বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের আচরণের পরিবর্তন হয়, তারা একটু দূরত্ব চায়। এই বয়স শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তাদের মনের যে পরিবর্তন, সে বিষয়ে অভিভাবকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এ সময়ে অভিভাবকদের মূল দায়িত্ব হলো সঠিক পথ দেখানো। সন্তানকে বুঝতে হলে তাদের কথাগুলো অভিভাবকদের শোনা দরকার। সন্তানদের দিক থেকে তাদের চাওয়াগুলো বুঝে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে অভিভাবকদেরই।

‘আমাকে কেউ বোঝে না (মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের মনের দূরত্ব)’ শীর্ষক পরামর্শ সহায়তা সভায় অভিভাবকদের প্রতি এসব পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এই পরামর্শ সহায়তা সভার আয়োজন করা হয়।

প্রথম আলো ট্রাস্ট নিয়মিতভাবে মাদকবিরোধী ও মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ সভার আয়োজন করে থাকে। এটি ছিল ১৭২তম পরামর্শ সহায়তা সভা। সভায় মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেখলা সরকার ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.

সরদার আতিক নানা পরামর্শ দেন। সভা সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।

সভায় সন্তান ও অভিভাবকদের কাছ থেকে সমস্যা ও নানা সংকটের কথা শোনেন দুই মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তারপর এসব সমস্যায় মা-বাবা এবং সন্তানদের আচরণ কেমন হবে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরামর্শ দেন।

সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার মনের দূরত্ব কমানোর উপায় তুলে ধরে সভায় অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের আচরণের পরিবর্তন হয়, তারা একটু দূরত্ব চায়। নিজে যা চায়, সেই মত প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। নিজের মতামতকে সঠিক মনে করে। এই বয়সীদের মনের যে পরিবর্তন, সে বিষয়ে অভিভাবকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অভিভাবকদের মূল দায়িত্ব হলো সঠিক পথ দেখানো, সঠিকভাবে পরিচালিত হতে সহায়তা করা।

সঠিক কৌশলের মাধ্যমে মা-বাবার সঙ্গে সন্তানদের দূরত্ব কমানো সম্ভব উল্লেখ করে মেখলা সরকার বলেন, পৃথিবীর সব মা-বাবা অবশ্যই সব সময় তাঁর সন্তানের ভালোই চান। কিন্তু তিনি যে সন্তানদের ভালো চান সে ধারণাটি সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারছেন না বলেই সংকট তৈরি হচ্ছে। এখানে কৌশলটাই গুরুত্বপূর্ণ। আবার সন্তানদেরও মা-বাবার চাওয়াগুলো বুঝতে হবে।

সরদার আতিক বলেন, অভিভাবকদের তাঁর সন্তানকে বুঝতে হলে তাদের কথাগুলো শোনা দরকার এবং সেই শোনাটা হবে যেন সন্তানরা তাদের প্রয়োজনের কথা বা তার ইচ্ছার কথাটা বলতে পারে। অভিভাবকেরা তাঁর পূর্ব অভিজ্ঞতা দিয়ে সন্তানদের সতর্ক করতে পারেন, পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু সবার আগে দরকার হচ্ছে সন্তানদের কথাটি শোনা।

সন্তানদের সঙ্গে মা-বাবার মনের দূরত্ব ঘোচানোর সহজ কোনো উপায় আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে  সরদার আতিক বলেন, ‘বাচ্চাদের যখন আমরা সত্যি কথাটা বলার সুযোগ দিই না তখন তারা মিথ্যা বলে। সে জন্য প্রথম কাজ হচ্ছে সন্তানদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ দূরত্ব রাখা যাবে না। তাদের কথা শুনতে হবে, তাদের চাওয়া বুঝতে হবে এবং তাদের সঠিক পরামর্শ দিতে হবে।’

সভায় অতিথিদের স্বাগত জানান প্রথম আলো ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘মাদককে না বলো’ এটা প্রথম আলোর অনেক পুরোনো কর্মসূচি। প্রথম আলো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই এটি গ্রহণ করা হয়। এর অধীনে নানা ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পরামর্শ সভা একটি। এর বাইরেও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রথম আলোর বিশেষ সংখ্যা করা, স্কুলে স্কুলে যাওয়া, জনপদে জনপদে যাওয়া, বিভিন্নভাবে তরুণদের সম্পৃক্ত করে মাদকবিরোধী কনসার্ট করা হয়।

আনিসুল হক বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতার পাশাপাশি আমরা মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতেও এখন কাজ করছি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল র র মন র সন ত ন

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্নীতিগ্রস্ত উপদেষ্টাদের শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে এনসিপি

বিরোধীদের নিয়ে কড়া বাক্য উচ্চারণের জন্য বহুল আলোচিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের জন্য রীতিমতো শঙ্কার বার্তা নিয়ে হাজির হলেন।

দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেছেন, “বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। অনেকের আত্মীয়-স্বজনের খবর আমরা পাচ্ছি। উপদেষ্টাদের কে কে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তা জনগণের সামনে আনতে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে এনসিপি।”

আরো পড়ুন:

বক্স অফিসে ‘ওজি’ সিনেমার দাপট: কে কত টাকা পারিশ্রমিক নিলেন?

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভারতের ভিসা জটিলতা কমবে: হাইকমিশনার

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতীক ইস্যুতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন নাসীরুদ্দীন।

যে প্রতীক ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলনে, সে বিষয়ে জোর দিয়ে নাসীরুদ্দীন বলেন, “শাপলা পেতে কোনো আইনি বাঁধা দেখছি না। এখানে ইসি স্বৈরাচারী ও বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। প্রতীক প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ব্যাখ্যা দিয়েই কমিশনকে যেতে হবে।”

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “এনসিপির সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে ইসি। তারা একটি দলের পক্ষ নিয়ে তাদের সুবিধা দিচ্ছে।”

রাকঢাক ছাড়াই অভিযোগের তীর ছুড়ে নাসীরুদ্দীনের সোজা কথা, “অসাংবিধানিক আচরণের জন্য ইসি কমিশনারের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নে গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির একীভূত হওয়ার আলোচনার প্রসঙ্গ এলে এক্ষেত্রেও সেটি সরাসরি খারিজ করে দিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “একীভূত হওয়ার সুযোগ নেই। এনসিপিতে যোগ দিতে হলে সদস্য ফরম পূরণ করতে হবে। নির্বাচনেও এনসিপির হয়েই দাঁড়াতে হবে।”

অবশ্য এনসিপির অন্য নেতারা বলে আসছেন, একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে। কোনো সিদ্ধান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন তারা।  

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতাকে চ্যালেঞ্জন করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, “আওয়ামী লীগ, ভারত, বিএনপি ও নির্বাচন কমিশন সব এক পক্ষে। এই কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব।” 

বিএনপির বিরুদ্ধে ভারতের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, দলটি ভারতের পক্ষে কাজ করছে, তাদের বাংলাদেশপন্থি রাজনীতি করার আহ্বান জানাচ্ছি।

রাজনীতির মাঠে বিরোধীদের নিয়ে কড়া বাক্য উচ্চারণ করায় এনসিপির নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাসীরুদ্দীন। এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছিলেন, আগে নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমান ছিল, এখন শুনছি কক্সবাজারের নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছে।

নাসীরুদ্দীনের ওই মন্তব্যের জেরে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয় সালাহউদ্দিন আহমেদের জন্মভূমি কক্সবাজারের চকরিয়ায়।

ঢাকা/রায়হান/রাসেল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্নীতিগ্রস্ত উপদেষ্টাদের শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে এনসিপি