বাজারে এখনো কদর ইনস্ট্যান্ট কফির
Published: 1st, October 2025 GMT
দুই দশক আগে বাংলাদেশে কফির বাজারে একচেটিয়া ছিল ইনস্ট্যান্ট কফি। ধীরে ধীরে কফি বিন আমদানিও শুরু হয়। কফি বিন ভেঙে কফি তৈরির নতুন নতুন স্বাদ নিতে শুরু করেন কফিপ্রেমীরা। তবে দুই দশক পরও দেশের বাজারে ইনস্ট্যান্ট কফির কদর কমেনি। এখনো এই বাজারের ৮৩ শতাংশই ইনস্ট্যান্ট কফির দখলে।
এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর্মব্যস্ততার কারণে বাসা–অফিসে কফি বিন ভেঙে কফি তৈরির সময় নেই অনেকের। এ জন্য গরম পানিতে ইনস্ট্যান্ট কফি দিয়ে খুব দ্রুত কফির স্বাদ নিতে চান কফিপ্রেমীরা। এ কারণে ইনস্ট্যান্ট কফির কদর সে অর্থে কমেনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, দুই দশক আগে ২০০৫–০৬ অর্থবছরে মোট কফি আমদানির প্রায় ৯৮ শতাংশ ছিল ইনস্ট্যান্ট কফি। কফি বিন আমদানি ছিল ২ শতাংশ। দুই দশক পর গত অর্থবছরে মোট আমদানির ৮৩ শতাংশ ইনস্ট্যান্ট কফি আমদানি হয়। কফি বিন আমদানি হয় ১৭ শতাংশ।
যাদের হাতে কফির বাজার
প্রায় ২৭ বছর আগে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কফি বাজারজাত শুরু করেছিল নেস্লে। এরপর আরও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কফি এনে বাজারজাত শুরু করে বাংলাদেশে। দুই দশক ধরে সিংহভাগ বাজার ছিল নেস্লের হাতে। তবে তরুণদের খাদ্যাভ্যাসে যুক্ত হতে থাকায় কফির বাজারে নজর দেন দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তারা। ফলে এই বাজারে এখন তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। তাতে কারও বাজার অংশীদারি কমছে, কারও বাড়ছে।
বাংলাদেশে কফি উৎপাদিত হলেও তা খুবই কম। ফলে কার কত আমদানি তা দিয়ে বাজার অংশীদারত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, গত অর্থবছরেও কফির বাজারে নেস্লে ছিল শীর্ষে। তবে আমদানিতে শীর্ষে থাকলেও বাজার অংশীদারত্ব কমছে বহুজাতিক কোম্পানিটির। যেমন ২৪–২৫ অর্থবছরে নেস্লে বাংলাদেশ পিএলসি আমদানি করেছে ৩ লাখ ৭২ হাজার কেজি কফি। মোট আমদানির ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ বাজারজাত হয়েছে নেস্লের হাত ধরে। ২৩–২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটির বাজার অংশীদারি ছিল ৪৭ শতাংশ।
কফির বাজারে আবুল খায়ের গ্রুপ অনেকটা নতুন। মাত্র পাঁচ বছর আগে গ্রুপটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিমিটেড কফি বাজারজাত শুরু করে। তবে তাদের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। যেমন ২৩–২৪ অর্থবছরে গ্রুপটির বাজার অংশীদারি ছিল ১১ শতাংশ। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে গত অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এ সময়ে গ্রুপটি আমদানি করেছে ৩ লাখ ৬৭ হাজার কেজি কফি। আবুল খায়ের গ্রুপ ‘আমা’ ব্র্যান্ডে ইনস্ট্যান্ট কফি বাজারজাত করছে।
কফি আমদানিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নর্থএন্ড প্রাইভেট লিমিটেড। তাদেরও বাজার অংশীদারত্ব বাড়ছে। কোম্পানিটি ২৩–২৪ অর্থবছরে বাজার অংশীদারি ছিল ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। নর্থএন্ড মূলত কফি বিন আমদানি করে।
কফি আমদানিতে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে প্রাণ–আরএফএল। খাদ্যপণ্য বিপণন ও উৎপাদনকারী প্রাণ গ্রুপ ২০১৭ সাল থেকে মূলত কফি বড় আকারে বাজারজাত করতে থাকে। গত অর্থবছরে তাদের বাজার অংশীদারি ছিল সাড়ে ৬ শতাংশ, যা এক বছর আগের তুলনায় কিছুটা কম।
শহরে কফি জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে নাভানা ফুডসের গ্লোরিয়া জিনসের অবদান আছে। তারা কফি বিনও বিক্রি করছে। গত অর্থবছরে তারা ৩ হাজার ৩৩৯ কেজি রোস্টেড কফি বিন আমদানি করেছে।
বাজারে ৪৩ দেশের কফি
বাংলাদেশে কফির বাজারের আকার এখনো ছোট। তবে ছোট বাজারে কফি আসছে ৪৩ দেশ থেকে। উড়োজাহাজে, জাহাজে এবং স্থলবন্দর দিয়ে ট্রাকে করে আমদানি হচ্ছে কফি। সবচেয়ে বেশি আসছে ভারত, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও কলম্বিয়া থেকে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসেবে, বিশ্বে কফি উৎপাদনে ভারতের অবস্থান নবম। এনবিআরের হিসেবে বাংলাদেশে মোট কফির ৬৭ শতাংশই আসছে ভারত থেকে। ভারত থেকে আমদানিতে খরচ কম পড়ে। ফলে দেশটি থেকে কফি আমদানি বেশি। স্থল ও সমুদ্রপথে দেশটি থেকে কফি আমদানি হচ্ছে।
কফি আমদানিতে দ্বিতীয় উৎস দেশ ব্রাজিল। দেশটি থেকে আসছে মোট কফির ৬ শতাংশ। বিশ্বে কফি উৎপাদনে শীর্ষ দেশ ব্রাজিল। মালয়েশিয়া থেকে আসছে ৫ শতাংশ। বিশ্বে কফি উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়া থেকেও আসছে প্রায় ৫ শতাংশ। বিশ্বে কফি উৎপাদনে চতুর্থ অবস্থানে থাকা কলম্বিয়া থেকে কফি আমদানি হচ্ছে বাংলাদেশে। গত অর্থবছরে দেশটি থেকে ৩ শতাংশ কফি আমদানি হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন আমদ ন অবস থ ন দ ই দশক আমদ ন ত উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।
এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।
আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।
এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।
এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।