বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি না বদলালে নারী ও তরুণদের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেছেন, রাজনীতিতে তরুণেরা প্রবল আগ্রহ দেখালেও কালোটাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবে তাঁরা টিকে থাকতে পারেন না। অন্যদিকে নারীরা সাইবার বুলিংসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে রাজনীতি থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) অডিটরিয়ামে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি: নারী ও তরুণ নেতৃত্বের অভিযাত্রা’ শীর্ষক গোলটেবিল সংলাপে বক্তারা এসব কথা। নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহযোগিতায় সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এ আয়োজন করে।

আলোচনায় সাম্প্রতিক গণ–অভ্যুত্থানে নারী ও তরুণদের রূপান্তরমূলক ভূমিকাকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। অংশগ্রহণকারীরা জোর দিয়ে বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি স্থিতিশীলতা, গণতান্ত্রিক বৈধতা এবং বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি শাসন কাঠামোকে শক্তিশালী করবে।

জাতীয় সংসদে নারীদের আসন বাড়ানোর কথা ঐকমত্য কমিশনে বলেছেন উল্লেখ করে কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিভিন্ন কারণে নারীরা প্রতিনিধিত্বশীল অবস্থানে আসতে পারে না। তিনি বলেন, ‘আমরা নারীর আসনসংখ্যা বাড়াতে চাই। ১০০ আসন নারীদের জন্য হবে এবং এটি রোটেশন (ঘূর্ণমান) পদ্ধতিতে হবে। আমি মনে করি, রোটেশনাল সিস্টেমটা হলো ভালো পদ্ধতি।’

তরুণদের বিষয়ে জাজমেন্টাল (আগে থেকে স্থির) চিন্তা থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় তরুণদের নিয়ে বিচারধর্মী বা জাজমেন্টাল চিন্তা করি। কিন্তু নেতৃত্বের প্রকৃত প্রক্রিয়া হলো তারুণ্য ও প্রজ্ঞার সমন্বয়। একটি রাজনৈতিক দলের বা রাষ্ট্রের নেতৃত্বে কেবল অভিজ্ঞতার ভারসাম্য থাকলেই চলবে না, তরুণদের উদ্যম ও নতুন ভাবনারও জায়গা থাকতে হবে। আমাদের গণতন্ত্র যদি সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে চায়, তবে এই সংমিশ্রণ ছাড়া উপায় নেই।’

নারীর অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বলেন, নারীদের কথা উঠলেই আলোচনাটা শেষ হয় হয়তো কোটা কিংবা সহানুভূতির জায়গায়। কিন্তু বাস্তবে নারী এবং সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায়ন করতে হলে তাঁদের নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি বলেন, নারীরা যদি জুলাই আন্দোলনে না নামতেন, তাহলে এই আন্দোলন সফল হতো না। কিন্তু আন্দোলনের পর নারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। ঐকমত্য কমিশনে নারী প্রতিনিধি নেই। তিনি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক দলগুলোতে তরুণদের নেওয়া হয় না। আন্দোলন করবেন তরুণেরা, কিন্তু ফল ভোগ করবে রাজনৈতিক দলগুলো।

সংলাপে অংশ নিয়ে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত বোরিস ভ্যান বোমেল বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তি’ এবং ‘সংলাপ’ এই দুটি শব্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, তরুণদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে এবং নারীদের নিরাপদ ও সমান সুযোগ দিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি অপরিহার্য। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণও নিশ্চিত করতে হবে।

সিজিএস আয়োজিত সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ জাতির সঙ্গে প্রতারণা: বাম জোট

জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে জাতির সঙ্গে প্রতারণা বলে আখ্যা দিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। এই ভাষণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ বাড়িয়ে দেশকে দীর্ঘস্থায়ী সংকটে ঠেলে দেবে বলেও মন্তব্য করেছেন তাঁরা।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বাম জোটের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) একমত হওয়াকেই যদি সবার ঐকমত্য বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে তা এত দিন ধরে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠককেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।’

বাম জোটের নেতারা বলেন, সনদ বাস্তবায়নের জন্য ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণেও একই কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত মতামত উঠে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের যে ন্যূনতম সংস্কারটুকু করার সুযোগ জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল, তা–ও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ১৮০ দিন জাতীয় সংসদ দ্বৈত সত্তা নিয়ে চলবে অর্থাৎ একই সঙ্গে সংসদ ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করার যে কথা বলা হয়েছে; এটাও সংবিধান পরিপন্থী। এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনে কোনো আলোচনা হয়নি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও কোনো ঐকমত্য হয়নি।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ নিয়ে যে কথা প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বলেছেন, তা একদেশদর্শী ও সংবিধানসম্মত নয়। সংবিধানে আদেশ জারি বা গণভোটের কোনো বিধান নেই। রাষ্ট্রপতি কেবল অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করে সংবিধান পরিপন্থী কাজ করা হয়েছে।

বাম জোটের নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে গণভোট ও আদেশ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তাতে দলগুলোর নোট অব ডিসেন্টের (দ্বিমতের) উল্লেখ থাকছে না। ঐকমত্য কমিশনে সংবিধানসংক্রান্ত ৪৮টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩০টিতে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন—এ তথ্যও সঠিক নয়। ৩০টি প্রস্তাবে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, এ রকম প্রস্তাব ১১টির বেশি নয়।

এ ছাড়া বিবৃতিতে লালদিয়ার চরে ডেনমার্কের কোম্পানিকে বন্দর নির্মাণ এবং পানগাঁও টার্মিনাল সুইজারল্যান্ডের কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে আগামী রোববার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে তড়িঘড়ি করে কেন সরকার একের পর এক আমাদের লাভজনক বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে অতি তৎপর হয়ে উঠেছে, তা দেশবাসীর মনে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি করছে। এ ধরনের প্রকল্পে ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক নানা ঝুঁকি থাকে। দেশের নানা মহল থেকে বারবার সেই আশঙ্কা ব্যক্ত করা হলেও সরকার সেদিকে কর্ণপাত না করে আগের স্বৈরাচার সরকারের বন্দর ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।’

বাম জোটের নেতাদের বিবৃতিতে উঠে আসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি। তাঁরা বলেন, মব সন্ত্রাস লাগামছাড়া, নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে, উগ্র মৌলবাদী তৎপরতা সমাজজীবনকে বিষিয়ে তুলছে, দিনদুপুরে ফিল্মি কায়দায় গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কারখানা বন্ধ হচ্ছে, শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, মানুষের বেঁচে থাকার উপায়ের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। আর এই সুযোগে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি নানা ধরনের গুপ্ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে জনজীবনে এক চরম নিরাপত্তাহীন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সরকারের গত ১৫ মাসের কর্মকাণ্ডই এই পতিত শক্তিকে জনপরিসরে স্থান করে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ বাম জোটের নেতাদের।

গণভোট ও উচ্চকক্ষ অপ্রয়োজনীয় এবং জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে—এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে বাম জোটের নেতারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল একটি নির্বাচিত জাতীয় সংসদেরই। তাই কালবিলম্ব না করে দ্রুত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করুন। দেশের বন্দরসহ জাতীয় সম্পদ বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলো প্রতিকারে উদ্যোগ নিন।’

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলীর পক্ষ থেকে বিবৃতিটি পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সফল নির্বাচন হলে গণতান্ত্রিক উত্তরণের অর্ধেকপথ পার করা সম্ভব হবে: মান্না
  • কী হবে যদি গণভোটে ‘না’ জয়ী হয়
  • ডিগ্রি ও সার্টিফিকেট কোর্স পরীক্ষা: প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা পাবেন অতিরিক্ত ৩০ মিনিট
  • প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ জাতির সঙ্গে প্রতারণা: বাম জোট
  • ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি রুখতে বামপন্থি সরকার গড়তে হবে: সেলিম
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে কোন দলের দাবি কতটা রাখা হলো
  • ঢাবিতে ‘আর্ট ফর ইক্যুয়ালিট` ওয়ার্কশপ