গাজা উপত্যকায় চলমান নৃশংসতার বিষয়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের নীরবতা ভাঙতে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের উদ্যোগে পরিচালিত ‘মিডিয়া ফ্লোটিলা’ অভিযানে অংশ নিতে যাচ্ছেন দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। আগামীকাল তিনি ইতালির উদ্দেশে রওনা করবেন। সেখান থেকেই গাজার উদ্দেশে এই ফ্লোটিলায় তিনি অংশ নেবেন।

আজ শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রাজধানীর শুক্রাবাদে দৃকপাঠ×ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শহিদুল আলম মিডিয়া ফ্লোটিলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। একই সঙ্গে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের উদ্দেশ্য এবং গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে তিনি নিজের অবস্থান তুলে ধরেন।

নৃবিজ্ঞানী ও দৃকের পরিচালক রেহনুমা আহমেদ, দৃকের ব্যবস্থাপক ও কিউরেটর এ এস এম রেজাউর রহমান, দৃকের উপব্যবস্থাপক মো.

কামাল হোসেন এবং দৃকের পরিচালক সায়দিয়া গুলরুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে শহিদুল আলম বলেন, সারা পৃথিবীর মানুষের প্রতিবাদ-প্রতিরোধকে উপেক্ষা করে ২০০৭ সাল থেকে গাজাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অবরুদ্ধ গাজায় মানুষ নির্বিচারে গণহত্যার শিকার হচ্ছে, সেখানে চলছে ইসরায়েল সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ। এসব খবর ইসরায়েলি গণমাধ্যগুলো প্রতিনিয়ত উপেক্ষা করে যাচ্ছে। এই উপেক্ষা ভাঙার লক্ষ্যে একটি মিডিয়া ফ্লোটিলার আয়োজন করা হচ্ছে। ওই ফ্লোটিলায় অংশ নিতে আগামীকাল সকালে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেবেন। রোম থেকে এই যাত্রায় অংশ নেবেন তিনি।

‘বাংলাদেশের সব মানুষের ভালোবাসা নিয়ে অংশ নিচ্ছি’ উল্লেখ করে শহিদুল আলম বলেন, ‘এই সংগ্রামে যদি আমরা পরাজিত হই, তাহলে মানবজাতি পরাজিত হবে। যাওয়ার পর আমি প্রতিদিনই যতটা সম্ভব তথ্য ও ছবি পাঠাতে চেষ্টা করব। জানামতে এই প্রথম বাংলাদেশ থেকে কেউ এ ধরনের ফ্লোটিলাতে অংশ নেবে।’

শহিদুল আলম বলেন, সারা পৃথিবীর জনগণ ফিলিস্তিনিদের পুরোপুরি সমর্থন জানিয়ে পাশে দাঁড়ায়, সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ফিলিস্তিনে এত বড় একটা গণহত্যায় কিছুই করতে পারছে না। বিভিন্ন দেশের জনগণ নিজেদের মতো করে একধরনের রেজিস্ট্যান্স (প্রতিরোধ) রাখছে, যেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। যার অংশ হিসেবে এই ফ্লোটিলা হচ্ছে। এই যাত্রায় অনেক বিপদ থাকতে পারে। কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমরা আদৌ পৌঁছাতে পারব কি না, জানি না। এসব মেনে নিয়েই সবাই অংশ নিচ্ছে।

এবারের ফ্লোটিলার বিষয়ে শহিদুল আলম বলেন, ‘এবার ৫০টির অধিক নৌকা যাচ্ছে। আমরা যেই নৌকাতে যাচ্ছি, সেটিতে প্রায় ১০০ জন থাকবে। যার মধ্যে এক–তৃতীয়াংশ সাংবাদিক, এক–তৃতীয়াংশ চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত আর এক–তৃতীয়াংশ থাকবে, যারা এটি আয়োজন করেছে। তার সঙ্গে আরও ১০টি ছোট নৌকা থাকবে। ৪৪টি দেশ থেকে এই ফ্লোটিলাতে অংশ নিচ্ছেন।

আগেও এ ধরনের ফ্লোটিলা হয়েছে উল্লেখ করে শহিদুল আলম বলেন, ‘এর আগে অনেকেই অনেকভাবে ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’ করার চেষ্টা করেছে। ২০০৮ সালে ‘ফ্রি গাজা মুভমেন্ট’ নামে একটা আন্দোলন হয়। তখন দুটো ছোট নৌকা গাজা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। সেবারই প্রথম গাজার অবরুদ্ধ অবস্থা ভাঙা হয়। তারপর ২০০৮ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৩১টি নৌকা গাজায় যাওয়ার চেষ্টা করেছে। তার মধ্যে শুরুর দিকে পাঁচটি পৌঁছাতে পারলেও অধিকাংশই যেতে পারেনি। অনেককেই ইসরাইলি সেনারা হত্যা করেছে। ড্রোন আক্রমণ হয়েছে। নৌকাগুলোকে ফিরে আসতে হয়েছে।’

এসব ফ্লোটিলা সফল না হওয়ার কারণ তুলে ধরে শহিদুল আলম বলেন, এসব যাত্রা সফল না হওয়ার পেছনে অনেক দেশের নেতিবাচক ভূমিকা আছে। এর আগে একবার মিসর এই ধরনের ফ্লোটিলাকে তাদের দেশে নামতে দেয়নি। এমনকি তাদের নাগরিকদেরও নৌকায় উঠতে দেয়নি। তিউনিসিয়াতেও দুইবার আক্রমণ হয়েছে। স্পেন, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানির মধ্যে যদিও কেউ কেউ এখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারপরও তারা কিন্তু ইসরাইলকে অস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে।

এবারের ফ্লোটিলায় নিরাপত্তাবিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে শহিদুল আলম বলেন, শুনেছি স্পেন তাদের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ নিরাপত্তার জন্য পাঠাবে। ইতালি থেকেও একটা পাঠানোর কথা রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে আমরা খুব একটা আস্থা পাচ্ছি না। কারণ, ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইতালি সরকার সে রকম ভূমিকা রাখেনি। তবে ইতালির জনগণ রেখেছে। কারণ, কয়েক দিন আগেই সারা দেশব্যাপী তারা স্ট্রাইক করেছে চাপ তৈরি করার জন্য। ফলে এই জাহাজকে আমরা কতটা গ্রহণ করব, সেটি এখনো ঠিক হয়নি।

ফিলিস্তিনিদের জন্য দৃকের বিভিন্ন সময়ের কার্যক্রম তুলে ধরে শহিদুল আলম বলেন, অনেক বছর আগে প্রদর্শনী করে ফিলিস্তিনিদের জন্য টাকা জোগার করা হয়েছিল। সেই টাকা পৌঁছাতেও অনেক কষ্ট হয়েছিল। তার পর থেকে দৃক বিভিন্নভাবে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের জন্য দৃকের চলমান একটা আন্দোলন আছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র উদ দ শ র জন য পর চ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কার, বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তরুণ নেতৃত্বের বিকল্প নেই: রাশেদ খান

গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেছেন, ‘‘রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। দেশ গঠনে সামনে থেকে তরুণদের নেতৃত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই।’’

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন।

রাশেদ খান বলেন, ‘‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশের তরুণ নেতৃবৃন্দকে আপামর সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। স্বনির্ভর, আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ গঠনের নতুন বার্তা জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মানুষের আকাঙ্ক্ষার কথা শুনতে হবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘গণ অধিকার পরিষদের তরুণ নেতারা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। মানুষের কষ্টের কথা, মানুষের প্রত্যাশার কথা জানার চেষ্টা করছে। আমাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, নীতি ও আদর্শ জনগণের কাছে তুলে ধরছি। মানুষ তরুণ নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখতে চায়। গত ১৬ বছরে দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে কেউ কাজ করেনি। আমরা যারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছি, তারা সবাই মিলে জনআকাঙ্ক্ষা পূরণের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করব ইনশাআল্লাহ।’’

ঢাকা/শাহরিয়ার/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফ্লোটিলার কর্মীদের আটক করা ইসরায়েলি আগ্রাসনের নগ্ন রূপ: গণসংহতি আন্দোলন
  • ফ্লোটিলায় কেমন আছেন শহিদুল আলম?
  • সংস্কার, বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তরুণ নেতৃত্বের বিকল্প নেই: রাশেদ খান
  • ইসরায়েল ‘জলদস্যুর কাজ’ করেছে: এরদোয়ান
  • গাজাবাসীর সঙ্গে ৮ মুসলিম দেশের কেন এই বড় বিশ্বাসঘাতকতা
  • সুমুদ ফ্লোটিলার ‌‘মাত্র চারটি নৌকা’ এখন গাজার পথে
  • ধাওয়া, গ্রেপ্তার সত্ত্বেও গাজা অভিমুখী যাত্রায় ‘অবিচল’ ফ্লোটিলা
  • গ্রেটা টুনবার্গসহ গাজা ফ্লোটিরার ২০০ জনকে আটক করেছে ইসরায়েল
  • ট্রাম্প যেভাবে রোহিঙ্গা গণহত্যায় হাওয়া দিচ্ছেন
  • ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করতে ৫০ খেলোয়াড়ের চিঠি