ধারাভাষ্যে নেমে পড়ার পর সুনীল গাভাস্কারকে পাশে রেখেই তাঁকে ভারতীয় ক্রিকেটের কণ্ঠস্বর বলা যায়। দরাজ কণ্ঠ ও খেলার বিশ্লেষণে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছেন রবি শাস্ত্রী। প্রধান কোচ হিসেবে ভারতকে অস্ট্রেলিয়ায় পরপর দুই সিরিজ জিতিয়েছেন। খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন ১৯৮৩ বিশ্বকাপ। বাঁহাতি এই স্পিন অলরাউন্ডার ছয় বলে মেরেছেন ছয় ছক্কাও। ১১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ভারতের হয়ে ৮০ টেস্টে ১১ সেঞ্চুরি ও ১২ ফিফটিতে করেছেন ৩৮৩০ রান। বোলিংয়ে নিয়েছেন ১৫১ উইকেট। ১৫০ ওয়ানডেতে ৪ সেঞ্চুরি ও ১৮ ফিফটিতে ৩১০৮ রান করা শাস্ত্রী এ সংস্করণে বোলিংয়ে পেয়েছেন ১২৯ উইকেট। ২০২১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বই ‘স্টারগেজিং: দ্য প্লেয়ার্স ইন মাই লাইফ।’ এই বইয়ের ‘স্পিন মায়েস্ত্রোস’ অধ্যায়ে ভারতের কিংবদন্তি চার স্পিনারকে নিয়ে লিখেছেন শাস্ত্রী।রবি শাস্ত্রীর চোখে ভারতের স্পিন চতুষ্টয়

একই যুগে এতগুলো উঁচুমানের স্পিনার, সেটাও একসঙ্গে; ক্রিকেট ইতিহাসেই আর নেই। তাঁদের বিস্ময়কর সব কীর্তিকলাপও এই খেলার গল্পগাথার অংশ।

এ এক সুখের কাকতাল, ভারতীয় ক্রিকেটে যার প্রতিফলন বিষেন সিং বেদি, এরাপল্লি প্রসন্ন, ভগত চন্দ্রশেখর ও শ্রীনিবাস ভেঙ্কটরাঘবনের উইকেটসংখ্যায়, ম্যাচ জেতানোয় এবং ভক্ত থেকে দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের ওপর প্রভাব ফেলায়।

ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, তাঁরা আমার ক্যারিয়ারে তাঁদের ভূমিকা বিশাল। কৈশোরে পা রাখার আগেই আমি ফাস্ট বোলার হওয়ার চেষ্টা থেকে সরে এসে বাঁহাতি স্পিনার। তখন এই স্পিন চতুষ্টয়ের সেরা সময়, উঠতি ক্রিকেটাররা তাঁদের দেখে এই আত্মবিশ্বাসটুকু পাচ্ছিল, স্লো বোলিং একটি গুণ।

বেড়ে ওঠার সেই সময়ে তাঁদের নিয়ে লেখা প্রতিটি শব্দ আমার পড়া। ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক ম্যাচ, মুম্বাইয়ে তাঁদের দেখার সুযোগ কখনো হাতছাড়া করিনি। শুধু ভারতে নয়, যেখানে তাঁরা খেলেছেন, সেখানেই সুপারস্টার হিসেবে নাম ছড়িয়েছে। কয়েক ওভার পরই ভেঙ্কি, প্রস কিংবা বেদির হাতে যখন নতুন বল তুলে দেওয়া হতো, গ্যালারিতে রোমাঞ্চের ঢেউ খেলেছে। আর চন্দ্র রান আপ ঠিক করার সময় গ্যালারির যে গর্জন তাঁকে বরণ করেছে, ডেনিস লিলি কিং কিংবা ম্যালকম মার্শাল দেখলে ঈর্ষা করতেন।

আরও পড়ুনবোথামের দুষ্টুমি: অ্যালসেশিয়ান কুকুর দিয়ে গাভাস্কারকে ফোনবুথে আটকে রাখার গল্প০৬ জুলাই ২০২৫

শারীরিক গড়ন, বোলিং স্টাইল এবং ব্যক্তিত্বে এই চারজনের কোনো মিল নেই। এমনকি দুই অফ স্পিনার প্রস ও ভেঙ্কির মধ্যে মিল ছিল না। এই ব্যাপারগুলো ভক্তদের কাছে তাঁদের আবেদনকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল, আর প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের জন্য নরক। বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে অবশ্যই আমার ওপর বেদির প্রভাব বেশি, তবে বাকিরাও সমান ক্যারিশম্যাটিক। দারুণ একঝাঁক ক্লোজ-ইন ফিল্ডারও ছিল; একনাথ সোলকার, সৈয়দ আবিদ আলী, যুজুরেন্দ্র সিং এবং ভেঙ্কি নিজে—তাঁরাও তারকা হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় স্পিনকে এসব বোলার আরও রহস্যময় করে তোলায়।

বলের ফ্লাইটের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও চাতুর্যকে শিল্পে রূপদান। এগুলো মুখে বলা যতটা সহজ, যেকোনো স্পিনারই বলবেন এ দুটি দক্ষতা অর্জন করাই সবচেয়ে কঠিন। ৮০টি টেস্ট খেলার পর আমিও এই কথার সমর্থন করি।

টাইগার পতৌদি, তাঁদের সবাইকে একসঙ্গে করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতীয় স্পিনকে ভীতিকর করে তোলার নেপথ্য রূপকার। তিনি বুঝেছিলেন, স্বল্প পাল্লার পেস বোলিং দিয়ে শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে সুযোগ নেই। ক্লোজ ইন ফিল্ডিংকেও ক্ষুরধার করে ম্যাচ জয়ের একটি ফর্মূলা বের করেছিলেন। সত্তর দশকে ঘরে কিংবা বাইরে ভারত অন্তত তিন স্পিনার নিয়ে খেলেনি, এমন ম্যাচ কি আছে? আমার অন্তত মনে পড়ে না। ১৯৬৭ সালে বার্মিংহামে পতৌদি তো একসঙ্গে চারজনকেও খেলিয়েছেন!

বিষেন সিং বেদির বাতাসে ভাসানো বল বিষমাখা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিয়ের ৩০ বছর পর একসঙ্গে এসএসসি পাস করলেন দম্পতি

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলায় সাংবাদিক দম্পতি মো. কাইসার হামিদ (৫১) ও মোছা. রোকেয়া আক্তার (৪৪) পরিচিত মুখ। এ দম্পতির পাঁচ সন্তান, সবাই পড়াশোনা করছেন। দুজনের বাবা পেশায় শিক্ষক ছিলেন। পরিবারের অন্য সদস্যরাও শিক্ষিত। এসএসসি পাস না করায় তাঁদের মনে দুঃখ ছিল। অদম্য ইচ্ছা আর মানসিক শক্তির জোরে এবার তাঁরা সেই দুঃখ ঘুচিয়েছেন।

কাইসার হামিদ ও রোকেয়া আক্তার এবার নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দেন। দুজনই জিপিএ ৪ দশমিক ১১ পেয়ে পাস করেন। বিয়ের ৩০ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করায় এ দম্পতিকে অনেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

কাইসার হামিদ দৈনিক নয়াদিগন্ত এবং রোকেয়া আক্তার দৈনিক বুলেটিন পত্রিকার কুলিয়ারচর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।

কাইসার হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, সক্রিয় সাংবাদিকতার বয়স ৩০ পেরিয়েছে। সমাজ থেকে অনেক ভালো কিছু পেয়েছেন। কেবল কষ্ট ছিল পড়াশোনা নিয়ে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই একই কষ্ট। বাইরে গেলে পড়াশোনার প্রসঙ্গ এলে চুপ থাকতেন। অনেকে ইচ্ছা করে খোঁচা দিতেন। এসএসসি পাস না করে সাংবাদিকতা করছেন কীভাবে, অনেকে প্রশ্ন তুলতেন। পরে যেভাবে হোক এসএসসি পাসের পরিকল্পনা করেন। সেই অনুযায়ী ভর্তি হয়ে দুজনে ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেন।

কাইসার হামিদের বাড়ি কুলিয়ারচরের গোবরিয়া গ্রামে। রোকেয়া জেলার কটিয়াদী উপজেলার দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের মেয়ে। বিয়ে করেন আজ থেকে ৩০ বছর আগে ১৯৯৪ সালের ১৬ মার্চ। এ দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান নাসরিন সুলতানা ইতিমধ্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। দ্বিতীয় সন্তান জেসমিন সুলতানা স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্রী এবং তৃতীয় সন্তান মাইমুনা পড়ছেন নার্সিং বিষয়ে। ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন নবম এবং আবদুল্লাহ ফাহিম সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

পরীক্ষায় পাস করতে পেরে আনন্দিত রোকেয়া আক্তারের ভাষ্য, ‘অল্প বয়সে বিয়ে হয়। পরে সন্তান। এ কারণে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এই কষ্ট দুই যুগের অধিক সময় ধরে বয়ে বেড়াতে হয়েছে। আমরা দুজনই কষ্ট দূর করার উপায় খুঁজতাম। এটা বুঝতে পারি, কষ্ট দূর করতে হলে পরীক্ষা দিয়ে পাস করার বিকল্প নেই। সে কারণেই সাহস করে পরীক্ষা দিলাম এবং ফল পেলাম।’

বিলম্বে হলেও মা–বাবা এসএসসি পাস করায় খুশি সন্তানেরাও। দ্বিতীয় সন্তান জেসমিন সুলতানা বলেন, মা–বাবা দুজনই এসএসসি পাস করার বিষয়টি তাঁদের ভাইবোনদের অনেক আনন্দ দিচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সম্পর্ক, ভালোবাসা আর জীবন জটিলতার নতুন গল্প ‘বর্ষা বিহনে’
  • ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে সোহাগকে হত্যা: ডিসি জসীম উদ্দিন
  • সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করবে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ
  • মাধুরীর জীবনে যত প্রেম!
  • সব বিষয়ে একই নম্বর পেয়ে পাস করল যমজ ভাই
  • বিয়ের ৩০ বছর পর একসঙ্গে এসএসসি পাস করলেন দম্পতি
  • দেশের বাজারে শক্তিশালী ব্যাটারিযুক্ত নতুন দুই স্মার্টফোন