‘দশ মাস দশ দিন যন্ত্রণার ফল কি? আজ বৃদ্ধাশ্রম! এক মাকে পুজো করো, আর এক মাকে ঘর থেকে বের করো?’- মণ্ডপে ঢুকতে গেলেই এক বৃদ্ধার ছবির সঙ্গে লেখাগুলো চোখে পড়বে। মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর এমন প্রতিবাদী লেখা রাজশাহীর গণকপাড়ার শ্রী শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ দেব বিগ্রহ ঠাকুর মন্দিরে মা দুর্গাকে পূজা দিতে যাওয়া অনেকেরই হৃদয় নাড়িয়ে দিচ্ছে।

শুধু কি তাই? পুরো মণ্ডপটিই সাজানো হয়েছে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার থিমে। মণ্ডপের ওপরের দিকে চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে, সিঁড়িতে শাড়ির আঁচল ছড়িয়ে উপরে উঠছেন এক নারী। এক পাশে লেখা, ‘সুনিশ্চিত হোক নারীর নিরাপত্তা, থেমে না যাক তাদের স্বপ্নযাত্রা।’ আরেক পাশে লেখা, ‘গ্রাম থেকে শহর প্রতিটি পথে নিরাপদ চলুক নারী দিন-রাতে।’

আরো পড়ুন:

আজ থেকে টানা ৪ দিনের ছুটি শুরু

আজ মহানবমী, ১০৮টি নীলপদ্মে পূজা হবে দেবী দুর্গার

আরো পড়ুন: বৃদ্ধাশ্রমে মলিন পূজা, উৎসবের গল্পে শুধুই স্মৃতি 

শৈল্পিক ছোঁয়ায় সাজানো প্যান্ডেলের দেয়ালজুড়ে লেখা কবিতা ও স্লোগানগুলো দর্শকদের আবেগ নাড়িয়ে দিয়েছে। যেমন- একটি ভ্রুণের ছবির পাশে লেখা, ‘আসতে দাও পৃথিবীতে, করছো কেন খুন? আমার দোষ কি শুধুমাত্র আমি কন্যাভ্রূণ?’ অথবা ‘ফিনফিনে কাপড়ের ভাঁজে খুঁজে ফেরো নারী। কখনও মানুষ ভেবে সুযোগ দিও! দেখবে, আমরাও পারি।’

দর্শনার্থীরা দেবী দুর্গাকে দেখতে গিয়ে লেখাগুলো পড়ছেন, আর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভাবছেন।

মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক পাপন চন্দ্র রায় বলেন, “দুর্গোৎসব শুধু আনন্দের উৎসব নয়, এটি সচেতনতার মঞ্চও হতে পারে। আমাদের উদ্দেশ্য প্রতিবাদ নয়, বরং নারীর সংগ্রামী জীবনকে উৎসবের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা। এবার আমাদের মণ্ডপের থিমে সেটা এসেছে।”

রাজশাহীর রানীবাজারের টাইগার সংঘও প্রতিবছর নানা থিমে মণ্ডপ সাজিয়ে থাকে। এবার ৪৪তম আয়োজনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মণ্ডপটির ওপরের অংশে দেখা যাচ্ছে, খাঁচা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে একটি সাদা কবুতর। এবার প্রথমবারের মতো থিমের বক্তব্য পাশে ফেস্টুনে লিখে রাখা হয়েছে।

সেখানে লেখা, ‘এই সময়ের অস্থির ও বিভ্রান্তিকর পৃথিবীতে আমরা একটি সরল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে চেয়েছি- ‘শান্তিই শেষ সত্য’। 

মণ্ডপের সাজসজ্জার মধ্যে আমরা তুলে ধরেছি, কীভাবে মানুষ আজ বিভ্রান্ত। আমরা সবাই যেন অলতি স্বপ্ন, কৃত্রিম আকাঙ্খা ও মোহ-মায়ার ঘেরাটোপে বন্দী। এই খাঁচা ভেঙে আসে মুক্তির প্রতীক- এক সত্যের পায়রা, যে উড়ে যায় শান্তির দিকে। এই মণ্ডপ শুধু একটি শিল্পকলা নয়, একটি প্রতীক। স্বপ্নের নামে বিকৃত মায়ার মোহ থেকে জেগে ওঠার আহ্বান।

আরো লেখা আছে, ‘একটি নীরব বিপ্লব, যেখানে যুদ্ধ নয় শান্তির জয়। চমক নয়, চেতনার আরাধনা। অস্থির নয়, আশার পূজো।’ শহরে আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা এ মণ্ডপে সবাই গিয়ে তা পড়ছেন।

মণ্ডপের থিমের ব্যাখা দিলেন টাইগার সংঘের সাধারণ সম্পাদক পার্থ পাল চৌধুরী। বললেন, “সার্বিক পরিস্থিতিতে শান্তির বিকল্প নেই। আমরা খাঁচায় বন্দী। রাজনৈতিক দল এসে বলছে, তারা পাহারা দেবে। নিরাপত্তা দিতে পুলিশ এসে বসে থাকছে। এমন পাহারাদার আমরা চাই না। খাঁচা থেকে পায়রাটি যেভাবে উড়ে যাচ্ছে, সেরকম মুক্তভাবে আমরা আমাদের উৎসব পালন করতে চাই। সব ধর্মের উৎসবের সময়ই তেমন হওয়া দরকার।”

পার্থ পাল চৌধুরী তার কথায় নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা উদ্বেগের পাশাপাশি এর জন্য বাড়তি তোড়জোড় নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করলেন। 

অস্বস্তির কিছুই নেই বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে তিনি টাইগার সংঘের এই মণ্ডপটি পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “সবকিছু সুন্দরভাবেই হচ্ছে।”

সকালে মণ্ডপটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমারও। তিনিও সার্বিক পরিস্থিতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উৎসব

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দরের লৌহিয়া খালটি দখল উৎসবে চলছে

বন্দরের ঐতিহ্যবাহী লৌহিয়া খালটি দখল উৎসবে মেতে উঠেছে চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। যে খাল দিয়ে এক সময় শীতলক্ষা-বহ্মপুত্র নদীতে সংযোগ ছিল।

সেই ঐতিহ্যবাহী খালটি অবৈধভাবে দখল করে পাঁকা স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস, ব্যাটারি ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেছে ওই সকল ভূমিদস্যুরা।

খালটি দখল হয়ে যাওয়ার কারনে পয়নিষ্কাশনসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয়রা। বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে উল্লেখিত খাল দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা ।

এলাকাবাসী ও বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা গেছে,  বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও  সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এম এ রশিদ ও সানাউল্লাহ সানু এবং বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিনের মদদপুষ্ট হয়ে আদর্শ বিদ্যানিকেতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে গিয়ে খাল দখল করে রাস্তা বানিয়েছে।  

তেমনি ভাবে গার্মেন্টস, ব্যাটারি ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে  পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া  খালটি ভরাট করার কারনে  বন্দর ইউনিয়নের ৯ নং ওর্য়াডের কদমতলীসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ড্রেজার দিয়ে ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমি ভরাট করতে গিয়ে সরকারি খাল দখল করে নিয়েছে। দেখার যেন কেউ নেই।

বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত হোসেন সৈকত জানান,  এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে  একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। 

এ ব্যাপারে বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রভাবশালী মহল ও ভূমিদস্যুদের কর্তৃক দখলকৃত খালটি উদ্ধার করে পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা  করেছে ভূক্তভোগী এলাকাবাসী।  
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে দুর্গোৎসব: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
  • দেবী দুর্গার বিদায়ের সুরে রাজশাহীতে প্রতিমা বিসর্জন
  • ঢাকঢোল বাজিয়ে চট্টগ্রামে প্রতিমা বিসর্জন, বৈরী আবহাওয়ায়ও মানুষের ঢল
  • অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির জয় হোক: হাওলাদার
  • দর্পণ বিসর্জন: মণ্ডপে মণ্ডপে বিদায়ের সুর
  • উৎসবের আনন্দে ভরা পূজার মেলা
  • বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই পর্যটকের ঢল, বিকেলে প্রতিমা বিসর্জন উৎসব
  • বিজয়া দশমীতে আজ শেষ হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব
  • ড. ইউনূসকে অসুর রূপে উপস্থাপন নিন্দনীয়: উপদেষ্টা 
  • বন্দরের লৌহিয়া খালটি দখল উৎসবে চলছে