‘মিডিয়া ফ্লোটিলা’ অভিযানে অংশ নিয়ে গাজায় যাচ্ছেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম
Published: 27th, September 2025 GMT
গাজা উপত্যকায় চলমান নৃশংসতার বিষয়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের নীরবতা ভাঙতে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের উদ্যোগে পরিচালিত ‘মিডিয়া ফ্লোটিলা’ অভিযানে অংশ নিতে যাচ্ছেন দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। আগামীকাল তিনি ইতালির উদ্দেশে রওনা করবেন। সেখান থেকেই গাজার উদ্দেশে এই ফ্লোটিলায় তিনি অংশ নেবেন।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রাজধানীর শুক্রাবাদে দৃকপাঠ×ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শহিদুল আলম মিডিয়া ফ্লোটিলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। একই সঙ্গে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের উদ্দেশ্য এবং গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে তিনি নিজের অবস্থান তুলে ধরেন।
নৃবিজ্ঞানী ও দৃকের পরিচালক রেহনুমা আহমেদ, দৃকের ব্যবস্থাপক ও কিউরেটর এ এস এম রেজাউর রহমান, দৃকের উপব্যবস্থাপক মো.
সংবাদ সম্মেলনে শহিদুল আলম বলেন, সারা পৃথিবীর মানুষের প্রতিবাদ-প্রতিরোধকে উপেক্ষা করে ২০০৭ সাল থেকে গাজাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অবরুদ্ধ গাজায় মানুষ নির্বিচারে গণহত্যার শিকার হচ্ছে, সেখানে চলছে ইসরায়েল সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ। এসব খবর ইসরায়েলি গণমাধ্যগুলো প্রতিনিয়ত উপেক্ষা করে যাচ্ছে। এই উপেক্ষা ভাঙার লক্ষ্যে একটি মিডিয়া ফ্লোটিলার আয়োজন করা হচ্ছে। ওই ফ্লোটিলায় অংশ নিতে আগামীকাল সকালে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেবেন। রোম থেকে এই যাত্রায় অংশ নেবেন তিনি।
‘বাংলাদেশের সব মানুষের ভালোবাসা নিয়ে অংশ নিচ্ছি’ উল্লেখ করে শহিদুল আলম বলেন, ‘এই সংগ্রামে যদি আমরা পরাজিত হই, তাহলে মানবজাতি পরাজিত হবে। যাওয়ার পর আমি প্রতিদিনই যতটা সম্ভব তথ্য ও ছবি পাঠাতে চেষ্টা করব। জানামতে এই প্রথম বাংলাদেশ থেকে কেউ এ ধরনের ফ্লোটিলাতে অংশ নেবে।’
শহিদুল আলম বলেন, সারা পৃথিবীর জনগণ ফিলিস্তিনিদের পুরোপুরি সমর্থন জানিয়ে পাশে দাঁড়ায়, সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ফিলিস্তিনে এত বড় একটা গণহত্যায় কিছুই করতে পারছে না। বিভিন্ন দেশের জনগণ নিজেদের মতো করে একধরনের রেজিস্ট্যান্স (প্রতিরোধ) রাখছে, যেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। যার অংশ হিসেবে এই ফ্লোটিলা হচ্ছে। এই যাত্রায় অনেক বিপদ থাকতে পারে। কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমরা আদৌ পৌঁছাতে পারব কি না, জানি না। এসব মেনে নিয়েই সবাই অংশ নিচ্ছে।
এবারের ফ্লোটিলার বিষয়ে শহিদুল আলম বলেন, ‘এবার ৫০টির অধিক নৌকা যাচ্ছে। আমরা যেই নৌকাতে যাচ্ছি, সেটিতে প্রায় ১০০ জন থাকবে। যার মধ্যে এক–তৃতীয়াংশ সাংবাদিক, এক–তৃতীয়াংশ চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত আর এক–তৃতীয়াংশ থাকবে, যারা এটি আয়োজন করেছে। তার সঙ্গে আরও ১০টি ছোট নৌকা থাকবে। ৪৪টি দেশ থেকে এই ফ্লোটিলাতে অংশ নিচ্ছেন।
আগেও এ ধরনের ফ্লোটিলা হয়েছে উল্লেখ করে শহিদুল আলম বলেন, ‘এর আগে অনেকেই অনেকভাবে ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’ করার চেষ্টা করেছে। ২০০৮ সালে ‘ফ্রি গাজা মুভমেন্ট’ নামে একটা আন্দোলন হয়। তখন দুটো ছোট নৌকা গাজা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। সেবারই প্রথম গাজার অবরুদ্ধ অবস্থা ভাঙা হয়। তারপর ২০০৮ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৩১টি নৌকা গাজায় যাওয়ার চেষ্টা করেছে। তার মধ্যে শুরুর দিকে পাঁচটি পৌঁছাতে পারলেও অধিকাংশই যেতে পারেনি। অনেককেই ইসরাইলি সেনারা হত্যা করেছে। ড্রোন আক্রমণ হয়েছে। নৌকাগুলোকে ফিরে আসতে হয়েছে।’
এসব ফ্লোটিলা সফল না হওয়ার কারণ তুলে ধরে শহিদুল আলম বলেন, এসব যাত্রা সফল না হওয়ার পেছনে অনেক দেশের নেতিবাচক ভূমিকা আছে। এর আগে একবার মিসর এই ধরনের ফ্লোটিলাকে তাদের দেশে নামতে দেয়নি। এমনকি তাদের নাগরিকদেরও নৌকায় উঠতে দেয়নি। তিউনিসিয়াতেও দুইবার আক্রমণ হয়েছে। স্পেন, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানির মধ্যে যদিও কেউ কেউ এখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারপরও তারা কিন্তু ইসরাইলকে অস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে।
এবারের ফ্লোটিলায় নিরাপত্তাবিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে শহিদুল আলম বলেন, শুনেছি স্পেন তাদের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ নিরাপত্তার জন্য পাঠাবে। ইতালি থেকেও একটা পাঠানোর কথা রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে আমরা খুব একটা আস্থা পাচ্ছি না। কারণ, ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইতালি সরকার সে রকম ভূমিকা রাখেনি। তবে ইতালির জনগণ রেখেছে। কারণ, কয়েক দিন আগেই সারা দেশব্যাপী তারা স্ট্রাইক করেছে চাপ তৈরি করার জন্য। ফলে এই জাহাজকে আমরা কতটা গ্রহণ করব, সেটি এখনো ঠিক হয়নি।
ফিলিস্তিনিদের জন্য দৃকের বিভিন্ন সময়ের কার্যক্রম তুলে ধরে শহিদুল আলম বলেন, অনেক বছর আগে প্রদর্শনী করে ফিলিস্তিনিদের জন্য টাকা জোগার করা হয়েছিল। সেই টাকা পৌঁছাতেও অনেক কষ্ট হয়েছিল। তার পর থেকে দৃক বিভিন্নভাবে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের জন্য দৃকের চলমান একটা আন্দোলন আছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র উদ দ শ র জন য পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কোনো চাঁদাবাজ দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবো না: চরমোনাই পীর
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও পীর সাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘‘বিদেশিদের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশের মানুষ আর চলতে চায় না। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। তাই মানুষ ইসলামকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। এজন্য দেশপ্রেমিক ইসলামিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীতে ইসলামের পক্ষে ভোটের বাক্স হবে একটি। আমরা ইসলামী দলগুলো আর কোনো চাঁদাবাজ দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবো না।’’
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ লক্ষ্মীপুর জেলা শাখা আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রেজাউল করীম বলেন, ‘‘একটি দল আছে, যারা পূর্বে ক্ষমতায় গিয়ে দেশকে একাধিকবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দলবাজিসহ নানা অপরাধ করেছে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীও করছে। আবারো ক্ষমতায় যেতে ওরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ দেশের ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে ফ্যাসিস্ট বিদায় করেছে পুরনো বন্দোবস্তর জন্য নয়। নতুন সিস্টেম ও নতুন কাউকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। কারণ দেশের মানুষ গত ৫৩ বছর বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ক্ষমতা দেখেছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশের মানুষ পুরনো সিস্টেম আর দেখতে চায় না। পুরনো বউকে নতুন কাপড়ে সাজিয়ে এনে জনগণের সামনে উপস্থাপন করলে জনগণ আর মেনে নেবে না। তাই নির্বাচনের পূর্বে গণভোট দিতে হবে। পিআর কার্যকর করতে হবে। জুলাই সনদের আইনিভিত্তি নির্বাচনের পূর্বেই দিতে হবে। বিদেশি অথবা দেশের কোনো অপশক্তির ইশারায় যদি এগুলো কার্যকর করা না হয়। তাহলে, ইসলামী আন্দোলন দেশের মানুষকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।’’
ঢাকা/জাহাঙ্গীর/রাজীব