বাকৃবির ননী ফল সুপার ফুড নাকি লিভারের জন্য হুমকি?
Published: 25th, September 2025 GMT
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঝুলছে এক অদ্ভুত ফল। চেহারায় কুঁচকানো, গন্ধে তীব্র, স্বাদে তিক্ত। এ ফলের নাম ননী। বৈজ্ঞানিক নাম Morinda citrifolia, ইংরেজিতে পরিচিত Noni Fruit নামে।
দেখতে কুঁচকানো, গন্ধে তীব্র আর স্বাদে তিতকুটে এই ফলকে প্রথম দেখায় অনেকে নাক সিটকান। অনেকের কাছে বিরক্তিকর, আবার অনেকের কাছে মহৌষধ। বিশ্বের বহু দেশে একে সুপার ফুড বলা হলেও, এর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বিতর্ক থেমে নেই।
আরো পড়ুন:
বাকৃবিতে অচলাবস্থার অবসান, ক্লাস শুরু ৫ অক্টোবর
বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় বাকৃবির ১২ শিক্ষক-শিক্ষার্থী
হাজার বছর ধরে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার মানুষ ননীকে লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহার করে আসছে। দুর্ভিক্ষের সময় বহু অঞ্চলে এটি ‘দুর্ভিক্ষকালীন ফল’ হিসেবে টিকে থাকার সহায়ক ছিল। তবে এর তীব্র গন্ধ আর স্বাদ অনেককেই দূরে সরিয়ে রাখে। কেউ একে বলে ‘ওষুধি ফল’, কেউ আবার ঠাট্টা করে ‘বমি ফল’ নামেও ডাকে।
নলাকার ও ছোট আকারের এই চিরহরিৎ গাছটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে জন্মায়। এর কাঁচা ফল দেখতে সবুজ এবং পাকলে সাদা-হলদে হয়ে যায়। প্রাচীন পলিনেশীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল ননী। তারা এটিকে ‘আউ’ বা ‘নোনু’ নামে ডাকত এবং এটি ছিল তাদের কাছে রোগ নিরাময়ের এক অন্যতম উপায়।
গবেষকরা জানান, ননীতে রয়েছে শতাধিক ফাইটোকেমিক্যাল, ভিটামিন সি, এ, ই, বি-কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়ামসহ নানা উপাদান। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষয় রোধে ভূমিকা রাখে। ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় ননী ব্যবহৃত হয়েছে প্রদাহ কমাতে, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, এমনকি ত্বকের নানা রোগেও। কম্বোডিয়ার জাতীয় খাবার ‘ফিশ আমোকে’ ব্যবহার হয় ননীর পাতা, থাইল্যান্ডে রান্নায় মেশানো হয় এর কচি পাতা। ফলে শুধু ওষুধি গুণ নয়, রান্নার সংস্কৃতিতেও এর জায়গা আছে।
ননীর প্রধান আকর্ষণ এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, যেমন ফ্ল্যাভনয়েড, ফেনোলিক অ্যাসিড এবং ইরিডয়েড গ্লাইকোসাইড। এই উপাদানগুলো শরীরের কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে এবং বার্ধক্য প্রক্রিয়া ধীর করে। এছাড়া, এতে থাকা জেরোনিন নামের একটি অ্যালকালয়েড দেহের কোষকে পুনরুজ্জীবিত করতে ভূমিকা রাখে বলে কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দেয়।
তবে বিতর্কও কম নয়। ইউরোপের কয়েকটি দেশে ননী জুস খাওয়ার পর লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এতে থাকা অ্যানথ্রাকুইনোনস লিভারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার এর পটাসিয়ামের মাত্রা বেশি থাকায় কিডনি রোগীদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই যারা বিনা গবেষণায় একে ‘অলৌকিক ফল’ হিসেবে প্রচার করছেন, তাদের সতর্ক করছে বিজ্ঞানীরা।
আমাদের দেশে ননী ফল এখনো খুব বেশি পরিচিত নয়। তবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বোটানিক্যাল গার্ডেনে এর সফল চাষ প্রমাণ করে, বাংলাদেশের জলবায়ু এর জন্য বেশ উপযুক্ত।
ফলটির বিষয়ে বাকৃবি বোটানিক্যাল গার্ডেনের উপ-প্রধান উদ্যান সুপারিনটেনডেন্ট মুহাম্মদ সাইফুল হক মাসুম বলেন, “এই ফলটির নাম হচ্ছে ননীফল। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি প্রতিষেধক। যাদের শরীরে ক্যান্সারের কোষ রয়েছে তারা যদি এক সিজনে ১৫-২০ দিন এটি সেবন করে তাহলে তাদের ক্যান্সার নিরাময় হতে পারে। এটি আমরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দেখেছি পাশাপাশি অনেককে খেতেও দেখেছি। এটি অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি ফল।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের বোটানিক্যাল গার্ডেনে এই গাছটি লাগিয়েছি আজ থেকে আরো ৭ বছর আগে এবং এটাতে প্রচুর পরিমাণে ফল আসে। তবে একটু গন্ধ থাকায় অনেকেই ফলটি খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। তবে খেলে এটিতে অনেক উপকার রয়েছে।”
তবুও সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আন্তর্জাতিক বাজারে ননী জুস, পাউডার, ক্যাপসুল ও কসমেটিকসের বিপুল চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের জলবায়ুতে এর চাষ সফল হলে ভেষজ শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। তবে এর আগে চাই গভীর গবেষণা, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং জনসচেতনতা।
অতএব, ননী ফল একইসঙ্গে আকর্ষণ ও বিতর্কের নাম। এটি হতে পারে স্বাস্থ্যকর সুপার ফুড, আবার হতে পারে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারকারীর জন্য বিপজ্জনক। তীব্র গন্ধ ও তিক্ত স্বাদের আড়ালে তাই লুকিয়ে আছে এক দ্বিমুখী বাস্তবতা। যেখানে প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সতর্কতার ভারসাম্য রাখা জরুরি।
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র র জন য ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
এভাবে লুচি বানালে ফুলবেই ফুলবে, জেনে নিন রেসিপি
উপকরণ
ময়দা: ২ চামচ
আটা: দেড় চামচ
চিনি: ১ চা-চামচ
ঘি: ১ চা-চামচ
তেল: ১ চা-চামচ।
প্রণালিসব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। একটু গরম পানি দিয়ে ময়ান বানাতে হবে। ময়ান পাঁচ মিনিটের মতো মেখে রাখুন। তারপর লুচি বেলে ডুবোতেলে ভেজে নিতে হবে।
আরও পড়ুনপূজায় অপু বিশ্বাসের প্রিয় খাবার মহাষ্টমীর ভোগের থালা, দেখুন তাঁর দেওয়া রেসিপি৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫