জুলাই সনদের প্রতিটি কথা বাস্তবায়ন করতে হবে: আখতার
Published: 3rd, August 2025 GMT
জুলাই সনদের প্রতিটি কথা বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এটি যেন শুধু একটি ঘোষণাপত্রে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা বাস্তবায়নের জন্য এটি হতে হবে আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গীকারের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি।’
আজ রোববার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ শিরোনামে দলটির আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। আখতার হোসেন তাঁর বক্তব্যে আন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরেন এবং রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি প্রয়োজন উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘জুলাই সনদ একটি ঐতিহাসিক দলিল। এটি শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। সরকারকে আহ্বান জানাই—জুলাই সনদকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে, ‘লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার’ জারি করে এটিকে কার্যকর করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে সরকারকে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এই সংস্কার বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিতে হবে।’
সচেতন জনগণের ভূমিকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আখতার হোসেন আরও বলেন, ‘এই সনদ বাস্তবায়নে দেশের প্রতিটি নাগরিককে হতে হবে সচেতন প্রহরী। তাদের সজাগ দৃষ্টি, তাদের প্রশ্ন এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া সত্যিকার অর্থে নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির এই নেতা বলেন, ‘২৪–এর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এক নতুন প্রজন্মের এবং একটি নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে। এই প্রজন্মের প্রধান শক্তি হচ্ছে তাদের দায়বদ্ধতা এবং নৈতিক দায়িত্ববোধ। যদি দেশের কোনো প্রান্তে বিপদ আসে, এই প্রজন্ম জীবন দিয়ে তা মোকাবিলা করবে। আমরা এখন নিজেদের জবাবদিহির কাঠামোতে আনতে বাধ্য।’
বিভাজনের রাজনীতি নয়, ঐক্য ও জবাবদিহি চান বলে জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই দেশে যুগের পর যুগ ধরে মানুষ বঞ্চিত হয়েছে, নিপীড়িত হয়েছে, শোষিত হয়েছে। আমাদের শহীদেরা সেই বঞ্চনার অবসান ঘটাতে প্রাণ দিয়েছেন। আহতরা এখনো আমাদের মাঝে আছেন, যাঁরা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন—এই দেশ গঠনে তাদের কী মূল্য দিতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে বিভাজনের রাজনীতি থাকবে না। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, বিহারি, চাপ্পা, সাঁওতাল—সবাই এই রাষ্ট্রের সমান নাগরিক। আমরা কারও মধ্যে পার্থক্য করতে চাই না।’
নতুন ইশতেহারের ঘোষণার কথা উল্লেখ করে সমাবেশের শেষ দিকে আখতার হোসেন বলেন, ‘আজ যে “নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার” ঘোষণা করা হচ্ছে, তা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের যুব, শ্রমিক, ছাত্র, কৃষকসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গড়তে এনসিপির সব স্তরের নেতা–কর্মীরা প্রস্তুত।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আখত র হ স ন জ ল ই সনদ র জন ত ক আম দ র নত ন ব
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি দেশবাসী মেনে নেবে না: বাম গণতান্ত্রিক জোট
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘গোপন বাণিজ্যচুক্তির’ খবরে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এ জোটের নেতারা বলেছেন, দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি দেশবাসী মেনে নেবে না। একই সঙ্গে জনগণের সামনে চুক্তির খসড়া প্রকাশ এবং তাদের সম্মতি ছাড়া কোনো চুক্তি না করার আহ্বান জানানো হয়।
রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এর আগে সকাল ১০টায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জোটের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বাম জোটের নেতারা বলেছেন, বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, তথাকথিত ‘ছাড়’-এর বিপরীতে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি দামে গম ও এলএনজি কিনতে হবে, ২৫টি বোয়িং বিমান কিনতে হবে। ১১০টি মার্কিন পণ্যকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিতে হচ্ছে এবং বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রের খনিজসম্পদের ওপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি হচ্ছে, যা নিয়ে জনমনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
নেতারা আরও বলেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সীমিত করে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক সমঝোতা জোরদার করা হচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে। এতে করে দেশের সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং কূটনৈতিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে। এসব বিষয় পরিষ্কার করার দায়িত্ব সরকারের। অবিলম্বে চুক্তি প্রকাশ করে জনগণের সংশয় সরকারকেই দূর করতে হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স)। আলোচনায় অংশ নেন সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবদুস সাত্তার, বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী, সাধারণ সম্পাদক বাবুল মোল্ল্যা, সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বাসদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাস, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন নান্নু।
এ ছাড়া ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থান দিবসে বিকেল সাড়ে চারটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোট সমাবেশ করবে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।