রাজশাহীতে রং-তুলির আঁচড়ে সেজে উঠছে দেবী দুর্গা
Published: 26th, September 2025 GMT
রাজশাহীতে শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মৃৎশিল্পীদের রং-তুলির আঁচড়ে প্রাণ পাচ্ছে দেবী দুর্গার প্রতিমা। শিল্পীদের যত্নে মাটি, খড় ও বাঁশের কাঠামোয় ফুটে উঠছে ঐশ্বর্যের রূপ। এসব প্রতীমা যাবে মণ্ডপে মণ্ডপে।
এদিকে, মণ্ডপ সাজসজ্জায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মীরা। নগরের বিভিন্ন স্থানে শেষ মুহূর্তের প্যান্ডেল তৈরির কাজও চলছে জোরেশোরে।
আরো পড়ুন:
দুর্গাপূজায় সারা দেশে র্যাবের ২৮১ টহল দল মোতায়েন
৯ দিন বন্ধ থাকবে বাংলাবান্ধায় আমদানি-রপ্তানি
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এ উৎসব। দেবীর আগমনী বার্তায় ইতোমধ্যেই ভক্তকুলে সাজ সাজ রব। প্রতিমাশালায় ঘুম নেই কারো। মৃৎশিল্পীর নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তিল তিল করে কাদামাটিতে গড়া প্রতিমায় ভরে উঠছে পালপাড়াগুলো।
রাজশাহী নগরের ধর্মসভা মন্দিরের গণেশ পাল, শেখেরচকের কার্তিক পাল, হড়গ্রামের অনন্ত পাল, রনজিত পাল, ষষ্ঠীতলার অরুণ কুমার পাল, আর রেশমপট্টির সুশীল পালের হাতে এখন প্রতিমা নির্মাণের ব্যস্ততা। তাদের মতো জেলায় প্রায় ৪০টি পাল পরিবার দিনরাত প্রতিমা গড়ছেন নিজেদের আঙিনায়। শেষ মূহুর্তে এখন রং-তুলির আঁচড়ে সেজে উঠছে দেবী দুর্গা।
প্রতিমা শিল্পী কার্তিক চন্দ্র পাল বলেন, “রং করার কাজ হচ্ছে। এখন খুব চাপ। আজ, কাল, ও পরশু সব প্রতিমা হস্তান্তর করতে হবে। এবার ২৮টা প্রতিমার কাজ করছি। এরমধ্যে তিনটি শহরের বাইরে যাবে। বাকি ২৫টা শহরের মধ্যেই বিভিন্ন মণ্ডপে চলে যাবে।”
দেবী দুর্গাকে শাড়ি পড়াচ্ছেন এক মৃৎশিল্পী
রাজশাহী মহানগর পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সভাপতি সুব্রত রায় বলেন, “নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন করতে জোরেশোরে প্রস্তুতি চলছে। প্রতিটি মণ্ডপে ১০ জনের স্বেচ্ছাসেবক দল থাকবে। এক্ষেত্রে বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাদের সহায়তা করছেন।”
এবার রাজশাহী মহানগররে ৮০টি ও জেলায় ৪১২টি মিলে মোট ৪৯২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা আয়োজন করা হচ্ছে। অধিকাংশ মণ্ডপই এখন প্রস্তুত, শিগগিরই মণ্ডপে শোভা পাবে প্রতিমাগুলো। উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে প্রশাসন। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, আনসার এবং সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা নজরদারি চালাচ্ছেন প্রতিমা নির্মাণ কেন্দ্র ও মণ্ডপগুলোতে।
গত মঙ্গলবার রাজশাহী নগরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন র্যাব-৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ পারভেজ। পরে ধর্মসভা মণ্ডপে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
দুর্গাপূজা নিয়ে কোনো ধরনের হুমকি নেই জানিয়ে র্যাব অধিনায়ক বলেন, “ষষ্ঠী পূজা থেকে মণ্ডপ এবং রাস্তাগুলোতে বিশেষ নজরদারি থাকবে। শুধু র্যাবই নয়, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের সঙ্গে সভা করা হয়েছে। এ বছরও অনেক ভালো পরিকল্পনা করা হয়েছে। হুমকি পর্যবেক্ষণ করেছি। বিশেষ কোনো হুমকি নেই। তারপরও আমরা নিরাপত্তাব্যবস্থাকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছি। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলে আশা করি।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এই দেশে সব ধর্মের মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারেন। বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি এত বেশি সহায়তা এবং সহযোগিতার মনোভাব আছে বলে আমি মনে করি না। গতবার মাদরাসার ছাত্ররাও মণ্ডপ পাহারা দিয়েছে। এর তো তুলনা হয় না।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রবীন্দ্রসরোবরে সুরে–ছন্দে জমজমাট নবান্ন উৎসব
অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব হলো রাজধানীতে। নাচ, গান, আবৃত্তি, আলোচনায় রোববার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে উদ্যাপন করা হলো ঋতুভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
হেমন্তের বেলা শেষে ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদ আয়োজিত নবান্ন উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর ছিল ফারহানা করিমের নেতৃত্বে সমবেত নৃত্য।
নবান্নকথনে অংশ নেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এহসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে অগ্রহায়ণে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল ওঠে। নতুন ধান তাঁদের জীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। নিয়ে আসে আনন্দ। তবে নবান্ন কেবল ফসলের আনন্দই নয়, আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি শক্তিশালী উপাদান। নাগরিক পরিবেশে ঋতুভিত্তিক এই উৎসবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বসন্ত, বর্ষা, শরৎসহ ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আয়োজন করা হবে।’
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও মঞ্চের চারপাশের স্থান বর্ণাঢ্যভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। এর সঙ্গে ছিল ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির স্টল।
আলোচনার পরে শুরু হয় গানের পালা। সাগর বাউল শুরু করেছিলেন ভবা পাগলার গান ‘বারে বারে আসা হবে না’ গেয়ে। এরপর তিনি পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে’ এবং রাধারমণ দত্তের গান ‘অবলারে কান্দাইয়া’। ঢোল, একতারার বাজনা, বাঁশির সুর আর লোকসাধকদের এসব মরমি গানে গানে সাগর বাউল শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন।
অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশনের কথা ছিল শিল্পী ফেরদৌস আরার। তবে তিনি অসুস্থতার জন্য সংগীত পরিবেশন করতে পারেননি। এই চমৎকার অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও শ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানান।
লোকশিল্পী আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মালা কার লাগিয়া গাঁথি’সহ বেশ কয়েকটি গান। গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল আবৃত্তি ও কবিদের কবিতা পাঠ। এই পর্বে অংশ নেন কবি রাসেল রায়হান, রিক্তা রিনি, সানাউল্লাহ সাগর, জব্বার আল নাইম, ইসমত শিল্পীসহ অনেকে।
সংগীতশিল্পীদের মধ্যে কোহিনূর আক্তার পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘তিন পাগলের হইল মেলা’। ডলি মণ্ডল পরিবেশন করেন ‘সব লোক কয় লালন কী জাত সংসারে’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদের সদস্যসচিব দীপান্ত রায়হান।
শীতের মৃদু পরশ লেগেছে রাজধানীর হাওয়ায়। হালকা কুয়াশাও জমছে আকাশে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে সুরে-ছন্দে বেশ খানিকটা রাত অবধি জমজমাট হয়ে উঠেছিল এই নাগরিক নবান্ন উৎসব।