জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পানাম সিটির ঐতিহাসিক সম্মেলন কেন গুরুত্বপূর্ণ
Published: 30th, October 2025 GMT
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারে আদিবাসী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী লোকজ জ্ঞান ও চর্চাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পানামা সিটিতে একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। ২৭ অক্টোবর, সোমবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া এ সভা ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করল জীববৈচিত্র্য কনভেনশনের অধীন ‘সাবসিডিয়ারি বডি অন আর্টিকেল এইট (জে) অ্যান্ড আদার প্রোভিশনস’ নামের স্থায়ী সংস্থাটি।
১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ‘আর্থ সামিটে’ ‘জীববৈচিত্র্য–বিষয়ক কনভেনশন’ (সিবিডি) গৃহীত হয়। এ কনভেনশনের তিনটি লক্ষ্য—জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ, জীববৈচিত্র্য থেকে প্রাপ্ত সুফলের ন্যায্য বণ্টন ও জীববৈচিত্র্যের টেকসই ব্যবহার। এই কনভেনশনের এইট (জে) ধারার মাধ্যমে আদিবাসী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সনাতন, লোকজ জ্ঞান, সংস্কৃতি ও প্রথাকে প্রথমবার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
বহু বছর ধরে অ্যাডহক ওয়ার্কিং গ্রুপের মাধ্যমে এই ধারার কাজ পরিচালিত হচ্ছিল। গত বছর নভেম্বরে কলম্বিয়ার ক্যালিতে অনুষ্ঠিত সিবিডির ১৬তম সম্মেলনে এই ধারাবিষয়ক স্থায়ী সংস্থা গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। ওই সিদ্ধান্তের আলোকেই সাবসিডিয়ারি বডি অন আর্টিকেল এইট (জে) অ্যান্ড আদার প্রোভিশনস এখন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কনভেনশনের কেন্দ্রীয় নীতি প্রণয়ন কাঠামোর স্থায়ী অংশ হয়ে উঠছে। এটাই কোনো কনভেনশনের অধীন আদিবাসী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠী–বিষয়ক প্রথম স্থায়ী কাঠামো।
আলোচ্য বিষয়
পানামা বৈঠকে তিনটি মূল বিষয়কে কেন্দ্র করে আলোচনা চলবে। প্রথমত, এই নতুন সংস্থার কার্যবিধি নির্ধারণ করা হবে। সংস্থাটি কীভাবে পরিচালিত হবে, কে নেতৃত্ব দেবে এবং আদিবাসী ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব কীভাবে নিশ্চিত করা হবে। এসব বিষয় নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কোন কোন দেশ মনে করছে, এটি কেবল রাষ্ট্রনির্ভর কাঠামো হওয়া উচিত। কেউ কেউ আদিবাসী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পক্ষপাতী।
‘আইন ও নীতিগত কাঠামো শক্তিশালী করার দিকনির্দেশনা’ আলোচনার দ্বিতীয় বিষয়। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ভূমি, সম্পদ ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার উপায় নির্ধারণ—এই গাইডলাইনস–বিষয়ক আলোচনার মৌলিক উদ্দেশ্য।
তৃতীয় বিষয় হিসেবে আলোচনায় রয়েছে স্থানিক পরিকল্পনা ও পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী ভূমি ও সম্পদ ব্যবহারের অন্তর্ভুক্তি। স্থানীয় ও আদিবাসী জ্ঞানকে কীভাবে জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়নপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা যায়, তা নির্ধারণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া আদিবাসী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নারী ও যুবকদের নেতৃত্বে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অর্থায়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত সহায়তার বিষয়েও আলোচনা হবে।
পানামা সিটিতে শুরু হওয়া সম্মেলনের প্রথম দিন থেকেই বিভিন্ন দেশ ও আদিবাসী সংগঠনগুলোর জমা দেওয়া লিখিত অবস্থানের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয়ে গেছে, কোন কোন বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক।
প্রতিনিধি নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র বিতর্ক
আদিবাসী ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে তীব্র মতপার্থক্য। ব্রাজিল লিখিত অবস্থানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে সাতটি সাংস্কৃতিক অঞ্চলভিত্তিক বর্তমান পদ্ধতিটি জীববৈচিত্র্যের অসম বণ্টনকে প্রতিফলিত করে না। ব্রাজিলের মতে, এই পদ্ধতির ফলে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের কিছু উপগোষ্ঠী উপেক্ষিত হচ্ছে, অন্যদিকে কম জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলো অতিরিক্ত প্রতিনিধিত্ব পাচ্ছে। ব্রাজিলের প্রস্তাব হলো জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর জন্য বিশেষ কোটা নির্ধারণ এবং আফ্রো-বংশোদ্ভূত সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা।
অন্যদিকে অ্যাসেম্বলি অব ফার্স্ট নেশনস তাদের দাখিল করা প্রতিবেদনে স্বনির্বাচনপ্রক্রিয়ার ওপর জোর দিয়েছে। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিটি সাংস্কৃতিক অঞ্চল থেকে একজন প্রধান প্রতিনিধি ও একজন বিকল্প প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। তাঁদের মেয়াদ হবে দুই বছর এবং সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ থাকবেন। তারা ভৌগোলিক ও লিঙ্গভিত্তিক ভারসাম্য নিশ্চিত করারও পরামর্শ দিয়েছে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়ায় ভূমিকা নিয়ে মৌলিক পার্থক্য
কানাডা প্রস্তাব করেছে, সাবসিডিয়ারি বডি অন আর্টিকেল এইট (জে) অ্যান্ড আদার প্রোভিশনসকে কনভেনশনের অন্য দুটো সহযোগী সংস্থা—বিজ্ঞান, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পরামর্শ সংস্থা এবং বাস্তবায়ন সংস্থার আদলে না করে বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়ায় নমনীয় পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাষ্ট্র-সদস্যদের নেতৃত্বাধীন প্রক্রিয়ার ওপর জোর দিলেও আন্তর্জাতিক আদিবাসী জীববৈচিত্র্য ফোরাম (আইআইএফবি) তাদের লিখিত অবস্থানে ‘অ্যাডহক ওয়ার্কিং গ্রুপ’–এর অনুশীলনগুলো বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। আইআইএফবির প্রস্তাব অনুযায়ী, এই সংস্থায় আদিবাসী সহসভাপতি, যোগাযোগ গ্রুপে আদিবাসী সহসভাপতি এবং সাতটি সাংস্কৃতিক অঞ্চল থেকে ‘সভাপতির বন্ধু’ (ফ্রেন্ডস অব চেয়ার) মনোনয়নের অনুশীলনটি বজায় রাখতে হবে।
অর্থায়ন ও অংশগ্রহণ নিয়ে মতপার্থক্য
অস্ট্রেলিয়া ব্যয়ের সক্ষমতার ওপর জোর দিলেও জিম্বাবুয়ে ও আদিবাসী জনগণের আফ্রিকা সমন্বয় কমিটি ‘স্বেচ্ছাসেবী তহবিলে’ আরও অর্থায়নের দাবি তুলেছে। আফ্রিকান সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, ‘সহায়ক সংস্থার বাজেট অন্য সহায়ক সংস্থাগুলোর সমান হতে হবে।’
ব্রাজিল উন্নয়নশীল দেশগুলোর আদিবাসী প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে আঞ্চলিক সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। তাদের ‘কুনতারি কাতু’ কর্মসূচির সাফল্যের উদাহরণ টেনে তারা দেখিয়েছে, কীভাবে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে আদিবাসী প্রতিনিধিদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়।
অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় নিয়ে বিভিন্ন মত
সৌদি আরব আন্তসংস্থা ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। সাবসিডিয়ারি বডি অন আর্টিকেল এইট (জে) অ্যান্ড আদার প্রোভিশনস কনভেনশনের অন্য দুটি সহযোগী সংস্থা তথা বিজ্ঞান, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পরামর্শ সংস্থা এবং বাস্তবায়ন সংস্থার সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি পরিকল্পনার প্রস্তাব করেছে। বিশেষভাবে ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানের পরিবীক্ষণ এবং ‘মুক্ত, পূর্ব ও অবহিত সম্মতি’ প্রক্রিয়ার ওপর জোর দিয়েছে।
অন্যদিকে নরওয়ে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন–বিষয়ক কনভেনশনের স্থানীয় সম্প্রদায় ও আদিবাসী প্ল্যাটফর্মের সহায়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ মডেলটি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, সাতজন রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি ও সাতজন আদিবাসী প্রতিনিধি যৌথভাবে কাজ করবেন। আর্মেনিয়া আর্টিকেল এইট (জে) সংস্থার কার্যাবলির সূত্রায়নে স্পষ্টতার দাবি তুলেছে। তারা প্রস্তাব করেছে যে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পরামর্শদাতা সংস্থা এবং বাস্তবায়ন সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি স্পষ্ট সূত্রায়ন ব্যবহার করতে হবে, যাতে সম্পৃক্ততা ও সংগতি নিশ্চিত হয়। এসব বিতর্ক সত্ত্বেও আফ্রিকান বন্য প্রাণী ফাউন্ডেশন আর্টিকেল এইট (জে) সংস্থার কাজ অন্যান্য সহায়ক সংস্থার সঙ্গে সংগতি রেখে করা উচিত–বিষয়ক প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
আফ্রো বংশোদ্ভূত, বিশেষ গোষ্ঠীর, যুব ও নারীর প্রতিনিধিত্ব
কলম্বিয়া জমা দেওয়া প্রস্তাবে কপ-১৬-এর সিদ্ধান্ত ১৬/৬-এর বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে বলেছে আফ্রো বংশোদ্ভূত সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। একইভাবে ইকুয়েডরের ওয়াওরানি জাতিগোষ্ঠী তাদের লিখিত অবস্থানে স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন ও সাম্প্রতিক যোগাযোগে থাকা আদিবাসী জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবি তুলেছে।
ফিনল্যান্ড যুব প্রতিনিধিত্ব ও পরবর্তী প্রজন্মের সম্পৃক্ততার ওপর জোর দিয়েছে। তারা প্রযুক্তিগত ও উদ্ভাবনী সমাধানের মাধ্যমে ব্যাপকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে।
‘পশুচারণ সম্প্রদায় ক্ষমতায়ন কর্মসূচি’ লিঙ্গসমতা কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়নের দাবি তুলে বলেছে, ব্যুরো ও সহসভাপতির পদে অন্তত একজন বিশেষজ্ঞ নারী প্রতিনিধি থাকতে হবে।
মেক্সিকো তাদের জমা দেওয়া নথিতে জাতিসংঘের সব দাপ্তরিক ভাষায় দোভাষী সেবার ব্যবস্থা রাখা এবং ভার্চ্যুয়াল সংলাপের মাধ্যমে অংশগ্রহণ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে।
জ্ঞানের মালিকানা ও ন্যায্যতার প্রশ্ন
এ আলোচনার গভীরে রয়েছে একটি মৌলিক প্রশ্ন—ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান কার মালিকানায়? আদিবাসী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠী শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রকৃতি, বীজ, বন, খাদ্য ও ঔষধি উদ্ভিদ সম্পর্কে যে জ্ঞান অর্জন করেছে, সেটি বহুজাতিক কোম্পানির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান এ জ্ঞান ব্যবহার করে বাণিজ্যিক পণ্য তৈরি করছে, কিন্তু সুফল কতটা ফিরে যাচ্ছে সেই জনগোষ্ঠীর কাছে, সেটি এক গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
এ কারণেই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের আলোচনা কেবল বৈজ্ঞানিক নয়, এটি অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও ন্যায্যতার প্রশ্ন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আদিবাসী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর লোকজ জ্ঞান ব্যবহারের ক্ষেত্রে ন্যায্য সুফল বণ্টনের যে নীতি কনভেনশনে গৃহীত হয়েছে, তার কার্যকর বাস্তবায়নই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।
এ বিতর্কগুলো ইতিবাচক। এটি প্রমাণ করে যে সব পক্ষই এই প্রক্রিয়াকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন। আগামী তিন দিনে এ বিতর্কের সমাধান খুঁজে বের করাই হবে সম্মেলনের মূল চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ন্যায্য অবস্থান নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ আলোচনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। পাহাড়ি, উপকূলীয় ও গ্রামীণ এলাকার অসংখ্য জনগোষ্ঠী প্রজন্মান্তরে প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের যে সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে, তা জীববৈচিত্র্যের ভান্ডার হিসেবে অনন্য। একই সঙ্গে চাকমা, মারমা, ম্রো, গারো, রাখাইন, সাঁওতাল ইত্যাদি সম্প্রদায় প্রতিটিই কৃষি, বনজ সম্পদ, খাদ্য ও ওষুধ সম্পর্কে নিজস্ব জ্ঞানভিত্তিক প্রথা রয়েছে।
তবু জাতীয় নীতিনির্ধারণে এ জ্ঞানের স্বীকৃতি প্রায় অনুপস্থিত। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জাতীয় কৌশল ও কর্মপরিকল্পনায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ এখনো প্রান্তিক অবস্থানে। অথচ এ জ্ঞান ও প্রথা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অপরিহার্য।
বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য–বিষয়ক কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে দায়বদ্ধ। এ বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে আইন, নীতি ও পরিকল্পনা সংশোধন করা জরুরি হয়ে উঠবে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জ্ঞান যদি ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক গবেষণা বা বাজারে ব্যবহৃত হয়, তাহলে তার ন্যায্য সুফল নিশ্চিত করতে প্রয়োজন স্পষ্ট আইনি কাঠামো।
ধারা এইট জে-এর নতুন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশকে বাধ্যতামূলকভাবে এ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এখনই প্রয়োজন জাতীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি নেওয়ার, যাতে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।
প্রকৃতি ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্যও এই প্রস্তুতি জরুরি। কারণ, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জ্ঞানভিত্তিক কৃষি ও বন ব্যবস্থাপনা শুধু জীববৈচিত্র্য নয়, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ জ্ঞান নথিবদ্ধ ও সুরক্ষিত না হলে হারিয়ে যাবে এক অমূল্য ঐতিহ্য। পুনরুদ্ধার করা আর সম্ভব হবে না।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ আজ কেবল পরিবেশের প্রশ্ন নয়, এটি সংস্কৃতি, অধিকার ও ন্যায্যতার প্রশ্ন। পানামা সিটির বৈঠক সেই বৈশ্বিক রূপান্তরেরই প্রতীক। বাংলাদেশের জন্য এখনই সময় জাতীয় সমন্বিত প্রস্তুতি নেওয়ার। প্রস্তুতি থাকলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান সংরক্ষণ, স্বীকৃতি ও সুফল বণ্টন নিশ্চিত করা যাবে।
যদি এই প্রস্তুতি না নেওয়া হয়, তবে আমাদের লোকজ জ্ঞান বৈশ্বিক আলোচনায় গুরুত্ব পেলেও এর মালিকানায় আমরা প্রান্তে থাকতে বাধ্য হব। ফলে আমাদের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও সমাজের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে।
ড.
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চেয়ারপারসন, উন্নয়ন অন্বেষণ
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ও স থ ন য় জনগ ষ ঠ র জ বব চ ত র য র র ওপর জ র দ য় ল খ ত অবস থ ন ন শ চ ত কর র কনভ নশন র প রক র য় র র প রস ত ব স বস ড য় র প রস ত ত ব যবহ র র জন য বস থ ন ব তর ক প রক ত ত হয় ছ হ ত হয় ব ষয়ক ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
নাঈমকে টপকে বছরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড তানজিদের
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গতকাল দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে ৪৮ বলে ৬১ রান করেন বাংলাদেশ ওপেনার তানজিদ হাসান। ১৫০ রানের লক্ষ্যে এমন একটি ইনিংস কেউ খেললে সেই দলের জয়ের সুযোগ থাকে অনেক বেশি।
কিন্তু চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি বাংলাদেশের অন্য ব্যাটসম্যানরা। জাকের আলী, শামীম হোসেনদের ব্যর্থতায় দল হেরেছে ১৪ রানে। এমন হারে আক্ষেপ থাকারই কথা তানজিদের।
তবে তানজিদ এমন ম্যাচেই গড়েছেন রেকর্ড। গতকাল বাংলাদেশের হয়ে এক বছরে সবচেয়ে বেশি টি–টোয়েন্টি রান করার রেকর্ড গড়েন তানজিদ। বাঁহাতি এই ওপেনার চলতি বছর ২৩ ইনিংসে রান করেছেন ৬২২। চলতি বছরে ১৩৫.২১ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করা তানজিদের ফিফটি ৬টি। গড় ২৯.৬১। চলতি বছরে তানজিদ ছক্কা মেরেছেন ৩৪টি, এটি এক বছরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।
প্রথম আলো