দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান আসে নানা ধরনের মাছ থেকে। মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশের মানুষ দৈনিক প্রায় ৬৩ গ্রাম মাছ খেয়ে থাকে। তবে সীমিত আয়ের মানুষের কাছে কম দামের মাছই আমিষের বড় উৎস। সীমিত আয়ের মানুষের কাছে কম দামি মাছে মধ্যে পছন্দের শীর্ষে তেলাপিয়া মাছ। বছর বছর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত এক দশকে দেশে তেলাপিয়ার উৎপাদনও বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ বা দেড় লাখ টন।
এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে পুরুষ তেলাপিয়া চাষের উৎপাদনই বেশি বাড়ছে। তবে মাছ চাষের খরচের প্রায় ৭০ শতাংশই খাবারের পেছনে। তাই উৎপাদন বাড়লেও তেলাপিয়া মাছের দামও এখনো নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দেশে তেলাপিয়া মাছের উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭৮ টন, যা আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। ২০২২–২৩ অর্থবছরে তেলাপিয়ার উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ২১ হাজার ১৯১ টন। ১০ বছর আগেও ২০১৩–১৪ অর্থবছরে দেশে তেলাপিয়ার উৎপাদন ছিল মাত্র ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬২ টন। সেই হিসাবে এক দশকের ব্যবধানে তেলাপিয়ার উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ বা ১ লাখ ৪১ হাজার ৬১৬ টন।
বড় বাজারের দরদামরাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আকারভেদে তেলাপিয়া মাছের দাম কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২৪০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুরের চন্দ্রিমা মডেল টাউন কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি ২২০ টাকা দরে ৫০ কেজি মাছ বিক্রি করেছেন মাছ ব্যবসায়ী কামাল হোসেন। তিনি জানান, প্রতি কেজি মাছ তিনি ১৮০ টাকায় কিনেছেন। কামাল হোসেন জানান, এক বছরের ব্যবধানে পাইকারিতে তেলাপিয়া মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। আর খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে প্রায় ৮০ টাকা। মাছের খাবার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছের দামও বেড়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের ডিন অধ্যাপক মো.
এদিকে মাছচাষিরা বলছেন, উৎপাদন বাড়লেও মুনাফা বাড়েনি। এ কারণে অনেক মাছচাষি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চাষির মুনাফা বৃদ্ধি না পাওয়ার জন্য ব্যাংকের উচ্চ সুদকে দায়ী করছেন চাষিরা। তাঁরা বলছেন, অনেক চাষি উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে মাছ চাষে বিনিয়োগ করেন। ভালো মুনাফা না পেলে তাঁদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন। এ বিষয়ে ময়মনিসংহের ত্রিশালের মাছচাষি নাহিম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, মাছচাষিরা এখন সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছেন। মাছের খাবার, বিদ্যুৎ বিল, ওষুধ, শ্রমিকের খরচ, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদ মিলিয়ে মাছ চাষ করে লোকসান গুনছেন বেশির ভাগ চাষি।
নাদিম মাহমুদ জানান, বর্তমানে মাছের এক টন খাবারের দাম ৭২ হাজার টাকা। তাঁর তিন একরের পুকুরে দিনে প্রায় আধা টন খাবার লাগে। একজন শ্রমিকের বেতন মাসে ১৮ হাজার টাকা। তাই মাছ চাষে কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা না গেলে অনেকেই আগ্রহ হারাবেন।
মাছ চাষের খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে এক মাস আগে নিয়োগ পাওয়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃষি খাতের মতো মৎস্য খাতেও বিদ্যুৎ বিল কমাতে আমরা কাজ করছি।’
মাছ চাষে শীর্ষ ১০ জেলা২০২৩ সালের মৎস্য অধিদপ্তরের উৎপাদন হিসাবের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর তেলাপিয়ার মোট উৎপাদনের মধ্যে পুকুরে চাষ হয়েছিল ৩ লাখ ৫৪ হাজার ১৪২ টন। এর মধ্যে শীর্ষ ১০ জেলার পুকুরে চাষ হয়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। পুকুরে তেলাপিয়া চাষে শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা। এ জেলায় ২০২৩ সালে প্রায় সাড়ে ৪১ হাজার টন তেলাপিয়া পাওয়া যায়। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ময়মনসিংহ জেলায় উৎপাদিত হয় প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার টন। যশোর থেকে আসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২২ হাজার ১৯৭ টন। চট্টগ্রাম ও বরিশালে উৎপাদিত হয় যথাক্রমে প্রায় ২০ হাজার ও ১১ হাজার ৭১৪ টন। এরপরের অবস্থানে ছিল যথাক্রমে সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, গাজীপুর, বগুড়া ও নোয়াখালী।
আফ্রিকা থেকে দেশেমৎস্য কর্মকর্তারা জানান, ১৯৬৯ সালে আফ্রিকা থেকে প্রথম দেশে আনা হয় তেলাপিয়া। তবে ২০১০ সালের পর তেলাপিয়ার ব্যাপক ভিত্তিতে বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়।
এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অভ্যন্তরীণ মৎস্য) মো. মোতালেব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এখন মোনোসেক্স জাতের পুরুষ তেলাপিয়ার বেশি চাষ হচ্ছে। কারণ, এসব মাছ আকারে বড় হয়। আগে মিশ্র জাতের তেলাপিয়ার বেশি চাষ হতো।
একদিকে বেড়েছে চাহিদা, অন্যদিকে কম সময়ে এ মাছ দ্রুত বড় হয়। তাই দেশে তেলাপিয়া চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, তিন থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে এ মাছ বিক্রি উপযোগী হয়ে যায়।
এ বিষয়ে মো. মোতালেব হোসেন বলেন, গরম বা ঠান্ডা যেকোনো আবহাওয়ায় তেলাপিয়া চাষ করা যায়। এ ছাড়া খাবার না দিলেও এ মাছ বড় হয়। কই, শিং ও পাবদা মাছের মতো তেলাপিয়া আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয় না। খেতেও সুস্বাদু। তাই তেলাপিয়ার চাষ এক দশকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
তেলাপিয়া বিতর্কশেওলা ও বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে এ মাছ বেঁচে থাকতে পারে বলে এটিকে গারবেজ/ট্র্যাশ ফিশ বা আবর্জনা মাছ বলেও ডাকা হয়। এক সময় এ মাছে নানা ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতির অভিযোগ উঠেছিল। তবে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত খাবারের জন্য মূলত এটি হয়ে থাকতে পারে। তাই মানসম্পন্ন খাবার দেওয়া হলে এ মাছে ক্ষতির কিছু নেই।
এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক
মো. মোতালেব হোসেন বলেন, এখন পুকুরে গোবর, হাঁস–মুরগির উচ্ছিষ্ট ব্যবহার করাও আইনিভাবে নিষিদ্ধ।
অধ্যাপক ও গবেষক রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, বর্তমানে দেশে মাছ চাষে যে ধরনের খাবার ব্যবহার করা হয়, তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকির সুযোগ নেই।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক বলছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সরবরাহ বাড়ছে শীতের আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপির, কমছে দাম
শীতের আগাম সবজি হিসেবে বাজারে এসেছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি। মৌসুমের শুরুতে দাম স্বাভাবিকভাবে কিছুটা বেশি থাকলেও সরবরাহ বাড়ছে। ফলে দাম ইতিমধ্যে কিছুটা কমেছে। খুচরা পর্যায়ে দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি পিছ ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৪০ থেকে ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
সরবরাহ বাড়তে থাকায় বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে এসব সবজির দাম আরও কমবে। ভরা মৌসুমে খুচরা পর্যায়ে ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম কমে ১০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে নেমে আসে।
সরকারি তথ্য বলছে, দেশে গত তিন বছরে ফুলকপির উৎপাদন বেড়েছে ১৪ শতাংশ এবং বাঁধাকপির উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। উৎপাদন বাড়লেও মৌসুমের শুরুতে সবজির দাম কিছুটা বেশি থাকে। প্রথম দিকে যেসব ফসল আসে, সেগুলো সাধারণত আকারে ছোট হয়। তবে বাজারে সরবরাহও তুলনামূলকভাবে কম থাকা এবং আগাম সবজির বিষয়ে মানুষের আগ্রহ থাকায় দাম বাড়তি থাকে।
ফুলকপি শীতের অন্যতম জনপ্রিয় সবজি। রান্না তরকারি, ভাজি, স্যুপ, হালকা সেদ্ধ কিংবা সালাদ হিসেবে এটি খাওয়া যায়। বাঁধাকপিও ভাজি, স্যুপ ও সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়। শীত মৌসুমে স্বাদের দিক থেকেও এ দুটি সবজি অনেকেরই পছন্দ।
উৎপাদন কেমনকৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, ২০২২–২৩ অর্থবছরে দেশে ১৩ লাখ ১২ হাজার টন ফুলকপি উৎপাদন হয়েছিল। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টন হয়। সর্বশেষ ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ফুলকপি উৎপাদন আরও বেড়ে ১৫ লাখ টনে ওঠে।
অন্যদিকে ২০২২–২৩ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৮০ হাজার টন বাধাঁকপি উৎপাদন হয়। পরের অর্থবছরে তা বেড়ে ১৪ লাখ ২৫ হাজার টন হয়। গত অর্থবছরে তা আরও বেড়ে ১৪ লাখ ৩৩ হাজার টন হয়েছে। অর্থাৎ গত কয়েক বছর ধরে টানা ফুলকপি ও বাঁধাকপির উৎপাদন বাড়ছে।
বাঁধাকপির চেয়ে বেশি জমিতে ফুলকপি চাষ হয়। যেমন, গত অর্থবছরে ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষ হয়েছিল, যেখানে বাধাঁকপি চাষ হয়েছিল ৪৪ হাজার হেক্টরে। উৎপাদনের দিক থেকেও ফুলকপি এগিয়ে।
ফুলকপি-বাঁধাকপি চাষ ও ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে গত দুই বছরে ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর তাঁরা আগের চেয়ে বেশি পরিমাণে এই সবজি দুটির চারা লাগিয়েছেন। তাঁদের প্রত্যাশা, এ বছর শীত মৌসুমেও ভালো ফলন ও দাম পাওয়া যাবে।
এখন আসছে আগাম ফলনকৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সম্প্রসারণ) এইচ এম মনিরুজ্জামান জানান, সাধারণত আগস্টের শেষ কিংবা সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে বারি (শীতকালীন) ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ শুরু হয়। প্রথমে বীজ বপন করে চারা গাছ তৈরি করা হয়। ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর সেই চারা রোপণ করা হয়। সাধারণত চারা লাগানোর পরে তা বিক্রির উপযোগী হতে ৮০ থেকে ৯০ দিন সময় লাগে। অনেক সময় বাজারে দাম বাড়তি থাকলে ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও (ছোট অবস্থায়) ফসল তুলে বিক্রি করেন কৃষকেরা।
আগস্টের শেষ কিংবা সেপ্টেম্বরে যে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করা হয়, সেগুলো হচ্ছে আগাম ফসল। বর্তমানে এই আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারে আসছে। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এসব আগাম সবজি বাজারে আসবে। এরপর মৌসুমের মূল সবজি আসা শুরু করবে।
সাধারণত মৌসুমের শুরুতে কোনো সবজি এলে (আগাম) সেগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। এতে কৃষক, আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ী—সবাই লাভবান হন। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবারও কৃষকেরা আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেছেন।
আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারে কিছুটা ছোট হয়। বড় হওয়ার আগেই কৃষকেরা এগুলো তুলে বাজারে আনেন। যেমন, বর্তমানে যেসব ফুলকপি বাজারে আসছে, সেগুলোর ওজন ৪০০ থেকে ৮০০ গ্রামের মধ্যে। ভরা মৌসুমে এক থেকে দেড় কেজি কিংবা তারও বেশি ওজনের ফুলকপি বাজারে আসে। বর্তমানে যেসব বাঁধাকপি আসছে, সেগুলোর ওজন ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের মধ্যে। পরবর্তী সময়ে দেড়–দুই কেজি আকারের বাঁধাকপি বাজারে আসবে।
চাষ কোথায় বেশিকৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি জেলা থেকে ফুলকপি ও বাঁধাকপির সরবরাহ বেশি আসছে। ভরা মৌসুমে এসব এলাকার পাশাপাশি মানিকগঞ্জ ও সাভারসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও সবজি দুটির সরবরাহ আসবে।
বিভিন্ন প্রজাতির ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারে পাওয়া যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ফুলকপির ভালো জাতগুলোর মধ্যে বারি ফুলকপি-১ (রুপা), বারি ফুলকপি-২, ৩ ও স্নো হোয়াইট উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া হোয়াইট ফ্লাশ ২০২০ ও অটাম জায়ান্ট হাইব্রিড জাতও রয়েছে। বাঁধাকপির জাতের মধ্যে আছে বারি বাঁধাকপি-১ ও বারি বাঁধাকপি-২ (অগ্রদূত)। আইপিএসএ বাঁধাকপি-১ গ্রীষ্মকালেও চাষ হয়।
ঢাকায় সরবরাহ ও পাইকারি দামগত শুক্র ও শনিবার রাতে কারওয়ান বাজারে ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে করে ফুলকপি ও বাঁধাকপি আসছে।
কারওয়ানবাজারের আড়তদার আবদুল কাদির ভূইয়া প্রতিবছর শীত মৌসুমে ফুলকপির ব্যবসা করেন। তিনি জানান, বর্তমানে ব্যাপারীর কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে প্রতি পিছ ফুলকপি কিনছেন তাঁরা। এরপর সেগুলো ২৫ থেকে ৩৫ টাকা দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন। এই ফুলকপি আরও এক-দুই হাত ঘুরে খুচরায় ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপির দামও অনেকটা এমন।
অবশ্য অনেক কৃষক সরাসরি ঢাকায় ফুলকপি ও বাঁধাকপি নিয়ে আসছেন। যেমন, যশোর সদরের নোঙ্গরপুর গ্রামের কৃষক আবদুস সাত্তার এ বছর সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে দেড় বিঘা জমির আগাম বাঁধাকপি কেটে বিক্রি করেছেন। ব্যাপারীদের মাধ্যমে বিক্রি করলে দাম পাওয়া যায় কম। সে কারণে গত মঙ্গলবার নিজেই ট্রাক ভাড়া করে বাঁধাকপি কারওয়ান বাজারে নিয়ে আসেন।
আবদুস সাত্তার বলেন, কারওয়ান বাজারে প্রতি পিছ বাঁধাকপি ৩৩ টাকা করে বিক্রি করেছি। এর সঙ্গে ট্রাক ভাড়া, শ্রমিক মজুরি যোগ হবে। তবে ব্যাপারীদের মাধ্যমে বিক্রি করলে দাম পাওয়া যেত মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকা। সব মিলিয়ে আগাম বাঁধাকপি বিক্রি করে এখন ভালো দাম পাচ্ছেন তিনি। তাঁর আশা, ভরা মৌসুমেও মোটামুটি ভালো দাম থাকলে এ বছর মুনাফা করতে পারবেন; না হয় চাষের খরচ উঠে আয়-ব্যয় সমান সমান থাকবে।