ম্যান সিটিতে প্রথম ম্যাচেই আলো ছড়ানো এই দুই তারকাকে কতটা চেনেন
Published: 17th, August 2025 GMT
ম্যানচেস্টার সিটির গত মৌসুমটা ছিল পুরোপুরি ব্যর্থতায় মোড়ানো। শিরোপাহীন থাকা ছাড়াও পারফরম্যান্সের মান ক্রমেই নিচের দিকে গিয়েছিল। পেপ গার্দিওলার পরিচিত ছন্দও যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল। সেই হতাশা কাটিয়ে উঠতে ২০২৫-২৬ মৌসুমকেই নতুন শুরুর মৌসুম হিসেবে দেখছে সিটি। এরই মধ্যে দলে এসেছে বড় পরিবর্তনও।
সিটি ছেড়ে গেছেন বহুদিনের পরীক্ষিত যোদ্ধা ও কিংবদন্তি কেভিন ডি ব্রুইনা। ব্যর্থতার দায়ে ধারে এভারটনে গেছেন ক্লাবের সবচেয়ে দামি ফুটবলার জ্যাক গ্রিলিশ। বিপরীতে ক্লাবটিতে যোগ দিয়েছে বেশ কয়েকটি তরুণ মুখ। যাঁদের দুজনের গতকাল রাতে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেকও হয়ে গেছে। অভিষিক্ত সেই দুই ফুটবলার হলেন তিজানি রেইন্ডার্স ও রায়ান শেরকি।
২৭ বছর বয়সী রেইন্ডার্স গতকাল রাতে উলভসের বিপক্ষে মূল একাদশেই জায়গা পান। সুযোগ পেয়ে গার্দিওলার আস্থার প্রতিদানও তিনি দিয়েছেন দারুণভাবে। শুরু থেকে দুর্দান্ত খেলা রেইন্ডার্স নিজের আসল জাদু দেখান ম্যাচের ৩৪ মিনিটে। নিজেদের অর্ধ থেকে বল পেয়ে আক্রমণে ওঠেন তিনি। এরপর ট্যাকল করতে আসা দুজনকে কাটিয়ে ফ্লিক করে বল বাড়ান রিকো লুইসের উদ্দেশে।
আরও পড়ুনহলান্ডের জোড়া গোল, বড় জয়ে শুরু ম্যান সিটির২১ ঘণ্টা আগেলুইসের পাস থেকে গোল করে সিটিকে এগিয়ে দেন হলান্ড। ৩ মিনিট পরের গোলটা অবশ্য রেইন্ডার্স নিজেই করেছেন। অস্কার ববের পাসে রানিং শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ডাচ মিডফিল্ডার। এরপর হলান্ডের করা তৃতীয় গোলটিরও নেপথ্য নায়ক ছিলেন তিনি। আক্রমণ তৈরিতে সহায়তার পাশাপাশি চমৎকার এক ব্যাকপাসে হলান্ডকে অ্যাসিস্টও করেছেন রেইন্ডার্স।
সিটিতে অভিষেকেই আলো ছড়ালেও, রেইন্ডার্সের মুগ্ধতার গল্প নতুন নয়। এর আগে এসি মিলানের হয়েও নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। গত মৌসুমে সিরি আ’র বর্ষসেরা দলে জায়গা করে নেওয়ার পাশাপাশি নির্বাচিত হয়েছিলেন লিগের বর্ষসেরা মিডফিল্ডারও। সতীর্থদের গোল বানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজেও লক্ষ্যভেদে সিদ্ধহস্ত।
গোলের পর রায়ান শেরকি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ইন ড র স হল ন ড
এছাড়াও পড়ুন:
৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম
গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।
এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।
আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’
দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’
ব্যবসার শুরুরহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।
রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।
হকার থেকে এজেন্টকয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’
পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’