স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা-পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সন্তান না নেওয়া ভালো
Published: 1st, October 2025 GMT
‘স্তন ক্যানসার এমন একটি রোগ, যা স্তনের কোষ থেকে শুরু হয়, বিশেষ করে মিল্ক ডাক্টস বা লোবিউল থেকে হয়। ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে এটি “ইনভেসিভ ডাক্টাল কার্সিনোমা” হিসেবে দেখা যায়। এ ছাড়া লোবুলার কার্সিনোমা, মিউসিনাস কার্সিনোমা, মেডুলারি কার্সিনোমা ও স্ট্রোমাল টিস্যু থেকেও ক্যানসার হতে পারে। এর মূল কারণ হলো ডিএনএ মিউটেশন, যা জেনেটিক, অনিয়ন্ত্রিত লাইফস্টাইল, এনভায়রনমেন্টাল এক্সপোজার ও বয়সজনিত।’
কথাগুলো বলেন ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও উপদেষ্টা ডা.
স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস অক্টোবর। এ উপলক্ষে গত সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এসকেএফ অনকোলজি আয়োজন করে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার-চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা। নাসিহা তাহসিনের উপস্থাপনায় এতে অতিথি হিসেবে ছিলেন ডা. পারভিন আখতার বানু। তিনি বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা, রোগনির্ণয়, ডায়াগনসিস ও চিকিৎসাসুবিধা বিষয়ে কথা বলেন। পর্বটি সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
শুরুতেই উপস্থাপক জানান, ক্যানসারকে অনেকেই ‘মডার্ন ডে ডিজিজ’ বলে। বিশ্বে প্রতি আটজন নারীর মধ্যে একজনের স্তন ক্যানসার শনাক্ত হয়। তবে নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও স্তন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই স্তন ক্যানসারকে শুধু নারীর রোগ হিসেবে ভাবার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশের স্তন ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি এবং নারীদের মধ্যে এর প্রকোপ সম্পর্কে ডা. পারভিন আখতার বানু বলেন, ‘বাংলাদেশে এটি “সিগনিফিকেন্ট হেলথ হ্যাজার্ড”। প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে এতে প্রায় ২২.৫ জন আক্রান্ত হন। আমাদের দেশে দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক কম বয়সে, অর্থাৎ ১৫ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যেই প্রায় ১৯.৫ শতাংশ কেস ডায়াগনসিস হয়। এর মৃত্যুহারও অনেক বেশি—প্রায় ৬৫ শতাংশ। এর কারণ দেরিতে শনাক্তকরণ।’
স্তন ক্যানসারের প্রধান ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে ডা. পারভিন আখতার বানু বলেন, ‘প্রধান ঝুঁকির কারণগুলো হলো শারীরিক কর্মকাণ্ড কম করা, স্থূলতা বৃদ্ধি, অধিক মাত্রায় ফাস্ট ফুড গ্রহণ, হরমোন ও টক্সিক কেমিক্যালযুক্ত খাবার গ্রহণ, নারীদের মেনোপজের পর হরমোনাল ফ্যাক্টরের কারণে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ব্যবহার করা, ব্রেস্টফিডিং না করানো, দেরিতে গর্ভধারণ, ফ্যামিলি হিস্ট্রি, বিআরসিএ১/২ জিন মিউটেশন এবং ভিটামিন ডির ঘাটতি ইত্যাদি।’
স্তন ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো কী এবং কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত? উপস্থাপকের প্রশ্নের উত্তরে ডা. পারভিন আখতার বানু বলেন, ‘প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে রয়েছে স্তনে চাকা বা লাম্প হওয়া, স্তনের সাইজ বা আকারের পরিবর্তন, নিপল ডেবে যাওয়া বা নিপল থেকে দুধ ছাড়া কিছু বের হওয়া, ব্রেস্টের চামড়ায় টান পড়া, কুঁচকে যাওয়া, বগলের নিচে লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া এবং অস্বাভাবিক ব্যথা করা। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।’
সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন এবং এটির পদ্ধতি প্রসঙ্গে ডা. পারভিন আখতার বানু বলেন, ‘এটি সহজ, কিন্তু স্তন ক্যানসার শনাক্তে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন ২০ বছর বয়স থেকেই শুরু করা উচিত। সাধারণত মাসিক শেষ হওয়ার ৫ থকে ৭ দিন পর করাটা উপযুক্ত। গোসলের সময় বা পিঠের নিচে বালিশ রেখে শুয়ে তিনটি আঙুলের প্যাড দিয়ে চক্রাকারে পুরো ব্রেস্ট ও বগল পরীক্ষা করতে হবে। এ সময় লক্ষ রাখতে হবে অস্বাভাবিক লাম্প, চাকা, নিপল ডিসচার্জ, স্কিন চেঞ্জ ইত্যাদি হচ্ছে কি না।’
প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপক জানান, এসকেএফ অনকোলজি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ইউজিএমপি ও অ্যানভিজা ব্রাজিল অনুমোদিত প্ল্যান্ট। ফলে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ২৭টি দেশে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া এসকেএফ অনকোলজির সারা দেশে রয়েছে ৩৩টি সেবাকেন্দ্র, যার মাধ্যমে ক্যানসারের ওষুধ পাওয়া যায়। শুধু তা-ই নয়, ঘরে বসে অর্ডার করলেই বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে সহজেই পৌঁছে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা, রোগনির্ণয়, ডায়াগনসিস ও চিকিৎসাসুবিধা বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. পারভিন আখতার বানুউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপস থ
এছাড়াও পড়ুন:
রোনালদো কি সত্যিই বিশ্বকাপে ১-২ ম্যাচ মিস করবেন
পর্তুগাল আজ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলবে আর্মেনিয়ার বিপক্ষে। ম্যাচটা পর্তুগিজদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জিতলে ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হবে, এমনকি ড্র করলেও সমূহ সম্ভাবনা। কিন্তু হারলে নেমে যেতে হতে পারে প্লে-অফের পরীক্ষায়। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে পাচ্ছে না পর্তুগাল। বৃহস্পতিবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখায় আজ দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।
তবে রোনালদো ও পর্তুগালের জন্য বড় বিপদ সামনে। লাল কার্ডের জন্য এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা সবাইকেই কাটাতে হয়। শাস্তির মূল পরিমাণ ঠিক কত ম্যাচের বা দিনের, সেটি অপরাধের মাত্রার ওপর নির্ভর করে পরে ঘোষণা করা হয়। আর এখানেই শঙ্কা রোনালদোকে নিয়ে।
আইরিশ ফুটবলার দারা ও’শেয়ারকে আঘাতের দায়ে রোনালদো যদি দুই থেকে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান, তাহলে পর্তুগাল বিশ্বকাপে উঠলে গ্রুপ পর্বের একটি বা দুটি ম্যাচই তিনি মিস করবেন। আর গ্রুপ পর্বে ম্যাচ যেহেতু মাত্র তিনটি, দল আগেভাগে খারাপ করে বিদায় নিশ্চিত হলে রোনালদোর বিশ্বকাপ শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এমন পরিস্থিতি কি সত্যিই তৈরি হতে পারে? রোনালদোর বিশ্বকাপে ১-২ মিস করার সম্ভাবনা কতটুকু? ২০২৬ বিশ্বকাপ শুরু হবে জুনে, যা এখনো ছয় মাসেরও বেশি সময় বাকি। এর মধ্যে পর্তুগাল ম্যাচও খেলবে। আর রোনালদোকে আসলে কত ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটাতে হবে, সেটি জানা যাবেই–বা কবে?
রোনালদোর অপরাধ কী ছিলআয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের ৬১তম মিনিটে ও’শেয়ারকে কনুই দিয়ে মেরেছেন রোনালদো। রেফারি গ্লেন নাইবার্গ এ ঘটনায় তাঁকে হলুদ কার্ড দেখান। তবে ভিএআরে ঘটনা পর্যালোচনার পর রেফারি সিদ্ধান্ত পাল্টান, দেখান লাল কার্ড। রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত বদলের অর্থ হচ্ছে, রেফারির কাছে ঘটনাটি গুরুতরই মনে হয়েছে।
শাস্তি কীলাল কার্ডের ন্যূনতম শাস্তি এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা। এরপর ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটি ঠিক করে সেটি এক ম্যাচে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি বাড়বে। বাড়লে কতটা? ফিফা তাদের শৃঙ্খলাবিধির ১৪.১ ধারা অনুসারে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই ধারার ‘ই’ অনুচ্ছেদ অনুসারে, গুরুতর ফাউল খেলার জন্য দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এই নিয়মটি বল দখলের জন্য অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক চ্যালেঞ্জের আওতায় পড়ে।
উদাহরণ হিসেবে অঁরেলিয়ে চুয়ামেনির কথা বলা যেতে পারে। রিয়াল মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডার সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের হয়ে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে সরাসরি লাল কার্ড দেখেছিলেন। এ ঘটনায় তাঁকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়—একটি লাল কার্ডের জন্য, অন্যটি গুরুতর ফাউলের জন্য।
পর্তুগালের জন্য বিপদ হচ্ছে রোনালদোর পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে। ফিফা আইনের অধীনে তাঁর কনুই মারাকে সহিংস আচরণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে। অনুচ্ছেদ ১৪.১ ধারার ‘এইচ’ এবং ‘আই’ অনুচ্ছেদে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার কথা বলা আছে।
এইচ. সহিংস আচরণের জন্য কমপক্ষে তিন ম্যাচ।
আই. আক্রমণাত্মক আচরণের জন্য কমপক্ষে তিন ম্যাচ বা উপযুক্ত সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা, যার মধ্যে কনুই মারা, ঘুষি মারা, লাথি মারা, কামড়ানো, থুতু দেওয়া, বা কোনো খেলোয়াড় বা রেফারি নন এমন কাউকে আক্রমণ করা অন্তর্ভুক্ত।
যেহেতু রোনালদো আইরিশ ডিফেন্ডারকে কনুই দিয়ে আঘাত করেছেন, তাই তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার খড়্গে পড়তে পারেন, যার ফলে বিশ্বকাপের প্রথম দুটি ম্যাচ মিস করবেন তিনি। এর আগে চলতি মৌসুমের শুরুতে আর্মেনিয়ার তিগরান বারসেঘিয়ানকে উত্তর আয়ারল্যান্ডের এক খেলোয়াড়কে সামান্য মাথা দিয়ে আঘাত করার দায়ে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ফিফা।
পর্তুগাল আজই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলে কী হবেআজ আর্মেনিয়ার বিপক্ষে জিতলে বা ড্র করলে বিশ্বকাপের টিকিট কাটা হয়ে যাবে পর্তুগালের। এর অর্থ হচ্ছে, পর্তুগাল তাদের পরবর্তী প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলবে আগামী বছরের জুনে বিশ্বকাপের মূল পর্বে। সে ক্ষেত্রে রোনালদো গ্রুপ পর্বের প্রথম একটি বা দুটি ম্যাচ (মোট নিষেধাজ্ঞা দুই বা তিন ম্যাচ সাপেক্ষে) মিস করবেন। এর আগে মার্চে ফিফা উইন্ডো আছে। তবে সে সময় পর্তুগাল খেললেও তা হবে ‘প্রীতি ম্যাচ’। রোনালদোকে শাস্তি ভোগ করতে হবে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচেই।
কবে জানা যাবে রোনালদোর নিষেধাজ্ঞা কত ম্যাচেরঘটনার কত দিনের মধ্যে ফিফা ডিসিপ্লিনারি কমিটি শাস্তি ঘোষণা করবে, সে বিষয়ে কোনো বিধান নেই। সাধারণত, ঘটনার পরবর্তী মাসের শুরুতে রায় পাওয়া যায়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হচ্ছে আগামী ৫ ডিসেম্বর। সে দিন ওয়াশিংটন ডিসিতে ২০২৬ বিশ্বকাপের সূচি চূড়ান্ত (ড্র) হবে। এর কাছাকাছি সময়েই রোনালদো তাঁর নিষিদ্ধ ম্যাচসংখ্যার খবর পেয়ে যাবেন।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে খেলার কি কোনো উপায়ই থাকবে নাপ্রথম কথা, রোনালদো এখন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা পাননি। যদি অন্তত দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান, তবেই বিশ্বকাপের প্রথম থেকে না খেলার প্রশ্ন আসবে। তবে অপরাধের ধরনের কারণে ধরে নেওয়া যায় নিষেধাজ্ঞা তিনি পেতে যাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে পর্তুগালের বিশ্বকাপে জায়গা করাও একটা বিষয়। আজ পর্তুগাল যদি আর্মেনিয়াকে হারাতে না পারে এবং একই গ্রুপে হাঙ্গেরি আয়ারল্যান্ডকে হারায়, তাহলে পর্তুগাল গ্রুপে পিছিয়ে ইউরোপিয়ান প্লে-অফে নেমে যাবে।
সে ক্ষেত্রে পর্তুগালের পরবর্তী দুটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হবে প্লে-অফ সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল। নিষেধাজ্ঞা পেলে রোনালদো এই ম্যাচগুলো মিস করবেন। দল বিশ্বকাপে গেলে সেখানে শুরু থেকেই খেলতে পারবেন ‘সিআরসেভেন’। কিন্তু যে প্লে-অফের ওপরে বিশ্বকাপে খেলা, না খেলা নির্ভর করবে, সেই ম্যাচে না খেলতে পারাও তো রোনালদো এবং পর্তুগালের জন্য ধাক্কা।