শেরপুরের নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত হয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর খন্দকার জান্নাতুল নাঈম। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে জানাজা শেষে নকলা উপজেলার লাভা গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে, তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। 

আরো পড়ুন:

শেভরনের পাইপলাইনে অগ্নিকাণ্ড: দগ্ধ বাবা-ছেলের মৃত্যু

সিলেটে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

গাজীপুরের টঙ্গীতে গত ২২ সেপ্টেম্বর সাহারা মার্কেটের রাসায়নিক গুদামে লাগা আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ হন নাঈম। শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা যান তিনি।

মরদেহ গ্রামে আসার পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ময়মনসিংহ বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দীসহ অন্য কর্মকর্তারা নাঈমের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। নাঈমকে প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন নকলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.

জাহাঙ্গীর আলম।

গার্ড অফ অনারের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী বলেন, ‍“নাঈম কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। তিনি এখন রাষ্ট্রের সম্পদ। নাঈমের মৃত্যু পরবর্তী যা যা করার প্রয়োজন তার দায়িত্ব রাষ্ট্র নিয়েছে। আমাদের বিভাগ থেকে তার সন্তানদের আজীবন পড়ালেখার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। মাননীয় মহাপরিচালক স্যার, আমাদের কল্যাণ তহবিলকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়াও তার পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব রাষ্ট্র নিয়েছে। সে বেঁচে থাকলে তার স্ত্রী যতটুকু পেতো, এখন তার চেয়ে আরো বেশি পাবেন।”

নকলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “নাঈম একজন জাতীয় বীর। অন্যের সম্পদ ও জীবন বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে বীরত্ব দেখিয়ে গেছেন। এমন সন্তান নকলা বাসীর জন্য গর্বের। আমরা তার পরিবারের পাশে আছি।”

নাঈম ১৯৮৮ সালের ২৪ আগস্ট শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার গৌড়দুয়ার ইউনিয়নের খন্দকার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মোল্লার টেক উদয়ন বিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে এসএসসি ও ফুলপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তিনি বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে যোগ দেন। চাকরি জীবনে স্টেশন অফিসার হিসেবে মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ ফায়ার স্টেশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর হিসেবে চট্টগ্রাম ও সর্বশেষ টঙ্গী ফায়ার স্টেশনে কর্মরত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত নাঈমের আড়াই বছর বয়সী ছেলে সন্তান রয়েছে। তার বাবার নাম খন্দকার মোজাম্মেল হক ও মায়ের নাম দেলোয়ারা বেগম।

ঢাকা/তারিকুল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মাতৃরূপে ঈশ্বরের উপাসনা

ধর্মতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব ও নৃতত্ত্ব বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের গবেষণা, যা–ই বলুক না কেন, সাধারণ বুদ্ধিতে মনে হয়, সভ্য মানুষ যখন প্রথম ঈশ্বরের কল্পনা করেছিল, অথবা মানুষ যখন তার চেয়ে উচ্চতর বা ঊর্ধ্বতর কোনো অলৌকিক অথবা অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রথম কল্পনা করেছিল, তখন সে ঈশ্বরকে অথবা সেই অতিমানবিক শক্তিকে নারী হিসেবেই ভেবেছিল। আমাদের মনে হয়, মানবেতিহাসে ঈশ্বর–ধারণার সে–ই সূচনা৷

বলা বাহুল্য, মানুষের মানসচক্ষে ঈশ্বরের যে রূপটি তখন ভেসে উঠেছিল, তা ছিল স্বাভাবিকভাবেই তার আপন গর্ভধারিণীরই এক মহত্তর, আদর্শায়িত রূপকল্প। অর্থাৎ সভ্য মানুষের চিন্তায় ঈশ্বর সম্ভবত মাতৃরূপেই প্রথম কল্পিত হয়েছেন।

আমরা নিছক কল্পনার ডানায় ভর করে এ কথা বলছি তা নয়। আমাদের ধারণার ভিত্তি অবশ্যই আছে। মানবসভ্যতার প্রাচীনতম সাহিত্য বা মানুষের প্রাচীনতম ‘লিপিবদ্ধ ইতিহাস’ ঋগ্‌বেদে আমরা এর সমর্থন পাচ্ছি। ঋগ্‌বেদের দশম মণ্ডলের দশম অনুবাকের ১২৫তম সূক্তটি ‘দেবীসূক্ত’ নামে প্রসিদ্ধ।

মানবসভ্যতার প্রভাতে উচ্চারিত এই সূক্তে আমরা ঋষি অম্ভৃণের কন্যা ঋষি বাকের উপলব্ধির সঙ্গে পরিচিত হই। ঋষি বাক উপলব্ধি করেছিলেন: জগৎ-প্রপঞ্চের পেছনে জগৎ-কারণরূপে যিনি অবস্থান করছেন, যাঁর অঙ্গুলি হেলনে বা ইচ্ছানুসারে সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র প্রভৃতি পরিচালিত হচ্ছে; যাঁর প্রভাব ব্যতীত রুদ্র তাঁর ধনুকে জ্যা বসাতে অসমর্থ; ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুর মধ্যে যিনি ওতপ্রোতভাবে অনুস্যূত ও পরিব্যাপ্ত এবং তার বাইরেও যিনি বিদ্যমান, তিনি একজন নারী। তিনিই জগতের ঈশ্বরী, আদ্যাশক্তি। দেবীসূক্তের পরেই ‘রাত্রিসূক্ত’। ঋগ্‌বেদের দশম মণ্ডলের দশম অনুবাকের ১২৭তম সূক্তটিই প্রসিদ্ধ ‘রাত্রিসূক্ত’।

এই সূক্তে তৎকালীন মানুষের যে পরিচয় আমরা পাই, সে মানুষ হিংস্র প্রাণী ও দুর্ধর্ষ দস্যুর পীড়নে আর্ত ও সন্ত্রস্ত; শত্রুর (অসুরের?) আক্রমণের আশঙ্কায় সদা উদ্বিগ্ন। শঙ্কাহীন, নিরুদ্বেগ জীবন ও শত্রুনাশের জন্য তারা তাই ব্যাকুলভাবে প্রার্থনায় রত।

স্মরণাতীতকালে আমাদের এই অগ্রজদের প্রার্থনা কার কাছে? কার উদ্দেশে তাঁরা নতজানু? রাত্রিসূক্তের ঋষি কুশিকের ভাষায়—তিনি হলেন সর্বব্যাপিনী, বিশ্ববিধাত্রী, বিশ্বত্রাত্রী, বিশ্বপ্রসবিত্রী, জগৎ-প্রকাশিকা আদ্যাশক্তি। ঋষি তাঁকে ‘রাত্রি’ নামে অভিহিত করেছেন।

ভাষ্যকারদের মতে, ‘রাত্রি’ শব্দের অর্থ ‘অভীষ্টদাত্রী’। শুধু ঋগ্বেদেই নয়, সামবেদেও ‘রাত্রিসূক্ত’ আছে। সেখানেও দেখা যায়, আদ্যাশক্তির আদেশে সূর্য, বায়ু, বরুণ ও পৃথিবী নিজ নিজ ভূমিকা পালন করছেন। অসুরবধের জন্য, অমঙ্গলনাশের জন্য তিনি বারবার পৃথিবীতে আবির্ভূত হন।

যজুর্বেদ ও অথর্ববেদেও বিভিন্ন স্ত্রী-দেবতার উল্লেখ রয়েছে। বেদের আরণ্যক, ব্রাহ্মণ ও উপনিষদ অংশেও বহু স্ত্রী দেবতার নাম পাওয়া যায়। পণ্ডিতদের মতে, দেবীসূক্তের বাক্ এবং রাত্রিসূক্তের রাত্রি–পরবর্তীকালে যথাক্রমে সরস্বতী ও কালীতে রূপান্তরিত হয়েছেন।

ঋগ্‌বেদের পরিশিষ্টভুক্ত ‘শ্রীসূক্ত’-এর মধ্যে ঋগ্‌বেদের শেষের দিকের শক্তিভাবনার উল্লেখ পাওয়া যায়। পণ্ডিতদের মতে, ‘শ্রীসূক্ত’-এর শ্রী পরবর্তীকালে লক্ষ্মীতে রূপান্তরিত হয়েছেন।

বৈদিক যুগের পর মহাভারত ও পুরাণে স্ত্রী-দেবতার আরাধনা এক উল্লেখযোগ্য আকার ধারণ করে। পাশাপাশি বিশাল তন্ত্রসাহিত্যের মধ্যেও শাক্ত আরাধনা প্রবলভাবে বিকশিত হয়। ‘তন্ত্রসাহিত্য’ বলতে বৈষ্ণব, শৈব ও শাক্ত ধর্মীয় সাহিত্যের একটি বিশেষ ধারাকে বোঝানো হলেও, ‘তন্ত্র’ বলতে সাধারণত শাক্ত ধর্মীয় সাহিত্যকেই বোঝায়। তবে শাক্ত তন্ত্রসাহিত্য বা তান্ত্রিক ধারার কাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

কেউ কেউ তন্ত্রকে বৈদিক যুগের সমসাময়িক, এমনকি তারও প্রাচীন বলে মতপ্রকাশ করেছেন। তবে তন্ত্রসাহিত্যের কাল সম্ভবত অতটা প্রাচীন নয় এবং বহু তন্ত্র-গ্রন্থই পরবর্তীকালে রচিত। তা সত্ত্বেও ধর্মীয় সাহিত্য হিসেবে তন্ত্র সুপ্রাচীন না হলেও ধর্মীয় পদ্ধতি হিসেবে তন্ত্র যে যথেষ্টই প্রাচীন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তন্ত্রসাহিত্যের সূচনা যখনই হোক না কেন, অন্তত দেড় হাজার বছর আগে হিন্দুদের ধর্মসাহিত্য ও ধর্মসাধনা প্রধানত বৈদিক ও তান্ত্রিক—এই দুই ধারায় বিভক্ত ছিল।

শুধু বৈদিক যুগেই নয়, প্রাক্-বৈদিক যুগেও মানুষ ঈশ্বরকে মাতৃরূপে উপাসনা করত। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর ধ্বংসাবশেষ থেকে আবিষ্কৃত সুপ্রাচীন (পৃথিবীর সভ্যতাগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম?) সিন্ধুসভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে প্রমাণিত হয় যে ওই দুই প্রাচীন নগরের অধিবাসীদের প্রধান উপাস্য ছিলেন স্ত্রী দেবতারা।

তান্ত্রিকপদ্ধতির বীজ কি সেখানেই নিহিত ছিল? কে জানে! তবে সিন্ধু সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোতে যেসব স্ত্রী দেবতার মূর্তি পাওয়া গেছে, সেগুলোকে নিঃসন্দেহে পরবর্তীকালের শক্তিমূর্তিগুলোর আদিরূপ বলা যেতে পারে। নৃতত্ত্ববিদদের মতে, ওই মূর্তিগুলো প্রধানত শস্য, প্রাণশক্তি ও প্রজননশক্তির প্রতীকস্বরূপিনী মাতা বসুন্ধরা বা পৃথিবীর প্রতিমূর্তি।

শুধু ভারতের প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার ইতিহাসই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস বিচার-বিশ্লেষণ করলেও স্পষ্ট বোঝা যায়, ঈশ্বরকে মাতৃরূপে উপাসনা মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা থেকেই উদ্ভূত।

‘স্বাভাবিক প্রবণতা’ কেন বলছি? পৃথিবীর আলোয় মানুষ প্রথম যাঁকে দেখে, তিনি মা। তাই বোধ হয় আমাদের কণ্ঠ-উৎসারিত প্রথম শব্দটিও ‘মা’। একমাত্র মায়ের সঙ্গেই মানুষের ‘নাড়ি’র সম্পর্ক। এই সম্পর্ক যেমন জৈবিক (বায়োলজিক্যাল) অর্থে সত্য, তেমনি মানসিক (মেন্টাল), মনস্তাত্ত্বিক (সাইকোলজিক্যাল) এবং আধ্যাত্মিক (স্পিরিচুয়াল) অর্থেও সত্য। সব অর্থেই মানুষ মায়ের সঙ্গেই সর্বাপেক্ষা নিকট–সম্পর্কযুক্ত।

সে কারণেই জন্মলগ্ন থেকেই মানুষের চরিত্রে মায়ের প্রভাব—জ্ঞাতসারে অথবা অজ্ঞাতসারে, সবচেয়ে বেশি ক্রিয়াশীল থাকে। শিশুর সবচেয়ে বড় নির্ভরতা মা-ই, মা-ই তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত জন। যখন সে ভয় পায়, তখন মায়ের কোলেই আশ্রয় খোঁজে; যখন আনন্দ পায়, তখন সবার আগে মাকেই সেই আনন্দের ভাগীদার করতে চায়।

দুঃখ বা আনন্দে, ভয় কিংবা উদ্বেগে—মাকেই সে প্রথম খোঁজে। মায়ের সঙ্গে এই সম্পর্কের কারণেই দেখা যায়, মা যখন শিশুসন্তানকে দুষ্টুমির জন্য মারেন, তখন এক হাতে চোখের জল মুছতে মুছতে অন্য হাতে শিশুটি মাকেই জড়িয়ে ধরে। কারণ, জন্মলগ্ন থেকেই তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে—যে হাত তাকে আঘাত করেছে, সেই হাতই পরক্ষণে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরবে; আর যে চোখ ও মুখ এতক্ষণ ক্রোধে জ্বলছিল, সেই চোখই কয়েক মুহূর্ত পরে জলে ভাসবে এবং সেই মুখই তার অশ্রুলিপ্ত মুখকে চুম্বনে ভরিয়ে দেবে।

বস্তুত, মানুষ যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে বা শ্রদ্ধা করে, অথবা যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা বা শ্রদ্ধা অর্পণ করতে চায়, তার মধ্যে সম্ভবত সে অজ্ঞাতসারে নিজের মাকেই দেখতে চায়। এটিই মানুষের সহজাত মনস্তত্ত্ব। সভ্য মানুষ যখন ইতিহাসের উষালগ্নে ঈশ্বরের শরণাপন্ন হয়েছিল, তখন তার ভাবনায় বোধ হয় এই মনস্তত্ত্বই ক্রিয়াশীল ছিল।

যাহোক, ঈশ্বরের মাতৃরূপের এই ভাবনা ভারতবর্ষে প্রাক্-বৈদিক, বৈদিক, তান্ত্রিক ও পৌরাণিক—এই চার প্রধান ধারায় অভিব্যক্ত হয়েছে। বৈদিক ভাবনা পরবর্তীকালে উপনিষদে ক্রমবিবর্তিত হয়ে যে রূপ লাভ করেছিল, তারই উত্তরোত্তর প্রকাশ দেখা গেছে রামায়ণ, মহাভারত এবং পুরাণ ও উপপুরাণগুলোতে। পাশাপাশি প্রাক্-বৈদিক যুগে দেবীভাবনার ধারণা একটি স্বতন্ত্র ধারায় বিকাশ লাভ করছিল।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আমরা যাকে ‘তন্ত্র’ বলে জানি, তার উৎস নিহিত আছে প্রাক্-বৈদিক যুগের দেবীভাবনায়। সুপ্রাচীনকাল থেকেই কিন্তু আরেকটি ধারা ছিল। সেটি হলো আদিবাসী, উপজাতি ও সমাজের নিম্নবর্ণের মধ্যে প্রচলিত লোকায়ত ধারা। পরবর্তীকালে প্রতিটি ধারাই একে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, একের মধ্যে অন্যের চিন্তাভাবনা ও পদ্ধতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ভারতের সর্বত্রই এই সংমিশ্রণ ও পারস্পরিক প্রভাব কমবেশি ঘটেছে।

বৈদিক সাহিত্যে দেবীকে অদিতি, উষা, অম্বিকা, উমা, সরস্বতী, দুর্গা, সাবিত্রী, পৃথিবী প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হলেও ‘কালী’ ও ‘চণ্ডী’ নাম দুটি কোথাও পাওয়া যায় না। ‘কালী’ নামটি প্রথম পাওয়া যায় মুণ্ডক উপনিষদে, তবে সেখানে এটি কোনো স্ত্রী দেবতার নাম নয়; সেখানে ‘কালী’ অগ্নির সপ্ত জিহ্বার একটি নাম। স্ত্রী দেবতা হিসেবে ‘কালী’ নামটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় মহাভারতে। আর ‘চণ্ডী’র প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে পৌরাণিক দেবীরূপে সাহিত্যে। ‘চণ্ডী’ বা ‘চণ্ডিকা’ নামে তাঁকে সর্বাধিক অভিহিত হতে দেখা যায় মার্কণ্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত ‘দেবীমাহাত্ম্যে’, যা ‘চণ্ডী’ বা ‘দুর্গাসপ্তশতী’ নামে প্রসিদ্ধ।

‘কালী’ নামটিও সেখানে উল্লেখযোগ্যভাবে এসেছে। ক্রমে দুর্গা ও কালীকে সেখানে একই মহাদেবীর বিভিন্ন রূপ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। পরবর্তী কালে দুর্গা, কালী প্রভৃতি পরিচিত নামের পাশাপাশি অন্যান্য পুরাণ ও উপপুরাণে ‘চামুণ্ডা’, ‘উগ্রচণ্ডী’, ‘উগ্রচণ্ডিকা’ প্রভৃতি নাম আদ্যাশক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে থাকে। ধীরে ধীরে ‘চণ্ডী’ হয়েছেন ‘মঙ্গলচণ্ডী’—যিনি মানুষের সকল অশুভ ও অমঙ্গল নাশ করেন। তবে চণ্ডীর মঙ্গলচণ্ডী হয়ে ওঠা এক দিন বা এক যুগে হয়নি। এই বিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বৈদিক, প্রাক্-বৈদিক, তান্ত্রিক, পৌরাণিক ও লোকায়ত ঐতিহ্যের পারস্পরিক ক্রিয়া ও বিক্রিয়ার দীর্ঘ পর্ব।

এভাবে পৌরাণিক ধারা ও লোকায়ত ধারার মধ্য দিয়ে দেবী হয়ে উঠেছেন আমাদের পরিবারের অঙ্গ, আমাদের একান্ত কাছের মানুষ। দেবী ও মানবী ভাব মিশে আমাদের দেবীভাবনায় যুক্ত হয়েছে এক নতুন মাত্রা। অবশেষে হিন্দুর শক্তিভাবনায় দুটি নাম প্রধান স্থান লাভ করেছে দুর্গা ও কালী। এই দুই মায়ের মধ্যেই হিন্দুর ধর্মভাবনায় মাতৃরূপে ঈশ্বরের উপাসনা কেন্দ্রীভূত হয়েছে। আজ এই দুই দেবীর পূজাই ভারতবর্ষে, বিশেষত বঙ্গদেশে, হিন্দুদের সর্বাধিক জনপ্রিয় মাতৃপূজা।

স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ অধ্যক্ষ ও সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্লাস্টার খোলার পর গুরুত্ব ফিজিওথেরাপির
  • স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা-পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সন্তান না নেওয়া ভালো
  • অন্তঃসত্ত্বা নারীকে মারধরের অভিযোগ, নওগাঁয় ইউএনওর অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন
  • ধামইরহাটের ইউএনওর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ  
  • বিয়ের আগেই দুই সন্তানের মা, আলোচিত এই দক্ষিণি অভিনেত্রীকে কতটা চেনেন
  • ঢাকায় সর্বোচ্চ ২০৬ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড
  • গাজীপুরে নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানায় অভিযান
  • বিশেষ বিবেচনায় চবির হলে থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমালোচনা
  • আড়াইহাজারে পূজার নিরাপত্তায় ৩১ মন্ডপে রাতভর নির্ঘুম পরিদর্শন ইউএনও’র
  • মাতৃরূপে ঈশ্বরের উপাসনা