জেসিন্ডা আরডার্ন: বিশ্ব কি তাঁকে ভুলে যাবে
Published: 25th, September 2025 GMT
রাজনীতি এমন এক মঞ্চ, যেখানে নেতারা আসেন, প্রভাব বিস্তার করেন, আর একদিন সরে দাঁড়ান। কিন্তু কিছু নেতা থাকেন মানুষের স্মৃতিতে, তাঁদের নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্যের কারণে। জেসিন্ডা আরডার্ন ঠিক এমন একজন, যিনি নেতৃত্বে এনেছিলেন নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি, যাতে মিশে ছিল সহানুভূতি, সাহস আর মানবিকতা।
২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জেসিন্ডার শাসনকাল শুধু নিউজিল্যান্ড নয়, পুরো বিশ্বরাজনীতির জন্যও এক অনন্য অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে খোদিত হয়েছে।
এখন নিউজিল্যান্ডের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তেমন আলোচনায় নেই। আছেন স্বামী ক্লার্ক গেফোর্ড, একমাত্র কন্যা ও লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ততায়; নিজের দেশ নিউজিল্যান্ড ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে সময় কাটাচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, যদি আড়ালে থাকেন, তাহলে কি আমরা এই মহিয়সীকে ভুলে যাব?
আমরা চাইলেও জেসিন্ডাকে ভুলতে পারব না। কারণ, এ বছরের জুনে প্রকাশিত হয়েছে আরডার্নের স্মৃতিকথা ‘আ ডিফারেন্ট কাইন্ড অব পাওয়ার’। আর এখন সেই বই নিয়েই চলছে আলোচনা, যেখানে তিনি নিজের নেতৃত্ব, চ্যালেঞ্জ ও অভিজ্ঞতার গল্প ব্যক্ত করেছেন।
যেভাবে মানস গড়ে উঠেছিল জেসিন্ডার
নিউজিল্যান্ডের ৪০তম প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের জন্ম হ্যামিলটনের ওয়াইকাতোতে, ১৯৮০ সালের ২৬ জুলাই। সেই হিসাবে তাঁর বয়স এখন ৪৫ বছর। পুলিশ বাবার সন্তান, বেড়ে ওঠা চার্চের তত্ত্বাবধানে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি নিউজিল্যান্ড লেবার পার্টিতে যোগ দেন। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াইকাতো থেকে লেখাপড়া শেষ করে তখনকার প্রধানমন্ত্রী হেলেন কেলারের দপ্তরে একজন গবেষক হিসেবে যোগ দেন। সারা জীবন এই হেলেন কেলারকেই আদর্শ মেনে এসেছেন জেসিন্ডা।
জেসিন্ডা আরডার্ন ২০০৮ সালে প্রথম এমপি হন পিআর পদ্ধতিতে। তাঁর রাজনীতিতে উত্থানের গল্পটা বেশ চমকপ্রদ। অ্যানেট কিং সরে দাঁড়ালে ২০১৭ সালের ১ মার্চ আরডার্ন সর্বসম্মতভাবে লেবার পার্টির উপপ্রধান নির্বাচিত হন। এর পাঁচ মাস পর আসে সাধারণ নির্বাচন। লেবার পার্টির তখনকার নেতা অ্যান্ড্রিউ লিটলের সরে না দাঁড়ানোর কোনো উপায় ছিল না। কারণ, তাঁর জনপ্রিয়তার পারদ কেবল নিচে নামছিল। আরডার্ন দলের নেতা নির্বাচিত হতেই দলের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকল।
২০১৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হলেন এই ‘সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট’। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৭ বছর। বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রেকর্ড গড়লেন।
সহানুভূতির রাজনীতি
জেসিন্ডার সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তাঁর সহানুভূতিশীল নেতৃত্ব। ২০১৯ সালের ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার পর সারা বিশ্বের চোখ ছিল নিউজিল্যান্ডের দিকে। আক্রমণের শিকার মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে, মাথায় ওড়না পরে এবং চোখে অশ্রু ধারণ করে তিনি যে বার্তা দিয়েছিলেন, তা শুধু নিউজিল্যান্ড নয়, পুরো বিশ্ববাসীর হৃদয়ে অমোচনীয় ছাপ রেখেছিল। পার্লামেন্টে তাঁর ভাষণ শুরু হয়েছিল ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটো মসজিদে এক শ্বেতাঙ্গ হামলাকারীর গুলিতে ৫০ জনের বেশি মুসলিম নিহত হন। নিউজিল্যান্ডের মতো শান্তিপ্রিয় দেশে এমন নৃশংস ঘটনা পুরো বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছিল।
একইভাবে কোভিড-১৯ মহামারির সময় জেসিন্ডা সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি অনলাইনে কথা বলেন। রাতের বেলায় ফেসবুক লাইভে এসে আশ্বাস দেন, উদ্বিগ্ন মানুষের আতঙ্কা দূর করেন। তাঁর এই সহানুভূতিনির্ভর রাজনীতি একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করে, যেখানে ক্ষমতা মানে শুধু কঠোরতা নয়, মানবিকতাও সমান জরুরি।
মাত্র ৩৭ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী হয়ে জেসিন্ডা দেখিয়েছেন, বয়স নেতৃত্বের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নয়। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মধ্যে মা হয়েও তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন দক্ষতার সঙ্গে। সংসদে সন্তানকে সঙ্গে আনা, মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়া—এসব কর্মকাণ্ড রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা নিয়ে প্রচলিত ধারণাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। তরুণ ও বিশেষ করে নারীদের কাছে তিনি অনুপ্রেরণার এক প্রতীক হয়ে ওঠেন।
ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার পর আক্রমণের শিকার মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে, মাথায় ওড়না পরে এবং চোখে অশ্রু ধারণ করে জেসিন্ডা আরডার্ন যে বার্তা দিয়েছিলেন, তা শুধু নিউজিল্যান্ড নয়, পুরো বিশ্ববাসীর হৃদয়ে অমোচনীয় ছাপ রেখেছিল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সহ ন ভ ত আরড র ন র জন ত র বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনের সড়কে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার রাত সোয়া ৯টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় একজন পথচারী আহত হয়েছেন এবং রাস্তার পাশে থাকা একটি মোটরসাইকেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত মোটরসাইকেলের মালিক নাজমুস সাকিব জানান, তিনি ফুটপাথের পাশে বসে চা খাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ককটেল ছুটে এসে এখানে পড়ে। এতে তাঁর মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে এ ঘটনায় আহত ব্যক্তির বিস্তারিত পরিচয় জানা যায় যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, সম্ভবত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশ থেকে টিএসসিতে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, ধারণা করা হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে কেউ একজন ককটেলগুলো ছুড়েছে। সেখানে প্রক্টোরিয়াল টিম পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে অভিযান চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করা হচ্ছে।
রাত সোয়া ৮টার দিকে ঘটনাটি ঘটে বলে জানান শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর। তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমির গেটে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আমরা অনুমান করছি দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলে এসে ককটেল বিস্ফোরণের পর পালিয়ে গেছেন।’