বৃদ্ধাশ্রমে মলিন পূজা, উৎসবের গল্পে শুধুই স্মৃতি
Published: 29th, September 2025 GMT
শরতের স্নিগ্ধ সুন্দর শিউলি বিছানো গালিচায় শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে দেবী বোধনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সূচনা হয়েছে রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর)। চারিদিকে এখন উৎসবের আমেজ। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের পরিবার নিয়ে যাচ্ছেন প্রতিটি মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী দুর্গার দর্শন পেতে। করছেন আগামী দিনে শান্তিতে ও সমৃদ্ধপূর্ণ জীবন কামনায় প্রার্থনা। এর মধ্যে হাসি নেই কিছু মানুষের মধ্যে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন তারা বৃদ্ধাশ্রমে কাটাচ্ছেন একাকী জীবন।
জীবন সায়াহ্নে যাদের নাতি-নাতনী আর ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটানোর কথা, তাদের ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। তাদের কাছে পূজার উৎসব মলিন। উৎসবের গল্পে শুধুই স্মৃতির ভিড়।
আরো পড়ুন:
আখাউড়া স্থলবন্দরে ৪ দিনের ছুটি শুরু
নাটোরে ২০ কেজি সোনালি পাটের বুননে তৈরি প্রতিমা
তারা নিজেদের সোনালি অতীতের নানা স্মৃতির কথা জানিয়ে হেসেছেন, কেঁদেছেন। চোখ থেকে পড়া অশ্রু মুছেছেন শাড়ির আঁচলে। সুখের স্মৃতিতে ডুব দিয়ে তারা কাটিয়ে দিতে চান পূজার কয়েকটা দিন।
গাজীপুর সদর উপজেলার মনিপুরের বিশিয়া কুড়িবাড়ী গিভেন্সি গ্রুপের বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে (বৃদ্ধাশ্রম) ঠাঁই হয়েছে ১৩১ জনের। সেখানে ১২ জন সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রবীণ রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জন নারী ও তিনজন পুরুষ। তাদের কাছে সব থেকেও না থাকার বেদনা চেপে ধরেছে।
এই প্রবীণরা বৃদ্ধাশ্রমকেই নতুন সংসার মেনে নিয়েছেন। এখানকার মতো করেই পূজ উদযাপন করতেই তারা অভ্যস্ত। বাড়ি ফেরার স্বপ্ন দেখা তাদের কাছে স্বপ্নই রয়ে যায়।
সরেজমিনে কথা হলে তারা জানান, বাড়িতে ধুমধাম করে দুর্গাপুজা হতো। তখন কত ব্যস্ততা। বাড়িঘর পরিষ্কার করা, অতিথিদের আসা-যাওয়া, পূজার সাজগোজ, বান্ধবীদের সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরাঘুরি, প্রসাদ খাওয়া সেই স্মৃতিগুলো বর্ণনা করেন তারা।
তারা জানান, বৃদ্ধাশ্রমে থেকেই উপভোগ করবেন শারদীয় উৎসব। প্রতিবছরই পূজা দেখতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানের গাড়িতে শারীরিক সক্ষম ব্যক্তিরা যান দেবী দুর্গার দর্শন পেতে। শুধুমাত্র পরিবারের সঙ্গে পূজা করতে না পারার আক্ষেপটাই রয়ে যায় সবার মধ্যে।
বৃদ্ধা আশ্রমের বাসিন্দা অনিমা চৌধুরী বলেন, “বাড়ির দুর্গা পূজায় কত আনন্দ হইতো। মোসলমানরাও আইতো। সবাই দেখতো, খানা খাইতো। কত আনন্দের সেই দিনগুলো আর ফিরে আসবে না। ছোটবেলার আনন্দ মনে করে অনুতাপ করে লাভ নেই। প্রতিমা দেখতে গেছি, প্রসাদ খেয়েছি। কত সাজগোজ, মনে হলেই খারাপ লাগে। আগে কি দিনগুলো ছিল, অথচ এখন এখানে এতিমের মতো পড়ে রয়েছি। মন খারাপ হয় কিন্তু কাউকে বলতে পারি না।”
মুন্সিগঞ্জের হরিসাধন দে পূজার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “পূজায় চান্দা দেওয়া, তোলা, হৈ-হুল্লোড় এসব খুব মনে পড়ে। সেই আনন্দ কি এখন পাওয়া সম্ভব। এখন সেগুলো শুধুই স্মৃতি।”
সচেতন মহল বলছেন, একজন মা হয়তো সারাজীবন সন্তানদের লালন-পালন করে বড় করেছেন, কিন্তু বয়সের ভারে যখন তিনি অসহায় হয়ে পড়লেন, তখন তার জায়গা হলো বৃদ্ধাশ্রমে। বাবাদের গল্পও আলাদা নয়, যারা একসময় পরিবারের স্তম্ভ ছিলেন, আজ তারা যেন সেই পরিবারের বোঝা হয়ে গেছেন। যখন তাদের নিরুপদ্রব এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনের আশা তখন তাদের স্থান বৃদ্ধাশ্রমে। কোন মা-বাবার স্থান বৃদ্ধাশ্রমে না হোক, অন্তত উৎসবের দিনগুলোতে পরিবারের সঙ্গে কাটুক তাদের।
গিভেন্সি গ্রুপের বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের সহকারী হোস্টেল সুপার মীম আক্তার সুমা বলেন, “প্রতিটি বৃদ্ধাশ্রমে অসংখ্য গল্প লুকিয়ে থাকে। কেউ কেউ স্বেচ্ছায়, তবে বেশিরভাগই পরিস্থিতির শিকার হয়ে এখানে এসেছেন। অনেকেই সন্তানদের অবহেলার শিকার। আমাদের এখানে পূজায় নতুন পোশাক দেওয়া হয়। দশমির দিনে গাড়িতে বিভিন্ন মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হয় পূজা দেখাতে। ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।”
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উৎসব পর ব র র উৎসব র আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
রবীন্দ্রসরোবরে সুরে–ছন্দে জমজমাট নবান্ন উৎসব
অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব হলো রাজধানীতে। নাচ, গান, আবৃত্তি, আলোচনায় রোববার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে উদ্যাপন করা হলো ঋতুভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
হেমন্তের বেলা শেষে ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদ আয়োজিত নবান্ন উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর ছিল ফারহানা করিমের নেতৃত্বে সমবেত নৃত্য।
নবান্নকথনে অংশ নেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এহসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে অগ্রহায়ণে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল ওঠে। নতুন ধান তাঁদের জীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। নিয়ে আসে আনন্দ। তবে নবান্ন কেবল ফসলের আনন্দই নয়, আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি শক্তিশালী উপাদান। নাগরিক পরিবেশে ঋতুভিত্তিক এই উৎসবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বসন্ত, বর্ষা, শরৎসহ ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আয়োজন করা হবে।’
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও মঞ্চের চারপাশের স্থান বর্ণাঢ্যভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। এর সঙ্গে ছিল ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির স্টল।
আলোচনার পরে শুরু হয় গানের পালা। সাগর বাউল শুরু করেছিলেন ভবা পাগলার গান ‘বারে বারে আসা হবে না’ গেয়ে। এরপর তিনি পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে’ এবং রাধারমণ দত্তের গান ‘অবলারে কান্দাইয়া’। ঢোল, একতারার বাজনা, বাঁশির সুর আর লোকসাধকদের এসব মরমি গানে গানে সাগর বাউল শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন।
অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশনের কথা ছিল শিল্পী ফেরদৌস আরার। তবে তিনি অসুস্থতার জন্য সংগীত পরিবেশন করতে পারেননি। এই চমৎকার অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও শ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানান।
লোকশিল্পী আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মালা কার লাগিয়া গাঁথি’সহ বেশ কয়েকটি গান। গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল আবৃত্তি ও কবিদের কবিতা পাঠ। এই পর্বে অংশ নেন কবি রাসেল রায়হান, রিক্তা রিনি, সানাউল্লাহ সাগর, জব্বার আল নাইম, ইসমত শিল্পীসহ অনেকে।
সংগীতশিল্পীদের মধ্যে কোহিনূর আক্তার পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘তিন পাগলের হইল মেলা’। ডলি মণ্ডল পরিবেশন করেন ‘সব লোক কয় লালন কী জাত সংসারে’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদের সদস্যসচিব দীপান্ত রায়হান।
শীতের মৃদু পরশ লেগেছে রাজধানীর হাওয়ায়। হালকা কুয়াশাও জমছে আকাশে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে সুরে-ছন্দে বেশ খানিকটা রাত অবধি জমজমাট হয়ে উঠেছিল এই নাগরিক নবান্ন উৎসব।