৫ আগস্ট ঘিরে বিশেষ অভিযান, ঢাকায় আওয়ামী লীগের ২১ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
Published: 3rd, August 2025 GMT
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের বার্ষিকী ঘিরে সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে সারা দেশে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ২১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, একটি মহল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সেটা মোকাবিলায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বাকিদের থানা–পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো.
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ১ হাজার ৩৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে এর মধ্যে কতজন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী, সেটা আলাদা করে জানানো হয়নি। পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র বলছে, বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্ট পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বাসায় বাসায় গিয়ে অভিযানঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল রাত থেকে আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের বাসায় বাসায় গিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় আওয়ামী লীগের পদে রয়েছেন এমন অনেক নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে ছবি রয়েছে এমন ব্যক্তিদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রাতে মানিকগঞ্জে অভিযান চালিয়ে দৌলতপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহানারা আক্তার (৩৪) ও কলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. আবদুল রশিদকে (৪৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, ৫ আগস্টকে সামনে রেখে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ নানাভাবে তৎপর। সম্প্রতি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে দলটির কয়েক শ নেতা-কর্মীর ‘গোপন বৈঠকের’ খবর প্রকাশিত হয়েছে। পরে এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বৈঠকে অংশ নেওয়া আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ছ ৫ আগস ট এল ক য় উপজ ল গতক ল আওয় ম সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’