সোনালি আাঁশে তৈরি দুর্গ প্রতিমা নজর কাড়ছে সবার
Published: 28th, September 2025 GMT
নাটোর শহরের লালবাজার কদমতলা রবি সূতম সংঘের পূজা মণ্ডপে তৈরি করা হয়েছে ব্যতিক্রমী এক প্রতিমা। সোনালি আঁশ পাট ব্যবহার করে এই মণ্ডপে তৈরি করা হয়েছে দেবী দুর্গার প্রতিমা। যা এরই মধ্যে দর্শনার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিমাটি দেখতে আসতে শুরু করেছেন হিন্দুদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মের মানুষ। তারা এই শিল্পকর্মের প্রশংসা করেছেন।
লালবাজারের মৃৎশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল চার সদস্যের দল নিয়ে দুই মাস কাজ করেন প্রতিমা নির্মাণের। প্রতিমার কাঠামো তৈরির পর মাটির গায়ে সূক্ষ্মভাবে বসানো হয়েছে পাটের আঁশ। এ কাজে তিনি ব্যবহার করেছেন প্রায় ২০ কেজি পাট। দেবী দুর্গার পাশাপাশি লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর এবং সিংহ-সব চরিত্রেই পাটের বুননের শৈল্পিক ব্যবহার চোখে পড়ছে।
আরো পড়ুন:
কটিয়াদীতে জমে উঠেছে ৫০০ বছরের ঢাকের হাট
দুর্গোৎসব ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্কতা, সরকারের কঠোর নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি
মৃৎশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল বলেন, “আমরা বংশ পরম্পরায় প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। আয়োজকেরা প্রতিবছর নতুনত্ব চান। গত বছর ধানের আঁশ দিয়ে প্রতিমা বানিয়েছিলাম, এবার পাটের আঁশ দিয়েছি। কাজটা খুব সহজ নয়, চ্যালেঞ্জ নিয়েই শুরু করি। প্রায় দুই মাসের পরিশ্রমে পাটের প্রতিমাটি রূপ পেয়েছে। আশা করি, দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হবেন।”
রবি সূতম সংঘের সাধারণ সম্পাদক পার্থ রায় বলেন, “প্রতিবছরই আমরা ভক্তদের জন্য নতুনত্ব আনার চেষ্টা করি। ভক্তদের মনোযোগ আকর্ষণ করতেই এই উদ্যোগ। গত বছর ধানের তৈরি প্রতিমা দেশ-বিদেশে আলোড়ন তুলেছিল। এ বছরও আশা করছি, পাটের আঁশের প্রতিমা দর্শনার্থীদের আনন্দ দেবে।”
নাটোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট খগেন্দ্রনাথ রায় জানান, এ বছর জেলার ৩৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে, যা গত বছরের তুলনায় ১৪টি বেশি। প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী পূজা মণ্ডপে সার্বিক নিরাপত্তা দেবেন। প্রতিটি মণ্ডপ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।
তিনি বলেন, “নাটোর শান্তিপ্রিয় এলাকা। এখানে কখনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দুর্গাপূজা শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নয়, বরং সবার উৎসব।
পূজা উদযাপনে নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোরের পুলিশ সুপার মো.
নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন বলেন, “নাটোরের ৩৬৭টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবটি উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য ও হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে জেলা পর্যায়ে প্রস্তুতিমূলক মিটিং করা হয়েছে। পূর্ণ নিরাপত্তার সঙ্গে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে আজ রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) শুরু হলো বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। হিন্দু ধর্মমতে- শ্বশুরবাড়ি কৈলাস (স্বর্গলোক) থেকে কন্যারূপে দেবী দুর্গা বাপের বাড়ি বেড়াতে মর্ত্যলোকে আসছেন। এবার দেবী দুর্গা আসছেন গজে (হাতি) করে। তিনি বিদায় নেবেন দোলায় (পালকি)।
আজ সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটের আগে দুর্গাদেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা শুরু হয়েছে। সন্ধ্যায় হবে দুর্গাদেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস।
পুরাণে আছে, “অসুরশক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হয়েছিলেন। অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হন দেবতারা। অসুরশক্তির বিনাশে অনুভূত হলো এক মহাশক্তির আবির্ভাব। দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হলেন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা।’’
শারদীয় দুর্গাপূজার পুণ্যলগ্ন শুভ মহালয়া অনুষ্ঠিত হয় ২১ সেপ্টেম্বর। এর মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষ শুরু হয়।
ঢাকা/আরিফুল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রবীন্দ্রসরোবরে সুরে–ছন্দে জমজমাট নবান্ন উৎসব
অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব হলো রাজধানীতে। নাচ, গান, আবৃত্তি, আলোচনায় রোববার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে উদ্যাপন করা হলো ঋতুভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
হেমন্তের বেলা শেষে ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদ আয়োজিত নবান্ন উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর ছিল ফারহানা করিমের নেতৃত্বে সমবেত নৃত্য।
নবান্নকথনে অংশ নেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এহসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে অগ্রহায়ণে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল ওঠে। নতুন ধান তাঁদের জীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। নিয়ে আসে আনন্দ। তবে নবান্ন কেবল ফসলের আনন্দই নয়, আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি শক্তিশালী উপাদান। নাগরিক পরিবেশে ঋতুভিত্তিক এই উৎসবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বসন্ত, বর্ষা, শরৎসহ ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আয়োজন করা হবে।’
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও মঞ্চের চারপাশের স্থান বর্ণাঢ্যভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। এর সঙ্গে ছিল ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির স্টল।
আলোচনার পরে শুরু হয় গানের পালা। সাগর বাউল শুরু করেছিলেন ভবা পাগলার গান ‘বারে বারে আসা হবে না’ গেয়ে। এরপর তিনি পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে’ এবং রাধারমণ দত্তের গান ‘অবলারে কান্দাইয়া’। ঢোল, একতারার বাজনা, বাঁশির সুর আর লোকসাধকদের এসব মরমি গানে গানে সাগর বাউল শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন।
অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশনের কথা ছিল শিল্পী ফেরদৌস আরার। তবে তিনি অসুস্থতার জন্য সংগীত পরিবেশন করতে পারেননি। এই চমৎকার অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও শ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানান।
লোকশিল্পী আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মালা কার লাগিয়া গাঁথি’সহ বেশ কয়েকটি গান। গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল আবৃত্তি ও কবিদের কবিতা পাঠ। এই পর্বে অংশ নেন কবি রাসেল রায়হান, রিক্তা রিনি, সানাউল্লাহ সাগর, জব্বার আল নাইম, ইসমত শিল্পীসহ অনেকে।
সংগীতশিল্পীদের মধ্যে কোহিনূর আক্তার পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘তিন পাগলের হইল মেলা’। ডলি মণ্ডল পরিবেশন করেন ‘সব লোক কয় লালন কী জাত সংসারে’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদের সদস্যসচিব দীপান্ত রায়হান।
শীতের মৃদু পরশ লেগেছে রাজধানীর হাওয়ায়। হালকা কুয়াশাও জমছে আকাশে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে সুরে-ছন্দে বেশ খানিকটা রাত অবধি জমজমাট হয়ে উঠেছিল এই নাগরিক নবান্ন উৎসব।