লেগ সাইডে ৯ ফিল্ডার, অদ্ভুত এক ঘটনা দেখল ক্রিকেট বিশ্ব
Published: 3rd, August 2025 GMT
৯ জন ফিল্ডারকে স্লিপে রেখে বল করার দৃশ্য ক্রিকেটে অনেক আগেই দেখা গেছে। ১৯৭৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ৯ জন ফিল্ডারকে স্লিপে দাঁড় করিয়ে বল করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ডেনিস লিলি। এরপর বিভিন্ন সময় স্লিপে ৯ ফিল্ডার রেখে বল করেছে অনেক দল।
কিন্তু কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে এসেক্সের বিপক্ষে শেষ দিনে ওয়ারউইকশায়ার যেভাবে ফিল্ডিং সাজিয়েছে, তা বেশ অভিনবই বটে। যেখানে লেগ সাইডে ৯ ফিল্ডারকেই দাঁড় করিয়ে দেয় কাউন্টির এই দল। নিশ্চিত ড্রয়ের দিকে এগোতে থাকা ম্যাচে ব্রেকথ্রু পাওয়ার লক্ষ্যে এই কৌশল নিয়েছিল তারা।
চেলমসফোর্ডে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি যখন শুক্রবার শেষ দিনে পৌঁছায়, তখন ড্রই ছিল এই ম্যাচের সবচেয়ে সম্ভাব্য ফলাফল। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে থাকা ওয়ারউইকশায়ারের হাতে ছিল তখন এক উইকেট। তবে অলিভার হ্যানন-ডালবি দ্রুতই আউট হয়ে যান এবং ওয়ারউইকশায়ার গুটিয়ে যায় ৪৮৫ রানে, যা এসেক্সের করা ৬ উইকেটে ৬০২ রানের চেয়ে ১১৭ রান কম।
আরও পড়ুনফাইনালেও সেঞ্চুরি, সব পুরস্কার নিয়ে গেলেন ডি ভিলিয়ার্স৫ ঘণ্টা আগেএরপর এসেক্সের ব্যাটিংয়ের সময়ই অভিনব ঘটনার জন্ম দেয় ওয়ারউইকশায়ার অধিনায়ক অ্যালেক্স ডেভিস। ওপেনিংয়ে নামা অলরাউন্ডার নুয়াহ থাইনের বিদায়ের পর তখন ব্যাট করছিলেন পল ওয়াল্টার ও টম ওয়েস্টলি।
আরও পড়ুনআফ্রিদির শেষ বলে ৪ মেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জেতালেন হোল্ডার৭ ঘণ্টা আগেএ দুজনের ব্যাটিংয়ের এক পর্যায়ে ৬ জন ফিল্ডারকে লেগ সাইডে এনে রিং-স্টাইল পজিশনে সেট করে ওয়ারউইকশায়ার। সঙ্গে আগে থেকে থাকা লেগ স্লিপ এবং বাউন্ডারির কাছে লেগ সাইডের একজন ফিল্ডারও ছিলেন।
এরপর হ্যানন-ডালবি ওই ফিল্ড সেটআপে এক বল করার পর, অধিনায়ক অ্যালেক্স ডেভিস ঝুঁকি নিয়ে পুরোপুরি আক্রমণাত্মক কৌশল নেন। অফ সাইডে থাকা একমাত্র ফিল্ডারকেও হেলমেট পরিয়ে ব্যাটম্যানের একদম কাছে নিয়ে আসেন।
আরও পড়ুনদ্বন্দ্ব–অস্থিরতার বরিশাল দলে এবার কোচ আশরাফুল২০ ঘণ্টা আগেফলে ওয়ারউইকশায়ারের ফিল্ডিং পজিশন দাঁড়ায় এমন—একজন ডিপ স্কয়ার লেগে, একজন লেগ স্লিপে, একজন লেগ গালিতে, একজন শর্ট লেগে, চারজন শর্ট মিড-উইকেটে এবং একজন শর্ট মিড-অনে। অর্থাৎ পুরো ফিল্ড ছিল একপ্রকার লেগ-সাইডে ব্যারিকেডের মতো।
ওয়ারউইকশায়ারের এমন কৌশল দেখে এক ধারাভাষ্যকার মজা করে বলেন, ‘এটা তো লেগ থিওরির ভিন্ন এক রূপ।’ তবে এই আক্রমণাত্মক এই ফিল্ড সেটআপ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। এক ওভার পরই বৃষ্টি নামায় মাঠ ছাড়তে হয় খেলোয়াড়দের। এরপর ম্যাচ আর শুরু করা সম্ভব হয়নি, ফলে খেলাটি ড্রতেই শেষ হয়। এসেক্স দ্বিতীয় ইনিংসে তুলতে পেরেছিল ১ উইকেটে ৯৬।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ল ড রক জন ফ ল ড এস ক স উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ভিপিএনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেটের পাশাপাশি ওয়েবসাইটে প্রবেশের বিকল্প মাধ্যম ভিপিএন বা ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কও বন্ধ করে দিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। গণ-অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায়ে থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেটের গতি দুর্বল করে দেওয়া হয়েছিল।
তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘দ্য লংগেস্ট সাইলেন্স: ইন্টারনেট শাটডাউনস ডিউরিং বাংলাদেশ’স ২০২৪ আপরাইজিং’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে।
ডিজিটালি রাইটের গবেষণায় গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ২২ দিন ইন্টারনেট বন্ধের (শাটডাউনের) ঘটনাকে পাঁচ ধাপে ভাগ করা হয়েছে। এরপর প্রতি ধাপে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের মাত্রা ও ধরন কেমন ছিল, তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে যুক্ত ডিজিটালি রাইটের গবেষক তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই ধাপে ইন্টারনেট সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউট হয়েছিল। প্রথমবার ১৮ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই এবং দ্বিতীয়বার ৫ আগস্ট। এ দুই ধাপে মোবাইল ডেটা ও ব্রডব্যান্ড সংযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। ফোর-জিকে টু-জিতে নিয়ে আসা হয়েছিল। পাশাপাশি ফিল্টারিং প্রযুক্তি ও ক্যাশ সার্ভার বন্ধ করে দিয়ে ইন্টারনেটের গতি ধীর করে দেওয়া হয়েছিল।
সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক বৈশ্বিক সংস্থা ‘ওপেন অবজারভেটরি অব নেটওয়ার্ক ইন্টারফেয়ারেন্স’র সহযোগিতায় প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
সময় ও অন্তর্ভুক্ত এলাকার আওতার বিবেচনায় ২২ দিন ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনাকে বাংলাদেশে অন্যতম ব্যাপক ‘ইন্টারনেট শাটডাউন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
প্রতিবেদনে ইন্টারনেট শাটডাউন ও নানা মাত্রায় নিয়ন্ত্রণকে সময়ভিত্তিক পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন প্রথম ধাপ জুলাই ১৫-১৭, দ্বিতীয় ধাপ জুলাই ১৮-২৩, তৃতীয় ধাপ জুলাই ২৪-৩১, চতুর্থ ধাপ আগস্ট ১-৩ ও পঞ্চম ধাপ আগস্ট ৪-৫।
ভিপিএনের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুরু হয় ২৪ জুলাই। এ সময় প্রোটন ভিপিএন, নর্ড ভিপিএন ও টানেলবিয়ারের মতো অ্যাপগুলো নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছিল। প্রসঙ্গত, ভিপিএন হলো নিরাপদ ও গোপন পথে ওয়েবসাইটে প্রবেশের উপায়, যা ব্যবহারকারীর অবস্থান ও ডেটা গোপন রাখে। বিশেষ করে ব্লকড করে দেওয়া ওয়েবসাইটে প্রবেশে এগুলো ব্যবহার করা হয়।
প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে, সারা দেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে ব্রডব্যান্ড সংযোগের গতি নিয়ন্ত্রণ ও সুনির্দিষ্ট কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কোনো ধরনের সরকারি নির্দেশ ও ঘোষণা ছাড়াই তা করা হয়েছিল। একই সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেবা বন্ধেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর থেকে এসব নির্দেশনা এসেছিল।
ডিজিটালি রাইটের গবেষণা থেকে জানা গেছে, ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করতে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান (আইএসপি), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) এবং মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকে সরকার থেকে মৌখিক ও অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুরু হওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৪ জুলাই রাতে কোটাবিরোধী আন্দোলন বেগবান হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোবাইল ডেটার প্রবাহকে ধীরগতির করে দেওয়া হয়। ১৫ জুলাই সকাল থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেটের গতি দুর্বল করে দেওয়া হয়। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ১৫ জুলাই মধ্যরাত থেকে ১৬ জুলাই থেকে দ্রুতগতির ইন্টারনেটকে বাধাগ্রস্ত করা হয়।
সহিংসতার তীব্রতা বাড়তে থাকলে ১৮ জুলাই থেকে দেশব্যাপী ইন্টারনেট শাটডাউন শুরু করে সরকার। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে ব্রডব্যান্ড সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর ওই দিন দিবাগত রাত ১টা ২৯ মিনিটের দিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যা ২৩ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
২৪ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ভিপিএন, মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ডের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১ থেকে ৩ আগস্টের মধ্যে নিয়মিত বিরতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া, ভিপিএন বাধাগ্রস্ত করা ও মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। ৪ থেকে ৫ আগস্ট সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ও ক্যাশ সার্ভার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করা হয়েছে ডিজিটালি রাইটের প্রতিবেদনে।