সৌদি আরব তাদের ৯২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের বিনিয়োগ কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এক দশক ধরে দেশটির উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বিশাল রিয়েল এস্টেট গিগাপ্রকল্প। এবার সেই দিক থেকে সরে এসে সৌদি সরকার এই তহবিলের বিনিয়োগকে আরও বিস্তৃত ও টেকসই খাতে পুনর্গঠন করতে চাইছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন পরিকল্পনাটি সম্পর্কে জানেন, উচ্চপর্যায়ের এমন একটি সূত্র।

২০১৬ সালে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছিলেন। এর মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করা ও বিশাল রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক রূপান্তর ঘটানো।

এই পরিকল্পনার প্রধান অর্থায়নকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে সৌদি আরবের সার্বভৌম তহবিল পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ)।

মরুভূমিতে ভবিষ্যতের শহর

পিআইএফের মূল পরিকল্পনায় ছিল নিওম—লোহিত সাগর–সংলগ্ন মরুভূমিতে ভবিষ্যতের শহর গড়ে তোলা। পাশাপাশি দেশটির উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ে কৃত্রিম তুষার ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরিকল্পনাও ছিল।

নিওমে ৯০ লাখ মানুষের বসবাসের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটি বারবার বিলম্বিত হচ্ছে।

সূত্রটি জানিয়েছে, এখন টেকসই ও স্বল্পমেয়াদি আর্থিক মুনাফা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই পিআইএফ নতুন কৌশল হিসেবে খনিজ সম্পদ, লজিস্টিক খাত এবং ধর্মীয় পর্যটনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।

এ ছাড়া সৌদি আরব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ডেটা সেন্টারে বড় বিনিয়োগ করছে—যেগুলো দেশটির বিপুল জ্বালানি সম্পদ ও হাইড্রোকার্বনের ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হবে।

রিয়াদে অনুষ্ঠিত বার্ষিক ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এফআইআই) সম্মেলনে পিআইএফের গভর্নর ইয়াসির আল-রুমাইয়ান বলেন, নতুন কৌশল খুব শিগগির ঘোষণা করা হবে।

নতুন অগ্রাধিকার

পিআইএফ ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দ্রুত মুনাফা আনার চাপ বৃদ্ধির পর থেকেই তাদের পরিকল্পনায় এমন পরিবর্তন এসেছে। পিআইএফ অবশ্য এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।

বিশ্লেষকদের মতে, অনেক গিগাপ্রকল্প এখনো প্রত্যাশিত মুনাফা দিতে পারেনি, অনেকগুলো শেষও হয়নি। ফলে তাদের বিপুল ব্যয় এখন প্রশ্নের মুখে।

তহবিলটির বর্তমান পাঁচ বছর মেয়াদি বিনিয়োগ কৌশল এ বছর শেষ হতে যাচ্ছে। খুব শিগগির নতুন কৌশল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে একটি ব্যাংকিং সূত্র।

অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, তহবিলের পরিচালনা পর্ষদ সম্প্রতি একটি নতুন ‘কৌশল’ অনুমোদন করেছে। নতুন পরিকল্পনায় সৌদি আরবকে বৈশ্বিক লজিস্টিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

সৌদি আরবে প্রচুর বিরল খনিজ সম্পদের মজুত রয়েছে। এগুলোর ওপর নতুন করে গুরুত্ব দিচ্ছে দেশটি।

হজ ও ওমরাহকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় পর্যটন বৃদ্ধি করাও নতুন কৌশলের অংশ। সম্প্রতি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান মক্কার মসজিদে হারামে প্রায় ৯ লাখ নতুন নামাজের জায়গা সংযোজনের একটি বৃহৎ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন।

এফআইআই ফোরামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছিল প্রধান আলোচ্য বিষয়। হলজুড়ে ভবিষ্যৎমুখী শহরের মডেল প্রদর্শিত হচ্ছিল, রোবট হাঁটছিল করিডরে।

হিউমেইন নামের একটি পিআইএফ-মালিকানাধীন এআই কোম্পানি ঘোষণা করেছে, তারা প্রায় ৬ গিগাওয়াট ক্ষমতার ডেটা সেন্টার নির্মাণ করবে।

সূত্রটি জানায়, সৌদি আরব তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল খাতে বড় বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করবে।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের স্বপ্নের ‘নিওম’ মেগা প্রকল্পে কি তাহলে কাটছাঁট হচ্ছে১৭ জুলাই ২০২৫

গত বছর থেকেই পিআইএফ বিদেশি বিনিয়োগ কমানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। গভর্নর আল-রুমাইয়ান জানান, বিদেশি বিনিয়োগের হার ৩০ শতাংশ থেকে ১৮-২০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

গেমিং খাতেও বড় বিনিয়োগ করছে পিআইএফ। সম্প্রতি তারা ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে জনপ্রিয় ভিডিওগেম নির্মাতা ইলেকট্রনিক আর্টস অধিগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের রিয়াদ ও জেদ্দায় সম্পত্তির মালিক হতে পারবেন বিদেশিরাও১০ জুলাই ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তহব ল র প রকল প র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

সাড়ে ৯২ হাজার কোটি ডলার তহবিলের বিনিয়োগ পরিকল্পনায় কেন বড় পরিবর্তন আনছে সৌদি আরব

সৌদি আরব তাদের ৯২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের বিনিয়োগ কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এক দশক ধরে দেশটির উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বিশাল রিয়েল এস্টেট গিগাপ্রকল্প। এবার সেই দিক থেকে সরে এসে সৌদি সরকার এই তহবিলের বিনিয়োগকে আরও বিস্তৃত ও টেকসই খাতে পুনর্গঠন করতে চাইছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন পরিকল্পনাটি সম্পর্কে জানেন, উচ্চপর্যায়ের এমন একটি সূত্র।

২০১৬ সালে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছিলেন। এর মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করা ও বিশাল রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক রূপান্তর ঘটানো।

এই পরিকল্পনার প্রধান অর্থায়নকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে সৌদি আরবের সার্বভৌম তহবিল পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ)।

মরুভূমিতে ভবিষ্যতের শহর

পিআইএফের মূল পরিকল্পনায় ছিল নিওম—লোহিত সাগর–সংলগ্ন মরুভূমিতে ভবিষ্যতের শহর গড়ে তোলা। পাশাপাশি দেশটির উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ে কৃত্রিম তুষার ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরিকল্পনাও ছিল।

নিওমে ৯০ লাখ মানুষের বসবাসের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটি বারবার বিলম্বিত হচ্ছে।

সূত্রটি জানিয়েছে, এখন টেকসই ও স্বল্পমেয়াদি আর্থিক মুনাফা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই পিআইএফ নতুন কৌশল হিসেবে খনিজ সম্পদ, লজিস্টিক খাত এবং ধর্মীয় পর্যটনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।

এ ছাড়া সৌদি আরব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ডেটা সেন্টারে বড় বিনিয়োগ করছে—যেগুলো দেশটির বিপুল জ্বালানি সম্পদ ও হাইড্রোকার্বনের ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হবে।

রিয়াদে অনুষ্ঠিত বার্ষিক ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এফআইআই) সম্মেলনে পিআইএফের গভর্নর ইয়াসির আল-রুমাইয়ান বলেন, নতুন কৌশল খুব শিগগির ঘোষণা করা হবে।

নতুন অগ্রাধিকার

পিআইএফ ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দ্রুত মুনাফা আনার চাপ বৃদ্ধির পর থেকেই তাদের পরিকল্পনায় এমন পরিবর্তন এসেছে। পিআইএফ অবশ্য এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।

বিশ্লেষকদের মতে, অনেক গিগাপ্রকল্প এখনো প্রত্যাশিত মুনাফা দিতে পারেনি, অনেকগুলো শেষও হয়নি। ফলে তাদের বিপুল ব্যয় এখন প্রশ্নের মুখে।

তহবিলটির বর্তমান পাঁচ বছর মেয়াদি বিনিয়োগ কৌশল এ বছর শেষ হতে যাচ্ছে। খুব শিগগির নতুন কৌশল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে একটি ব্যাংকিং সূত্র।

অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, তহবিলের পরিচালনা পর্ষদ সম্প্রতি একটি নতুন ‘কৌশল’ অনুমোদন করেছে। নতুন পরিকল্পনায় সৌদি আরবকে বৈশ্বিক লজিস্টিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

সৌদি আরবে প্রচুর বিরল খনিজ সম্পদের মজুত রয়েছে। এগুলোর ওপর নতুন করে গুরুত্ব দিচ্ছে দেশটি।

হজ ও ওমরাহকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় পর্যটন বৃদ্ধি করাও নতুন কৌশলের অংশ। সম্প্রতি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান মক্কার মসজিদে হারামে প্রায় ৯ লাখ নতুন নামাজের জায়গা সংযোজনের একটি বৃহৎ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন।

এফআইআই ফোরামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছিল প্রধান আলোচ্য বিষয়। হলজুড়ে ভবিষ্যৎমুখী শহরের মডেল প্রদর্শিত হচ্ছিল, রোবট হাঁটছিল করিডরে।

হিউমেইন নামের একটি পিআইএফ-মালিকানাধীন এআই কোম্পানি ঘোষণা করেছে, তারা প্রায় ৬ গিগাওয়াট ক্ষমতার ডেটা সেন্টার নির্মাণ করবে।

সূত্রটি জানায়, সৌদি আরব তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল খাতে বড় বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করবে।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের স্বপ্নের ‘নিওম’ মেগা প্রকল্পে কি তাহলে কাটছাঁট হচ্ছে১৭ জুলাই ২০২৫

গত বছর থেকেই পিআইএফ বিদেশি বিনিয়োগ কমানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। গভর্নর আল-রুমাইয়ান জানান, বিদেশি বিনিয়োগের হার ৩০ শতাংশ থেকে ১৮-২০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

গেমিং খাতেও বড় বিনিয়োগ করছে পিআইএফ। সম্প্রতি তারা ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে জনপ্রিয় ভিডিওগেম নির্মাতা ইলেকট্রনিক আর্টস অধিগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের রিয়াদ ও জেদ্দায় সম্পত্তির মালিক হতে পারবেন বিদেশিরাও১০ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ