ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নির্বিচার গুলি ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং ৯ দফা দাবিতে ৩ আগস্ট সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। সেদিন দুপুরের আগেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শহীদ মিনারে উপস্থিত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয় সমন্বয়ক। তখন সমাবেশ চলছিল। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করেন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম (এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক)।
সেদিন নাহিদ তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা এক দফা দাবির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। দফাটি হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ এই সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদের বিলোপ।’
সেদিন সকালে শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গণভবনে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে শহীদ মিনারের সমাবেশে নাহিদ বলেছিলেন, ‘আপনি দরজা খুলে অপেক্ষা করুন। আমরা সংলাপ নয়, আপনাকে উৎখাত করার জন্য আসব।’
শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণাও দেন নাহিদ। তাঁর বক্তব্যের পর আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচিকে ঘিরে কিছু জরুরি নির্দেশনা দেন।
ওই সমাবেশ চলার সময় শহীদ মিনারের সামনের সড়কে শেখ হাসিনার তিনটি কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
সেদিনের সেই সমাবেশ ও এক দফা ঘোষণার বিষয়ে নাহিদ ইসলাম গতকাল শনিবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতন ও ফ্যাসিবাদ বিলোপের এক দফা দাবি জনগণের মধ্য থেকেই উঠে এসেছিল। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা তখন জনগণের চৈতন্যের শীর্ষবিন্দুতে চলে গিয়েছিল। আমরা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের প্রাণের দাবিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাষা দিয়েছি।’
এক দফা ঘোষণার আগের রাতেই (২ আগস্ট, ২০২৪ সাল) একটি মহল সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করতে কয়েকজন সমন্বয়ককে চাপ দিয়েছিল উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এটা ছিল ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রাখার একটা ফাঁদ। ছাত্ররাজনীতিতে আমাদের প্রায় অর্ধযুগের সক্রিয়তা ও বোঝাপড়ার জায়গা থেকে রাজনৈতিক ফাঁদের ব্যাপারে আমরা সতর্ক ছিলাম। সেই জায়গা থেকে আমরা বলেছি, এক দফার ঘোষণা আসতে হবে মাঠ থেকে। সেভাবেই আমরা এক দফা ঘোষণা করি। জনগণ জীবন বাজি রেখে এক দফার পক্ষে রাজপথে ছিল।’
শহীদ মিনারের সমাবেশের পাশাপাশি ৩ আগস্ট বিকেলে ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে সংগীতশিল্পীদের প্রতিবাদী সমাবেশ থেকেও সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয়।
সেনা সদরে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’
জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ড সামরিক বাহিনীর ভেতরেও প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল। সে রকম একটি পরিস্থিতিতে ৩ আগস্ট ঢাকায় সেনা সদরের হেলমেট অডিটরিয়ামে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ (সেনা কর্মকর্তাদের মতবিনিময়) হয়। ওই মতবিনিময়ে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিভিন্ন পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাদের বক্তব্য শোনেন।
সেদিন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জনগণের আস্থার প্রতীক। জনগণের স্বার্থে এবং রাষ্ট্রের যেকোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জনগণ র আগস ট র পতন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’
তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’
আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’
ঢাকা/আসাদ/রাজীব