আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা সব সময় চ্যালেঞ্জের। গত এক বছরে এই চ্যালেঞ্জটা আরও বড় করে দেখা দিয়েছে। আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি, পারস্পরিক স্বার্থ আর শ্রদ্ধার ভিত্তিতে আমরা ভারতের সঙ্গে একটা ‘গুড ওয়ার্কিং রিলেশন’ (কাজের ক্ষেত্রে ভালো সম্পর্ক) চাই। আর এই সম্পর্কটা হবে ৫ আগস্ট-পরবর্তী পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জনগণের প্রত্যাশাকে বিবেচনায় নিয়ে। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু বলেনি যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে হবে। মানুষ চায় দুই দেশের সম্পর্ক হবে পারস্পরিক স্বার্থ আর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে। দেশের জনগণের একটা বড় অংশের ধারণা, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সরকার সেটা করেনি। দেশের স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়নি। কাজেই দুই দেশের স্বার্থ রক্ষা করে ভালো সম্পর্কে যে গুরুত্ব দিয়েছি, এটা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ।

চীন নিজেও জানে এবং আমরাও তাদের বোঝাতে পেরেছি, ’৭৫ সালে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক সব সময় বজায় থেকেছে। এমনকি বাংলাদেশের ক্ষমতায় বিপরীতমুখী দল থাকলেও সম্পর্ক এগিয়ে গেছে। এই ধারাবাহিকতায় গত এক বছরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।

আরও পড়ুনদ্বিধা আর সমন্বয়হীনতায় সরকারের কূটনীতি৩ মিনিট আগে

পাল্টা শুল্ক নিয়ে সাময়িকভাবে অস্বস্তি তৈরি হলেও গত এক বছরে সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বেশ ভালো। যুক্তরাষ্ট্রকে আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তাদের জন্য হুমকি বা ক্ষতিকর কিছু নয়। এটা মূলত অর্থনৈতিক সম্পর্ক। আমাদের নিজেদের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা ‘আউট অব দ্য ওয়ে’ (নিয়মের বাইরে গিয়ে) কিছু করছি না। অন্য অনেক দেশের মতোই আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। যেখানে ব্যবসা, বিনিয়োগের পাশাপাশি মানুষের চলাচল সুগম করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বৈরী সম্পর্কের প্রয়োজন নেই। অতীতে অকারণে পাকিস্তানের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। আমরা সেখান থেকে বের হয়ে এসেছি। পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক করার সময় অমীমাংসিত তিন বিষয় আলোচনার টেবিলে থাকছে।

রোহিঙ্গা সংকটে জটিলতা বেড়েছে। মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের অবসানের পর রাখাইনে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হবে। সে ক্ষেত্রে সেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করতে হবে। তখন রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যেতে পারে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের ঢাকা মিশনটি চালুর ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাইয়ের পর সম্মতি দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ যেভাবে প্রস্তাব দিয়েছিল, সে অনুযায়ী মিশনটি চালু হয়েছে এমনটি নয়। মানবাধিকার সুরক্ষায় আমাদের সমস্যা ছিল এবং এখনো আছে। এখানে জাতিসংঘের মিশন চালুর ফলে মানবাধিকার ইস্যুতে সরাসরি দুই পক্ষের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বিদেশে কনস্যুলারকেন্দ্রিক বাংলাদেশের মিশনে জনগণের সেবা সহজলভ্য করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার জহুরবারুতে কনস্যুলেট চালু হচ্ছে। সৌদি আরবে আরেকটি কনস্যুলেট চালু করা হবে। ওমানে লোকজনের দুর্ভোগ কমাতে ওমান পোস্টের মাধ্যমে পাসপোর্ট পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তবে মূল চ্যালেঞ্জটা অর্থনীতির ক্ষেত্রে। বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা পছন্দ করেন না। আমাদের এই সরকার দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্বে থাকবে না। এরপরও বিনিয়োগকারীদের বোঝাতে হয়েছে যে তাঁরা কোনো বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে এলে পরবর্তী সরকার এসে আটকে দেবে না। এরপরও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ আশাব্যঞ্জক নয়। ফলে অর্থনীতির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা রয়ে গেছে।

মো.

তৌহিদ হোসেন, উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাবি উপাচার্যের বাসভবনে সাবেক ছাত্রদল নেতার তালা

হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উর্দু বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে উপাচার্যের বাসভবনের গেটে তালা দেন ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা।

সোমবার রাত ৮টার দিকে তালা দেওয়ার আধা ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা সেটি ভেঙে ফেলেন।

তালা দেওয়া ব্যক্তি বুলবুল রহমান রাবি শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি নিয়োগপ্রত্যাশী হিসেবে এই প্রতিবাদ করেছেন।

আরো পড়ুন:

ডাকসুর মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু

ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের প্যানেলে ভিপি-জিএস প্রার্থী চূড়ান্ত 

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, নিয়োগ প্রত্যাশী বুলবুল রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী উর্দু বিভাগের ২০২৩ সালের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন করেন। যেখানে আবেদনের যোগ্যতা ছিল অনার্স ও মাস্টার্সে সর্বনিম্ন ৩.৫০ সিজিপিএ। বুলবুল রহমানের মাস্টার্সের ফলাফল সিজিপিএ ৩.৫০ এর ওপরে থাকলেও অনার্স পরীক্ষার ফলাফল ছিল সিজিপিএ ৩.৩৫। ফলে তিনি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হন।

পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৫ সালে উর্দু বিভাগে তিনজন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করলে বুলবুল রহমান সেটিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন উল্লেখ করে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। রিট পিটিশন নম্বর ৮৮৩৭। হাইকোর্ট ১৩ জুলাই থেকে ৪ মাসের মধ্যে রুল নিষ্পত্তির আদেশ দেন।

বুলবুল রহমানের অভিযোগে, কলা অনুষদ থেকে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা সিজিপিএ ৩.৫০ রাখা হলে বাণিজ্য অনুষদের ক্ষেত্রে সেটা ৩.৭৫ বা ৩.৮০ সিজিপিএ রাখা উচিত। কারণ বাণিজ্য অনুষদে রেজাল্ট ভালো করা তুলনামূলক সহজ এবং কলা অনুষদের ক্ষেত্রে আবেদনের যোগ্যতা ৩.৫০ সিজিপিএ রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন।

বুলবুল রহমান আরো বলেন, ‍আমি উর্দু বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ সম্পর্কে হাইকোর্টে একটি রিট করেছিলাম। রিটে আমার পক্ষে রায় আসে এবং ৬ মাস শিক্ষক নিয়োগ স্থগিতের আদেশ জারি করেন। পরবর্তীতে আমার রিটের বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হাইকোর্টে আপিল করে। সেটাতে তাদের পক্ষেও রায় আসে, আমার পক্ষেও রায় আসে। সেখানে বলা আছে, ৪ মাসের মধ্যে পূর্ণ শুনানি করতে হবে। যেহেতু পূর্ণ শুনানি হয়নি, তাহলে শিক্ষক নিয়োগ তো স্থগিত রাখা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটা অমান্য করে শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা করছে।

গত ৭ আগস্ট ভাইভাতে (মৌখিক) ১৮ জনকে লিখিত পরিক্ষায় টেকানো হয়েছে এবং ছয়জনকে সিলেকশন করা হয়েছে। কিন্তু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ছিল তিনজন নেওয়ার কথা। এ বিষয়ে আমি উপ-উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন খান স্যারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কথা বলি। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে ৩ জনের সার্কুলার ছিল এবং ২০২৫ সালে ৩ জনের সার্কুলার হয়। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে আমি ভিসি স্যারের বাস ভবনে তালা দিয়েছি। তার কারণ হলো তারা আইন অবমাননা করে কলা অনুষদের শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের বাসভবনের প্রধান গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন রাবি শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক বুলবুল রহমান।

বি প্রশাসন হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে উর্দু বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে কি না, জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেলের প্রশাসক অধ্যাপক আব্দুর রহিম মিয়ার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

রাবির প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, একজন শিক্ষার্থী নিজেকে ভুক্তভোগী মনে করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ডিপার্টমেন্টে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আজকে সেগুলো চূড়ান্ত করার জন্য সিন্ডিকেটের সভা ছিল। আমার ধারণা, সে উপাচার্যের বাসভবনে তালা দিয়ে সিন্ডিকেট সভা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করেছিল, যাতে সিন্ডিকেট সভার সদস্যরা আসতে না পারেন। তার কথা হচ্ছে, তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

আমার ধারণা, তার যোগ্যতা না থাকায় তার বিভাগ হয়তোবা তার আবেদনপত্র গ্রহণ করেনি। সে মামলাও করেছে, মামলার শুনানিও হয়েছে। মামলার নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিভাগের নিয়োগের সম্পন্ন করেছে। সে চাইলে আবার আপিল করতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করে বিশ্ববিদ্যায়রে একজন সাবেক শিক্ষার্থীর উপচার্যের বাসভবনে তালা দেওয়া সমীচীন নয়। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনকও," যোগ করেন অধ্যাপক মাহবুবর রহমান।

ঢাকা/ফাহিম/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাহাত্তরের ‘সরব কণ্ঠ’ বীর উত্তম জিয়াউদ্দিন, নীরবেই চলে গেলেন
  • চবিতে শিবিরকে নিয়ে ছাত্রদলের মিথ্যাচারের অভিযোগ
  • গণতন্ত্রে উত্তরণে আমরা কেন বারবার হোঁচট খাচ্ছি
  • স্পর্শকাতর বিষয়, তদন্ত দ্রুত যেন হয় মনিটরিং করবেন
  • প্রধান বিচারপতির বাসভবন, সুপ্রিম কোর্ট ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
  • দেশে কিছু ভুয়া সমন্বয়ক সৃষ্টি হয়েছে: দুদক চেয়ারম্যান
  • পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী আর নেই
  • ছাত্র সংসদের দাবিতে ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দৃঢ অবস্থান
  • রাবি উপাচার্যের বাসভবনে সাবেক ছাত্রদল নেতার তালা