মস্কোয় বিশ্ব পারমাণবিক সপ্তাহ শুরু
Published: 25th, September 2025 GMT
রাশিয়ার পরমাণু শক্তি ব্যবহারের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মস্কোতে ‘বিশ্ব পারমাণবিক সপ্তাহ’ শুরু হয়েছে। বৈশ্বিক জ্বালানিসংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভবিষ্যতে শক্তির নিরাপদ ব্যবহারের উপায় নিয়ে আলোচনা করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরমাণু গবেষকরা একত্র হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মস্কোর ভিডিএনএইচ পার্কের হলরুমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্দার নোভাক, রাষ্ট্রপতি দপ্তরের প্রথম উপপ্রধান ও রোসাটমের সুপারভাইজরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সের্গেই কিরিয়েনকো, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি এবং রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ।
উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্দার নোভাক বলেন, ছোট আকারের রিঅ্যাক্টর, পারমাণবিক শক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যোগসূত্রের মধ্য দিয়ে নতুন দুয়ার খুলে যাচ্ছে। সবাইকে একসঙ্গে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
রোসাটম মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ বলেন, ‘ভবিষ্যতের দিকে একসঙ্গে এগোনোর ক্ষেত্রে পারমাণবিক শক্তির বিকল্প নেই। এটি পরিবেশবান্ধব শক্তির ভিত্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ বক্তৃতা শেষে তিনি পারমাণবিক সপ্তাহের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
রোসাটমের সুপারভাইজরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সের্গেই কিরিয়েনকো বলেন, রাশিয়া ও রোসাটম অংশীদারদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তোলা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা ভাগাভাগি করা এবং যৌথ উদ্যোগে কাজ করার নীতিতে বিশ্বাস করে। বিশ্বজুড়ে মানুষের সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও কল্যাণ আনতে আধুনিক প্রযুক্তির এভাবেই বিকশিত হওয়া উচিত, বিধিনিষেধ বা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে নয়।
রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি বলেন, বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়ানোর সময় তিনি রাজনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক, আর্থিক ব্যবস্থাপক ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। পারমাণবিক শক্তিই ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের মূল উপাদান বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশ্ব পারমাণবিক সপ্তাহের প্রথম দিনে পারমাণবিক বিদ্যুৎ, নবায়নযোগ্য শক্তি ও ফিউশন প্রযুক্তি নিয়ে একই সঙ্গে বিভিন্ন হলে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধাপে ধাপে এ–সংক্রান্ত বিভিন্ন সেশনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জ্বালানিবিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকেরা অংশ নেন। ২০ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারী এসব সেশনে অংশ নেন। ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ আয়োজন চলবে।
আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিরাপদ ও টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থার জন্য শুধু সৌর ও বায়ুশক্তি নয়, বরং সমন্বিতভাবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে। বক্তারা বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ গ্রিডে স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। নতুন বিশ্বে সবুজ জ্বালানি হিসেবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ ভূমিকা রাখতে পারে।
ফিউশন এনার্জি নিয়ে কাজ করছে রাশিয়া। এ নিয়ে বক্তারা বলেন, ফিউশন এনার্জি যদি আয়ত্তে আনা যায়, তাহলে সেটাই হতে পারে মানবজাতির নিরাপদ ও সীমাহীন শক্তির উৎস। বর্তমান গবেষণার অগ্রগতি, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আর দক্ষ জনবল তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথাও উঠে আসে বিভিন্ন অধিবেশনের আলোচনায়।
আলোচনায় বলা হয়, ছোট আকারের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করতে রাশিয়া স্মল মডুলার রিঅ্যাক্টর বা এসএমআর প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে। ছোট শহর, প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা শিল্প এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে এটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এর জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, নিরাপত্তা বিধি ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন তাঁরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র র আল ক স র স টম
এছাড়াও পড়ুন:
আধুনিক টিভির যত আধুনিক সুবিধা
টেলিভিশনকে বাংলায় বলা হয় ‘দূরদর্শন’। মাত্র কয়েক বছর আগেও এটি সত্যিই ছিল দূরদর্শনের মাধ্যম—দূরের কোনো ঘটনা চোখের সামনে এনে দেওয়ার একটি যন্ত্র। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে টিভির সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য ও ব্যবহার। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে আজকাল টিভি হয়ে উঠেছে একটি ‘স্মার্ট হাব’, যেখানে সিনেমা দেখা, গেম খেলা, ভিডিও কল করা, এমনকি বাড়ির অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আধুনিক টিভিগুলোর সুবিধা কেবল ছবি বা সাউন্ডে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলো এখন ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স।
স্মার্ট অপারেটিং সিস্টেমবর্তমান প্রজন্মের টিভিগুলো শুধু নাটক কিংবা সিনেমা দেখার একটি স্ক্রিন নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ স্মার্ট ডিভাইস। স্মার্ট টিভিতে অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) হিসেবে টাইজেন, অ্যান্ড্রয়েড টিভি, রোকু টিভি এবং ওয়েবওএস ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই সিস্টেমগুলোর মাধ্যমেই বর্তমান যুগের টিভিগুলো হয়ে উঠছে আধুনিক থেকে আধুনিকতর। ব্যবহারকারীরা এখন চাইলেই স্মার্ট টিভিগুলোতে নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, স্পটিফাই, অ্যামাজন প্রাইম কিংবা যেকোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মও সরাসরি উপভোগ করতে পারেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘অ্যাপ স্টোর ইন্টিগ্রেশন’। টিভিতেই এখন মোবাইলের মতো অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়। ওয়েদার অ্যাপ, গেমস, নিউজ—এমনকি ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপও ব্যবহার করা যায় টিভির বড় স্ক্রিনে।
ভয়েস কন্ট্রোল: কথা বলেই নিয়ন্ত্রণরিমোট খোঁজার ঝামেলা এখন যেন অতীত। আগে টিভির সবকিছু রিমোট দ্বারা পরিচালিত হলেও এখনকার আধুনিক টিভিগুলোতে আছে ভয়েস কন্ট্রোল—যেখানে ব্যবহারকারীর ভয়েস দ্বারাই টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই প্রযুক্তি বিক্সবি, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যালেক্সার মতো ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে কাজ করে। এর পাশাপাশি কিছু হাই-এন্ড মডেলে রয়েছে জেসচার কন্ট্রোল—যেখানে হাত নাড়লেই টিভি রেসপন্স করে। টিভি চালু-বন্ধ করা, চ্যানেল পরিবর্তন—এমনকি ভলিউম বাড়ানো-কমানোর মতো কাজও করা যায় হাতের ইশারায়। এ ক্ষেত্রে গ্যালাক্সি ওয়াচের কথা বলা যায়। এটি হাতের নড়াচড়াকে শনাক্ত করে এসব কমান্ড কার্যকর করে।
মাল্টি-ডিভাইস কানেকটিভিটি: এক স্ক্রিনে সব সংযোগবর্তমানে টিভি শুধু সম্প্রচার মাধ্যম নয়; এটি হয়ে উঠেছে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ইউনিট। মোবাইল ফোন, স্পিকার, ল্যাপটপ, গেমিং কনসোল—সব ডিভাইস এখন টিভির সঙ্গে সহজেই সংযুক্ত করা যায়।
বেশির ভাগ স্মার্ট টিভিতে রয়েছে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, এইচডিএমআই এআরসি, এয়ার প্লে, মিরাকাস্টসহ বিভিন্ন সুবিধা। ফলে ব্যবহারকারী চাইলে নিজের ফোনের ছবি, ভিডিও বা প্রেজেন্টেশন মুহূর্তেই বড় স্ক্রিনে শেয়ার করতে পারেন। সেই সঙ্গে আধুনিক টিভিগুলোতে রয়েছে গেমারদের জন্য এইচডিএমআই ২.১ পোর্ট এবং কম ইনপুট ল্যাগযুক্ত ডিসপ্লে, যা গেমিং এক্সপেরিয়েন্সকে করে তোলে আরও স্মুথ।
আধুনিক টিভিগুলো ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স