চাকরির জন্য আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের কাছে অনুরোধ করেন ৩৬% বেকার, বিবিএসের জরিপের তথ্য
Published: 27th, September 2025 GMT
বেকার তরুণ-তরুণীরা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমেই বেশি চাকরি খোঁজেন। তাঁরা মনে করেন, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনই তাঁদের কাঙ্ক্ষিত চাকরি দিতে পারবেন। তাই চাকরির বাজারে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুরাই সবচেয়ে বেশি আস্থার জায়গা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, চাকরির জন্য আত্মীয় ও বন্ধুদের অনুরোধ করেছেন প্রায় ৩৬ শতাংশ চাকরিপ্রত্যাশী। অর্থাৎ প্রতিজন বেকারের একজনই বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে চাকরি খোঁজেন। আর সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে চাকরি খুঁজেছেন প্রায় ২৬ শতাংশ প্রত্যাশী। আর প্রায় ১২ শতাংশ চাকরিপ্রত্যাশী সরাসরি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাকরি চেয়েছেন।
সম্প্রতি শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪ প্রকাশ করেছে বিবিএস। সেখানে এই চিত্র উঠে এসেছে।
বিবিএসের জরিপে চাকরি খোঁজা বা কর্মসংস্থানের নানা ধরনের পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। যেমন, সরাসরি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেও চাকরি চান প্রায় ৯ শতাংশ বেকার। সাড়ে ৫ শতাংশ বেকার বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির আবেদন করবেন কি না, তা মনস্থির করেন। সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেও অনেকে চাকরি চান। এই হার বেকারদের মধ্যে সাড়ে তিন শতাংশ।
বিবিএসের জরিপে উঠে আসা চাকরি খোঁজার অন্য উপায়গুলো হলো—প্রফেশনাল নেটওয়ার্কে নিজের জীবনবৃত্তান্ত জমা রাখা; সরকারি কর্মসংস্থান কেন্দ্রে নিবন্ধন নেওয়া; বেসরকারি কর্মসংস্থান কেন্দ্রে নিবন্ধন নেওয়া; রাস্তায় দাঁড়িয়ে চাকরি খোঁজা; ব্যবসা করার জন্য আর্থিক সহায়তা চাওয়া; ব্যবসার জন্য জমি, জায়গা চাওয়া; ব্যবসার লাইসেন্সের আবেদন করা ইত্যাদি।
বিবিএসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, বেকারেরা চাকরির জন্য নানা ধরনের উপায় খোঁজেন। যেকোনো উপায়ে তাঁদের চাকরি বা কাজ চাই। প্রথমেই দ্বারস্থ হন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের কাছে। বেকারেরা মনে করেন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবেরা তাঁদের সহায়তা করতে পারবেন। মামা-আত্মীয়স্বজনদের কাছে চাকরির অনুরোধ করার প্রবণতা এ দেশের দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে।
বেকার কতবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, ২০২৪ সাল শেষে বাংলাদেশের বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ২৪ হাজার। সবচেয়ে বেশি বেকার ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে ৬ লাখ ৮৭ হাজার বেকার আছেন। এরপরের দুটি স্থানে আছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে।
দেশের বিভাগওয়ারি হিসেবে ঢাকা বিভাগের পর চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ লাখ ৮৪ হাজার, রাজশাহীতে ৩ লাখ ৫৭ হাজার, খুলনায় ৩ লাখ ৩১ হাজার, সিলেটে ২ লাখ ১৬ হাজার, রংপুরে ২ লাখ ৬ হাজার, বরিশালে ১ লাখ ৩৯ হাজার এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ লাখ ৪ হাজার বেকার আছেন।
বেকারের সংজ্ঞা কীআন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী, সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করে মজুরি পেলে তাঁকে বেকার হিসেবে ধরা হবে না। গত এক মাস ধরে কাজপ্রত্যাশী এবং সর্বশেষ এক সপ্তাহে কেউ যদি এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ না পান, তাঁদের বেকার হিসেবে গণ্য করা হবে। এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সংজ্ঞা। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করে জীবনধারণ অসম্ভব। এদিকে মনমতো কাজ না পাওয়া এমন ব্যক্তি আছেন প্রায় এক কোটি। তাঁদের ছদ্মবেকার হিসেবে ধরা হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের
থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।
থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।
সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এফএওর সূচক কমেছেপ্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।
চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের
অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।