আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা শুধু আর্থিক প্রবৃদ্ধির অংশীদার নই, বরং একটি সবুজ, নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্যও দায়বদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান সিটি ব্যাংক। এই দায়িত্ববোধ থেকেই সিটি ব্যাংক কয়েক বছর ধরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পরিবেশ সংরক্ষণ ও সামাজিক উন্নয়নের পথে একের পর এক সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। 

সিটি ব্যাংক নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি দক্ষতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি স্বল্প কার্বন নির্গমনকারী, পরিবেশগত ও সামাজিকভাবে টেকসই অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য সিটি ব্যাংক পুঁজি সরবরাহে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত
অবক্ষয়ের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায়ও সহায়তা করবে।

আমরা গর্বের সঙ্গে জানাতে চাই, সিটি ব্যাংক দেশের সবচেয়ে বড় বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। পাশাপাশি ২০২৪ সালে আমরা ১৩০ মেগাওয়াটের বেশি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছি। পরিবেশবান্ধব প্রকল্প অর্থায়নে আমাদের কার্যক্রমের আরেকটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো যশোর পৌরসভার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে অর্থায়ন, যেখানে বর্জ্য থেকে জৈব সার উৎপাদিত হচ্ছে। 

খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০২৪ সালে আমরা ১ হাজার ২৩৭ কোটি টাকার বেশি অর্থায়ন করেছি, যার মাধ্যমে সরাসরি ১ লাখ ৮ হাজার ৮৮ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। কারখানার বর্জ্য থেকে পরিবেশদূষণ রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় আমরা কম খরচে গ্রিন ঋণ প্রদান করছি। এই অর্থায়ন দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন শিল্পকারখানায় আধুনিক বায়ু পরিশোধনব্যবস্থা এবং বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপনের জন্য। 

আমরা ২০২৪ সালে নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে ১ হাজার ৯১২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছি, যা নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া সিটি ব্যাংকে নারীদের জন্য নিবেদিত একটি বিশেষ ব্যাংকিং বিভাগ রয়েছে, যার নাম সিটি আলো। এই বিভাগ নারীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং সেবা প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন অ-আর্থিক সুবিধাও দিয়ে থাকে। যেমন বিশেষ দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং পেশাগত ও ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ। 

সিটি ব্যাংকের ন্যানো-লোন (সম্পূর্ণ কাগজবিহীন, পরিবেশবান্ধব ডিজিটাল ঋণ) আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে এগিয়ে নিচ্ছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধার আওতায় মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার ১৬৭ জন গ্রাহকের মধ্যে ১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

আমাদের সব গ্রাহককে বাধ্যতামূলকভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ নীতিমালা (ইসিআর-২০২৩), বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবেশগত ও সামাজিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নির্দেশনা (ইএসআরএম) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) পরিবেশ ও সামাজিক নীতিমালা মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করি, ব্যাংকের অর্থায়ন করা প্রতিটি প্রকল্প পরিবেশবান্ধব ও সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল।

করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমের মাধ্যমে গত বছর আমরা ৭৯ হাজার ৪৯ জন উপকারভোগীর কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। আমাদের উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন উদ্যোগ এবং সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা। টেকসই বিদ্যুৎ শক্তির প্রসারে আমরা সম্প্রতি আয়োজন করেছি দেশের প্রথম নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রদর্শনী। সিটি ব্যাংক তার জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশবিষয়ক অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে প্রথম দেশি ব্যাংক হিসেবে জাতিসংঘের নেতৃত্বে গঠিত বৈশ্বিক উদ্যোগ-নেট-জিরো ব্যাংকিং অ্যালায়েন্স এ যুক্ত হয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রতি অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে সিটি ব্যাংক ২০২২ সাল থেকে নিয়মিত সাসটেইনেবিলিটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।

মোহাম্মদ ফিরোজ আলম
চীফ রিস্ক অফিসার (সিআরও), সিটি ব্যাংক 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল অর থ য ন প রকল প ব যবস থ ন কর ছ বর জ য আর থ ক পর ব শ র জন য ট কসই

এছাড়াও পড়ুন:

খনিজ ও তেল–গ্যাস অনুসন্ধানে পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতার পরিসর বাড়াতে আগ্রহী। পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

গত মাসে ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদ বাণিজ্যচুক্তিতে সই করেছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে শুল্ক কমবে ও বিনিয়োগ বাড়বে। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল জানান, ইসলামাবাদ মার্কিন কোম্পানিগুলোকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে খনন প্রকল্পে স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগের সুযোগ দেবে এবং ইজারা চুক্তিতে ছাড়ের মতো নানা ধরনের সুবিধা দেবে। খবর রয়টার্স

বেলুচিস্তান প্রদেশে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সোনা ও তামার খনি আছে বলে ধারণা করা হয়। রেকো ডিক নামের এক খনিপ্রকল্প সেখানে চলমান; এই প্রকল্প পরিচালনা করছে ব্যারিক গোল্ড নামের একটি খনিপ্রতিষ্ঠান।

রুবিও বুধবার রাতে বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও তেল-গ্যাস খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও বাণিজ্য সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।

ট্রাম্প প্রশাসনের আগে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কিছুটা শীতল ছিল। এর পেছনে একটি কারণ হলো, পাকিস্তানের চিরশত্রু ভারতের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ঝুঁকে পড়া। মূলত চীনের উত্থান মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতের দিকে ঝুঁকেছে। এ ছাড়া আফগানিস্তানের বিষয়েও ওয়াশিংটনের ক্ষোভ ছিল, বিশেষ করে বাইডেন প্রশাসনের সময় আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময় তালেবানদের ক্ষমতা দখলের ঘটনায়। ওয়াশিংটনের অভিযোগ, পাকিস্তান এই কাজে তালেবানদের সহযোগিতা করেছে, যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে।

সম্প্রতি দুই দেশের সম্পর্কে উন্নতি হয়েছে। ট্রাম্পের উদ্যোগে মে মাসে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি হয় বলে দাবি করা হয়। পাকিস্তান ট্রাম্পের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে, যদিও ভারত জানিয়েছে, সমস্যা সমাধানে দুই দেশকে সরাসরি আলোচনায় বসতে হবে, বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া তা হতে হবে।

এদিকে মঙ্গলবার ইসলামাবাদে সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আবার পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের ওয়াশিংটন সফরের সময় ‘বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মিকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।’

দুই দেশের বাণিজ্য

ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ বা ইউএসটিআরের তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে পণ্য ও সেবা–বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১০ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ১ হাজার ১০ কোটি ডলার; ২০২৩ সালের তুলনায় যার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের পণ্যবাণিজ্য (রপ্তানি ও আমদানি) ছিল মোট ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ৭২০ কোটি ডলার। গত বছর পাকিস্তানে মার্কিন পণ্যের রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ২১০ কোটি ডলার, আগের বছরের তুলনায় যা ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি ছিল ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ৫১০ কোটি ডলারের; ২০২৩ সালের তুলনায় যা ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ফলে ২০২৪ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে মার্কিন পণ্যবাণিজ্যের ঘাটতি ছিল ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার—২০২৩ সালের তুলনায় যা ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সেবা–বাণিজ্য ছিল প্রায় ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ২৯০ কোটি ডলারের। পাকিস্তানে মার্কিন সেবা রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ১৭০ কোটি ডলারের, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২০ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সেবা আমদানি হয়েছে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ১১০ কোটি ডলারের, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেবা–বাণিজ্যের উদ্বৃত্ত ৬১০ মিলিয়ন বা ৬১ কোটি ডলার; ২০২৩ সালের তুলনায় যা ১৪৭ শতাংশ বেশি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১২ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি
  • গণ–অভ্যুত্থানের পরে আনোয়ার ইব্রাহিমের বাংলাদেশ সফর আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছিল: অধ্যাপক ইউনূস
  • কুবিতে র‍্যাগিং: ২ শিক্ষার্থী বহিষ্কারসহ বিভাগীয় প্রধান ও ছাত্র উ
  • খনিজ ও তেল–গ্যাস অনুসন্ধানে পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে যুক্তরাষ্ট্র
  • জাবিতে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু ২১ সেপ্টেম্বর
  • জুলাই আন্দোলনের হামলা মামলার আসামি পেলেন ‘সাহসী সাংবাদিক’ সম্মাননা
  • টেকসই ঋণে লাভবান ব্যাংক ও গ্রাহক
  • শিক্ষা সংস্কার: প্রেক্ষিত ২০২৪ পরিবর্তন ও আমার ভাবনা
  • বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল, তবে উদ্বেগ রয়ে গেছে