মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিতাড়নের পর দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের গ্রাম ও মসজিদ ধ্বংস করেছে। রোহিঙ্গাদের জায়গা দখল করে সেখানে নিরাপত্তাচৌকি তৈরি করেছে তারা। জাতিসংঘের উদ্যোগে পরিচালিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। আজ সোমবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

রাখাইনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চৌকিতে হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী দমন অভিযান শুরু করলে ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক সহিংসতা হয়। উপকূলীয় রাজ্যটি থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।

এর পর থেকে বাংলাদেশের জনাকীর্ণ শরণার্থীশিবিরগুলোতে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই দমন অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনের আদর্শ উদাহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০১৮ সালে গঠিত ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমারের (আইআইএমএম) ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের গ্রাম, মসজিদ, কবরস্থান ও কৃষিজমি ধ্বংস করেছে। তারা সরকারি নথির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জমির অধিকার ও মালিকানা সম্পর্কে অবগত ছিল।’

প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য ও স্যাটেলাইট ছবি

ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মিয়ানমারে ২০১১ সাল থেকে সংঘটিত গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধ সম্পর্কে অনুসন্ধান চালানোর জন্য ২০১৮ সালে আইআইএমএম গঠন করে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ।

প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য, স্যাটেলাইট ছবি, ভিডিও ফুটেজ ও সরকারি নথির ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে আইআইএমএম। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্রের কাছে প্রতিবেদনটি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চেয়েছিল রয়টার্স। তবে তিনি তাতে সাড়া দেননি।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এর আগে বলেছিল, ২০১৭ সালের অভিযানে তারা রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালায়নি। তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আগের দিন এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের শরণার্থীশিবিরে ক্রমবর্ধমান সংকট এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়ার অচলাবস্থা নিয়ে আলোচনা হবে।

আইআইএমএমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যন্ত্রপাতি ও শ্রমিক সরবরাহ করার মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে ইন দিন গ্রামের কথা বলা হয়েছে। সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নতুন স্থাপনা তৈরি করতে বসতি ধ্বংস করেছে। ২০১৮ সালে গ্রামটিতে ১০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যার খবর প্রকাশ করেছিল রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইন দিনের মতো গ্রামগুলোতে ধ্বংসাবশেষের ওপর ঘাঁটি গড়ে তোলা হয়। সেখানে জমি খালি করে সেসব জায়গায় নতুন সড়ক, স্থায়ী ভবন, সুরক্ষিত কম্পাউন্ড ও দুটি হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়।’

অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী নোবেলজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। এরপর শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।

বর্তমানে রাখাইন রাজ্যে সংঘাত তীব্র হওয়ায় রোহিঙ্গারা আবারও সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুত হওয়ার হুমকির মুখে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু এই সম্প্রদায়ের কিছু সদস্য অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব স কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

টানা তৃতীয়বার বিশ্বকাপ না খেলার শঙ্কায় ইতালি, ২৮ বছর পর নরওয়েকে বিশ্বকাপে ফেরালেন হলান্ড

সরাসরি বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে নরওয়ের বিপক্ষে গতকাল রোববার রাতে ইতালিকে জিততে হতো বড় ব্যবধানে। কিন্তু বড় ব্যবধানে দূরে থাক, উল্টো নরওয়ের বিপক্ষে পাত্তাই পায়নি ইতালি। ঘরের মাঠে উড়ে গেছে ৪-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে।

এই হারের পর ইতালির এখন আর সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ নেই। প্লে-অফের পরীক্ষায় পাস করতে হবে। অন্য দিকে বাছাইপর্বে অবিশ্বাস্য নৈপুণ্য দেখিয়ে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে ফিরল নরওয়ে। এর আগে সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ খেলেছিল দেশটি। এবার আর্লিং হলান্ড-আলেক্সান্দার সরলথদের হাত ধরে বিশ্বকাপে ফেরার স্বপ্ন পূরণ করল দেশটি।

সান সিরোতে গতকাল গোলের শুরুটা অবশ্য ইতালিই করেছিল। ফ্রান্সিসকো পিও এসপোসিতোর গোলে ১১ মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। এরপর ম্যাচের ৬৩ মিনিট পর্যন্ত এই ব্যবধান ধরে রাখতে পারে ‘আজ্জুরি’রা। কিন্তু ৬৩ মিনিট থেকে দেখা মেলে অন্য এক নরওয়ের। প্রথমে গোল করে নরওয়েকে সমতায় ফেরান আন্তোনিও নুসা। এরপর এক মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করেন হলান্ড। আর যোগ করা সময়ে ইতালির জালে চতুর্থবার বল জড়ান স্ট্রান্ড লারসেন।

আরও পড়ুনহলান্ড এখন মেসি–রোনালদোর পর্যায়ে০৩ নভেম্বর ২০২৫

এই ম্যাচ দিয়ে শেষ হয়েছে গ্রুপ ‘আই’-এর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের লড়াই। যেখানে ৮ ম্যাচের সব কটিতে জিতে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকল নরওয়ে। সমান ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ইতালি আছে দুইয়ে।

এর ফলে ২০১৮ ও ২০২২–এর পর এখন ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিয়েও শঙ্কায় পড়ল ইতালি। চারবারের বিশ্বকাপজয়ীদের প্লে-অফ অভিজ্ঞতাও কিন্তু সুখকর নয়। ২০১৮ বিশ্বকাপে ওঠার লড়াইয়ে প্লে-অফে তারা সুইডেনের বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ১-০ ব্যবধানে হেরেছিল। চার বছর পর ২০২২ বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নও ভেঙে যায় প্লে-অফে উত্তর মেসিডোনিয়ার কাছে ১-০ গোলের হারে।

হলান্ডদের উদ্‌যাপন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টানা তৃতীয়বার বিশ্বকাপ না খেলার শঙ্কায় ইতালি, ২৮ বছর পর নরওয়েকে বিশ্বকাপে ফেরালেন হলান্ড
  • ইমরান খানকে ‘শান্তির জন্য বড় হুমকি’ বলে মন্তব্য করেছিলেন জেফরি এপস্টেইন