চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পাহাড় ও টিলা কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। সাতগড় বন বিট অফিসের অধীন চুনতি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাইফা ও মীর আলী ঘোনা এলাকায় এক মাস ধরে ভেকু (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কাটা হলেও কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই বন বিভাগের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালীরা সাইফা ও মীর আলী ঘোনা এলাকায় পাহাড়-টিলা ও কৃষিজমি খননযন্ত্র দিয়ে রাতের আঁধারে মাটি কেটে ইটভাটাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ওই এলাকা আব্দুল কুদ্দুস ও মীর আলী ঘোনা মৌলভী ইউনূছের দখলে। পাহাড় ও টিলার মাটি কেটে বিক্রির সঙ্গে স্থানীয় রায়হান, হামিদ, ইকবাল পারভেজ, রাসেল, আনোয়ার ও জনু জড়িত। এ ছাড়া উপজেলার চরম্বা ও পুঁটিবিলায় নির্বিচারে পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা।
গত শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার চুনতি ইছাহাক মিয়া সড়কের মেহেরুন্নেছা স্কুলের বিপরীতমুখী সড়ক দিয়ে দেড় কিলোমিটার গেলেই সাইফা ঘোনা। এটি চুনতি সাতগড় বন বিট ও চুনতি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। সেখানে ১০ ফুটেরও বেশি গভীর করে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি ও পাহাড়ি টিলা কাটা হয়েছে। এর দক্ষিণে অর্ধ কিলোমিটার গেলেই মীর আলী ঘোনা। সেখানে সড়কের দু’পাশেই কাটা হয়েছে পাহাড়ি টিলা। বিস্তীর্ণ অংশ কেটে মাটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এর থেকে আরও ৫০০ গজ দূরেও কাটা হয়েছে পাহাড়ি টিলা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চুনতি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার দক্ষিণ হিন্দুপাড়ার প্রবেশমুখে ও চুনতি মিরিখিল ওলুঘোনা হাবিব মেম্বার ফার্ম এলাকায়ও পাহাড় কাটা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত পাহাড়ের টিলা কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই স্পটগুলো থেকে ইতোমধ্যে কয়েক হাজার ট্রাক মাটি বিক্রি করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, ভেকু বসিয়ে প্রতিদিন রাতে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। বিষয়টি সবাই জানলেও কেউ বাধা দেয়নি। পাশেই বন বিট অফিস, বন কর্মকর্তারাও বাধা দিতে আসেননি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলার পরিদর্শক মাঈনুদ্দীন ফয়সাল বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চল কাটলেও বন বিভাগ এখনও পর্যন্ত বিষয়টি তাদের জানায়নি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, কিছু ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড়ি টিলার মাটি কাটা হচ্ছে বলে শুনেছি। এ বিষয়ে কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য বন কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’