৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের বার্ষিকী ঘিরে সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে সারা দেশে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ২১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, একটি মহল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সেটা মোকাবিলায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বাকিদের থানা–পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো.

দেলোয়ার হোসেন, নবীনগর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বোরহান উদ্দিন আহমেদ, ঝালকাঠি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার, পীরগঞ্জ থানা যুবলীগ সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন (৩৫), ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক (২৭), বনানী থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. বাদশা খান (২৯), আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য সাব্বির মজুমদার (৪৩), ঢাকা মহানগর উত্তর শ্রমিক লীগের সহসভাপতি আনিসুর রহমান হিটলু (৪৮), উত্তর খান থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আজিজুল হক (৪৫), ঢাকা জেলা আওয়ামী তথ্যপ্রযুক্তি লীগের সাধারণ সম্পাদক সান মোহাম্মদ (৪২), শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহীম (৬২), ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকির হোসেন ফরাজী (৫৩), ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোর্শেদ (৫১), বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম (৩৩), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য মইনুল হোসেন সুমন (৪৮), কায়েতটুলী শাখা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. রকি ওরফে রায়হান (৩৩), ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাহমুদ শিকদার (৪৭), উত্তরা পূর্ব থানা ছাত্রলীগের ১ নম্বর ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক হামীম আহমেদ ওরফে মিনহাজুল আবেদিন, উত্তর খান থানা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম (৫০), শ্যামপুর থানা ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি সায়মন রহমান (৪২) ও খিলগাঁও থানা ১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মো. আল মামুন সরকার (৪৪)।

এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ১ হাজার ৩৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে এর মধ্যে কতজন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী, সেটা আলাদা করে জানানো হয়নি। পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র বলছে, বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্ট পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বাসায় বাসায় গিয়ে অভিযান

ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল রাত থেকে আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের বাসায় বাসায় গিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় আওয়ামী লীগের পদে রয়েছেন এমন অনেক নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে ছবি রয়েছে এমন ব্যক্তিদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রাতে মানিকগঞ্জে অভিযান চালিয়ে দৌলতপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহানারা আক্তার (৩৪) ও কলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. আবদুল রশিদকে (৪৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, ৫ আগস্টকে সামনে রেখে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ নানাভাবে তৎপর। সম্প্রতি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে দলটির কয়েক শ নেতা-কর্মীর ‘গোপন বৈঠকের’ খবর প্রকাশিত হয়েছে। পরে এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বৈঠকে অংশ নেওয়া আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ছ ৫ আগস ট এল ক য় উপজ ল গতক ল আওয় ম সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার: গোলাম পরওয়ার

স্বাধীনতার পর যারাই দেশ চালিয়েছে, তারা সবাই হিন্দুদের ব্যবহার করে শুধু নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেছেন, হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার।

আজ শুক্রবার খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাধীনতা চত্বরে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু কমিটির উদ্যোগে হিন্দু সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাগ্যোন্নয়ন ও ডুমুরিয়া-ফুলতলাসহ দেশের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে এখন প্রয়োজন ইসলামি সরকার। যাঁরা দাঁড়িপাল্লার জোয়ার দেখে ভয়-হুমকি দিচ্ছে, তাদের হুমকিতে হিন্দুরা আর ভয় পাবে না। হিন্দুদের বাধা দিলে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

গোলাম পরওয়ার বলেন, ৫৪ বছর যারা দেশ চালিয়েছে তারা সন্ত্রাস, দখলদারি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে হিন্দুদের শোষণ করেছে। জামায়াত রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশ থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের নির্মূল করা হবে। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, আমরা সেই পরিবর্তন আনতে চাই। লাঙলের শাসন দেখেছি, ধানের শীষের শাসন দেখেছি, নৌকার শাসনও দেখেছি। একটি দলই বাকি—জামায়াতে ইসলামী, তার প্রতীক দাঁড়িপাল্লা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয়ের বিষয়টি তুলে ধরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছে, আগামীতেও সেই বার্তা জনগণ দেবে।’

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে দেড় হাজার শহীদ ও ৪০ হাজার আহতের কথা উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট দিয়েই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।

উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি বাবু কৃষ্ণ নন্দীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি দেব প্রসাদ মন্ডলের সঞ্চালনায় সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি আবুল খায়ের, শোভনা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন, শরাফপুর সর্বজনীন পূজা মন্দিরের গোঁসাই সাধু প্রমথ গাইন, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সহসভাপতি হরিদাস মন্ডল, কানাই লাল কর্মকার ও প্রশান্ত কুমার মন্ডল, কোষাধ্যক্ষ গৌতম কুমার মন্ডল, পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুভাষ সরদার, মাগুরখালী ইউনিয়ন সহসভাপতি সুজিৎ কুমার সরকার, ধামালিয়া ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুন্ডু, রুদাঘয়া ইউনিয়ন সভাপতি বিপ্লব সরকার, রঘুনাথপুর ইউনিয়ন সভাপতি কার্তিক চন্দ্র সরকার, খর্ণিয়া ইউনিয়ন সভাপতি নারায়ণ রাহা, মাগুরঘোনা ইউনিয়ন সভাপতি বিশ্বনাথ দাস, সাহস ইউনিয়ন সভাপতি তন্ময় মন্ডল, ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন সভাপতি নিরঞ্জন রায়, রংপুর ইউনিয়ন সভাপতি তরুন কুমার মন্ডল, শোভনা ইউনিয়ন হিন্দু কমিটির মহিলা সম্পাদক প্রিয়ংকা মন্ডল, মাগুরখালী ইউনিয়ন সভাপতি প্রদীপ কুমার সরকার, আটলিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অনিমেষ মন্ডল, গুটুদিয়া ইউনিয়ন সভাপতি মনোরঞ্জন মন্ডল, শরাফপুর ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুমার বিশ্বাস, শোভনা ইউনিয়ন সভাপতি স্বদেশ হালদার, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অরুন কুমার আচার্য প্রমুখ।

হিন্দু সম্মেলন ঘিরে ডুমুরিয়ার ১৪টি ইউনিয়ন থেকে বর্ণিল মিছিল এসে জমায়েত হয়। সমাবেশ শেষে একটি গণমিছিল ডুমুরিয়া সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

হিন্দু সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রথম ভোট দাঁড়িপাল্লার পক্ষে হোক। আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ারকে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত করতে সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
মতুয়া সংঘের সভাপতি সুদীপ্ত কুমার সুন্দর মন্ডল বলেন, ‘আমরা আর সংখ্যালঘু বলে পরিচয় শুনতে চাই না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। স্বাধীনতার পর কোনো সরকার হিন্দুদের দাবিতে কাজ করেনি। এবার প্রমাণ হবে, হিন্দু মানেই একটি নির্দিষ্ট দল নয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছাত্রদলের কমিটি নেই ১৪ মাস, স্থবির কার্যক্রম
  • মামলায় ঝুলে গেছে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন
  • গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করলেন সিলেট-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আদিবা হোসেন
  • সম্মেলনের প্রায় তিন মাস পর রাজশাহী মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটি
  • হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার: গোলাম পরওয়ার