রাজধানীর গুলশান এলাকায় সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় করা মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আজ রোববার তিনি এই জবানবন্দি দেন। একই ঘটনায় গ্রেপ্তার অপর তিন আসামিকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন ঢাকার সিএমএম আদালত। এই তিনজন হলেন ইব্রাহিম হোসেন, মো.

সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাঈন উদ্দিন চৌধুরী।

আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ আবদুর রাজ্জাককে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান।

পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়, আবদুর রাজ্জাকসহ অন্যরা সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ দলের সদস্য। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে আবদুর রাজ্জাকসহ অন্যরা ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে গুলশান, বারিধারাসহ অভিজাত এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট (নিশানা) করে চাঁদাবাজি করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ জুলাই সকাল ১০টার সময় সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় আবদুর রাজ্জাক ও কাজী গৌরব অপু উপস্থিত হন। বাসায় তখন শাম্মী আহমেদ উপস্থিত ছিলেন না। বাসায় ছিলেন তাঁর স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর। আবু জাফরকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন রাজ্জাক ও গৌরব। টাকা চাওয়ার পাশাপাশি তাঁরা স্বর্ণালংকারও চেয়েছিলেন।

আরও পড়ুনগুলশানে চাঁদা নিতে গিয়ে ধরা পড়া রাজ্জাকের বাসা থেকে সোয়া ২ কোটি টাকার চেক উদ্ধার: ডিএমপি৩০ জুলাই ২০২৫

গুলশান থানার পরিদর্শক মোখলেছুর আদালতকে জানান, চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রাজ্জাক ও গৌরব তাঁদের আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করার হুমকি দেন। তখন মামলার বাদী নিজের কাছে থাকা পাঁচ লাখ টাকা ও তাঁর ভাইয়ের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা জোগাড় করে তাঁদের (রাজ্জাক ও গৌরব) হাতে ১০ লাখ টাকা তুলে দেন। পরে আবদুর রাজ্জাকের বাসায় অভিযান চালিয়ে চাঁদার ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঅনটনের মধ্যে বেড়ে ওঠা ছাত্রের বাড়িতে হঠাৎ উঠছে ভবন, এলাকায় নানা আলোচনা২৭ জুলাই ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ র র জ জ ক

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি সংস্থার এজেন্ট দাবি করা এনায়েত করিমের ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ড মঞ্জুর

রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় নিজেকে বিদেশে সংস্থার এজেন্ট দাবি করা এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমকে ৪৮ ঘণ্টা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার সিএমএম আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা।

পুলিশ ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা আদালতে বলেন, আসামি এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি ‘র’-এর এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে।

অতিরিক্ত পিপি শামসুদ্দোহা আদালতে আরও বলেন, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

অপর দিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, এনায়েত করিম ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন। তিনি কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত নন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত এনায়েত করিম চৌধুরীর ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোড থেকে তাঁকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।

সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।

আরও পড়ুনবিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট দাবি করা সেই এনায়েত করিমকে মিন্টো রোড থেকে গ্রেপ্তার২১ ঘণ্টা আগে

আদালতে জমা দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ৬ সেপ্টেম্বর সকালে নিউইয়র্ক থেকে কাতার এয়ারওয়েজে করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। প্রথম দুই দিন তিনি সোনারগাঁও হোটেলে ছিলেন। পরের কয়েক দিন গুলশানে ছিলেন। তিনি ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ২০০৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট পান।

এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার আমলেও (২০০১-০৬ সাল) একবার এনায়েত করিমকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তখনো তাঁর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নতুন হত্যা মামলায় আমু, আনিসুল, রাজ্জাকসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো
  • বিদেশি সংস্থার এজেন্ট দাবি করা এনায়েত করিমের ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ড মঞ্জুর