প্রাকৃতিক পঞ্জিকা মেনে ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে’ যদিও; ফেনীর বন্যা আবার এসেছে গতবারের চেয়ে খানিকটা আগেভাগে। গত বছর আষাঢ় ও শ্রাবণ পেরিয়ে ভাদ্রের মাঝামাঝিতে কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর ডুবেছিল। সময়ের হেরফের হলেও তাতে বন্যাদুর্গতদের ভোগান্তির ইতরবিশেষ হয়নি। পার্থক্য এতটুকই, ওই অঞ্চলে আগের দুই-আড়াই দশক বড় বন্যা না হওয়ায় গত বছর ফেনীবাসী যতটা হতচকিয়ে গিয়েছিল, এবার ততটা নয়। গতবার বিশেষত বেসরকারি পক্ষগুলো যেভাবে ত্রাণ কার্যক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, এবার এখন পর্যন্ত তেমন দেখা যাচ্ছে না।
সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা যাচ্ছে, ‘ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২২টি ভাঙা স্থান দিয়ে পানি ঢুকছে। এতে নতুন করে আরও ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এসব গ্রাম প্লাবিত হয়। এ নিয়ে পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার মোট ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের’ (সমকাল, ১২ জুলাই ২০২৫)।
বলা বাহুল্য, বৃহস্পতি-শুক্রবারের বর্ষণই শেষ নয়; বঙ্গীয় বর্ষণ ও বন্যা আষাঢ়-শ্রাবণ পেরিয়ে ভাদ্রেও যে দেখা দিতে পারে, গতবছর ফেনীর বন্যাই তার প্রমাণ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রও শনিবার সর্বশেষ বুলেটিনে জানিয়েছে– ‘এই অববাহিকায় আগামী ৩ দিন মাঝারি-ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে’।
প্রশ্ন হচ্ছে, ফেনীতে এবারের সম্ভাব্য মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন কী প্রস্তুতি নিয়েছিল। মনে আছে, গত বছর ফেনীতে বন্যা চলাকালেই দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সঙ্গে যমুনায় বৈঠক করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.
ওই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরের চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ বছর এপ্রিলেও প্রধান উপদেষ্টা আক্ষেপ করেছিলেন– ‘আমরা যখন দায়িত্ব নিই, তখন সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিল এই বন্যা। এটি কত গভীরভাবে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, সেটিরও কোনো ধারণা ছিল না। এটি যে কত বড় বন্যা ছিল, সেটি বুঝতে পেরেছি চলে যাওয়ার অনেক পরে’ (সমকাল, ৩০ এপ্রিল ২০২৫)।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম থেকেই যেভাবে তৎপর, ফেনীতে গতবারের বন্যার সময়ও তাতে ছেদ পড়তে দেখা যায়নি। ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও স্থাপনা পরিদর্শন শেষে তিনি বলেছিলেন- ‘ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করার কাজ এরই মধ্যে প্রায় শেষ। ভবিষ্যতে বন্যা প্রতিরোধে পরিকল্পিতভাবে প্রয়োজনীয় স্থানে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। ভবিষ্যতে বাঁধ ভেঙে যাতে বন্যা না হয়, সেজন্য সমীক্ষা ও আধুনিক পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে অবৈধ এবং নিয়মনীতি বিহীনভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য অবৈধ লিজ বাতিল করা হবে। বাঁধে ভাঙন সৃষ্টিকারী বালু উত্তোলন বন্ধ করা হবে। নদীর অবৈধ দখলও উচ্ছেদ করা হবে’ (সমকাল, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪)।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মূলত পরিবেশকর্মী; রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে যাওয়ার আগে তিন দশকের বেশি সময় পরিবেশ আন্দোলন করেছেন। প্রাকৃতিক প্রবাহপথ দখল হলে কিংবা নির্বিচার বালু উত্তোলনে জলজ প্রতিবেশ ব্যবস্থা ছিন্নভিন্ন হলে প্রাকৃতিক বন্যা কীভাবে আর্থ-সামাজিকভাবে প্রলয়ঙ্করী হয়ে উঠতে পারে, তিনি নিশ্চয়ই জানেন। ফলে, ফেনীতে বন্যা নিয়ে আমরা যেসব উদ্বেগ জানিয়েছিলাম, তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল।
যেমন, গতবারের বন্যার সময় এক নিবন্ধে আমিও লিখেছিলাম– ‘বাংলাদেশে বন্যা মোকাবিলায় যেমন উজানের দেশ ভারতের সঙ্গে কার্যকর যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন হবে, তেমনই প্রয়োজন আন্তর্জাতিক রক্ষাকবচ। কারণ যদি যৌথ উদ্যোগ কার্যকর না হয়, তাহলে আমরা কোথায় যাব? একই সঙ্গে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ সুশাসন ও সুব্যবস্থাপনা। বন্যার প্রবাহপথ তথা নদী-খাল-বিল মুক্ত না করে শুধু যৌথ উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক রক্ষাকবচে কাজ হবে না’ (গোড়া কাটা নদীর আগায় বন্যার পানি, শেখ রোকন, সমকাল, ২৬ আগস্ট ২০২৪)।
যেমন, সমাজবিজ্ঞানী ড. খুরশিদ আলম ফেনীর বন্যা নিয়ে লিখেছিলেন– ‘আগামী দিনে যা যা করা দরকার তা হচ্ছে– ১. ফেনী রেগুলেটরের কাছে ফ্লাড-বাইপাস নির্মাণ করা; ২. ফেনী রিজার্ভারের ধারণক্ষমতা যতদূর সম্ভব আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া; ৩. খালগুলো খনন করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল রাখা, ৪. ভারত থেকে পানি নেমে আসার জন্য গোমতী বাঁধের মতো বাঁধ তৈরি করে পানিকে ফেনী নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা’ (ফেনীতে অস্বাভাবিক বন্যার কারণ ও করণীয়, সমকাল, ২৭ আগস্ট ২০২৪)।
বলা বাহুল্য, ফেনীতে গতবছরের বন্যার পর আরও অনেক বন্যা বিশেষজ্ঞ, নদী গবেষক, সমাজবিজ্ঞানী, নাগরিক প্রতিনিধি আরও অনেক পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ জানিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার সেসব সুপারিশ কিংবা নিজেদের প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়ন করেছে? বন্যা মোকাবিলায় সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের কী প্রমাণ গত এক বছরে আমরা পেয়েছি?
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের ফেনী ও নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার দাপ্তরিক ফেসবুক পেইজ ও সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা যাচ্ছে– ‘বৈঠকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে মুসাপুর রেগুলেটর ও বামনি ক্লোজার-এর নকশা চূড়ান্তকরণ, ফেনীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চূড়ান্তকরণ এবং নোয়াখালীর খাল ও ড্রেনেজ অবমুক্তসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এই দুই জেলার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত, তীর প্রতিরক্ষা ও পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো মেরামতের কাজ চলমান।’
গত বছরের বন্যার এক বছর চলে যাওয়ার পরও যদি ‘প্রকল্প চূড়ান্তকরণ’ হতে থাকে বা অবকাঠামো বা স্থাপনা মেরামতের কাজ ‘চলমান’ থাকে; তাহলে এই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য যে, গত এক বছরে ফেনীর বন্যা মোকাবিলায় সরকার আসলে কী করেছে? দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বন্যা আসায় গতবার যে ‘আক্ষেপ’ সরকারের ছিল, এবারের বন্যার প্রস্তুতিতে সেই আক্ষেপ মেটানোর লক্ষণ কি দেখা গেছে?
আমরা জানি, ফেনীতে বন্যার প্রবাহপথগুলো বেশ কয়েক বছর ধরেই বন্ধ অথবা সংকুচিত। খোদ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের জরিপে দেখা গেছে, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী এলাকায় নদী, খাল, জলাভূমি দখলদারের সংখ্যা ১১ হাজারের বেশি। এবার বন্যা আসার পর দেখা যাচ্ছে, পরিস্থিতি তথৈবচ। ফেনীর নদ-নদীগুলোর বুকজুড়ে রীতিমতো চাষের ও মাছের ভূমি তৈরি হয়েছে। সরকার গত এক বছরে এসব দখল উচ্ছেদ করতে পারল না কেন? প্রবাহপথের দখল উচ্ছেদ না করে যত বাঁধ ও স্থাপনাই নির্মাণ বা সংস্কার করা হোক না কেন, সেগুলো টেকসই হবে না। কারণ বন্যার পানি আকাশ দিয়ে উড়ে যাবে না, প্রবাহপথে আটকে গেলে বিপর্যয় ঘটাবেই।
এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রশ্ন থাকে, সেই আলোচনা ভবিষ্যতের কোনো নিবন্ধের জন্য তোলা রইল।
শেখ রোকন: লেখক ও নদী গবেষক
skrokon@gmail.com
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ খ র কন ফ ন র বন য র র বন য র বন য র প ব যবস থ উপদ ষ ট সরক র র এক বছর গত বছর ক বছর গতব র সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন পুনর্নিয়োগ, পদ ১২৭
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন নোয়াখালী সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে ১৪ ও ১৬তম গ্রেডের ১২৭টি পদে পুনর্নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। শুধু নোয়াখালী জেলার স্থায়ী বাসিন্দারা আবেদন করতে পারবেন। অনলাইন ব্যতীত সরাসরি কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
পদের নাম ও বিবরণ১. পরিসংখ্যানবিদ
পদসংখ্যা: ৬
শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা: কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যান, গণিত, অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি। কম্পিউটার চালনায় দক্ষতা থাকতে হবে।
গ্রেড ও বেতন স্কেল: ১০,২০০-২৪,৬৮০ টাকা (গ্রেড-১৪)
২. স্বাস্থ্য সহকারী
পদসংখ্যা: ১২১
শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা: কোনো স্বীকৃত বোর্ড থেকে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।
গ্রেড ও বেতন স্কেল: ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা (গ্রেড-১৬)
আরও পড়ুনপ্রধান শিক্ষক পদে সুপারিশ পেলেন ১১১ নন-ক্যাডার১৮ ঘণ্টা আগেবয়সসীমা২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে ১৮ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে হতে হবে।
আবেদনের নিয়মআগ্রহী প্রার্থীরা এ ওয়েবসাইটে আবেদন করতে পারবেন।
আবেদন ফিআবেদন ফি বাবদ ১০০ টাকা ও টেলিটক চার্জ বাবদ ১২ টাকাসহ মোট ১১২ টাকা।
আবেদনের সময়সীমাআবেদন ফরম পূরণ ও পরীক্ষার ফি জমাদান শুরুর তারিখ ও সময়: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, সকাল ১০টা
আবেদন জমাদানের শেষ তারিখ ও সময়: ১ নভেম্বর ২০২৫, বিকেল ৫টা
আরও পড়ুনএই ‘ভুলে ভরা’ বিসিএস প্রশ্নপত্র কারা তৈরি করল১৪ অক্টোবর ২০২৫নির্দেশনা১. একজন প্রার্থী কেবল একটি পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
২. সিভিল সার্জনের কার্যালয়, নোয়াখালীর স্মারক নং-সিএসএন/শা-৩/নিয়োগ-২০২৪/২৫৫০ তারিখ: ৩১/০৩/২০২৪ খ্রি. মোতাবেক প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা প্রার্থীদের নতুন করে আবেদন করার প্রয়োজন নেই। তাঁদের আবেদন সঠিক থাকলে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে এবং তাঁদের বয়স আগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তানুযায়ী গ্রহণযোগ্য হবে।
৩. স্বাস্থ্য সহকারী পদের ক্ষেত্রে প্রার্থীকে ইউনিয়নের যে ওয়ার্ডের (পুরাতন) জন্য আবেদন করবেন, সে ওয়ার্ডের (পুরাতন) স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
৪. নোয়াখালী জেলার আওতাধীন কোনো পৌরসভার আবেদনকারী স্বাস্থ্য সহকারী পদে আবেদন করতে পারবেন না। তবে পরিসংখ্যানবিদ পদে আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না।
বিজ্ঞপ্তির বিস্তারিত জানতে ও আবেদন করতে ভিজিট করুন এই ওয়েবসাইটে।
আরও পড়ুনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পঞ্চগড়ে চাকরি, পদ ৩০২ ঘণ্টা আগে