাল মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকেও বডিক্যাম দেওয়া হয়। বগুড়া জেলা পুলিশ ও কক্সবাজার জেলা পুলিশেও পরীক্ষামূলকভাবে এ ক্যামেরার ব্যবহার চালু রয়েছে।

ইউরোপ, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বডিক্যাম ব্যবহার করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পুলিশও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এ ক্যামেরা ব্যবহার করছে।

ভারতের দিল্লি পুলিশও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এ ক্যামেরা ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে। গত ১১ মে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ বাহিনীর আধুনিকায়ন, স্বচ্ছতা বাড়ানো এবং নাগরিকদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলতে বডিক্যাম ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শুরুতে দিল্লি পুলিশ ১ হাজার ৫০০ বডিক্যাম সংগ্রহ করবে। ধাপে ধাপে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দিল্লিতে এর আগে ২০১৬, ২০১৯ ও ২০২২ সালে বডিক্যাম ব্যবহারের পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে তা সফল হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের একজন পুলিশ সদস্য বডিক্যাম দেখাচ্ছেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেবিসির মঞ্চে সোফিয়া-ব্যোমিকারা, শুরু বিতর্ক
  • দয়া করে গাজায় যান: পোপ লিওর প্রতি ম্যাডোনার আহ্বান
  • পিএসজিকে বিদায় দোন্নারুম্মার, এনরিকে বললেন ‘আমি দায়ী’
  • গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল
  • কবর ভেঙে ফেলার আহ্বান ইসরায়েলি মন্ত্রীর
  • ডলার কাছে নিতেই আর কিছু মনে নেই, ব্যবসায়ীর ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা লুট
  • নৌকায় বিস্ফোরণে দগ্ধ আরো একজনের মৃত্যু
  • মহানবী (সা.)-এর জীবনে নারীদের অবদান 
  • বডিক্যাম কী, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় কতটা কাজে দেবে