‘স্তন ক্যানসার এমন একটি রোগ, যা স্তনের কোষ থেকে শুরু হয়, বিশেষ করে মিল্ক ডাক্টস বা লোবিউল থেকে হয়। ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে এটি “ইনভেসিভ ডাক্টাল কার্সিনোমা” হিসেবে দেখা যায়। এ ছাড়া লোবুলার কার্সিনোমা, মিউসিনাস কার্সিনোমা, মেডুলারি কার্সিনোমা ও স্ট্রোমাল টিস্যু থেকেও ক্যানসার হতে পারে। এর মূল কারণ হলো ডিএনএ মিউটেশন, যা জেনেটিক, অনিয়ন্ত্রিত লাইফস্টাইল, এনভায়রনমেন্টাল এক্সপোজার ও বয়সজনিত।’

কথাগুলো বলেন ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও উপদেষ্টা ডা.

পারভিন আখতার বানু।

স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস অক্টোবর। এ উপলক্ষে গত সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এসকেএফ অনকোলজি আয়োজন করে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার-চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা। নাসিহা তাহসিনের উপস্থাপনায় এতে অতিথি হিসেবে ছিলেন ডা. পারভিন আখতার বানু। তিনি বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা, রোগনির্ণয়, ডায়াগনসিস ও চিকিৎসাসুবিধা বিষয়ে কথা বলেন। পর্বটি সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।

শুরুতেই উপস্থাপক জানান, ক্যানসারকে অনেকেই ‘মডার্ন ডে ডিজিজ’ বলে। বিশ্বে প্রতি আটজন নারীর মধ্যে একজনের স্তন ক্যানসার শনাক্ত হয়। তবে নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও স্তন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই স্তন ক্যানসারকে শুধু নারীর রোগ হিসেবে ভাবার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশের স্তন ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি এবং নারীদের মধ্যে এর প্রকোপ সম্পর্কে ডা. পারভিন আখতার বানু বলেন, ‘বাংলাদেশে এটি “সিগনিফিকেন্ট হেলথ হ্যাজার্ড”। প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে এতে প্রায় ২২.৫ জন আক্রান্ত হন। আমাদের দেশে দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক কম বয়সে, অর্থাৎ ১৫ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যেই প্রায় ১৯.৫ শতাংশ কেস ডায়াগনসিস হয়। এর মৃত্যুহারও অনেক বেশি—প্রায় ৬৫ শতাংশ। এর কারণ দেরিতে শনাক্তকরণ।’

স্তন ক্যানসারের প্রধান ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে ডা. পারভিন আখতার বানু বলেন, ‘প্রধান ঝুঁকির কারণগুলো হলো শারীরিক কর্মকাণ্ড কম করা, স্থূলতা বৃদ্ধি, অধিক মাত্রায় ফাস্ট ফুড গ্রহণ, হরমোন ও টক্সিক কেমিক্যালযুক্ত খাবার গ্রহণ, নারীদের মেনোপজের পর হরমোনাল ফ্যাক্টরের কারণে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ব্যবহার করা, ব্রেস্টফিডিং না করানো, দেরিতে গর্ভধারণ, ফ্যামিলি হিস্ট্রি, বিআরসিএ১/২ জিন মিউটেশন এবং ভিটামিন ডির ঘাটতি ইত্যাদি।’

স্তন ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো কী এবং কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত? উপস্থাপকের প্রশ্নের উত্তরে ডা. পারভিন আখতার বানু বলেন, ‘প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে রয়েছে স্তনে চাকা বা লাম্প হওয়া, স্তনের সাইজ বা আকারের পরিবর্তন, নিপল ডেবে যাওয়া বা নিপল থেকে দুধ ছাড়া কিছু বের হওয়া, ব্রেস্টের চামড়ায় টান পড়া, কুঁচকে যাওয়া, বগলের নিচে লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া এবং অস্বাভাবিক ব্যথা করা। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।’

সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন এবং এটির পদ্ধতি প্রসঙ্গে ডা. পারভিন আখতার বানু বলেন, ‘এটি সহজ, কিন্তু স্তন ক্যানসার শনাক্তে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন ২০ বছর বয়স থেকেই শুরু করা উচিত। সাধারণত মাসিক শেষ হওয়ার ৫ থকে ৭ দিন পর করাটা উপযুক্ত। গোসলের সময় বা পিঠের নিচে বালিশ রেখে শুয়ে তিনটি আঙুলের প্যাড দিয়ে চক্রাকারে পুরো ব্রেস্ট ও বগল পরীক্ষা করতে হবে। এ সময় লক্ষ রাখতে হবে অস্বাভাবিক লাম্প, চাকা, নিপল ডিসচার্জ, স্কিন চেঞ্জ ইত্যাদি হচ্ছে কি না।’

প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপক জানান, এসকেএফ অনকোলজি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ইউজিএমপি ও অ্যানভিজা ব্রাজিল অনুমোদিত প্ল্যান্ট। ফলে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ২৭টি দেশে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া এসকেএফ অনকোলজির সারা দেশে রয়েছে ৩৩টি সেবাকেন্দ্র, যার মাধ্যমে ক্যানসারের ওষুধ পাওয়া যায়। শুধু তা-ই নয়, ঘরে বসে অর্ডার করলেই বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে সহজেই পৌঁছে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা, রোগনির্ণয়, ডায়াগনসিস ও চিকিৎসাসুবিধা বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. পারভিন আখতার বানু

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

তদন্ত ছাড়াই সাংবাদিককে মামলায় জড়ালো পুলিশ

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কটকস্থল এলাকায় জমি বিরোধের জেরে দুইপক্ষের দ্বন্ধের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে চাঁদাবাজি মামলার আসামি হয়েছেন মোল্লা ফারুক হাসান নামে এক সাংবাদিক।

তবে থানা পুলিশ অভিযোগের তদন্ত না করেই মামলাটি এজাহারভূক্ত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

আরো পড়ুন:

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতিকে নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ

‘সিভিক ডিফেন্ডারস অব বাংলাদেশ’ ওয়েব পোর্টাল উদ্বোধন

ভুক্তভোগী মোল্লা ফারুক হাসান গৌরনদী প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকা এবং সময়ের কন্ঠস্বর অনলাইন নিউজ পোর্টালের স্থানীয় প্রতিনিধি।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে ভুক্তভোগী মোল্লা ফারুক হাসান অভিযোগ করে বলেন, “গত কয়েকদিন আগে কটকস্থল বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন আরিফ ফিলিং স্টেশনের সামনে স্থানীয় হারুন-অর রশিদ বেপারী ও মো. হিরা মাঝি গংদের মধ্যে উত্তেজনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন থানা পুলিশ। এরপর সেখানে আমি সংবাদ সংগ্রহের জন্য যাই। পরবর্তীতে পুরো ঘটনা নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।”

তিনি বলেন, “ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হারুন-অর রশিদ বেপারী তার প্রতিপক্ষ মো. হিরা মাঝিসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সংবাদ প্রকাশের জেরে ওই অভিযোগের মধ্যে আমার নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারনে থানা পুলিশ ওই অভিযোগের কোনো তদন্ত না করেই আমাকে আসামি করে ফিলিং স্টেশনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির লিখিত অভিযোগটি মামলা হিসেবে এজাহারভূক্ত করেন।”

তিনি আরো বলেন, “যেখানে সাধারণত হুমকি-ধামকির বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে আগে তদন্ত প্রসঙ্গটি উত্থাপণ করে থানা পুলিশ। সেখানে ঘটনার সময় থানা পুলিশ ওই ফিলিং স্টেশনে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও মনগড়াভাবে হামলা, ভাঙচুর ও চাঁদা দাবির লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তদন্ত ছাড়া তড়িঘড়ি করে আমাকে জড়িয়ে মামলা দায়ের হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ রহস্যজনক।” মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে তিনি (সাংবাদিক) সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে মামলার বাদি হারুন-অর রশিদ বেপারীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সাংবাদিককে আসামি করার বিষয়ে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “একটা মামলা হয়েছে। এখন তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরনদী সার্কেল) শারমিন সুলতানা রাখি বলেন, “পেট্রোল পাম্প নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষ সংবাদকর্মীদের দিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে এবং গৌরনদী থানার ওসির বিরুদ্ধে মিথ্যা মনগড়া সংবাদ প্রকাশিত করিয়েছে। একটি পক্ষ ওই ঘটনা নিয়ে প্রথমে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটির এজাহার দায়ের করা হয়।”

তিনি বলেন, “তদন্ত করার আগেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসার কারণে মামলাটি এজাহারভুক্ত করা হয়েছে। মামলার আসামিদের মধ্যে এক সাংবাদিক রয়েছে বলে জানা গেছে। সাংবাদিক মোল্লা ফারুক যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকে, তাহলে তার কিছুই হবে না।”

তিনি আরো বলেন, “ওই সাংবাদিক (মোল্লা ফারুক) আমার কাছে এসেছিল। তাকে আমি বলেছি, আপনি যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকেন, তাহলে আপনাকে পুলিশ খোঁজবেও না, আপনি নিশ্চিত থাকেন।”

অপরদিকে, তদন্ত ছাড়া গৌরনদী প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক মোল্লা ফারুক হাসানকে মামলায় আসামি করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর ও বরিশাল সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি নিকুঞ্জ বালা পলাশ, সাধারণ সম্পাদক শাহিন হাসানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা। তারা অনতিবিলম্বে ওই সাংবাদিককে মামলা থেকে অব্যাহতি ও দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করেছেন।

এছাড়াও পৃথক বিবৃতিতে একই দাবি করেছেন বাংলাদেশ গ্রামীণ সাংবাদিক সংগঠন, গৌরনদী প্রেসক্লাব, কালকিনি সাংবাদিক ফোরাম, আগৈলঝাড়া প্রেসক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দরা।

ঢাকা/পলাশ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনসিপিকে প্রতীক বাছাইয়ে সময় বেঁধে দিল ইসি
  • প্লাস্টার খোলার পর গুরুত্ব ফিজিওথেরাপির
  • বিয়ের আগেই দুই সন্তানের মা, আলোচিত এই দক্ষিণি অভিনেত্রীকে কতটা চেনেন
  • ঢাকায় সর্বোচ্চ ২০৬ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড
  • গাজীপুরে নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানায় অভিযান
  • বিশেষ বিবেচনায় চবির হলে থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমালোচনা
  • তদন্ত ছাড়াই সাংবাদিককে মামলায় জড়ালো পুলিশ
  • মাতৃরূপে ঈশ্বরের উপাসনা
  • গাজার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে চান ট্রাম্প