রাশিয়ার পরমাণু শক্তি ব্যবহারের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মস্কোতে ‘বিশ্ব পারমাণবিক সপ্তাহ’ শুরু হয়েছে। বৈশ্বিক জ্বালানিসংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভবিষ্যতে শক্তির নিরাপদ ব্যবহারের উপায় নিয়ে আলোচনা করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরমাণু গবেষকরা একত্র হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মস্কোর ভিডিএনএইচ পার্কের হলরুমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্দার নোভাক, রাষ্ট্রপতি দপ্তরের প্রথম উপপ্রধান ও রোসাটমের সুপারভাইজরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সের্গেই কিরিয়েনকো, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি এবং রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ।

উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্দার নোভাক বলেন, ছোট আকারের রিঅ‍্যাক্টর, পারমাণবিক শক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যোগসূত্রের মধ‍্য দিয়ে নতুন দুয়ার খুলে যাচ্ছে। সবাইকে একসঙ্গে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

রোসাটম মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ বলেন, ‘ভবিষ্যতের দিকে একসঙ্গে এগোনোর ক্ষেত্রে পারমাণবিক শক্তির বিকল্প নেই। এটি পরিবেশবান্ধব শক্তির ভিত্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ বক্তৃতা শেষে তিনি পারমাণবিক সপ্তাহের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

রোসাটমের সুপারভাইজরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সের্গেই কিরিয়েনকো বলেন, রাশিয়া ও রোসাটম অংশীদারদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তোলা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা ভাগাভাগি করা এবং যৌথ উদ্যোগে কাজ করার নীতিতে বিশ্বাস করে। বিশ্বজুড়ে মানুষের সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও কল্যাণ আনতে আধুনিক প্রযুক্তির এভাবেই বিকশিত হওয়া উচিত, বিধিনিষেধ বা নিষেধাজ্ঞার মাধ‍্যমে নয়।

রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি বলেন, বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়ানোর সময় তিনি রাজনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক, আর্থিক ব্যবস্থাপক ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। পারমাণবিক শক্তিই ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের মূল উপাদান বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিশ্ব পারমাণবিক সপ্তাহের প্রথম দিনে পারমাণবিক বিদ্যুৎ, নবায়নযোগ্য শক্তি ও ফিউশন প্রযুক্তি নিয়ে একই সঙ্গে বিভিন্ন হলে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধাপে ধাপে এ–সংক্রান্ত বিভিন্ন সেশনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জ্বালানিবিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকেরা অংশ নেন। ২০ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারী এসব সেশনে অংশ নেন। ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ আয়োজন চলবে।

আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিরাপদ ও টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থার জন্য শুধু সৌর ও বায়ুশক্তি নয়, বরং সমন্বিতভাবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে। বক্তারা বলেন, পারমাণবিক বিদ‍্যুৎ গ্রিডে স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। নতুন বিশ্বে সবুজ জ্বালানি হিসেবে পারমাণবিক বিদ‍্যুৎ ভূমিকা রাখতে পারে।

ফিউশন এনার্জি নিয়ে কাজ করছে রাশিয়া। এ নিয়ে বক্তারা বলেন, ফিউশন এনার্জি যদি আয়ত্তে আনা যায়, তাহলে সেটাই হতে পারে মানবজাতির নিরাপদ ও সীমাহীন শক্তির উৎস। বর্তমান গবেষণার অগ্রগতি, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আর দক্ষ জনবল তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথাও উঠে আসে বিভিন্ন অধিবেশনের আলোচনায়।

আলোচনায় বলা হয়, ছোট আকারের পারমাণবিক বিদ‍্যুৎকেন্দ্র তৈরি করতে রাশিয়া স্মল মডুলার রিঅ্যাক্টর বা এসএমআর প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে। ছোট শহর, প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা শিল্প এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে এটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এর জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, নিরাপত্তা বিধি ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন তাঁরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র র আল ক স র স টম

এছাড়াও পড়ুন:

একটি আপেল যেভাবে বদলে দিয়েছে মহাবিশ্বের ধারণা

বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের মহাকর্ষ বলকে স্থান–কালের বক্রতা দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছিল। এর মাধ্যমে সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানকে অন্য এক মাত্রায় নিয়ে যায়। যখনই আপনি একটি কাপ ফেলে দেন বা নদীতে জোয়ার আসতে দেখেন, তখনই মহাকর্ষের প্রমাণ পাওয়া যায়। আবার আপনার ওজন মাটির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে বলে অনুভব করার বিষয়টি মহাকর্ষের অভিজ্ঞতা বলা যায়। প্রাকৃতিক বিভিন্ন বলের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলেও মহাকর্ষ বলকে সবচেয়ে রহস্যময় বলা হয়। এই বল আমাদের পৃথিবীর কক্ষপথে ধরে রাখে। বলা যায়, মহাবিশ্বের সব গ্যালাক্সির ভাগ্য নির্ধারণ করে এই বল।

প্রকৌশলীরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, কক্ষপথের অবস্থান মঙ্গলে মিশন পরিকল্পনার সময় মহাকর্ষ বলের ওপর নির্ভর করেন। মাটির নিচের পানির ভান্ডার বা হিমবাহের বরফ গলে যাওয়া শনাক্ত করতেও ব্যবহার করা হচ্ছে মহাকর্ষ বলের তথ্য। অনেক আগে এই মহাকর্ষ বল সম্পর্কে মানুষের তেমন ধারণা ছিল না। আইজ্যাক নিউটন বিজ্ঞানের অন্যতম গভীর এই বল সম্পর্কে বেশ বিস্তারিত ধারণা প্রবর্তন করেন। তিনিই প্রথম প্রশ্ন করেন, কোন বলের কারণে গাছের আপেল মাটিতে পড়ে? কোন শক্তির জোরে চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে কক্ষপথে অবস্থান করছে?

বিজ্ঞানী নিউটন ও আপেলগাছ নিয়ে বেশ জনপ্রিয় গল্প প্রচলিত আছে। ১৬৬৬ সালের দিকে নিউটন লিংকনশায়ারে তাঁর পারিবারিক বাড়ির বাগানে অবস্থানের সময় স্বাভাবিক এক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন। একটি আপেলকে গাছ থেকে পড়তে দেখেন তিনি। সেই ঘটনা নিউটনকে নতুন ভাবনার সুযোগ করে দেয়। তিনি ভাবতে থাকেন, একটি আপেল যদি মাটিতে পড়ে তাহলে চাঁদও কি পড়ে যাচ্ছে? সেই চিন্তা থেকেই মহাকর্ষ বলের সর্বজনীন সূত্র আবিষ্কার করেন নিউটন। তাঁর ভাষ্যে, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু অন্য প্রতিটি বস্তুকে এমন একটি বল দিয়ে আকর্ষণ করে যা তাদের ভরের সমানুপাতিক ও তাদের দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। বিজ্ঞানী নিউটন পৃথিবী ও মহাবিশ্বের গতি ব্যাখ্যা করেন এই সূত্রের মাধ্যমে।

আরও পড়ুনপৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় বলে প্রমাণিত হয় যে ছবির কারণে০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

১৯১৫ সালে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের মাধ্যমে মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন ধারণা দেন। তিনি যুক্তি দেন যে মহাকর্ষ বস্তুকে একসঙ্গে টেনে আনা কোনো বল নয়, বরং ভর ও শক্তি দ্বারা স্থান–কালের নিজস্ব বাঁক বা বক্রতা। বিভিন্ন গ্রহ চলছে মহাজাগতিক কাঠামোর বক্রতা অনুসরণ করে। এটি বোঝার একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে স্থান–কালকে একটি টান টান কাপড়ের মতো কল্পনা করা। এর ওপর একটি ভারী টেনিস বল রাখলে কাপড়টি কিছুটা দেবে যায়। তখন কাছাকাছি থাকা সব ছোট বস্তুকে সেই দেবে যাওয়া অবস্থানের দিকে নেমে যাবে। ঠিক একইভাবে তারা ও গ্রহের মতো বিশাল বস্তুকে স্থান–কাল বাঁকিয়ে দেয়। এতে চারপাশের সবকিছু চলতে থাকে।

রহস্যময় মহাকর্ষ বল বেশ দুর্বলতম বল। এই বল সব পদার্থের ওপর, সব রকম দূরত্বজুড়ে কাজ করে। কখনোই বন্ধ হয় না। মহাজগৎকে শাসন করলেও মহাকর্ষ বল প্রকৃতির অন্যান্য বলের তুলনায় আশ্চর্যজনকভাবে দুর্বল। একটি প্রোটন ও একটি ইলেকট্রনের মধ্যেকার তড়িৎচৌম্বকীয় আকর্ষণ মহাকর্ষ বলের চেয়ে প্রায় ১ হাজার ৩৬ গুণ শক্তিশালী। এ কারণেই পরমাণু, অণু ও তাদের রসায়ন তড়িৎচৌম্বকত্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

আরও পড়ুনমহাবিশ্ব দ্রুত সম্প্রসারণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা১৩ জুলাই ২০২৫

নিউটনের সেই আপেলবাগান থেকে পাওয়া প্রশ্ন ও আইনস্টাইনের বক্র স্থান–কাল ধারণার মাধ্যমে আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণা বদলে গেছে। মহাকর্ষ বল দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে চরম মহাজাগতিক ঘটনা পর্যন্ত সবকিছু শাসন করে। এই বল গ্রহকে আকার দেয়। ধূমকেতুকে পরিচালনা করে। বিভিন্ন গ্যালাক্সিকে একসঙ্গে বেঁধে রাখে। মহাজগতের সবচেয়ে ঘন কোণে এই বল নিউট্রন তারা ও ব্ল্যাকহোলের মতো বহিরাগত বস্তু তৈরি করে। আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনেক আগেই এসব বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাটোরে একসঙ্গে পাঁচ সন্তান প্রসব প্রসূতির
  • একসঙ্গে পাঁচ সন্তানের জন্ম দিলেন রেশমা
  • বিশ্বব্যবস্থা: যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে বাকি পশ্চিমাদের এগিয়ে আসতে হবে
  • একটি আপেল যেভাবে বদলে দিয়েছে মহাবিশ্বের ধারণা
  • ব্যস্ত দম্পতিদের কাছে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ‘মাইক্রো-ডেটিং’