ফ্লাইট, ফ্লিপ আর ফায়ার: কীভাবে চার স্পিনারের হাতে গড়ে উঠেছিল ভারতের ক্রিকেট-পরিচয়
Published: 13th, July 2025 GMT
ধারাভাষ্যে নেমে পড়ার পর সুনীল গাভাস্কারকে পাশে রেখেই তাঁকে ভারতীয় ক্রিকেটের কণ্ঠস্বর বলা যায়। দরাজ কণ্ঠ ও খেলার বিশ্লেষণে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছেন রবি শাস্ত্রী। প্রধান কোচ হিসেবে ভারতকে অস্ট্রেলিয়ায় পরপর দুই সিরিজ জিতিয়েছেন। খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন ১৯৮৩ বিশ্বকাপ। বাঁহাতি এই স্পিন অলরাউন্ডার ছয় বলে মেরেছেন ছয় ছক্কাও। ১১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ভারতের হয়ে ৮০ টেস্টে ১১ সেঞ্চুরি ও ১২ ফিফটিতে করেছেন ৩৮৩০ রান। বোলিংয়ে নিয়েছেন ১৫১ উইকেট। ১৫০ ওয়ানডেতে ৪ সেঞ্চুরি ও ১৮ ফিফটিতে ৩১০৮ রান করা শাস্ত্রী এ সংস্করণে বোলিংয়ে পেয়েছেন ১২৯ উইকেট। ২০২১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বই ‘স্টারগেজিং: দ্য প্লেয়ার্স ইন মাই লাইফ।’ এই বইয়ের ‘স্পিন মায়েস্ত্রোস’ অধ্যায়ে ভারতের কিংবদন্তি চার স্পিনারকে নিয়ে লিখেছেন শাস্ত্রী।রবি শাস্ত্রীর চোখে ভারতের স্পিন চতুষ্টয়
একই যুগে এতগুলো উঁচুমানের স্পিনার, সেটাও একসঙ্গে; ক্রিকেট ইতিহাসেই আর নেই। তাঁদের বিস্ময়কর সব কীর্তিকলাপও এই খেলার গল্পগাথার অংশ।
এ এক সুখের কাকতাল, ভারতীয় ক্রিকেটে যার প্রতিফলন বিষেন সিং বেদি, এরাপল্লি প্রসন্ন, ভগত চন্দ্রশেখর ও শ্রীনিবাস ভেঙ্কটরাঘবনের উইকেটসংখ্যায়, ম্যাচ জেতানোয় এবং ভক্ত থেকে দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের ওপর প্রভাব ফেলায়।
ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, তাঁরা আমার ক্যারিয়ারে তাঁদের ভূমিকা বিশাল। কৈশোরে পা রাখার আগেই আমি ফাস্ট বোলার হওয়ার চেষ্টা থেকে সরে এসে বাঁহাতি স্পিনার। তখন এই স্পিন চতুষ্টয়ের সেরা সময়, উঠতি ক্রিকেটাররা তাঁদের দেখে এই আত্মবিশ্বাসটুকু পাচ্ছিল, স্লো বোলিং একটি গুণ।
বেড়ে ওঠার সেই সময়ে তাঁদের নিয়ে লেখা প্রতিটি শব্দ আমার পড়া। ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক ম্যাচ, মুম্বাইয়ে তাঁদের দেখার সুযোগ কখনো হাতছাড়া করিনি। শুধু ভারতে নয়, যেখানে তাঁরা খেলেছেন, সেখানেই সুপারস্টার হিসেবে নাম ছড়িয়েছে। কয়েক ওভার পরই ভেঙ্কি, প্রস কিংবা বেদির হাতে যখন নতুন বল তুলে দেওয়া হতো, গ্যালারিতে রোমাঞ্চের ঢেউ খেলেছে। আর চন্দ্র রান আপ ঠিক করার সময় গ্যালারির যে গর্জন তাঁকে বরণ করেছে, ডেনিস লিলি কিং কিংবা ম্যালকম মার্শাল দেখলে ঈর্ষা করতেন।
আরও পড়ুনবোথামের দুষ্টুমি: অ্যালসেশিয়ান কুকুর দিয়ে গাভাস্কারকে ফোনবুথে আটকে রাখার গল্প০৬ জুলাই ২০২৫শারীরিক গড়ন, বোলিং স্টাইল এবং ব্যক্তিত্বে এই চারজনের কোনো মিল নেই। এমনকি দুই অফ স্পিনার প্রস ও ভেঙ্কির মধ্যে মিল ছিল না। এই ব্যাপারগুলো ভক্তদের কাছে তাঁদের আবেদনকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল, আর প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের জন্য নরক। বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে অবশ্যই আমার ওপর বেদির প্রভাব বেশি, তবে বাকিরাও সমান ক্যারিশম্যাটিক। দারুণ একঝাঁক ক্লোজ-ইন ফিল্ডারও ছিল; একনাথ সোলকার, সৈয়দ আবিদ আলী, যুজুরেন্দ্র সিং এবং ভেঙ্কি নিজে—তাঁরাও তারকা হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় স্পিনকে এসব বোলার আরও রহস্যময় করে তোলায়।
বলের ফ্লাইটের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও চাতুর্যকে শিল্পে রূপদান। এগুলো মুখে বলা যতটা সহজ, যেকোনো স্পিনারই বলবেন এ দুটি দক্ষতা অর্জন করাই সবচেয়ে কঠিন। ৮০টি টেস্ট খেলার পর আমিও এই কথার সমর্থন করি।টাইগার পতৌদি, তাঁদের সবাইকে একসঙ্গে করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতীয় স্পিনকে ভীতিকর করে তোলার নেপথ্য রূপকার। তিনি বুঝেছিলেন, স্বল্প পাল্লার পেস বোলিং দিয়ে শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে সুযোগ নেই। ক্লোজ ইন ফিল্ডিংকেও ক্ষুরধার করে ম্যাচ জয়ের একটি ফর্মূলা বের করেছিলেন। সত্তর দশকে ঘরে কিংবা বাইরে ভারত অন্তত তিন স্পিনার নিয়ে খেলেনি, এমন ম্যাচ কি আছে? আমার অন্তত মনে পড়ে না। ১৯৬৭ সালে বার্মিংহামে পতৌদি তো একসঙ্গে চারজনকেও খেলিয়েছেন!
বিষেন সিং বেদির বাতাসে ভাসানো বল বিষমাখা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বামী-স্ত্রী ছিলেন কারখানায়, আগুন লাগার পর দুজনই নিখোঁজ
ঢাকার মিরপুরের শিয়ালবাড়ির আরএন ফ্যাশনস ভবনে আগুন নেভাতে যখন ফায়ার সার্ভিস কাজ করছিল, তখন বাইরে আরও অনেকের সঙ্গে আহাজারি করছিলেন ইয়াসমিন বেগম। তার হাতে মেয়ে মার্জিয়া সুলতানা ও জামাতা মোহাম্মদ জয়ের ছবি।
পাঁচতলা ওই ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা নিয়ে ছিল আরএন ফ্যাশন। সেখানে একসঙ্গে কাজ করতেন জয় ও মার্জিয়া। জয় অপারেটর, আর মার্জিয়া হেলপার।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে তাঁরা নিখোঁজ। বিকেল পাঁচটার দিকে সেখানে আহাজারি করতে দেখা যায় মার্জিয়ার মা ইয়াসমিন বেগমকে। তিনি বলছিলেন, ‘আল্লারে তুমি আমার মাইয়া আর তার জামাইডারে বাঁচাই দাও আল্লাহ। তাগো তুমি রক্ষা কইরো আল্লাহ।’
প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় মার্জিয়ার বাবা মোহাম্মদ সুলতানের। তিনি বলেন, দুপুর ১২টার একটু আগে আগুন লাগার খবর শুনে প্রথমে তিনি ফোন করেন মেয়েজামাই জয়কে। কিন্তু জয় ফোন ধরেননি। পরে মেয়ে মার্জিয়াকে ফোন করেন। মেয়ে ফোন ধরলেও বিস্তারিত বলতে পারেননি।
সুলতান বলেন, ‘মেয়েরে জিগাইলাম, আম্মু তুমি কই? আগুন নাকি লাগসে? মেয়ে কানতে কানতে কইল, আগুন লাগসে অফিসে। বের হতে পারছি না। অনেক ধোঁয়া, অন্ধকার। বের হওয়া পথ পাচ্ছি না।’
মেয়ের সঙ্গে এটুকুই কথা হয় সুলতানের। এরপর দৌড়ে গার্মেন্টেসের কাছে চলে আসেন। এসে দেখেন, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। এর পর থেকে মেয়ে আর জামাতার মুঠোফোনে কল করে গেলেও তা বন্ধই পাচ্ছেন।
সুলতান জানান, জয় আর মার্জিয়ার বিয়ে হয় ছয় মাস আগে। এই কারখানায় কাজের সুবাদেই দুজনের পরিচয় হয়, তা থেকে পরিণয়। স্বামী-স্ত্রী দুজন একসঙ্গে কারখানায় আসা-যাওয়া করতেন।
মেয়ে ও জামাতার খোঁজ না পেয়ে উদ্বেগ নিয়ে কারখানার সামনে অপেক্ষায় ছিলেন সুলতান।
ফায়ার সার্ভিস অগ্নিকাণ্ডের পর ১৬টি মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে। তবে দেহগুলো এতটাই পুড়েছে যে কোনো লাশই শনাক্ত করা যায়নি।
ভবনটিতে আগুন লাগার পর কারখানা ভবন থেকে শ্রমিকেরা নানাভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। তবে ছাদের গেট বন্ধ থাকায় অনেকে আটকা পড়েন। তাঁদের অনেকের খোঁজ এখনো মেলেনি।