সাহিত্যের ভাষাটা হচ্ছে চিত্রকরের রঙের মতো। যে কম্পোজার তার সেই ধ্বনির মতো। সাউন্ডের মতো।
— সৈয়দ শামসুল হক

চিত্রকলা ছাড়া শিল্প–সাহিত্যের নানান শাখায় নজরুল ইসলামের অবদান মাথায় রেখেই বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর সৈয়দ শামসুল হকই একমাত্র সাহিত্যিক, যিনি শিল্প–সাহিত্যের সব শাখায় কমবেশি অবদান রেখেছেন। সৈয়দ হক বলতেন, তিনি ‘সার্বক্ষণিক লেখক’ আর তাঁর করোটির ভেতরে উড্ডীন থাকত ভাবনা। দৃঢ়ভাবে তিনি বিশ্বাস করতেন, লেখাটাই তাঁর একমাত্র কাজ। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখে অলোকলোকে আবাস নেওয়ার আগে একাশি বছরের দীর্ঘ জীবনটি তিনি শিল্প–সাহিত্যের জন্যই ব্যয় করেছেন।

সৈয়দ শামসুল হকের ‘পরানের গহীন ভিতর’ বাংলাদেশের কবিতায় ধ্রুপদি মর্যাদা লাভ করেছে। তাঁর অন্যান্য বইয়ের পাশাপাশি এই কবিতাগ্রন্থটির ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন, বইটি অনুবাদ হলে বিশ্ব পাঠক মহলে সমাদৃত হবে।

‘তোমারে যে ভালোবাসে এর থিকা আরো পাঁচগুণ/ আল্লার কসম আমি দিমু তারে এই জামাখান,/ আমার কলম আমি দিমু তারে, শরীলের খুন/ দোয়াত ভরায়া দিমু.

..’ পঙ্ক্তিগুলো প্রথমা থেকে প্রকাশিত ‘পরানের গহীন ভিতর’-এর সংস্করণটির ফ্ল্যাপে উল্লেখ করেছেন সৈয়দ শামসুল হক। উল্লেখ করি, ১৯৮০ সালে ‘সচিত্র সন্ধানী’ পত্রিকায় নবী মুনশী ছদ্মনামে কবিতাগ্রন্থটির সনেটগুলো প্রকাশিত হওয়ার সময় সৈয়দ হকের বিবাহিত জীবন প্রায় ১৫ বছরের। উদ্ধৃত পঙ্ক্তিগুলো পাঠ করে আমাদের এই বিস্ময়ে বিস্মিত হতে হয় যে কোন সে তুমুল রূপবতী সৈয়দ হককে এমন তুমুল প্রেমে হাবুডুবুরত রাখতে পেরেছেন! আর সৈয়দ হক প্রেমের উত্তাপে সাচ্চা ইমানদারের মতন আল্লাহর কসম খেয়ে তাঁর প্রেমিকাকে তাঁর চেয়ে বেশি যে ভালোবাসে, প্রেমিকাকে নয়, সেই প্রেমিককেই দিতে চেয়েছেন আরও পাঁচ গুণ বেশি ভালোবাসা! শুধু তা–ই নয়, তার শরীরের খুন পর্যন্ত ভরিয়ে দিতে চেয়েছেন দোয়াতে।

বিয়ের দিন সৈয়দ শামসুল হক ও আনোয়ারা সৈয়দ হক

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আমার জীবনটা ট্র্যাজেডিতে ভরা

ছবি: দীপু মালাকার

সম্পর্কিত নিবন্ধ