জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে, বিরাজিত পরিস্থিতি তা ধারণে ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে করে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি। সংগঠন দুটি বলছে, তারা শঙ্কিত এ কারণে যে অব্যাহত ‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে’ বিপর্যস্ত ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় এই নতুন পরিস্থিতিতে অস্তিত্বসংকটে পড়েছে।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উৎসব ২০২৫ উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেছে সংগঠন দুটি। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এই মতবিনিময় সভা হয়। আয়োজক পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি।

মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার কথিত ও পরিকল্পিত অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অতি সম্প্রতি লালমনিরহাট ও রংপুরের গঙ্গাচড়ার ঘটনা উল্লেখ করতে হয়। ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের এই নতুন কৌশল গভীর শঙ্কা ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কেউ যদি ধর্ম অবমাননা করেন, তিনি যে ধর্মেরই হোন না কেন, তাঁর বিচার ও যথোপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন তাঁরা; কিন্তু এর আগে নিশ্চিত হতে হবে, কাজটি সত্যিই তিনি করেছেন কি না। দুঃখের সঙ্গে তাঁরা লক্ষ্য করছেন যে নিশ্চিত হওয়ার আগেই ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে নির্বিচার পাড়ার পর পাড়ায় হামলা চালানো হচ্ছে। লুটপাট-অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রকাশ্যে।

মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ এভাবে চলতে পারে না বলে উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে। এতে বলা হয়, গত বছর জুলাই গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে যে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে, বিরাজিত পরিস্থিতি তা ধারণে ব্যর্থ হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এসেছিলেন বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন জয়ন্ত কুমার দেব। এতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা সেদিন ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশকে একটি পরিবার হিসেবে দেখতে চান; কিন্তু পরবর্তী সময়ে বেদনার্ত চিত্তে লক্ষ্যে করা গেছে, সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা অস্বীকার করা হয়েছে। সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত প্রায় এক ডজন কমিশনের মধ্যে দুটিতে মাত্র দুজন সংখ্যালঘু সদস্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। সংবিধান সংস্কারসহ গুরুত্বপূর্ণ কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো অবস্থান নেই। সংখ্যালঘুদের কথা শুনতে চাওয়া হয়নি। এই প্রবণতা এক পরিবারের ধারণার সঙ্গে যায় না।

মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের উপদেষ্টা আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, সংখ্যালঘুদের জীবনাচরণ হুমকির সম্মুখীন। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নারীরা রাস্তাঘাটে বের হলে নানাভাবে কটূক্তি করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে আরও অনেক ধরনের ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় সংখ্যালঘুরা হীনম্মন্যতায় ভুগছেন।

জন্মাষ্টমীর দুই দিনের উৎসব

মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, জন্মাষ্টমী উপলক্ষে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি প্রতি বছরের মতো এবারও দুদিনের অনুষ্ঠানসূচি গ্রহণ করেছে।

সূচি অনুযায়ী, আগামীকাল শনিবার (১৬ আগস্ট) সকাল আটটায় দেশ-জাতির মঙ্গল কামনায় শ্রীশ্রী গীতাযজ্ঞ, বেলা তিনটায় ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিল ও রাতে শ্রীকৃষ্ণ পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে আয়োজিত গীতাযজ্ঞ পরিচালনা করবে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের শংকর মঠ ও মিশন। বেলা তিনটায় পলাশীর মোড়ে কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলের উদ্বোধন হবে।

মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, এবার এক নবযুগের সূচনা করবে এই ঐতিহাসিক মিছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন ও নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো.

মঈন খান।

মতবিনিময় সভায় আরও বলা হয়, এক নতুন আঙ্গিকে ঐতিহ্যের নান্দনিক উপস্থাপনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর এই ঐতিহাসিক মিছিল প্রতিবছরের মতো একই পথ ঘুরে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হবে। রাতে ঢাকেশ্বরী মেলাঙ্গনে শ্রীকৃষ্ণ পূজার পর প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হবে।

দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান হবে আগামী মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট)। সেদিন বেলা তিনটায় আয়োজিত হবে আলোচনাসভা। আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন মজুমদার।

জন্মাষ্টমী উৎসব ঘিরে নিরাপত্তা আশঙ্কা আছে কি না, এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, সরকার পরিপূর্ণ নিরাপত্তার পদক্ষেপ নিয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, কোনো সমস্যা হবে না।

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ। একই সংগঠনের সহসভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথসহ অনেকে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঢ ক শ বর পর স থ ত অন ষ ঠ ন উপদ ষ ট উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

মোবাইলের ব্যালান্স দিয়ে দেশি মুদ্রাতেই কেনা যাবে রবির রোমিং প্যাক

মোবাইলে থাকা ব্যালান্স দিয়েই ৭০টির বেশি দেশে রোমিং সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ চালু করেছে মোবাইল অপারেটর রবি। নতুন এ সুযোগ চালু হওয়ায় বাংলাদেশি টাকায় সহজেই বিভিন্ন রোমিং প্যাকেজ কেনা যাবে। ‘মাই রবি’ ও ‘মাই এয়ারটেল’ অ্যাপ ব্যবহার করে প্যাকেজগুলো কেনা যাওয়ায় কোনো ক্রেডিট কার্ড বা ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টের প্রয়োজন হবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার রবির করপোরেট কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ সুবিধা চালুর ঘোষণা দেওয়া হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে রবি আজিয়াটা পিএলসি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিদেশ ভ্রমণের সময় গ্রাহকেরা সরাসরি তাঁদের মূল ব্যালান্স থেকে বাংলাদেশি টাকায় রোমিং প্যাক কিনতে পারবেন। গ্রাহকেরা ভ্রমণের আগেই রোমিং প্যাক কিনে রাখতে পারবেন। তবে প্যাকটি কার্যকর হবে গন্তব্যে পৌঁছানোর পর থেকে। এ বিষয়ে রবি আজিয়াটা পিএলসির চিফ কমার্শিয়াল অফিসার (সিসিও) শিহাব আহমাদ জানান, নতুন রোমিং প্যাকগুলোতে আকর্ষণীয় মূল্যে বেশি ডেটা ও উন্নত সুবিধা পাওয়া যাবে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের যুগ্ম পরিচালক শাহজাহান আলী বলেন, ‘রবির এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বিদেশে লেনদেন সহজ ও স্বচ্ছ করতে চাই। রবির নতুন এ সুবিধা সে লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। স্থানীয় মুদ্রায় রোমিং কেনার এ সুবিধা বাংলাদেশিদের ভ্রমণকে আরও সহজ করবে এবং ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টের ওপর নির্ভরতা কমাবে।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং উপপরিচালক ফারজানা রহমান, রবি আজিয়াটা পিএলসির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, চিফ পিপল অফিসার মুহাম্মদ শোয়েব বেগ ও হেড অব মার্কেটিং শওকত কাদের চৌধুরী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ