গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোর প্রশাসনিক পদে নতুন মুখ বসায় অন্তর্বর্তী সরকার।

এরই ধারাবাহিকতায় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও নতুন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য অর্জনে নানা উদ্যোগের আশ্বাস দিয়ে আসছে প্রশাসন। তবে ১ বছরে নানা উদ্যোগের আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন করতে পারেনি প্রশাসন। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।  

আরো পড়ুন:

রাবিতে কমপ্লিট শাটডাউনে ইবির জিয়া পরিষদের সংহতি

বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় ইবির ২ শিক্ষক

জানা যায়, গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ৪ বছরের জন্য উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক ড.

নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। পরদিন দায়িত্ব গ্রহণকালে বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও গবেষণায় আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়া, নিজে দুর্নীতি না করা ও অপরকেও দুর্নীতি করতে না দেওয়ার শতভাগ গ্যারান্টি দেন তিনি।

গত ২ ডিসেম্বর উপ-উপাচার্য হিসেবে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী ও কোষাধ্যক্ষ হিসেবে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম নিয়োগ পান।

দায়িত্ব পালনের ১ বছরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচিতে শিক্ষা সংস্কারে অগণিত আশ্বাস দেয় প্রশাসন। প্রশাসনের আশ্বাসের মধ্যে অন্যতম হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব অনুষদে নতুন বিভাগ চালু করা, অনুষদ ভিত্তিক বেস্ট টিচার্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক মূল্যায়ন সেন্টার চালু, বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের মডেলে সাজানো, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে মনিটরিং সেল গঠন, জুলাইবিরোধী সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিচার, সেবাখাতে ডিজিটালাইজড করা, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সপ্তাহব্যাপী রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা, জব কর্নার চালু, সেশনজট নিরসনে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা, এক কার্ডেই সব সেবা নিশ্চিতে স্মার্ট আইডি কার্ড চালু, সায়েন্স ক্লাবকে ১০ হাজার অর্থসহ টিএসসিসিতে একটি অস্থায়ী কক্ষ এবং পরবর্তীতে নির্মানাধীন একাডেমিক ভবনে একটি স্থায়ী কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া, জুলাইয়ে শহিদ ও আহত পরিবারের সদস্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে বিশেষ সুবিধা প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোর পাঠ্যসূচিতে জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস অন্তর্ভুক্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ে চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স চালু, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, টিচার্স-স্টুডেন্ট্স একচেঞ্জ প্রোগ্রাম এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেন চীনে স্কলারশিপের ব্যবস্থা, ভুয়া পেইজ বন্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর জীবন, আদর্শ ও কর্ম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্বতন্ত্র গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন, অধ্যাদেশ পাশ হলেই নভেম্বরের মধ্যে ইকসু নির্বাচন ইত্যাদি।

এছাড়া শিক্ষা সংস্কারে উপাচার্যের কাছে উত্থাপিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪৬টি প্রস্তাব, শাখা ছাত্রদলের বিভিন্ন মেয়াদে ১৯ দফা ও ১০ দফা দাবি, শাখা ছাত্রশিবিরের ১১০ দফা প্রস্তাব, ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদসহ ক্রিয়াশীল বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনের বিভিন্ন মেয়াদে প্রস্তাব ও দাবিগুলো বাস্তবায়নে আশ্বাস দেয় প্রশাসন। 

গত ১ বছরে প্রশাসনের আশ্বাসের বাস্তবায়ন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব’ নামে একটি নতুন অনুষদ চালু, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে জব কর্নার চালুসহ ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মাঝে স্মার্ট ‘আরএফআইডি’ কার্ড বিতরণ করা হয়। তবে স্মার্ট আইডি কার্ডে ত্রুটি রয়েছে বলে অভিযোগ একাংশ শিক্ষার্থীর।

একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রদান, সেশনজট নিরসনে ৫৯টি পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অর্থছাড় না থাকায় নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে বিশবিদ্যালয় প্রশাসন।

সর্বশেষ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ছয়টি বিভাগে ছয়টি পদে শিক্ষক নিয়োগের অর্থছাড় দিয়েছে ইউজিসি। এছাড়া বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত সম্পন্ন হয়েছে, জুলাই আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ভূমিকায় থাকা ১৯ শিক্ষককে শোকজ করেছে প্রশাসন। তবে এখনো কাউকে শাস্তির আওতায় আনা হয়নি বলে জানা গেছে। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন শুধু বিভিন্ন স্থাপত্য ও স্থানের নাম পরিবর্তন, আলোকসজ্জা, পুকুরে মাছ ছাড়া, পুরাতন গাড়িসহ নতুন নতুন উদ্ধোধনই করে যাচ্ছে। অথচ সেশনজট নিরসন, জুলাইবিরোধীদের বিচার, শিক্ষক নিয়োগ, সাজিদ হত্যার বিচার, সনদ উত্তোলনের ভোগান্তি হ্রাস, পরিবহনের অব্যবস্থাপনা রোধ, খাবারের মান নিশ্চিত ও আবাসন সংকট রোধসহ নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। প্রশাসন থেকে আওয়ামীপন্থিদের প্রত্যাহারের দাবিতে বারবার আন্দোলন হলেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবির সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, “প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছে যেকোনো মূল্যে এ ৪৬ দফা ধরে ধরে কাজ করবেন। কিন্তু ১ বছর পার হলেও আবাসন সংকট, শিক্ষক সংকট থেকে শুরু করে আমাদের উত্থাপিত দাবিগুলো পূরণ হয়নি। যতটুকু হয়েছে তা খুবই হতাশাজনক।”

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে বেশকিছু কাজ করেছি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণে অনেক কাজ প্রসেসের মধ্যে আছে। অটোমেশনসহ বিভিন্ন উদ্যোগকে ডিজিটালাইজেশন করা একটু সময় সাপেক্ষ বিষয়। এদিকে আমাদের নজর রয়েছে।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপ চ র য ম হ ম মদ উদ য গ ১ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশকে ৫৪ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

হংকং ইন্টারন্যাশনাল সিক্সেস টুর্নামেন্টে আজ প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৫৪ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৬ ওভারে ২ উইকেটে ১৪৯ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। তাড়া করতে নেমে ৫ উইকেটে ৯৫ রানে থেমেছে বাংলাদেশের ইনিংস।

মং ককে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচে দুটি ফিফটিতে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে অস্ট্রেলিয়া দল। ৮ ছক্কায় ১৪ বলে ৫১ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হন ওপেনার বেন ম্যাকডারমট। ৭ ছক্কা ও ১ চারে ১১ বলে ৫০ রান করা অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক অ্যালেক্স ক্রসও রিটায়ার্ড হার্ট হন। ৬ বলে ৩০ রান করেন উইলিয়াম বশিস্টো।

বাংলাদেশের স্পিনার রাকিবুল হাসান অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে প্রথম ওভারেই দুটি ওয়াইডসহ মোট ২৪ রান দেন। অবশ্য ওপেনার জ্যাক উডকে ফেরান এই বাঁহাতি। পরের ওভারে চার ছক্কা হজম করে মোট ২৫ রান দেওয়া স্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন বশিস্টোকে ফেরান ড্রেসিংরুমে। এরপর আর অস্ট্রেলিয়ার উইকেট ফেলতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। আবু হায়দার তৃতীয় ওভারে ১৮ রান দেন, যা ইনিংসে সবচেয়ে কম রানের ওভার। পঞ্চম ওভারে হাবিবুর রহমানকে পাঁচ ছক্কা ও এক চারে মোট ৩৪ রান তোলেন ক্রস। শেষ ওভারে পেসার আবু হায়দার দেন ২৮ রান।

আরও পড়ুনআকবরের ৯ বলে ৩২ রান, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ১৮ ঘণ্টা আগে

তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই তিন উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। ক্রিস গ্রিনের করা এই ওভারে আউট হন হাবিবুর, অধিনায়ক আকবর আলী ও জিসান আলম। পরের ওভারে মোসাদ্দেকও আউট হলে দুই ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ২৮। পেস বোলিং অলরাউন্ডার আবু হায়দার একাই যা একটু লড়াই করেন। ৭ ছক্কা ও ২ চারে ১৮ বলে ৫০ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ১০ বলে ২৫ রান করেন রাকিবুল।

সেমিফাইনালের টিকিট কাটা অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে। আজ দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫ উইকেটে হারায় পাকিস্তান।

দক্ষিণ আফ্রিকার ৩ উইকেটে ১০২ রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান জিতেছে ৩.৫ ওভারে। ৮ ছক্কায় ১০ বলে অপরাজিত ৫০ রান করেন পাকিস্তানি ওপেনার আব্দুল সামাদ। ১৩ বলে ৩৬ রানে আউট হন খাজা নাফাই। প্রোটিয়া বোলার জর্ডান মরিসের করা শেষ ওভারে টানা পাঁচ ছক্কা মেরে ম্যাচ জেতান সামাদ। আগামীকাল সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান।

আরও পড়ুনভারতকে হারিয়ে ওভারে ছয় ছক্কা হজমের জ্বালা মেটালেন কুয়েতের ইয়াসিন১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ