যুক্তরাষ্ট্রের এফ–১ ও এইচ–১বি ভিসা নীতি: শিক্ষার্থীদের সংকট আসলে কেমন হবে
Published: 28th, September 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া নতুন সিদ্ধান্তে এইচ–১বি ভিসা (যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ কাজের ভিসা, যা বিদেশি দক্ষ পেশাজীবীদের নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কাজের অনুমতি দেয়) ব্যবস্থা বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখে পড়তে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়তে যাওয়া নিরুৎসাহিত করবে, যা দীর্ঘ মেয়াদে দেশটির প্রযুক্তি খাতের কর্মী সরবরাহের ধারা ভেঙে দিতে পারে।
গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস হঠাৎ ঘোষণা দেয়, বিদেশি কর্মী নিয়োগে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এক লাখ ডলার অতিরিক্ত ফি নেওয়া হবে। এ ঘোষণা বিশেষ করে ভারতের আইটি পেশাজীবী ও চিকিৎসকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কারণ, বর্তমানে এইচ–১বি ভিসাধারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি ভারতীয় নাগরিক। পরবর্তী সময় হোয়াইট হাউস স্পষ্ট করে জানায়, এই ফি কেবল নতুন আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এবং চিকিৎসকেরা এর আওতার বাইরে থাকতে পারেন।
তবে আসল ধাক্কা আসে গত মঙ্গলবার ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) থেকে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এখন থেকে লটারি পদ্ধতির পরিবর্তে বেতনভিত্তিক নতুন নিয়মে এইচ–১বি ভিসা দেওয়া হবে। সরকারের দাবি, এতে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন ও উচ্চ বেতন পাওয়া ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পাবেন। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
নতুন নিয়মের ফলে শিক্ষার্থীদের সংকট আসলে কেমন হবে
এখন পর্যন্ত বিদেশি শিক্ষার্থীরা তাঁদের পড়াশোনা শেষ করার পর এফ–১ (এফ–১ হলো যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা, যা শিক্ষার্থীদের স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন পড়াশোনার সুযোগ দেয়) স্টুডেন্ট ভিসা থেকে এইচ–১বি ভিসায় সমানভাবে আবেদন করতে পারতেন। নতুন নিয়মে সেই সুযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। এইচ–১বি ভিসায় আবেদন করতে হলে এখন থেকে নিয়োগদাতাকে শিক্ষার্থীকে ভৌগোলিক এলাকা ও পেশাভিত্তিক ন্যূনতম বেতন দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, সান ফ্রান্সিসকো কাউন্টিতে একজন নতুন কম্পিউটার সায়েন্স স্নাতকের চাকরির ন্যূনতম বেতন হতে হবে ১ লাখ ৩৬ হাজার ডলার। তারপরও এআই প্রকৌশলীর তুলনায় এটি চার ভাগের এক ভাগ হবে। কারণ, বছরে ২ লাখ ১৪ হাজার ডলার বা তার বেশি আয়ের সুযোগ ছিল তাঁর।
লাস ভেগাসে ৯৭ হাজার ডলার আয় করা একজন ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্টের ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি হবে। অথচ একই শহরে সফটওয়্যার ডেভেলপারের জন্য ন্যূনতম বেতন হতে হবে ১ লাখ ৬৪ হাজার ডলার।
ফলে নতুন স্নাতকেরা সিলিকন ভ্যালির মতো প্রযুক্তি কেন্দ্রগুলো থেকে বাদ পড়বেন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যেতে বাধ্যও হবেন।
আরও পড়ুনদক্ষ কর্মীদের ভিসা ফি বাড়িয়ে ১ লাখ ডলার করলেন ট্রাম্প২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়তে যাওয়া নিরুৎসাহিত করবে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র
এছাড়াও পড়ুন:
সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো ‘লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় একাদশতম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। আলোচনার বিষয় ছিল ‘শিল্প, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানবতার সংমিশ্রণে গঠিত এক অনন্য লিগ্যাসি’।
‘মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, বিশ্বাসের সমান বড় এবং কাজের সমান সফল। কাজই মুক্তি। তবে আশাও বড় রাখতে হবে। আশা না থাকলে কাজ হবে না।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন জুয়েল আইচ। পডকাস্ট শোর এ পর্ব প্রচারিত হয় গতকাল শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
পডকাস্টের শুরুতেই সঞ্চালক জানতে চান, মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে প্রথম যেদিন জাদু দেখালেন, সেই অনুভূতি কেমন ছিল?
উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সব বাদ দিয়ে যুদ্ধে যোগ দিই। আমরাই খুব সম্ভবত প্রথম পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করি। আমি শৈশব থেকেই জাদু দেখাই। তবে মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে জাদু দেখানোর সেই অনুভূতিটি ছিল একেবারেই ম্যাজিক্যাল।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, শিল্পকে সাহস করে অস্ত্রতে পরিণত করার এই আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে এল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এটা আত্মবিশ্বাস নয়। আমি অসম্মান সহ্য করতে পারি না। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছিলাম, তারা (পাকিস্তান) আমাদের বিভিন্নভাবে অসম্মান করে আসছে। কখনো গানে, কখনো ছবি এঁকে কিংবা কবিতার ভাষায় আমরা সব সময় এর প্রতিবাদ করে এসেছি। এভাবে করেই শেষ পর্যন্ত আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেমে গেলাম।’
জুয়েল আইচকে কেউ বলেন ম্যাজিশিয়ান, আবার কেউ বলেন মিউজিশিয়ান। তবে জুয়েল আইচ একজন দার্শনিকও বটে। জাদুর মোহনীয়তা আর বাস্তবতার যে রূঢ় চিত্র—এই দুটো আপনার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘বাস্তবতাকে আমরা বলে থাকি “কঠিন” আর স্বপ্ন তো আমরা আকাশসমান ভাবতে পারি। একদম রংধনুর মতো সাত রং। এই দুটোকে যদি কেউ আয়ত্ত না করতে পারে, তবে তার জীবন কিন্তু সেখানেই শেষ। সে বেঁচে থাকবে কিন্তু মরার মতো।’ তিনি বলেন, ‘সে জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দরকার। যেমন আপনি কোনোভাবেই আমাকে দুঃখী বানাতে পারবেন না। আমি দুঃখ পাই না, তবে বারবার আমাকে খ্যাপাতে থাকলে আমি রুখে দাঁড়াই।’
জুয়েল আইচ কখনোই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়া স্টেজে ওঠেন না। সঞ্চালক জানতে চান, এর পেছনে কারণ কী?
জুয়েল আইচ বলেন, প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজ সুন্দরমতো হয় না। প্রস্তুতি ছাড়া যদি কেউ কিছু করে, তবে সেগুলো অনেক নিম্নমানের হবে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বাঁশি দিয়ে সব রাগ বাজাতে পারি। এটা কি এক দিনেই সম্ভব!’
আপনার পারফরম্যান্সের সময় আপনি মাঝেমধ্যে নিঃশব্দ হয়ে যান। যেখানে কোনো উদ্যম নেই। এই ‘সাইলেন্স’-এর কারণটা কী?
সঞ্চালক জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, শব্দের চেয়ে নিঃশব্দের ভাষা বেশি গভীর। একটি পেইন্টিং, যেখানে কোনো শব্দ থাকে না কিন্তু কত কিছু বলে দেয়! দেখবেন কেউ অনেক খেপে গেলে নীরব হয়ে যায়। আসলে শব্দে যা বলা যায়, নিঃশব্দে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব।
বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে সবকিছুই হাতের নাগালে, এমনকি জাদুও। জাদু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আসার পর এর আবেদন কিছুটা কমে যাচ্ছে কি না? জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, খালি চোখে দেখলে তা আসলেই কমে যাচ্ছে। কারণ, এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে জাদুগুলো দেখানো হচ্ছে, তা দেখে মানুষ বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা আগে যেসব জাদু দেখেছি, এগুলো তো তার থেকেও বিস্ময়কর। কিন্তু তারা হয়তো বুঝতে পারছে না, এখন সবকিছুর সঙ্গে মিশে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’
সঞ্চালক এরপর প্রশ্ন করেন, আপনি একসময় ‘পালস স্টপিং’ ধরনের ইলিউশন বন্ধ করেছিলেন। এর পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এই পালস স্টপিংয়ের মাধ্যমে আমি পুরো দেশজুড়ে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলাম। দলে দলে মানুষ এটি দেখতে আসত। কিন্তু এসব দেখে মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কিত হতো, অনেক মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ত। একবার একজন অনেক বড় পালোয়ান এটি দেখতে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। সেদিন শো শেষ করেই আমি আমার টিমকে বলি, এই ম্যাজিক আর হবে না। কারণ, এই ম্যাজিক এত এত মানুষকে ডেকে আনছে বটে কিন্তু এটি মাত্রা অতিক্রম করে ফেলছে। যা মোটেও ঠিক নয়।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, তাহলে কি একজন শিল্পীকে সংবেদনশীলও হতে হয়?
‘অবশ্যই।’ জুয়েল আইচ বলেন, একজন শিল্পীকে অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে। সংবেদনশীল না হলে তিনি ভালো শিল্পী হতে পারবেন না।
আপনি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের সামনে পারফর্ম করেছেন, তেমনি এমন শিশুদের জন্যও জাদু দেখিয়েছেন, যারা কখনো টিকিট কিনে শো দেখতে পারে না। আপনার চোখে আসল মর্যাদা কোথায়—বৃহৎ মঞ্চে, নাকি একটিমাত্র বিস্মিত মুখে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল আইচ বলেন, ‘আসলে মঞ্চ ব্যাপার নয়। আমি আমার জাদুতে বিস্মিত এবং মুগ্ধ হয়ে থাকা দেখতে ভালোবাসি। শুধু বিস্ময় নয়, বিস্ময়ের সঙ্গে মুগ্ধতা আমার ভালো লাগে।’
আরও পড়ুননীতি আর মূল্যবোধ শক্ত থাকলে কেউ থামাতে পারবে না: রুবাবা দৌলা১২ অক্টোবর ২০২৫পডকাস্টের শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আমরা আরেকজন জুয়েল আইচ কবে পাব?
মুচকি হেসে জুয়েল আইচ বলেন, ‘যখন সেই উদ্যম নিয়ে কেউ কাজ করবে, ঠিক তখন। সে হয়তো আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। শুধু ম্যাজিকে নয়, সব দিক দিয়েই।’
আরও পড়ুনবাবা প্রথমে আমাকে অফিস সহকারীর কাজ দিয়েছিলেন: হাতিলের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান০৫ অক্টোবর ২০২৫